“পাঠক বন্ধুদের প্রতি ক্ষমাপ্রার্থনা”
সম্মানিত পাঠক বন্ধুরা, এই লেখায় যদি কোনো ভুল মন্তব্য বা কথা থেকে থাকে, তবে আপনাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। এমন একটি সময়ে এই কঠিন লেখাটি লিখতে বসেছি, যখন দেশ ও জাতি এক সংকটময় সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রতিটি মুহূর্তই যেন কঠিন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। তবুও, এক বুক আশা নিয়ে আগামীদিনে একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখার স্বপ্ন দেখি। সেই আশায়, বিগত সময়ের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোতে কী কী ভুল ছিল, তা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত মতামতের ভিত্তিতে এই লেখাটি আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আশা করি, এই লেখাটি মনযোগ দিয়ে আপনারা পাঠ করে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করবেন এবং আমার লেখা থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম উল্লেখযোগ্য দুটি অধ্যায় হলো ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ড এবং ২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আকস্মিক দেশত্যাগ। এই দুটি ঘটনাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। এই কলামে আমরা বঙ্গবন্ধুর হত্যার কারণ, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পেছনের প্রেক্ষাপট এবং তাদের রাজনৈতিক জীবনের ভুলগুলো বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কারণ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যা কাণ্ডের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ ছিল, যা ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে বিশ্লেষণ করা জরুরি।
ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এবং বাকশাল প্রতিষ্ঠা, বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে রাষ্ট্র ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল, যা অনেকের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দেয়। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি “বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ” (বাকশাল) গঠন করেন এবং সমস্ত রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করেন। এই সিদ্ধান্তকে গণতন্ত্রবিরোধী ও একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়। এতে ক্ষমতাসীন দলসহ বিরোধী মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যা ষড়যন্ত্রের জন্ম দেয়।
অর্থনৈতিক সংকট ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা, মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক ছিল। দুর্ভিক্ষ, খাদ্য সংকট, এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা জনমনে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি করে। প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও দুর্নীতিও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
সামরিক অসন্তোষ এবং ষড়যন্ত্র, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি অংশ সরকারকে অপ্রতুল মনে করছিল এবং তাদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। তাদের একটি অংশ সরাসরি বঙ্গবন্ধুর শাসনের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল এবং তারা মনে করেছিল, দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য একটি পরিবর্তন প্রয়োজন। এই অসন্তোষ থেকেই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র গড়ে ওঠে।
আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক চক্রান্ত, কিছু ঐতিহাসিক এবং গবেষক বিশ্বাস করেন, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেও বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। বিশেষ করে, যেসব দেশ বাংলাদেশকে সঠিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি এবং যাদের স্বার্থের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নীতি সাংঘর্ষিক ছিল, তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
২০২৪ সালে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের কারণ ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার আকস্মিক দেশত্যাগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গভীর সংকটের ইঙ্গিত দেয়। যদিও এর সুনির্দিষ্ট কারণ নিয়ে এখনও নানা জল্পনা-কল্পনা রয়েছে, তবে কয়েকটি বিষয় এখানে বিবেচ্য।
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সংকট, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার অভিযোগ বহুদিন ধরেই উঠছে। নির্বাচনী অনিয়ম, মানবাধিকার লঙ্ঘন, এবং বাকস্বাধীনতা হরণের অভিযোগে দেশজুড়ে অস্থিরতা বেড়ে চলছিল। সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান গণবিক্ষোভ এবং বিরোধী দলের প্রতিবাদ প্রমাণ করে যে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা মারাত্মক সংকটে ছিল।
অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক চাপ, শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশি-বিদেশি চাপ বাড়ছিল। বিশেষ করে, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতান্ত্রিক সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনা বাড়তে থাকে। বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি এবং অর্থনৈতিক অবরোধের ঝুঁকি হয়তো তার দেশত্যাগের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং অভ্যন্তরীণ কলহ,শেখ হাসিনার নিজ দলের মধ্যেও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছিল। তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছিল বলেও অনেকের ধারণা। দলের অভ্যন্তরে অনেকেই তার নীতির বিরোধিতা করতে শুরু করে, যা সরকার এবং দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে উস্কে দেয়।
বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভুল, বঙ্গবন্ধুর ভুল হলো-
বাকশাল প্রতিষ্ঠা ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা, বঙ্গবন্ধুর বাকশাল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তকে তার রাজনৈতিক জীবনের একটি বড় ভুল হিসেবে দেখা হয়। এটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
প্রশাসনিক দুর্বলতা ও দুর্নীতির প্রশ্রয়, তার শাসনামলে প্রশাসনিক কাঠামো দুর্বল ছিল এবং কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতিও ব্যাপক ছিল। এসব কারণে জনগণের আস্থা কমতে শুরু করে।
সামরিক বাহিনীর অসন্তোষ অবহেলা, সামরিক বাহিনীর কিছু অংশের অসন্তোষকেও যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়নি, যা ষড়যন্ত্রের ভিত্তি গড়ে তোলে।
শেখ হাসিনার ভুল,
দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি, শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থায় দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। এটি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা ও দক্ষতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার সংকোচন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সীমিত করা, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর উপর দমনপীড়ন, এবং নাগরিক স্বাধীনতা হরণের অভিযোগ তার শাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নেতিবাচক দিক।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অবনতি, কিছু আন্তর্জাতিক বিষয়ে কৌশলগত ভুল সিদ্ধান্ত এবং কঠোর নীতির কারণে দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে, যা অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপে পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার কন্যা শেখ হাসিনা, উভয়েই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ভিন্ন সময়ে এবং ভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে। তাদের শাসনামলে সাফল্য যেমন ছিল, তেমনি ভুল সিদ্ধান্তও ছিল। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে একটি গণতান্ত্রিক, সুশাসিত, এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সবার।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দুরদর্শিতার অভাব এবং ক্ষমতার অহংকার: এক বিশ্লেষণ”
শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সবচেয়ে আলোচিত এবং প্রভাবশালী নেত্রী। তার নেতৃত্বের সময়ে দেশ অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে এগিয়ে গেলেও, তার রাজনৈতিক দুরদর্শিতার অভাব, চাটুকারদের প্রভাব, এবং ক্ষমতার অহংকার সম্পর্কে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। বিশেষ করে জামাত-বিরোধী পদক্ষেপ, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি অসহিষ্ণু আচরণ, এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তার নেতৃত্বের প্রতি নানা প্রশ্ন তুলেছে। এই কলামে আমরা এই সব বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা করবো।
রাজনৈতিক দুরদর্শিতার অভাব শেখ হাসিনার শাসনামলে এমন অনেক সিদ্ধান্ত ও কার্যকলাপ দেখা গেছে, যা রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের দিক থেকে সমালোচিত হয়েছে। এসবের মধ্যে প্রধান কিছু কারণ নিম্নরূপ:
প্রধান বিরোধী দলকে দমনের কৌশল, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের একটি বড় রাজনৈতিক ভুল ছিল প্রধান বিরোধী দলগুলোর উপর লাগাতার দমনপীড়ন চালানো। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, এবং মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাদের কণ্ঠরোধ করার অভিযোগ ব্যাপকভাবে উঠেছে। এটি গণতান্ত্রিক পরিবেশের বিপরীতে গিয়ে একটি নির্ভরযোগ্য ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি গঠনে ব্যর্থতা হিসেবে দেখা যায়।
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর হস্তক্ষেপ, শেখ হাসিনার শাসনামলে আদালত, নির্বাচন কমিশন, এবং প্রশাসনের ওপর প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের হস্তক্ষেপ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তিকে দুর্বল করে তোলে এবং নাগরিকদের আস্থা হারায়।
স্বাধীন মত প্রকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা, সমালোচকদের মতে, শেখ হাসিনার সরকার বিরুদ্ধ মতামতকে সহ্য করতে পারেনি। সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের উপর দমনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন” এর মতো আইন প্রণয়ন করে বাকস্বাধীনতা সীমিত করা হয়, যা রাজনৈতিক দুরদর্শিতার অভাবের দিক থেকে সমালোচিত হয়েছে।
দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে দলীয়করণ এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। এসব পদক্ষেপ সরকারের সঠিকতা ও নিরপেক্ষতা সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করেছে। এটি কেবল বিরোধী দল নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও সরকারের প্রতি আস্থা কমিয়েছে।
চাটুকারিতার প্রতি নির্ভরতা
চাটুকারদের প্রভাব এবং সঠিক পরামর্শের অভাব,শেখ হাসিনার প্রশাসনে কিছু ব্যক্তি আছেন যারা চাটুকারিতা করে তার কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করেন। এই চাটুকাররা নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য নেত্রীর কাছে সবসময় প্রশংসা করে এবং বাস্তব সমস্যা আড়াল করে রাখে। এর ফলে, শেখ হাসিনা অনেক সময় সঠিক তথ্য ও বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে জানেন না, যা ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে নিয়ে যায়।
চাটুকারদের কারণে ভুল সিদ্ধান্ত ও জন বিচ্ছিন্নতা চাটুকাররা অনেক সময় বাস্তব পরিস্থিতি এবং জনগণের অনুভূতি সম্পর্কে নেত্রীকে বিভ্রান্ত করে, যা জনগণের সঙ্গে নেত্রীর দূরত্ব তৈরি করে। বাস্তব পরিস্থিতি না বুঝে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনেক সময় জন বিচ্ছিন্নতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
জামাত-বিরোধী পদক্ষেপ এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি চাপ প্রয়োগ
জামাত-বিরোধী পদক্ষেপ, শেখ হাসিনার সরকার জামাত-ই-ইসলামি দলকে রাজনীতি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। জামাতের নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হয় এবং দলটির উপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। যদিও যুদ্ধাপরাধের বিচার একটি ন্যায়সংগত পদক্ষেপ ছিল, তবে এ প্রক্রিয়ায় অনেকের মতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও একপেশে আচরণ করা হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি শত্রুতাপূর্ণ আচরণ, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে সরকারের নানা ধরনের চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংককে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা, তাকে অবসরের জন্য চাপ দেওয়া এবং ব্যাংকিং খাতে তার ভূমিকা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করা—এসব বিষয় শেখ হাসিনার প্রশাসনের প্রতি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকের মতে, এটি তার প্রশাসনের অহংকার এবং সহিষ্ণুতার অভাবের পরিচায়ক।
ক্ষমতার অহংকার
ক্ষমতার প্রতি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও অহংকার, দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে শেখ হাসিনার মধ্যে ক্ষমতার প্রতি এক ধরনের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও অহংকার তৈরি হয়েছে বলে অনেকের মত। ক্ষমতার প্রতি এই আত্মবিশ্বাসের কারণে তিনি অনেক সময় বাস্তব পরিস্থিতি বা জনমতের কথা উপেক্ষা করেছেন এবং নিজ সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত মনে করেছেন।
বিরোধী দল ও সমালোচকদের প্রতি অসহিষ্ণুতা, ক্ষমতার অহংকারের কারণে শেখ হাসিনার প্রশাসন বিরোধী দল ও সমালোচকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনের স্বাভাবিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এটা গণতন্ত্রের মূলনীতি এবং সুশাসনের পরিপন্থী।
শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে অনেক অর্জন যেমন রয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক দুরদর্শিতার অভাব, চাটুকারিতার উপর নির্ভরতা, ক্ষমতার অহংকার, এবং প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপও কম ছিল না। এসব কারণে তার প্রশাসন গণতান্ত্রিক চেতনা থেকে অনেক সময় বিচ্যুত হয়েছে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভাজন ও অসন্তোষ বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য এই বিষয়গুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি। “গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ এবং রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগ: বর্তমান সংকট ও ন্যায়বিচারের দাবি”
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছাত্র ও জনতার আন্দোলন বরাবরই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার মাধ্যমে জনগণ তাদের মতামত প্রকাশ করে, সরকারের নীতির বিরোধিতা করে এবং নিজেদের দাবিদাওয়া তুলে ধরে। কিন্তু বর্তমান সময়ে ছাত্র ও জনতার আন্দোলনকে গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে মেনে না নিয়ে তাদের উপর রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগ এবং গণহত্যার অভিযোগ ওঠা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। পুলিশের নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং জাতিকে বিপদের মুখোমুখি করছে। এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে এবং তাদের কি শাস্তি হওয়া উচিত, এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা প্রয়োজন।
গণতান্ত্রিক অধিকার এবং রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগ
প্রথমত, এটি মনে রাখা জরুরি যে গণতন্ত্রের অন্যতম মূল ভিত্তি হলো নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং প্রতিবাদ করার অধিকার। কিন্তু বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার যে কোনো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বা আন্দোলনকেই রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এর ফলস্বরূপ, সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা বলপ্রয়োগের ঘটনা বেড়ে চলেছে। ন্যূনতম সামঞ্জস্যতা ছাড়াই সাধারণ নাগরিকের উপর বলপ্রয়োগ ও সহিংসতা চালানো হচ্ছে, যা জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের উপর বলপ্রয়োগ, ইতিহাস সাক্ষী, ছাত্র এবং জনতার আন্দোলন কখনো কখনো রাষ্ট্রের গতি পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনগুলোকে দমন করতে যেভাবে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী বলপ্রয়োগ করছে, তা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। সাধারণ মানুষের কণ্ঠরোধ করতে গিয়ে সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্যাতন, গ্রেপ্তার, এবং এমনকি হত্যা পর্যন্ত করেছে। এ ধরনের ঘটনা রাষ্ট্রের বৈধতা এবং নৈতিকতা উভয়কেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।
পুলিশি নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যা, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ উঠেছে, বিশেষ করে তারা নিরস্ত্র ছাত্র ও সাধারণ জনগণের উপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছে এবং এমনকি সরাসরি গুলি চালাচ্ছে। এতে অনেক নিরীহ নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে। এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং পুলিশের বলপ্রয়োগ একটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে।
দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়ার দায়ী কারা?
এই অবস্থার জন্য দায়ী প্রধানত সরকার ও তার মদদপুষ্ট বাহিনী। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকার জনমতের তোয়াক্কা না করে স্বৈরাচারী কৌশল অবলম্বন করছে। এর ফলে দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে এবং একটি আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।
সরকারের অগণতান্ত্রিক নীতি, সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণ এবং ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার উদ্দেশ্যে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের কণ্ঠরোধের কৌশলকে দায়ী করা যায়। এই ধরনের নীতি ও কার্যকলাপ রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে দুর্বল করে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা, পুলিশের ভূমিকা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ হলেও, তাদেরকে সরকার যখন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, তখন তারা দমন-পীড়নে লিপ্ত হয়। এর ফলে মানুষের উপর সহিংসতা বাড়ে, এবং পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। চাটুকার এবং উপদেষ্টাদের ভূমিকা, অনেক চাটুকার, যাদের মূল লক্ষ্য নিজেদের ক্ষমতা এবং সম্পদ বৃদ্ধি করা, তারা নেত্রী বা নেতৃবৃন্দকে ভুল পথে চালিত করে। বাস্তব পরিস্থিতি ও জনগণের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য না দিয়ে, তারা নেতাদের ক্ষমতায় টিকে থাকতে আরও বলপ্রয়োগের পরামর্শ দেয়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
এই ধরনের রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগ এবং গণহত্যার জন্য যারা দায়ী, তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা উচিত। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা প্রয়োজন, যা এই হত্যাকাণ্ড এবং বলপ্রয়োগের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করবে। যারা এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ক্ষমতার ভারসাম্য ও রাজনৈতিক সংস্কার, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে এবং রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, মানবাধিকার সংক্রান্ত আইনগুলোকে শক্তিশালী করা এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের ভূমিকা নিশ্চিত করা।
গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের এই পরিস্থিতি শুধু বাংলাদেশ নয়, যে কোনো রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। যারা এই অপরাধের সাথে জড়িত তাদের অবশ্যই শাস্তি পাওয়া উচিত এবং একটি সুস্থ, সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক দেশ গঠনের জন্য সবার সচেতন হওয়া জরুরি। রাষ্ট্রের উচিত জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখা, যাতে দেশের ভবিষ্যৎ একটি নিরাপদ ও সমৃদ্ধ পথে অগ্রসর হতে পারে শেখ হাসিনার রাজনীতিতে ফেরা: আওয়ামী লীগের করণীয়”
শেখ হাসিনা, দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম প্রভাবশালী নেত্রী হিসেবে থাকলেও, তার শাসনামলের শেষ পর্বে অনেক বিতর্ক, সমালোচনা এবং নৈতিক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তার রাজনীতিতে ফেরা উচিত হবে কিনা, তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। তবে, যদি শেখ হাসিনা রাজনীতিতে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় রয়েছে যা তাদের ভবিষ্যৎ ও গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণ করতে সহায়তা করবে।
শেখ হাসিনার রাজনীতিতে আসাটা উচিত হবে কিনা?
শেখ হাসিনার রাজনীতিতে আসাটা প্রয়োজন কিনা, তা নির্ভর করবে মূলত তার নেতৃত্বে বিগত সময়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি ও দলটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার উপর। দলের মধ্যকার চাটুকার ও দুর্নীতিবাজদের প্রভাব দূর করা না গেলে, দল আরও বিতর্কিত হবে।
নতুন নেতৃত্বের সুযোগ দেওয়া, বর্তমান সময়ের অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্বের সুযোগ দেওয়া উচিত, যা তরুণ ও উদ্যমী নেতাদের মাধ্যমে দলের ঐতিহ্য ও আদর্শ বজায় রেখে গণমানুষের কাছে পুনরায় গ্রহণযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে পারে।
শেখ হাসিনা রাজনীতিতে ফিরলে আওয়ামী লীগের করণীয়
যদি শেখ হাসিনা রাজনীতিতে ফিরে আসেন, তবে আওয়ামী লীগের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি,দলীয় কাঠামোতে সংস্কার, আওয়ামী লীগের উচিত দলের অভ্যন্তরে দৃঢ় সংস্কার আনা, যেখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্বের নির্বাচন হবে এবং যোগ্য ও নিষ্ঠাবান নেতাদের সামনেরবাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড থেকে শেখ হাসিনার দেশত্যাগ”
মো. কামাল উদ্দিন।
“পাঠক বন্ধুদের প্রতি ক্ষমাপ্রার্থনা”
সম্মানিত পাঠক বন্ধুরা, এই লেখায় যদি কোনো ভুল মন্তব্য বা কথা থেকে থাকে, তবে আপনাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। এমন একটি সময়ে এই কঠিন লেখাটি লিখতে বসেছি, যখন দেশ ও জাতি এক সংকটময় সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রতিটি মুহূর্তই যেন কঠিন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। তবুও, এক বুক আশা নিয়ে আগামীদিনে একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখার স্বপ্ন দেখি। সেই আশায়, বিগত সময়ের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোতে কী কী ভুল ছিল, তা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত মতামতের ভিত্তিতে এই লেখাটি আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আশা করি, এই লেখাটি মনযোগ দিয়ে আপনারা পাঠ করে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করবেন এবং আমার লেখা থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম উল্লেখযোগ্য দুটি অধ্যায় হলো ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ড এবং ২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আকস্মিক দেশত্যাগ। এই দুটি ঘটনাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। এই কলামে আমরা বঙ্গবন্ধুর হত্যার কারণ, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পেছনের প্রেক্ষাপট এবং তাদের রাজনৈতিক জীবনের ভুলগুলো বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কারণ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যা কাণ্ডের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ ছিল, যা ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে বিশ্লেষণ করা জরুরি।
ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এবং বাকশাল প্রতিষ্ঠা, বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে রাষ্ট্র ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল, যা অনেকের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দেয়। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি “বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ” (বাকশাল) গঠন করেন এবং সমস্ত রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করেন। এই সিদ্ধান্তকে গণতন্ত্রবিরোধী ও একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়। এতে ক্ষমতাসীন দলসহ বিরোধী মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যা ষড়যন্ত্রের জন্ম দেয়।
অর্থনৈতিক সংকট ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা, মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক ছিল। দুর্ভিক্ষ, খাদ্য সংকট, এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা জনমনে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি করে। প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও দুর্নীতিও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
সামরিক অসন্তোষ এবং ষড়যন্ত্র, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি অংশ সরকারকে অপ্রতুল মনে করছিল এবং তাদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। তাদের একটি অংশ সরাসরি বঙ্গবন্ধুর শাসনের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল এবং তারা মনে করেছিল, দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য একটি পরিবর্তন প্রয়োজন। এই অসন্তোষ থেকেই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র গড়ে ওঠে।
আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক চক্রান্ত, কিছু ঐতিহাসিক এবং গবেষক বিশ্বাস করেন, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেও বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। বিশেষ করে, যেসব দেশ বাংলাদেশকে সঠিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি এবং যাদের স্বার্থের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নীতি সাংঘর্ষিক ছিল, তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
২০২৪ সালে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের কারণ ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার আকস্মিক দেশত্যাগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গভীর সংকটের ইঙ্গিত দেয়। যদিও এর সুনির্দিষ্ট কারণ নিয়ে এখনও নানা জল্পনা-কল্পনা রয়েছে, তবে কয়েকটি বিষয় এখানে বিবেচ্য।
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সংকট, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার অভিযোগ বহুদিন ধরেই উঠছে। নির্বাচনী অনিয়ম, মানবাধিকার লঙ্ঘন, এবং বাকস্বাধীনতা হরণের অভিযোগে দেশজুড়ে অস্থিরতা বেড়ে চলছিল। সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান গণবিক্ষোভ এবং বিরোধী দলের প্রতিবাদ প্রমাণ করে যে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা মারাত্মক সংকটে ছিল।
অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক চাপ, শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশি-বিদেশি চাপ বাড়ছিল। বিশেষ করে, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতান্ত্রিক সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনা বাড়তে থাকে। বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি এবং অর্থনৈতিক অবরোধের ঝুঁকি হয়তো তার দেশত্যাগের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং অভ্যন্তরীণ কলহ,শেখ হাসিনার নিজ দলের মধ্যেও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছিল। তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছিল বলেও অনেকের ধারণা। দলের অভ্যন্তরে অনেকেই তার নীতির বিরোধিতা করতে শুরু করে, যা সরকার এবং দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে উস্কে দেয়।
বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভুল, বঙ্গবন্ধুর ভুল হলো-
বাকশাল প্রতিষ্ঠা ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা, বঙ্গবন্ধুর বাকশাল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তকে তার রাজনৈতিক জীবনের একটি বড় ভুল হিসেবে দেখা হয়। এটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
প্রশাসনিক দুর্বলতা ও দুর্নীতির প্রশ্রয়, তার শাসনামলে প্রশাসনিক কাঠামো দুর্বল ছিল এবং কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতিও ব্যাপক ছিল। এসব কারণে জনগণের আস্থা কমতে শুরু করে।
সামরিক বাহিনীর অসন্তোষ অবহেলা, সামরিক বাহিনীর কিছু অংশের অসন্তোষকেও যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়নি, যা ষড়যন্ত্রের ভিত্তি গড়ে তোলে।
শেখ হাসিনার ভুল,
দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি, শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থায় দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। এটি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা ও দক্ষতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার সংকোচন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সীমিত করা, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর উপর দমনপীড়ন, এবং নাগরিক স্বাধীনতা হরণের অভিযোগ তার শাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নেতিবাচক দিক।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অবনতি, কিছু আন্তর্জাতিক বিষয়ে কৌশলগত ভুল সিদ্ধান্ত এবং কঠোর নীতির কারণে দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে, যা অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপে পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার কন্যা শেখ হাসিনা, উভয়েই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ভিন্ন সময়ে এবং ভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে। তাদের শাসনামলে সাফল্য যেমন ছিল, তেমনি ভুল সিদ্ধান্তও ছিল। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে একটি গণতান্ত্রিক, সুশাসিত, এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সবার।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দুরদর্শিতার অভাব এবং ক্ষমতার অহংকার: এক বিশ্লেষণ”
শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সবচেয়ে আলোচিত এবং প্রভাবশালী নেত্রী। তার নেতৃত্বের সময়ে দেশ অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে এগিয়ে গেলেও, তার রাজনৈতিক দুরদর্শিতার অভাব, চাটুকারদের প্রভাব, এবং ক্ষমতার অহংকার সম্পর্কে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। বিশেষ করে জামাত-বিরোধী পদক্ষেপ, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি অসহিষ্ণু আচরণ, এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তার নেতৃত্বের প্রতি নানা প্রশ্ন তুলেছে। এই কলামে আমরা এই সব বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা করবো।
রাজনৈতিক দুরদর্শিতার অভাব শেখ হাসিনার শাসনামলে এমন অনেক সিদ্ধান্ত ও কার্যকলাপ দেখা গেছে, যা রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের দিক থেকে সমালোচিত হয়েছে। এসবের মধ্যে প্রধান কিছু কারণ নিম্নরূপ:
প্রধান বিরোধী দলকে দমনের কৌশল, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের একটি বড় রাজনৈতিক ভুল ছিল প্রধান বিরোধী দলগুলোর উপর লাগাতার দমনপীড়ন চালানো। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, এবং মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাদের কণ্ঠরোধ করার অভিযোগ ব্যাপকভাবে উঠেছে। এটি গণতান্ত্রিক পরিবেশের বিপরীতে গিয়ে একটি নির্ভরযোগ্য ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি গঠনে ব্যর্থতা হিসেবে দেখা যায়।
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর হস্তক্ষেপ, শেখ হাসিনার শাসনামলে আদালত, নির্বাচন কমিশন, এবং প্রশাসনের ওপর প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের হস্তক্ষেপ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তিকে দুর্বল করে তোলে এবং নাগরিকদের আস্থা হারায়।
স্বাধীন মত প্রকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা, সমালোচকদের মতে, শেখ হাসিনার সরকার বিরুদ্ধ মতামতকে সহ্য করতে পারেনি। সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের উপর দমনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন” এর মতো আইন প্রণয়ন করে বাকস্বাধীনতা সীমিত করা হয়, যা রাজনৈতিক দুরদর্শিতার অভাবের দিক থেকে সমালোচিত হয়েছে।
দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে দলীয়করণ এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। এসব পদক্ষেপ সরকারের সঠিকতা ও নিরপেক্ষতা সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করেছে। এটি কেবল বিরোধী দল নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও সরকারের প্রতি আস্থা কমিয়েছে।
চাটুকারিতার প্রতি নির্ভরতা
চাটুকারদের প্রভাব এবং সঠিক পরামর্শের অভাব,শেখ হাসিনার প্রশাসনে কিছু ব্যক্তি আছেন যারা চাটুকারিতা করে তার কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করেন। এই চাটুকাররা নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য নেত্রীর কাছে সবসময় প্রশংসা করে এবং বাস্তব সমস্যা আড়াল করে রাখে। এর ফলে, শেখ হাসিনা অনেক সময় সঠিক তথ্য ও বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে জানেন না, যা ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে নিয়ে যায়।
চাটুকারদের কারণে ভুল সিদ্ধান্ত ও জন বিচ্ছিন্নতা চাটুকাররা অনেক সময় বাস্তব পরিস্থিতি এবং জনগণের অনুভূতি সম্পর্কে নেত্রীকে বিভ্রান্ত করে, যা জনগণের সঙ্গে নেত্রীর দূরত্ব তৈরি করে। বাস্তব পরিস্থিতি না বুঝে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনেক সময় জন বিচ্ছিন্নতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
জামাত-বিরোধী পদক্ষেপ এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি চাপ প্রয়োগ
জামাত-বিরোধী পদক্ষেপ, শেখ হাসিনার সরকার জামাত-ই-ইসলামি দলকে রাজনীতি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। জামাতের নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হয় এবং দলটির উপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। যদিও যুদ্ধাপরাধের বিচার একটি ন্যায়সংগত পদক্ষেপ ছিল, তবে এ প্রক্রিয়ায় অনেকের মতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও একপেশে আচরণ করা হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি শত্রুতাপূর্ণ আচরণ, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে সরকারের নানা ধরনের চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংককে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা, তাকে অবসরের জন্য চাপ দেওয়া এবং ব্যাংকিং খাতে তার ভূমিকা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করা—এসব বিষয় শেখ হাসিনার প্রশাসনের প্রতি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকের মতে, এটি তার প্রশাসনের অহংকার এবং সহিষ্ণুতার অভাবের পরিচায়ক।
ক্ষমতার অহংকার
ক্ষমতার প্রতি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও অহংকার, দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে শেখ হাসিনার মধ্যে ক্ষমতার প্রতি এক ধরনের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও অহংকার তৈরি হয়েছে বলে অনেকের মত। ক্ষমতার প্রতি এই আত্মবিশ্বাসের কারণে তিনি অনেক সময় বাস্তব পরিস্থিতি বা জনমতের কথা উপেক্ষা করেছেন এবং নিজ সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত মনে করেছেন।
বিরোধী দল ও সমালোচকদের প্রতি অসহিষ্ণুতা, ক্ষমতার অহংকারের কারণে শেখ হাসিনার প্রশাসন বিরোধী দল ও সমালোচকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনের স্বাভাবিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এটা গণতন্ত্রের মূলনীতি এবং সুশাসনের পরিপন্থী।
শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে অনেক অর্জন যেমন রয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক দুরদর্শিতার অভাব, চাটুকারিতার উপর নির্ভরতা, ক্ষমতার অহংকার, এবং প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপও কম ছিল না। এসব কারণে তার প্রশাসন গণতান্ত্রিক চেতনা থেকে অনেক সময় বিচ্যুত হয়েছে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভাজন ও অসন্তোষ বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য এই বিষয়গুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি। “গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ এবং রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগ: বর্তমান সংকট ও ন্যায়বিচারের দাবি”
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছাত্র ও জনতার আন্দোলন বরাবরই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার মাধ্যমে জনগণ তাদের মতামত প্রকাশ করে, সরকারের নীতির বিরোধিতা করে এবং নিজেদের দাবিদাওয়া তুলে ধরে। কিন্তু বর্তমান সময়ে ছাত্র ও জনতার আন্দোলনকে গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে মেনে না নিয়ে তাদের উপর রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগ এবং গণহত্যার অভিযোগ ওঠা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। পুলিশের নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং জাতিকে বিপদের মুখোমুখি করছে। এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে এবং তাদের কি শাস্তি হওয়া উচিত, এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা প্রয়োজন।
গণতান্ত্রিক অধিকার এবং রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগ
প্রথমত, এটি মনে রাখা জরুরি যে গণতন্ত্রের অন্যতম মূল ভিত্তি হলো নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং প্রতিবাদ করার অধিকার। কিন্তু বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার যে কোনো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বা আন্দোলনকেই রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এর ফলস্বরূপ, সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা বলপ্রয়োগের ঘটনা বেড়ে চলেছে। ন্যূনতম সামঞ্জস্যতা ছাড়াই সাধারণ নাগরিকের উপর বলপ্রয়োগ ও সহিংসতা চালানো হচ্ছে, যা জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের উপর বলপ্রয়োগ, ইতিহাস সাক্ষী, ছাত্র এবং জনতার আন্দোলন কখনো কখনো রাষ্ট্রের গতি পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনগুলোকে দমন করতে যেভাবে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী বলপ্রয়োগ করছে, তা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। সাধারণ মানুষের কণ্ঠরোধ করতে গিয়ে সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্যাতন, গ্রেপ্তার, এবং এমনকি হত্যা পর্যন্ত করেছে। এ ধরনের ঘটনা রাষ্ট্রের বৈধতা এবং নৈতিকতা উভয়কেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।
পুলিশি নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যা, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ উঠেছে, বিশেষ করে তারা নিরস্ত্র ছাত্র ও সাধারণ জনগণের উপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছে এবং এমনকি সরাসরি গুলি চালাচ্ছে। এতে অনেক নিরীহ নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে। এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং পুলিশের বলপ্রয়োগ একটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে।
দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়ার দায়ী কারা?
এই অবস্থার জন্য দায়ী প্রধানত সরকার ও তার মদদপুষ্ট বাহিনী। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকার জনমতের তোয়াক্কা না করে স্বৈরাচারী কৌশল অবলম্বন করছে। এর ফলে দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে এবং একটি আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।
সরকারের অগণতান্ত্রিক নীতি, সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণ এবং ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার উদ্দেশ্যে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের কণ্ঠরোধের কৌশলকে দায়ী করা যায়। এই ধরনের নীতি ও কার্যকলাপ রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে দুর্বল করে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা, পুলিশের ভূমিকা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ হলেও, তাদেরকে সরকার যখন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, তখন তারা দমন-পীড়নে লিপ্ত হয়। এর ফলে মানুষের উপর সহিংসতা বাড়ে, এবং পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। চাটুকার এবং উপদেষ্টাদের ভূমিকা, অনেক চাটুকার, যাদের মূল লক্ষ্য নিজেদের ক্ষমতা এবং সম্পদ বৃদ্ধি করা, তারা নেত্রী বা নেতৃবৃন্দকে ভুল পথে চালিত করে। বাস্তব পরিস্থিতি ও জনগণের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য না দিয়ে, তারা নেতাদের ক্ষমতায় টিকে থাকতে আরও বলপ্রয়োগের পরামর্শ দেয়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
এই ধরনের রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগ এবং গণহত্যার জন্য যারা দায়ী, তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা উচিত। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা প্রয়োজন, যা এই হত্যাকাণ্ড এবং বলপ্রয়োগের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করবে। যারা এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ক্ষমতার ভারসাম্য ও রাজনৈতিক সংস্কার, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে এবং রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, মানবাধিকার সংক্রান্ত আইনগুলোকে শক্তিশালী করা এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের ভূমিকা নিশ্চিত করা।
গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের এই পরিস্থিতি শুধু বাংলাদেশ নয়, যে কোনো রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। যারা এই অপরাধের সাথে জড়িত তাদের অবশ্যই শাস্তি পাওয়া উচিত এবং একটি সুস্থ, সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক দেশ গঠনের জন্য সবার সচেতন হওয়া জরুরি। রাষ্ট্রের উচিত জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখা, যাতে দেশের ভবিষ্যৎ একটি নিরাপদ ও সমৃদ্ধ পথে অগ্রসর হতে পারে শেখ হাসিনার রাজনীতিতে ফেরা: আওয়ামী লীগের করণীয়”
শেখ হাসিনা, দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম প্রভাবশালী নেত্রী হিসেবে থাকলেও, তার শাসনামলের শেষ পর্বে অনেক বিতর্ক, সমালোচনা এবং নৈতিক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তার রাজনীতিতে ফেরা উচিত হবে কিনা, তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। তবে, যদি শেখ হাসিনা রাজনীতিতে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় রয়েছে যা তাদের ভবিষ্যৎ ও গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণ করতে সহায়তা করবে।
শেখ হাসিনার রাজনীতিতে আসাটা উচিত হবে কিনা?
শেখ হাসিনার রাজনীতিতে আসাটা প্রয়োজন কিনা, তা নির্ভর করবে মূলত তার নেতৃত্বে বিগত সময়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি ও দলটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার উপর। দলের মধ্যকার চাটুকার ও দুর্নীতিবাজদের প্রভাব দূর করা না গেলে, দল আরও বিতর্কিত হবে।
নতুন নেতৃত্বের সুযোগ দেওয়া, বর্তমান সময়ের অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্বের সুযোগ দেওয়া উচিত, যা তরুণ ও উদ্যমী নেতাদের মাধ্যমে দলের ঐতিহ্য ও আদর্শ বজায় রেখে গণমানুষের কাছে পুনরায় গ্রহণযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে পারে।
শেখ হাসিনা রাজনীতিতে ফিরলে আওয়ামী লীগের করণীয়
যদি শেখ হাসিনা রাজনীতিতে ফিরে আসেন, তবে আওয়ামী লীগের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি,দলীয় কাঠামোতে সংস্কার, আওয়ামী লীগের উচিত দলের অভ্যন্তরে দৃঢ় সংস্কার আনা, যেখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্বের নির্বাচন হবে এবং যোগ্য ও নিষ্ঠাবান নেতাদের সামনের সারিতে নিয়ে আসা হবে।
জনসংযোগ ও আস্থা পুনরুদ্ধার, জনমানুষের মধ্যে যে আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা পুনরুদ্ধার করতে দলীয় নেতা সারিতে নিয়ে আসা হবে।
জনসংযোগ ও আস্থা পুনরুদ্ধার, জনমানুষের মধ্যে যে আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা পুনরুদ্ধার করতে দলীয় নেতা