ধারাবাহিক সফলতার অনন্য নজির: পাঁচবারের মতো সেরা ওসি হলেন চান্দগাঁও থানার আফতাব উদ্দিন”

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সম্প্রতি এক গৌরবময় অধ্যায়ের সাক্ষী হলো। মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় আবারও চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আফতাব উদ্দিন সেরা ওসির মর্যাদা অর্জন করেছেন। এটি তাঁর টানা পঞ্চমবারের সাফল্য, যা চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই অসাধারণ সাফল্যের পেছনে রয়েছে একজন দক্ষ, প্রজ্ঞাবান ও উদার নেতৃত্ব—সিএমপির মাননীয় পুলিশ কমিশনার জনাব মো. হাসিব আজিজ। তাঁর নির্দেশনা, তত্ত্বাবধান ও সাহসী দিকনির্দেশনা না থাকলে হয়তো এই ইতিহাস তৈরি হতো না।
নেতৃত্ব যেখানে আলোকবর্তিকা
মাননীয় পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ সাহেব দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে এক নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছে। তিনি দুর্নীতিমুক্ত, পেশাদার, জনবান্ধব ও জবাবদিহিমূলক একটি পুলিশি ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রত্যয়ে কাজ করে চলেছেন। তাঁর সুদূরদর্শিতা, নেতৃত্বগুণ ও কর্মতৎপরতা ইতোমধ্যেই চট্টগ্রামের প্রতিটি থানা ও পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এক নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে। তিনি শুধু অফিস থেকে ফাইল অনুমোদন দেন না, সরাসরি মাঠে নেমে বাস্তবতার আলোকে সিদ্ধান্ত নেন, প্রতিটি থানার ওসি ও টিমকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে উৎসাহিত করেন।
ওসি আফতাব উদ্দিন এর ভাষায়, “চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার স্যারের মতো একজন নেতার অধীনে কাজ করতে পারা আমাদের জন্য পরম সৌভাগ্যের। তিনি আমাদের শুধু আদেশ করেন না, শোনেনও। আমাদের ভুল-ত্রুটি গঠনমূলকভাবে সংশোধন করেন। এই কারণেই আমি সফল হয়েছি, এবং চান্দগাঁও থানা সফল হয়েছে।”
চান্দগাঁও থানায় যোগদানের পর উত্তরণের গল্প
২০২৪ সালের নভেম্বরে চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মো. আফতাব উদ্দিন। তার আগমন যেন নতুন সম্ভাবনার সূচনা ছিল। শুরুতেই তিনি এলাকাভিত্তিক অপরাধ চিহ্নিত করে গোয়েন্দাভিত্তিক অভিযান জোরদার করেন। চুরি, ছিনতাই, মাদক কারবার, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও রাজনৈতিক সন্ত্রাস—সবকিছুর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে শুরু করেন। তাঁর একাগ্রতা, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে পুলিশি সেবার প্রতি আস্থা বাড়ে।
এই সময়ের মধ্যে তিনি একাধিক হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেন, জটিল মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করেন, সংঘবদ্ধ চোরচক্র ও মাদক সিন্ডিকেট ভেঙে দেন। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে প্রতিটি অভিযানে সুশৃঙ্খল ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখেন। তাঁর অফিসে সাধারণ মানুষ বিনা ভয়ভীতিতে অভিযোগ করতে আসেন, এবং সময়মতো ন্যায়বিচার পান।
টিমওয়ার্কের মডেল: চান্দগাঁও থানা
ওসি আফতাব উদ্দিন সবসময় তাঁর টিমের প্রশংসা করে থাকেন। তিনি কখনোই একক কৃতিত্বের দাবি করেন না। তাঁর মতে, “আমি একা কিছুই না। আমার টিম ছাড়া আমি সফল হতাম না। প্রতিটি পুলিশ সদস্য, এসআই, এএসআই, কনস্টেবল—সবাই যার যার দায়িত্ব পালন করেছে বলেই আজ চান্দগাঁও থানা সেরা।”
তিনি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানান ডিসি এবং এসি মহোদয়ের প্রতি, যাঁরা সার্বক্ষণিক পেশাগত সহায়তা দিয়ে পুলিশি কার্যক্রমকে গতিশীল করেছেন। তিনি বলেন, “ডিসি ও এসি স্যারের আন্তরিক সহযোগিতা ও আমাদের প্রতি নির্ভরশীলতা আমাকে সাহস দিয়েছে।”
জনগণের ভালোবাসায় গড়া সাফল্য
এই থানার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এলাকাবাসীর আস্থা ও সহযোগিতা। আফতাব উদ্দিন বারবার বলেছেন, “আমাদের জনগণ পুলিশকে সেবক হিসেবে গ্রহণ করেছে বলেই আমরা এতটা সহজে সেবা দিতে পারছি। অপরাধ দমনে জনগণের তথ্য আমাদের পথ দেখায়।”
চান্দগাঁও এলাকার সাধারণ মানুষ বলেন, “ওসি সাহেবকে আমরা পুলিশ না, আপন মানুষ ভাবি। যে কোন সমস্যা হলে তিনি ফোন ধরেন, ব্যবস্থা নেন, দরজা খুলে দেন। পুলিশ নিয়ে ভয় নয়, এখন আমরা আশ্বাস পাই।”
সততা ও পেশাদারিত্বের প্রতীক
ওসি আফতাব উদ্দিনের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তাঁর সততা ও নিরপেক্ষতা। রাজনৈতিক চাপ বা প্রভাবের তোয়াক্কা না করে তিনি ন্যায়বিচারকে অগ্রাধিকার দেন। কোনো অপরাধী বড় নেতা বা প্রভাবশালী হোক না কেন, তিনি আইনের বাইরে কাউকে ছাড় দেননি।
তিনি বলেন, “আইন সবার জন্য সমান। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মচারী নই—আমি জনগণের পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা আমার ধর্ম, দায়িত্ব এবং অঙ্গীকার।”
অসাধারণ এই সাফল্যের মূল্যায়ন
এই নিয়ে পরপর পাঁচবার চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে সেরা হওয়ার নজির গড়লেন আফতাব উদ্দিন। পুলিশের ইতিহাসে খুব কম অফিসারই এ ধরনের ধারাবাহিক কৃতিত্ব দেখাতে পেরেছেন। এটা শুধু তাঁর নয়, পুরো পুলিশ বিভাগের জন্য একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প।
মাননীয় পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ এই প্রসঙ্গে বলেন, “আমি গর্বিত যে আমাদের থানাগুলো পেশাদারভাবে কাজ করছে। ওসি আফতাব উদ্দিন এরকম দায়িত্বশীল ও মানবিক পুলিশ সদস্যদের আমরা উৎসাহ দিই। তাঁর সাফল্য প্রমাণ করে, সঠিক নেতৃত্ব ও টিমওয়ার্ক থাকলে যেকোনো থানা হতে পারে দেশের মডেল।”
ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
ওসি আফতাব উদ্দিন চান এই অর্জন ধরে রাখতে। তাঁর ভাষায়, “আমার দায়িত্ব যতদিন থাকবে, আমি মানুষের জন্য কাজ করব। আমার সম্মান মানে পুলিশের সম্মান। আমার থানার সাফল্য মানে সিএমপির সাফল্য।”
তিনি তরুণ পুলিশ অফিসারদের উদ্দেশে বলেন, “দায়িত্বে আসলে মন-প্রাণ ঢেলে দিতে হয়। সৎ থাকলে মানুষ পাশে দাঁড়ায়, আল্লাহ সাহায্য করেন।”
উপসংহার
চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যখন ধীরে ধীরে উন্নতির পথে, তখন একজন অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে একটি থানার পাঁচবার সেরা হওয়া নিঃসন্দেহে আশার বার্তা বহন করে। এই অর্জনের পেছনে যেমন ওসি আফতাব উদ্দিনের সততা, পরিশ্রম ও পেশাদারিত্ব রয়েছে, তেমনি রয়েছে পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ সাহেবের দূরদর্শী নেতৃত্ব ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি।
এ ধরনের নেতৃত্ব ও টিমওয়ার্ক যদি দেশের প্রতিটি থানায় কার্যকর হয়, তবে বাংলাদেশে একটি জনবান্ধব, নিরাপদ ও সুবিচারভিত্তিক পুলিশ ব্যবস্থা গড়ে উঠতে সময় লাগবে না। আফতাব উদ্দিনের সাফল্য তাই কেবল একটি থানার গল্প নয়—এটি গোটা দেশের জন্য একটি আলোকবর্তিকা।