স্বাধীনতা হরণ করা কলম নয়, চাই সত্যের তীক্ষ্ণ অস্ত্র””
বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম ডে-তে জাতীয় সাংবাদিক মঞ্চের প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন: গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জোর দাবি-
চট্টগ্রাম, ৩ মে:
আজকের বাংলাদেশে সাংবাদিকতা যেন এক নিরব বন্দিত্বের নাম। সত্য বলার অপরাধে কলম থেমে যায়, বিবেকের চিৎকার চাপা পড়ে কর্পোরেট পুঁজি আর রাজনৈতিক চাটুকারিতার নিচে। এই প্রেক্ষাপটেই আজ বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম ডে-তে চট্টগ্রামের চেরাগি পাহাড় মোড়ে
সাংবাদিক ওসমান জাহাঙ্গীর এর পরিচালনায় বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় সাংবাদিক মঞ্চের প্রতিবাদী মানববন্ধন ও সভা। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সাংবাদিক মঞ্চের সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মো. কামাল উদ্দিন। তিনি দৃপ্ত কণ্ঠে বলেন,
“আজ আর সাংবাদিকদের হাতে সেই স্বাধীন কলম নেই, যা একদিন ছিল সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক। এখন কলম পরিচালিত হয় মালিকানার ইশারায়, পুঁজির প্রলোভনে, আর রাজনৈতিক দলের দখলে।”
তিনি বলেন, “আমরা এমন এক দেশে বাস করছি যেখানে সংবাদপত্র আছে, কিন্তু সত্য নেই; সাংবাদিক আছে, কিন্তু স্বাধীনতা নেই। শুধুমাত্র নির্বাচন করলেই গণতন্ত্র আসে না। যদি সেই নির্বাচনের ফলাফল হয় দুর্নীতিপরায়ণদের পুনরাবৃত্তি, তবে সেটি গণতন্ত্র নয়, সেটি রাজনৈতিক প্রহসন।” সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক নেতা জাফর ইকবাল, ব্যাংকার কাজী জসিম, ইঞ্জিনিয়ার মুবিন, রাজনীতিক সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া, রাফসান জানি, সারোয়ার মঞ্জু, মো. জিয়া উদ্দিন, মো. শাহীন, জিতেন বড়ুয়া, ইকবাল, রাইসা হাসান, মীর বরকত, জাবেদ রেজা, রোজিনা, হাবিবুল আক্কাস এবং ইব্রাহিম হোসেন।
সভার বক্তারা বলেন, দেশে সাংবাদিকদের জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে— সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, যেটি শুধু আইন নয়, সাংবাদিকদের অস্তিত্ব রক্ষার একটি ঢাল। তারা আরও বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন না হলে সত্যের পক্ষে থাকা সাংবাদিকরা আরও নিপীড়িত হবেন, আর গণতন্ত্র কেবলই থাকবে ফাইলবন্দি ধারণা হিসেবে।
সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন একদম স্পষ্ট ভাষায় বলেন,
“গণমাধ্যম পুঁজির নয়, জনমানুষের। এই রাষ্ট্রে যদি কেউ সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ করতে চায়, তবে সেটা দেশের বিবেককে রুদ্ধ করার শামিল। আমরা স্বাধীনতা চাই, ভিক্ষা নয়—স্বাধীন কলম চাই, বিবেকবান সাংবাদিকদের হাতে।”
সভা থেকে দাবি জানানো হয়—
১. অবিলম্বে সাংবাদিক সুরক্ষা আইন পাস ও কার্যকর করতে হবে।
২. গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
৩. পুঁজিপতিদের হাত থেকে গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনতে হবে। ৪. সাংবাদিক নিপীড়ন ও হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধনের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হলো—বাংলাদেশের বিবেকবান সাংবাদিকরা আজও মাথা নত করেনি। তারা কলম হাতে থাকতেই লড়বে, যতক্ষণ না স্বাধীনতার সূর্য সত্যের আকাশে উদিত হয়।