ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে প্রতিনিধি নিয়ে এফবিসিসিআইতে নির্বাচন বোর্ড ও আপিল বোর্ড গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংগঠনটির সাধারণ (জিবি) সদস্যরা।
তারা বলছেন, এফবিসিসিআই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকেই প্রতিনিধি নিয়ে নির্বাচন ও আপিল বোর্ড গঠন করতে হবে। এমনকি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এফবিসিসিআইতে প্রশাসকও নিয়োগ করতে হবে ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে। আসন্ন এফবিসিসিআই নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনটির নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ আজ শনিবার সন্ধ্যায় শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন হলে (হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল -এর বিপরীতে) জিবি মেম্বারদের নিয়ে এক মিলন মেলার আয়োজন করেছে।
এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আফতাব জাবেদ বলেন, আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে রয়েছি। কিন্তু যেভাবে সম্প্রতি প্রশাসক মহোদয় নির্বাচন ও আপিল বোর্ড গঠন করলেন তাতে ব্যবসায়ীদের দাবি উপেক্ষা করা হয়েছে। তিনি নিজের মতো করে আগের করা নির্বাচন ও আপিল বোর্ড পুনর্বহাল করেছেন। এটা ঠিক হয়নি।
তিনি জানান, অতীতে এফবিসিসিআইয়ের প্রয়োজনে ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকেই প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম দেখা গেল। এজন্য আমরা চাই ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকেই প্রতিনিধি নিয়োগ করে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করা হউক।
ইলেকট্রিক খাতের এই উদ্যোক্তা জানান, বৈদ্যুতিক খাতের এসএমই উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে আমদানিতে রেয়াত সুবিধা দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। এছাড়া ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে দেশীয় বৈদ্যুতিক খাতে ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এফবিসিসিআই থেকে এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের দাবি পূরণ না হওয়ার মূল কারণ, নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদ নেই এফবিসিসিআইতে।
আসন্ন এফবিসিসিআই নির্বাচন, কর ও ভ্যাটনীতি এবং এসএমই উদ্যোক্তাদের নীতিগত সহায়তা বাড়ানো নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
এফবিসিসিআই নির্বাচনে পরিচালক প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে তিনি বলেন, ভ্যাট, ট্যাক্স, বন্দর, ও ব্যাংক সুদ নিয়ে ব্যবসায়ীরা নানারকম জটিলতায় আছেন। নির্বাচিত হতে পারলে ভ্যাট ও ট্যাক্স বিষয়ে ব্যবসায়ীদের পাশে থেকে যেকোন সমস্যা সমস্যা সমাধানে কাজ করা হবে। বৈদ্যুতিক খাতের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ আফতাব জাবেদ আরও বলেন, এ খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের আমদানিতে রেয়াত দিতে হবে। ১৫ শতাংরে পরিবর্তে ৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করা না হলে কেউ ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে না।
তিনি বলেন, বৈদ্যুতিক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি নির্ভরশীল। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের কাঁচামাল কমার্শিয়াল আমদানিকারকদের কাছ থেকে কেনা হয়ে থাকে। কাঁচামালের মূল মূল্যের ওপর ১০ শতাংশ যুক্ত করে বাজারজাতকরণ করে থাকে। রেয়াতবিহীন ১৫ শতাংশ ভ্যালু এ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) পরিশোধ করে বাজারজাত করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয় স্ক্র্যাপ দিয়ে যেসকল প্রতিষ্ঠান তামা, পিতল, এ্যালুমিনিয়াম ও মেটাল প্রস্তুত করেন তাদের ১৫ শতাংশ ভ্যাট দেওয়া কঠিন। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম উর্ধ্বগতি হওয়ায় স্ক্র্যাপ তৈরি তামা, পিতল, এ্যালুমিনিয়াম ও মেটালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স্ক্র্যাপ দিয়ে তৈরি তামা, পিতল এ্যালুমিনিয়াম ও মেটাল আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি বন্ধ করতে হবে। যেসকল কারখানা রেয়াত দিতে পারে না তাদের ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ইলেক্ট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিইএমএমএ-বিমা) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আফতাব জাবেদ বলেন, ভ্যাট ও ট্যাক্স নিয়ে ইলেকট্রিক মার্চেন্ডাইস খাতের ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে এনবিআর থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে না। ফলে নানা সঙ্কটের কারণে ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইস ম্যানুফ্যাকচারার্স খাতটির ব্যবসায়ীরা চাপের মুখে পড়েছেন। অথচ ব্যবসায়ীরা ভ্যাট ও ট্যাক্স দিয়েই ব্যবসা করতে চান।
তিনি বলেন, ছোট ও মাঝারি মানের ব্যবসায়ীরা কোন ধরনের রেয়াত পাচ্ছে না। রেয়াতের এই সুবিধা এ খাতের বড় শিল্পমালিকরা নিচ্ছেন। এ কারণে এমনভাবে ভ্যাট নির্ধারণ করতে হবে যাতে ছোট ব্যবসায়ীরা টিকে থাকেন। তিনি বলেন, যেসব ফ্যাক্টরীর ১৫ শতাংশ ভ্যাট গুনে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে তাদের ৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করা হউক। অন্যথায় অনেকে কারখানা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন। এতে কর্মসংস্থানের ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।