লিখাটি লিখতে বসলাম শিখা ভাবীর একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে। ভাবীর পোস্টগুলো সত্যিই অনেক চমৎকার। আমি ভাবীর পোস্ট দেখলেই তা পড়তে ভুল করি না, কারণ তার লেখার মধ্যে এমন এক বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি থাকে যা আমাকে ভাবায়। আমি তার একজন বড় ভক্ত। ভাবী যেভাবে নিজের চিন্তা এবং অনুভূতি প্রকাশ করেন, তা অন্যদের কাছে একটি অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে। তার লেখায় যে গভীরতা এবং বিশ্লেষণ রয়েছে, তা সাধারণত অনেক লেখকই তুলে ধরতে পারেন না। আমি ভাবীকে নিয়মিত লেখা লেখার জন্য অনুরোধ করবো, কারণ তার লেখাগুলো সত্যিকার অর্থে আমাদের সমাজের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। আজকের সাংবাদিকরা অনেক সময় পেশাগত দায়িত্বের চেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থকে প্রাধান্য দেন, যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর। সাংবাদিকতা শুধুমাত্র তথ্য পরিবেশন নয়, বরং এটি একটি নৈতিক দায়িত্ব। একজন সাংবাদিকের কাজ হচ্ছে সমাজের সত্য প্রকাশ করা এবং জনগণকে সঠিক তথ্য দেওয়া। তবে, বর্তমানে কিছু সাংবাদিক তাদের প্রতিবেদনকে বিতর্কিত করে, সহিংসতা সৃষ্টি করে, বা বিভাজন ঘটিয়ে সমাজের শান্তি নষ্ট করছে। এটি কখনোই সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য হতে পারে না। শিখা ভাবী, একজন সাধারণ পাঠক হয়েও, তার লেখায় যে গভীরতা, বিশ্লেষণ এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা তুলে ধরেন, তা আমাদের সমাজের তথাকথিত নামসর্বস্ব সাংবাদিকদের থেকেও অনেক উন্নত। তিনি যেমন একজন ভালো পাঠক, তেমনি একজন প্রকৃত সাংবাদিক হতে গেলে যে সকল গুণাবলি প্রয়োজন, যেমন সত্যানুসন্ধান, মিতভাষিতা এবং উপযুক্ত ভাষার ব্যবহার, তাও তিনি অনুশীলন করেন। তার লেখার প্রতি আস্থা রাখতে পারে এমন পাঠক সমাজের জন্য সত্যিকারের মূল্যবান অবদান হবে।
ভেবে দেখুন, সাংবাদিকতা শুধুমাত্র খবর দেওয়া নয়, বরং সমাজের সত্যিকারের চিত্রকে উন্মোচন করার একটি নৈতিক দায়িত্ব। শিখা ভাবীর মতো সচেতন লেখকদের সমাজে আরও বেশি প্রয়োজন।
লেখাটিতে শিখা ভাবী তার ভাবনাকে সঠিকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।
আজকের পৃথিবীকে যদি কোনো শব্দ দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা হয়, তবে তা হবে ‘তথ্য’। আর এই তথ্যের প্রবর্তক, রক্ষক এবং সঞ্চালক হলেন সাংবাদিকরা। তারা সমাজের আয়নায় পরিপূর্ণ সত্যটি তুলে ধরেন, অন্ধকারে থাকা জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেন। কিন্তু সমস্যা তখনই দেখা দেয়, যখন সাংবাদিকতার সেই মহান দায়িত্ব অন্যত্র সরিয়ে যায়, যখন লেখার হাত আর সত্যের পক্ষে না থেকে, তা পরিণত হয় স্বার্থের প্রতীক। আজকের অনেক সাংবাদিক, বিশেষ করে যাদের আমাদের দেশীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিত্ব, তারা অনুকরণ করেন অন্যান্য দেশের সাংবাদিকদের, কিন্তু সত্যিকার সাংবাদিকতার গুণাবলী তাদের মধ্যে দেখা যায় না।
আমরা যাদের সাংবাদিক হিসেবে বিবেচনা করি, তাদের বেশিরভাগের মধ্যে সত্যানুসন্ধানের আদর্শ, সঠিক ভাষার প্রয়োগ এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। তারা কখনও সত্যি না শুনে শুধু নিজেদের অভ্যন্তরীণ স্বার্থ হাসিলের জন্য খবর পরিবেশন করে, কখনো আবার অন্যের কথা কেটে ফেলে, একের পর এক বিতর্ক তৈরি করে। বিশেষত রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংকটের সময়ে, কিছু সাংবাদিক নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সমাজে আরও বিভাজন ও সহিংসতার বাতাবরণ সৃষ্টি করেন। তবে, তাদের এসব কাজের ফলে কেবল জনগণের মধ্যেই অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়, বরং পুরো দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি কি আদৌ সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য হতে পারে?
একজন প্রকৃত সাংবাদিক, তবে যিনি সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকেন, তার কাজ শুধু তথ্য পরিবেশন করা নয়, বরং সেই তথ্যের পিছনে লুকিয়ে থাকা পরিপূর্ণ সত্যকে খুঁজে বের করা। একজন সাংবাদিক শুধু সমাজের কল্পনা, ধারণা এবং মুখোশ ভাঙার কাজ করেন না, তিনি সেই সমাজের চোখ ও কান হয়ে থাকেন, যাদের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে আর্তনাদ। একজন সাংবাদিকের ভাষা মিষ্টি হওয়া উচিত, কিন্তু সে ভাষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তাকে অবশ্যই মিতভাষী হতে হবে। যে ভাষায় কল্যাণের প্রতিশ্রুতি থাকে, সে ভাষা যেন অকারণে অশ্রুত বা কদর্য না হয়।
এভাবেই, আমরা যদি শিখা ভাবীর দিকে তাকাই, তাহলে বুঝতে পারি যে একজন সাংবাদিকের শিক্ষাগত যোগ্যতা বা প্রাতিষ্ঠানিক পটভূমির চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার অভ্যন্তরীণ জ্ঞান ও নৈতিকতা। শিখা ভাবী নিজে একজন সাংবাদিক না হয়েও, তার লেখায় যে গভীরতা, যে প্রজ্ঞা, এবং যে দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, তা অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সমাজের তথাকথিত নামসর্বস্ব সাংবাদিকদের থেকেও অনেক উচ্চতর। তার লেখা সমাজের প্রতিফলন, সমাজের চিন্তা-চেতনাকে আলোর পথ দেখায়, এবং সেই আলো আমাদের অন্ধকারে পথ চলতে সহায়তা করে।
তিনি একজন ভালো পাঠক, এবং একজন ভালো পাঠক কখনোই শুধুমাত্র শব্দের বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে না, বরং শব্দের গভীরে মগ্ন হয়ে তার মূল উদ্দেশ্য বুঝতে চেষ্টা করেন। এ কারণেই শিখা ভাবীর লেখাগুলি আমাদের মনে জায়গা করে নেয়, তার প্রজ্ঞা ও হৃদয়ের গভীরতা পাঠককে নিয়ে যায় এক নতুন জগতে। তাঁর লেখায় কোনো প্রলেপ নেই, কোনো মেকি নয়, সবই কাঁচা, সত্য, এবং প্রতিটি শব্দে সমাজের কথা বলা হয়। আমি সত্যি বলতে, ভাবীকে অনুরোধ করি যেন তিনি নিয়মিত লিখেন, কারণ তার লেখার মতো সততা, নিষ্ঠা এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা অনেক সাংবাদিকের লেখায় দেখা যায় না।
এখন যে সাংবাদিকদের বেশিরভাগের মধ্যে আইডল হিসেবে বিদেশি সাংবাদিকদের অনুসরণ করার প্রবণতা রয়েছে, তাদের কাছে শিখা ভাবীর মতো মানুষের পথ অনুসরণ করা উচিত। কারণ, সাংবাদিকদের কাজ শুধু খবর দেওয়া নয়, বরং সমাজের সত্যিকারের চিত্র তুলে ধরা। তা সঠিক ভাষায়, মিতভাষী হয়ে, এবং মিষ্টভাষায় করতে হবে, যেন মানুষের হৃদয় স্পর্শ করা যায়। ভাবী যেমন লিখেন, তেমন হৃদয়ে স্পন্দন সৃষ্টি করে, মনের অজানা কুটোর মধ্যে আলো ফেলে। আমাদের সমাজে অনেকেই ভাবেন সাংবাদিকতা কেবল একটি পেশা, কিন্তু এটি কেবল একটি পেশা নয়, এটি একটি শিল্প। একজন সাংবাদিক হতে গেলে শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা নয়, আরও প্রয়োজন হয় অভ্যন্তরীণ সততা, বোধশক্তি এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা। সাংবাদিকরা কেবল কথা নয়, শব্দের মাধ্যমে সমাজের মনের কথা বলে। তাই, আমাদের উচিত সমাজের প্রতিটি সঠিক, সত্যানুসন্ধানী লেখকের জন্য সম্মান প্রদর্শন করা এবং তাদেরকে আরও বেশি সমর্থন দেওয়া। শুরুতেই বলেছি–
আমি, একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে, শিখা ভাবীর লেখার ভক্ত। তাঁর লেখায় যে নিখুঁত সত্য ও সম্বন্ধিত ভাবনা রয়েছে, তা আমি শ্রদ্ধার সাথে স্বীকার করি। আমি আশা করি, তার লেখাগুলি আরও বেশি পাঠক সমাজে পৌঁছবে এবং তিনি একজন পাঠক লেখক হিসেবে সমাজে তার প্রভাব বিস্তার করবে।
শিখা ভাবীর লেখার প্রতিটি শব্দে থাকে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং গভীরতার ছোঁয়া, একজন প্রকৃত চিন্তাবিদ। তার লেখায় যেমন বোধশক্তির পরিচয় পাওয়া যায়, তেমনি সেখানে রয়েছে মানবিকতা, সততা এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার এক অনবদ্য নিদর্শন। তিনি শুধু তথ্য দেন না, তিনি সেই তথ্যের মাঝে মানবিক সম্পর্ক, নৈতিকতা এবং সমাজের চিত্র তুলে ধরেন। তার ভাষা সঙ্গীতের মতো মিষ্টি, অথচ তীক্ষ্ণ, যা প্রতিটি পাঠককে গভীর চিন্তা এবং উপলব্ধির পথে পরিচালিত করে। শিখা ভাবী, একজন শ্রেষ্ঠ লেখক না হয়েও, তার মনের মাধুরী ও জ্ঞানের সমাহারে আমাদের সমাজে এক আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছেন। তার লেখনী কেবল পাঠকদের আনন্দ দেয় না, বরং তাদের হৃদয়ে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং সঠিক পথের অনুসন্ধানের অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলে। এমন লেখকের সমাজে উপস্থিতি এক অনন্য দান, যা প্রতিটি চিন্তাশীল মানুষের কাছে এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকে। এটি একটি উপমা, যে শিখা ভাবী তার লেখনীর মাধ্যমে আমাদের সমাজে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছেন, এমন ভাবনা থেকেই এই লেখা লিখলাম।