পাথর সরবরাহ থেকে নগদ টাকার লুট, শেখ হাসিনার পতনের পর রেজাউল করিম আত্মগোপনের অভিযোগ।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও তার দীর্ঘদিনের সহযোগী বালু কামালের বিরুদ্ধে টেন্ডার ছাড়া পাথর সরবরাহের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। শেখ হাসিনার পতনের পর রেজাউল করিম চৌধুরীর আত্মগোপনে যাওয়ার খবর এবং তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা লুটের ঘটনার প্রেক্ষিতে এই অভিযোগগুলো আরও তীব্র হয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, রেজাউল করিম চৌধুরী বর্তমানে চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকায় এক বিএনপি নেতার আশ্রয়ে আত্মগোপনে আছেন বলে লোকমুখে শোনা যায় । আরো জানা গেছে, শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর তার বাসা থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকার নগদ অর্থ লুটপাট করা হয়েছিল। যদিও সেই অর্থের সিংহভাগ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি,তবে টাকা গুলো গুলো টেন্ডার বিহীন কাজের কমিশনের অবৈধ বলে নগদ টাকা বলে জানাযায়, রেজাউল করিম সিটি কপোরেশনের তিন বছরের মেয়র থাকাকালীন স্মরণকালে দুর্নীতি করেছে, তার ঘুষের মাত্রা পরিমাণ বেশি, বিশেষ করে এই কামালের মাধ্যমে পাথর ও বালু সরবরাহের পাশাপাশি অন্যান্য ঠিকাদারদের সাথে নগদ কমিশন বাণিজ্য করতেন বলে অসংখ্য কথা বাজারে প্রচার রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে তার সহযোগী বালু কামালের হেফাজতে এখনো বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বালু কামালের গ্রেফতারের মাধ্যমে এই দুর্নীতি ও অর্থ লুটপাটের প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হবে।
রেজাউল করিম চৌধুরীর মেয়র হওয়ার আগেই তার ও বালু কামালের মধ্যে গভীর ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, তারা অবৈধভাবে বালু চুরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মেয়র হওয়ার পর রেজাউল করিম টেন্ডার ছাড়াই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন প্রকল্পে পাথর সরবরাহের জন্য বালু কামালকে কাজ প্রদান করতেন। এর বিনিময়ে তিনি বিপুল পরিমাণ কমিশন গ্রহণ করতেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, বালু কামালকে সরাসরি মেয়রের নির্দেশেই পাথর সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং এর জন্য কামালকে ৫% কমিশন প্রদান করতে হতো, যা মেয়রের ব্যক্তিগত তহবিলে জমা হত।
২০২১-২২ অর্থবছরে টেন্ডার ছাড়া পাথর সরবরাহের জন্য বিলের পরিমাণ ছিল প্রায় ১০.১৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৫ কোটি টাকা এখনও বাকি রয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই বিলের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩০.৯১ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১২ কোটি টাকা ইতোমধ্যেই পরিশোধ করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২২৪.৭৮ কোটি টাকার প্রকল্প চলছে এবং এর মধ্যে ২২২.২৩ কোটি টাকা পেমেন্ট হয়েছে। এই সমস্ত প্রকল্পে টেন্ডারবিহীনভাবে কাজ আদায় করে প্রচুর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।চট্টগ্রামের সরবরাহকারীরা দীর্ঘদিন ধরে এই অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছেন। তাদের দাবি, মেয়র রেজাউল করিম ও বালু কামালের গোপন ব্যবসায়িক চক্রের কারণে প্রকৃত সরবরাহকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই টেন্ডারবিহীন কার্যক্রমের কারণে স্বচ্ছতার অভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং সিটি কর্পোরেশনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে, এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সকলকে দায়িত্বের আওতায় আনা হোক এবং বালু কামালকে গ্রেফতার করে পুরো দুর্নীতির চক্রটি উন্মোচিত করা হোক। তার হেফাজতে থাকা অর্থ উদ্ধার এবং টাকার মালয়েশিয়ায় পাচারের অভিযোগগুলো তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখার জন্য উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। এছাড়া, রেজাউল করিমের স্ত্রীও এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডে পাটনার হিসেবে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।