চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল, যা একসময় রোগীদের জন্য নির্ভরযোগ্য একটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ছিল, আজ দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখা তথাকথিত সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতিষ্ঠানটি কার্যত অবক্ষয়ের দিকে এগিয়ে চলেছে। হাসপাতালের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক, নার্স, এবং জীবন সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত এক জোরালো আন্দোলন শুরু হয়েছে, যার মূল লক্ষ্য জাহাঙ্গীর চৌধুরীর অপকর্মের অবসান ঘটানো। জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, তিনি হাসপাতালের প্রশাসনিক কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে অনিয়ম করেছেন। কোনো ধরনের বৈধ নির্বাচনী প্রক্রিয়া ছাড়াই, নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাগজে-কলমে কমিটি গঠন করে তিনি ক্ষমতায় বসেছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে এই ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন। হাসপাতালের নিয়মিত আয়-ব্যয়ের মধ্যে ঘাপলা সৃষ্টি করে তিনি এবং তার সহযোগীরা বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্বজনপ্রীতি ও অবৈধ নিয়োগ
জাহাঙ্গীর চৌধুরী তার স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের অবৈধভাবে হাসপাতালের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগের মাধ্যমে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বজনদের এসব পদে বসিয়ে হাসপাতালের আয় থেকে অবৈধভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে, হিসাবরক্ষক বেলাল এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে তিনি “ডিসকাউন্ট” এর নামে হাসপাতালের আয় থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
আন্দোলনের মূল দাবি
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের জীবন সদস্য, ডাক্তার, এবং কর্মচারীরা জাহাঙ্গীর চৌধুরী ও তার সহযোগীদের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মূল দাবি হলো: জাহাঙ্গীর চৌধুরী এবং তার সহযোগীদের হাসপাতালের প্রবেশ চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হবে। জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে গঠিত অবৈধ কমিটি বাতিল করতে হবে এবং সঠিকভাবে নির্বাচন করে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া আত্মীয়স্বজনদের চাকরি থেকে অপসারণ করতে হবে। জাহাঙ্গীর এবং তার সহযোগীদের দ্বারা আত্মসাৎ করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে হবে। হাসপাতালের আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আনার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। অপকর্মের সহযোগীরা চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলন কারীরা। তারা আরো অভিযোগ করেছেন যে, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত কিছু ব্যক্তি, যারা জাহাঙ্গীর চৌধুরীর অপকর্মে সহযোগিতা করেছেন, এখন সেই মা ও শিশু হাসপাতালের হাসপাতালের আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও তারা অনৈতিক সুবিধা নেওয়া ও ক্ষমতার লোভে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, যা হাসপাতালের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। আন্দোলনকারীরা জানান, এই ব্যক্তিদের প্রকৃত চেহারা জনসম্মুখে উন্মোচন করার জন্য শীঘ্রই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। আন্দোলনের প্রতি সমর্থন চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামসহ বিভিন্ন সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংগঠন এই আন্দোলনের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়েছে। ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন বলেন, “চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। আমরা এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার জন্য জাহাঙ্গীর চৌধুরী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে একতাবদ্ধ।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীর চৌধুরী এবং তার অপকর্মের সহযোগীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলতে থাকবে। প্রয়োজন হলে, জাতীয় পর্যায়ে এই আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেওয়া হবে এবং প্রেস ব্রিফিং, মানববন্ধনসহ নানা ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হবে। এই আন্দোলন শুধু চট্টগ্রামের ডায়াবেটিক হাসপাতাল নয়, বরং গোটা দেশের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হলো, দুর্নীতিমুক্ত একটি সুশাসিত হাসপাতাল ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে সবার জন্য সেবা পাওয়া নিশ্চিত হবে এবং স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, এবং অদক্ষতার স্থান থাকবে না।
চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশা
চট্টগ্রামবাসী আশা করছে যে, এই আন্দোলনের মাধ্যমে জাহাঙ্গীর চৌধুরী ও তার সহযোগীদের কুকীর্তি প্রকাশ পাবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল রক্ষা আন্দোলন:
সচেতন জীবন সদস্যদের সংহতি ও কমিটির কার্যক্রম চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে সচেতন জীবন সদস্যরা একটি যুক্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তারা দৃঢ় প্রত্যয়ে জাহাঙ্গীর চৌধুরী এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এই আন্দোলনকে সফল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁদের লক্ষ্য হলো, হাসপাতালের সুনাম ফিরিয়ে আনা এবং চিকিৎসা সেবার মানকে উন্নত করা। সচেতন জীবন সদস্যদের একাত্মতা জীবন সদস্যরা একত্রিত হয়ে আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা বিশ্বাস করেন, স্বাস্থ্যসেবার মান সুরক্ষার জন্য এই আন্দোলন অপরিহার্য। সচেতন এই সদস্যরা দাবি করেন, হাসপাতালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের যৌক্তিক আন্দোলন শুধু তাদের স্বার্থেই নয়, বরং পুরো সমাজের স্বার্থে। ডায়াবেটিক হাসপাতাল রক্ষা কমিটি চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল রক্ষা কমিটি এই আন্দোলনকে সংগঠিত ও সুসংহত করার জন্য কাজ করছে। কমিটির সদস্যরা হাসপাতালের অবকাঠামো এবং পরিচালনা পদ্ধতি সংস্কারের জন্য একত্রিত হয়েছেন। তারা আশা করছেন, সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। সরকারের সহায়তা এবং শৃঙ্খলা কমিটি সরকারের মনোনীত শৃঙ্খলা কমিটির সাথে সহযোগিতা করে জাহাঙ্গীর চৌধুরীসহ সকল দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য এই কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাদের লক্ষ্য হলো, হাসপাতালের সকল অনিয়ম এবং দুর্নীতির উচ্ছেদ করা।চূড়ান্ত লক্ষ্য এই আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো, জাহাঙ্গীর চৌধুরী এবং তার সহযোগীদের হাসপাতাল থেকে চিরতরে বিতাড়িত করা এবং একটি সুশাসিত, দুর্নীতিমুক্ত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সচেতন জীবন সদস্যরা দৃঢ় বিশ্বাসী যে, তাদের যৌক্তিক আন্দোলন সফল হলে হাসপাতালের সেবা ও কার্যক্রম নতুন করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সচেতন জীবন সদস্যরা এই আন্দোলনের সফলতা কামনা করে জানিয়ে দেন, “আমরা একসঙ্গে কাজ করে এই হাসপাতালকে রক্ষা করব এবং এর সুনাম পুনরুদ্ধার করব। আমাদের উদ্দেশ্য শুধু হাসপাতালের উন্নয়ন নয়, বরং স্বাস্থ্যসেবার মান সুরক্ষা করা।” সমর্থন ও সংগঠন
এই আন্দোলনে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ, সুশীল সমাজ, এবং চিকিৎসা পেশাদাররা সমর্থন জানাচ্ছেন। চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল রক্ষা কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনকে আরো শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছেন, যাতে হাসপাতালের স্বার্থে সবধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়। চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশা, এই আন্দোলন তাদের স্বপ্নের হাসপাতাল গড়ে তুলবে, যেখানে সবাই সঠিক চিকিৎসা সেবা পাবে এবং স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির স্থান থাকবে না। চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালর ডাক্তার, নার্স,কর্মকর্তা কর্মচারী ও জীবন সদস্যদের যৌথভাবে ১৮ ই অক্টোবর জুমা’র নামাজের আগে সকাল থেকে দীর্ঘ চার ঘন্টা ব্যাপী বাদপ্রতিবাদ মূলক প্রতিবাদী মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়, উক্ত মানববন্ধনে উপরোক্ত বক্তব্য উপস্হপন করা হয়।