1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০৭:৫৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
শেষ হলো দাওয়াতে ইসলামীর তিনদিনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ইজতেমা বালুকাবেলার আত্মঘোষণা: যেখানে সাংবাদিকতা হয়ে ওঠে প্রতিবাদের কবিতা চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের ঐক্য উৎসব পারকি সৈকতে গড়লো অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু মাওলানা রইস উদ্দিন হত্যার বিচার দাবিতে আনোয়ারায় বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ! “বাঁশখালীতে ৪ হাজার ইয়াবাসহ টেকনাফের মাদক কারবারি আটক: ব্যবহৃত মোটরসাইকেল জব্দ” হোমনায় মহান মে দিবস উপলক্ষে  বিএনপির বর্ণাঢ্য র‍্যালি  ড. মোহাম্মদ ইউনূস এর শুভ আগমনে বোয়ালখালীবাসীর পক্ষ থেকে হাজী মোহাম্মদ আলম ববির শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা পুলিশ পরিচয়ে ঘরে প্রবেশ করে পরিবারের ৮ জনকে বেঁধে ছয়টি দোকান ঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে মালামাল লুট করেছে দুর্বৃত্তরা রোদেলা দুপুরে পারকি সৈকতের বালুকাবেলায় কলম যোদ্ধারা,স্মৃতিময় এক মে দিবস! ড. মোহাম্মদ ইউনূসের দক্ষিণ চট্টগ্রাম সফর

গল্পে গল্পে জীবন কথা- ১ “স্বপ্নজাল”

মো. কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৫৫ বার পড়া হয়েছে

পরিচয়হীন পৃথিবীঃ পথশিশু রাসেল কখনও জানেনি তার আসল নাম কী। যেদিন থেকে তার স্মৃতি শুরু, সেদিন থেকেই সে ছিল এক গলির ধারে পড়ে থাকা ছোট্ট ছেলেটি। বয়স হয়তো সাত বা আট। কেউ ডাকত “পাগলু,” কেউ বলত “ছোটু,” আর কেউবা “ওই ছেলেটা।” রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ছেঁড়া কাঁথা, ফুটপাতে ভিক্ষুকদের ভিড়ে লুকিয়ে থাকা তার শৈশবটা সবার চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল।
এক শীতের রাতে তার কাছে এসে বসেছিল এক বয়স্ক ভিক্ষুক। কাঁপতে কাঁপতে বলেছিল, “এই ছেলে, তোকে কে ফেলে গেছিল এখানে?” রাসেল কাঁপা কণ্ঠে উত্তর দিয়েছিল, “জানি না দাদু। কেউ তো আমাকে মনে রাখেনি। আমি নিজেই বুঝি না আমি কার।”
সেই রাতের পর রাসেল নিজের পরিচয় নিয়ে আর প্রশ্ন করেনি। শীতের কামড়ঃ শীত এলে রাসেলের জীবন আরও কঠিন হয়ে যেত। দিনের বেলা গরম পোশাকের জন্য এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়াত। পুরনো মার্কেটের পাশে ধারে পড়ে থাকা কাপড়ের স্তূপে কিছু পেলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করত। কিন্তু শীতের রাতগুলো? ফুটপাথ যেন বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যেত। রাসেলের গায়ে তখন একটা ছেঁড়া শার্ট, তাতেই যেন শীত তাকে ছিঁড়ে খেতে চাইত। এক রাতে রাসেল দেখল, একজন ধনী ভদ্রলোক তার গাড়ি থেকে নেমে একজন পথশিশুকে কিছু টাকা দিলেন। রাসেল দৌড়ে গেল, কিন্তু তখনই গাড়ি ছেড়ে চলে গেল। চোখ মুছতে মুছতে রাসেল শপথ করল, “একদিন আমিও বড় হব। আমি এমন গাড়ি কিনব। আমি সেই সব ছেলেমেয়েদের সাহায্য করব যাদের কেউ নেই।”
বৃষ্টি আর অনাহারঃ বর্ষার রাতগুলো ছিল আরও ভয়ানক। একদিকে ঠান্ডা বৃষ্টি, অন্যদিকে পেটের খিদে। ভেজা শরীরে রাত কাটানো আর একবার খিদে মেটানোর লড়াই ছিল তার প্রতিদিনের গল্প। কখনো ডাস্টবিন ঘেঁটে পচা খাবার খেত, কখনো রেলস্টেশনে পড়ে থাকা আধখাওয়া বিস্কুট তুলে নিত। একবার বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে সে এক স্কুলের জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। ভেতরে বসে ছেলেমেয়েরা বই পড়ছিল। রাসেল একমনে তাকিয়ে ছিল। স্কুলের একজন শিক্ষক তার দিকে তাকিয়ে দরজা খুলে ডাকলেন, “তুমি কী চাইছ, ছেলে?”
রাসেল ভেজা গলায় বলল, “আমি পড়তে চাই, স্যার। আমি পড়তে পারব?” শিক্ষক তাকে দেখে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর বললেন, “তুমি তো খিদে পেয়েছ। আগে কিছু খাও। তারপর কথা বলব।” সেদিন সেই শিক্ষক তাকে এক প্যাকেট বিস্কুট দিলেন। রাসেল সেই বিস্কুট হাতে নিয়ে মনে মনে বলল, “একদিন আমিও স্কুলে পড়ব। আমিও বড় হব।”
স্বপ্নের পথে বাধাঃ রাসেলের স্বপ্ন ছিল বিশাল। কিন্তু বাস্তবতা ছিল আরও কঠিন। প্রতিদিনের খাবার জোগাড় করাই যেখানে কঠিন, সেখানে স্কুলে পড়া বা খেলাধুলা তো স্বপ্নের চেয়েও দূরের কিছু।
একদিন রাসেল গলির মোড়ে বসে ছিল। একজন ভদ্রলোক এসে জিজ্ঞেস করলেন,”তোমার নাম কী, ছেলে?” রাসেল বলল, “আমার কোনো নাম নেই। সবাই রাস্তার পাগলু বলে ডাকে।”ভদ্রলোক তার মাথায় হাত রেখে বললেন, “তুমি যদি চাও, আমি তোমার নাম রাখব।” “কী নাম হবে আমার?” “তোমার নাম হবে ‘রাসেল’।” সেই প্রথমবার রাসেল নিজের একটা নাম পেল।
ভদ্রলোক তাকে একটি পথশিশুদের জন্য তৈরি স্কুলে নিয়ে গেলেন। সেখানকার শিক্ষক তাকে বললেন, “তুমি পড়তে চাও?”
রাসেলের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সে বলল, “হ্যাঁ, আমি পড়তে চাই। আমি অনেক বড় হতে চাই।” খেলাধুলার নতুন দিগন্তঃ স্কুলে পড়া শুরুর পর রাসেল খেলাধুলার প্রতি খুব আগ্রহী হয়ে উঠল। তার দৌড়ানোর ক্ষমতা আর বল নিয়ে খেলার দক্ষতা দেখে সবাই অবাক হয়ে যেত। একদিন স্কুলের এক শিক্ষক তাকে বললেন, “তুমি যদি মন দিয়ে খেলাধুলা করো, তুমি অনেক বড় খেলোয়াড় হতে পারো।”
রাসেল তখন থেকেই ঠিক করল, সে ফুটবলে অনেক ভালো করবে। প্রতিদিন সকালে উঠে দৌড়ানো আর বল নিয়ে প্র্যাকটিস করাই তার জীবনের লক্ষ্য হয়ে উঠল। কিন্তু তার জীবন সহজ ছিল না। খাবারের জন্য স্কুলের বাইরে কাজ করতে হতো। কখনো মুচির দোকানে জুতা পালিশ করত, কখনো রেলস্টেশনে পানি বিক্রি করত। তবুও তার স্বপ্ন তাকে বাঁচিয়ে রাখত।
অবহেলা থেকে সাফল্যেঃ রাসেল বুঝতে পারল, শুধু স্বপ্ন দেখলেই হবে না; স্বপ্ন পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। সে প্রতিদিন স্কুলের পরে দৌড়ানোর প্র্যাকটিস করত। ধীরে ধীরে সে স্থানীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পেল। তার খেলার দক্ষতা দেখে এক কোচ তাকে একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার সুযোগ দিলেন। কিন্তু রাসেল জানত, প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য তার পয়সা নেই। কোচ তাকে বললেন,
“তুমি চিন্তা করো না, আমি তোমার দায়িত্ব নিচ্ছি। শুধু তোমার মন দিয়ে খেলো।” সেই দিন থেকে রাসেল নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেল।বড় হওয়ার পথে লড়াইঃ বছরগুলো কেটে যেতে লাগল। রাসেল এখন শুধু পথশিশু নয়; সে একজন প্রতিশ্রুতিশীল ফুটবল খেলোয়াড়। স্থানীয় ক্লাবের হয়ে খেলে সে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে। তার নাম ছড়িয়ে পড়তে লাগল। সাংবাদিকরা তার গল্প শুনে তাকে নিয়ে লেখালেখি শুরু করল। একদিন রাসেল নিজের স্কুলে ফিরে গিয়ে সেই জানালার পাশে দাঁড়াল, যেখানে একসময় দাঁড়িয়ে ভেতরের ছেলেমেয়েদের দেখত। তার মনে পড়ল সেই শিক্ষক, যিনি তাকে এক প্যাকেট বিস্কুট দিয়েছিলেন। রাসেল নিজের চোখের জল মুছে মনে মনে বলল, “আজ আমি যা কিছু হয়েছি, এটা তাদের জন্য। আমি আজও সেই স্যারের মুখ খুঁজে বেড়াই।”
একটি নতুন শুরুঃ রাসেলের জীবনের সবচেয়ে বড় দিনটি এলো যখন সে জাতীয় ফুটবল দলের জন্য নির্বাচিত হলো। তার নাম এখন সারা দেশের মানুষের মুখে মুখে। একদিন সাংবাদিকরা তাকে জিজ্ঞেস করল, “আপনি এত কষ্টের মধ্যেও কীভাবে এত বড় স্বপ্ন দেখলেন?” রাসেল বলল,
“কষ্টই আমাকে শিখিয়েছে স্বপ্ন দেখতে। আমি জানতাম, যদি চেষ্টা করি, আমি পারব। আমি চাই, এই দেশের কোনো পথশিশু যেন অবহেলার শিকার না হয়। তাদের সবার জন্য আমি কিছু করতে চাই।”রাসেলের স্বপ্নপূরণঃ আজ রাসেল শুধু একজন খেলোয়াড় নয়; সে পথশিশুদের জন্য একটি স্কুল খুলেছে। সেখানে তারা খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা, এবং খেলাধুলার সুযোগ পায়। রাসেল প্রতিদিন নিজের মতো করে তাদের স্বপ্ন দেখতে শেখায়।
তার জীবনের গল্প আজ লাখো পথশিশুর অনুপ্রেরণা। রাসেল প্রমাণ করেছে, যদি মনোবল থাকে আর পরিশ্রম করা যায়, তবে সব অসম্ভবকে জয় করা সম্ভব।রাসেল আজ অনেক বড় হয়েছে। শৈশবের সেই কষ্টের দিনগুলো পেরিয়ে এখন সে পরিচিত নাম, সবাই তাকে চেনে তার সাফল্যের জন্য। কিন্তু সে কখনোই তার পুরোনো সঙ্গী, পথের কুকুরগুলোর কথা ভুলেনি।

যে কুকুরগুলো শীতের রাতে তার শরীরের উষ্ণতা দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল, যে কুকুরগুলো তার সুখ-দুঃখের নীরব সাক্ষী ছিল, তাদের প্রতি রাসেলের কৃতজ্ঞতা আজও অটুট। সে আজও যখন কোনো কুকুরকে ফুটপাতে ঘুমাতে দেখে, নিজের শৈশবের দিনগুলো মনে পড়ে যায়।
রাসেল সবসময় বলে, “মানুষ আমায় ভুলে যেতে পারে, কিন্তু ওরা কখনো আমায় ছেড়ে যায়নি। আজ আমি যা কিছু, ওদের নিঃশর্ত ভালোবাসার জন্যই সম্ভব হয়েছে।” তার প্রতিষ্ঠিত আশ্রয়কেন্দ্রের একটি বিশেষ অংশ সে পথের কুকুরদের জন্য রেখে দিয়েছে, যেন তাদেরও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করা যায়।
শেষ কথা-এই গল্প শুধু রাসেলের নয়; এটি সব পথশিশুর গল্প। যাদের জীবন অবহেলায় ঢাকা পড়ে গেছে, তারা হয়তো আজ রাসেলের মতো কেউ হতে পারবে, যদি আমরা তাদের পাশে দাঁড়াই।
#চলবে- অন্য গল্পের দিকে চোখ রাখুন—

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট