শ্রীবরদীতে গাড়ো পাহাড়ের পাদদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনে উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি, এই একটি রাস্তাই তার বড় কারণ। বৃষ্টি হলেই কাদাপানিতে এই রাস্তায় চলাচল করা খুব ঝুকিপূর্ণ।
কাঁচা রাস্তাটি শুরু হয়েছে শ্রীবরদী উপজেলার রানীশিমুল ইউনিয়নের তেতুলিয়া গ্রাম থেকে পশ্চিম মালাকোচা, হাতিবর, সিংগিজানি, টিলে পাড়া হয়ে সীমান্তবর্তী সড়ক সোনাঝুড়ি প্রযন্ত। মাঝখানে প্রায় ৪.৪ কিলোমিটার এলাকার ৫ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষকে রাস্তাটি প্রতিদিন ব্যবহার করতে হয় । রাস্তাটি পাকা না হওয়ায় এই মানুষদের জীবনে দুর্ভোগ আর দুঃখের যেন অবসান হচ্ছে না।শীতকালে এ রাস্তা দিয়ে কোনোরকমে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষায় পায়ে হাঁটা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। বৃষ্টি হলেই হাঁটু পরিমান কাদার কারণে উপজেলার ৪ গ্রামের বাসিন্দারা যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো দুর্ভোগে পড়ে। হাজার হাজার একর জমির ফসল আনা নেওয়া, সঠিক সময়ে সঠিক দামে বিক্রি ও করতে পারেনা তারা।বাগানের আখ ও শাকসবজী ক্রয় বিক্রয়ের জন্য রাস্তার অভাবে ক্রেতা ও পাইকার আসেনা সে জন্য মাঝে মধ্যেই তাদের বড় অংকের লোকশান গুনতে হয়। পুকুরের মাছ পরিবহনের ভোগান্তি যে চোখে দেখেনি, তার পক্ষে এই কষ্ট উপলব্ধি করা কঠিন হবে। রাস্তাটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি বয়ে আনে জরুরি রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হলে। অন্তঃসত্ত্বা নারী, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীরা যে কাদাপানিতে ভরা রাস্তা পেরিয়ে শহরে যেতে না পেরে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন, তা তাঁদের স্বজনেরা আহাজারি করে এখনো বলে বেড়ান। তবে সে কথা কর্তৃপক্ষের কান পর্যন্ত যে পৌঁছাতেই পারছে না। সম্প্রতি সরেজমিনে রাস্তাটি দেখে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তেতুলিয়া গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মো:সজিব মিয়া বলেন, এই রাস্তার জন্য আমাদের দূর্ভোগের শেষ নেই, অনেক জনপ্রতিনিধি আশ্বাস দিলেই হচ্ছেনা কোন উন্নয়ন, এই রাস্তার জন্য আমাদের গ্রামের ছেলে মেয়েরা ঠিক মত স্কুল কলেজে যেতে পারছেনা, কৃষকেরা সঠিক সময়ে কৃষি পন্য বাজারে নিয়ে যেতে মহা ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে। টিলা পাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য সেলিম রেজা বলেন পাহাড়ী এলাকা উন্নয়নের ছোয়া থেকে বঞ্চিত, তাদের দূঃখ কষ্ট লাঘব করতে কেউ এগিয়ে আসে না, তিনি বাজেট পেলে মাঝে মধ্যে মাটি ও বালু ফেলে জন সাধারনের দূর্ভোগ লাখব করার চেষ্টা করেন, সেটাও খুব সামান্য পরিসরে করতে পারেন।
তেতুলিয়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদ বলেন, জন্মের পর থেকে দেখছি এই রোডের বেহাল অবস্থা,উপজেলা প্রর্যায় থেকে ওয়ার্ড মেম্বার প্রযন্ত কেউ এখন প্রযন্ত প্রদক্ষেপ গ্রহন করেন নাই, এই কাচা রাস্তার জন্য প্রাত্যহিক জিবনে খুব দূর্ভোগ পোহাতে হছে, আমরা দ্রুত এই রোডের সংস্কার চাই।হাতিপর গ্রামের গৃহিনী লাইলী বেগম বলেন, ধান কেটে মাচায় সংরক্ষন করে রেখেছি রাস্তায় হাটু পরিমান কাদা, ধানের ভাল দাম থাকা সত্তেও বিক্রি করতে পারছিনা, এই ধান বিক্রির জন্য শোকনো মৌসম প্রযন্ত অপেক্ষা করতে হয়, এতে আমাদের লোকসান হচ্ছে দেখার কেউ নেই। আমাদে দাবী এই রাস্তা যেন পাকা করে দেয়া হয়। হাতিবর গ্রামের সিফাত জানান এই কাঁচা রাস্তা দিয়ে বর্ষায় ধান, আখ শাক সবজী, ৩০-৩৫টি পুকুরের মাছসহ অন্যান্য ফসল পরিবহনে মণপ্রতি অন্তত ৫০ টাকা বেশি ভাড়া গুনতে হয় চাষিদের। শুকনায় ইজিবাইক, রিকশা, ভ্যান চললেও বর্ষায় কোনো যানবাহন এ রাস্তায় চলাচল করে না। ভ্যানচালকদের অনেকটা হাতে পায়ে ধরে পণ্য আনা-নেওয়া করতে হয়তবে জরুরি রোগীদের হাসপাতালে নেওয়া দুঃস্বপ্নের মতো। সিংগিজানী গ্রামের সিরাজ মিয়া বলেন এলাকায় কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া খুব কঠিন , এম্বুল্যান্স তো দূরের কথা বর্ষা মৌসমে ভ্যান গাড়ী ও ঢুকেনা। এতে গর্ভবতী ও স্টোক এর রোগীরা বেশী ঝুকিতে থাকেন। টিলে পাড়া গ্রামের মোশারফ বলেন ছেলে মেয়েরা অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করে। বর্ষাকালে পরীক্ষার দিন পড়লে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় সময়মতো পৌঁছাতে পারবে কি না। তাই আগে ভাগে কেন্দ্রের কাছে বাসা নিয়ে থাকতে হয়, আমাদের একটায় দাবী এই রাস্তা সংস্কার করা হোক।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) শ্রীবরদী উপজেলা প্রকৌশলী মশিউর রহমান বলেন, আমাদের অফিস এর অনেক ফাইল আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে, তাই কাজের অগ্রগতি হ্রাস পেয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো এই রাস্তা যাতে দ্রুত সংস্করন করা হয়।