চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চুরি ডাকাতি, রাহাজানি, চাঁদাবাজি এবং অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে জনগণ শঙ্কিত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তবে, এসব ঘটনায় প্রশাসনের নিরবতা এবং কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
অপরাধপ্রবণতার বৃদ্ধির কারণে জনমনে আতঙ্ক:
স্থানীয়দের অভিযোগ, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং বিশেষ করে সাতকানিয়া-লোহাগড়া অঞ্চলে চুরি ডাকাতি, রাহাজানি, চাঁদাবাজি এবং অন্যান্য অপরাধের প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। রাতের বেলা অপরাধীরা খোলামেলা কার্যক্রম চালাচ্ছে, আর এই পরিস্থিতি সাধারণ জনগণের কাছে অত্যন্ত ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনের ঘটনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বাড়িতে ঢুকে চুরি করা, রাস্তায় চলন্ত গাড়ি থেকে মালামাল ছিনতাই, এমনকি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধির অভিযোগ:
সাতকানিয়া লোহাগড়া উপজেলার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মোহাম্মদ জামির জানান, “আমরা বারবার থানায় চুরি ডাকাতির বিষয়ে অভিযোগ করেছি, তবে থানা ও পুলিশ প্রশাসন রহস্যজনকভাবে নিরবতা পালন করছে।” জামির বলেন, “রাতের বেলায় পুলিশ মাটি কাটার ট্রাক নিয়ে ব্যস্ত থাকে, কিন্তু অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। চুরি ডাকতির বিষয়ে কোনো প্রকার আগ্রহ দেখানো হচ্ছে না।” জামির আরও বলেন, “এমন অবস্থা চলতে থাকলে জনগণের মধ্যে পুলিশের প্রতি আস্থা হারিয়ে যাবে। সাধারণ মানুষ এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।”
অবস্থার অবনতির পেছনে প্রশাসনের ভূমিকা:
সাতকানিয়া ও লোহাগড়া এলাকার জনগণের অভিযোগ, প্রশাসন যদি আন্তরিকভাবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিত, তবে এই ধরনের অপরাধ বৃদ্ধি পেত না। অনেক সময় পুলিশের কার্যকলাপ নিয়ে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশ জনগণের অভিযোগ আমলে না নিয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে তাদের অভিযোগ।
এলাকাবাসীর নিরাপত্তাহীনতার কথা:
সাতকানিয়া-লোহাগড়ার জনসাধারণ এখন এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাদের দাবি, প্রশাসন যদি এখনই যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তারা আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারে। বিশেষ করে রাতের বেলা চুরি ডাকাতির ঘটনা অনেক বেশি ঘটছে, এবং এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দাবি:
এলাকাবাসী চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহাসান হাবিব এবং পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সনতুর কাছে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, সাতকানিয়া-লোহাগড়া এলাকায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, যেন সাধারণ মানুষ নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারে।
মিডিয়া প্রতিনিধির যোগাযোগের চেষ্টা:
দৈনিক ভোরের আওয়াজ এবং The Daily Banner পত্রিকার প্রতিনিধি সাতকানিয়া লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তবে, তাদের মুঠোফোনে বারবার কল করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এর ফলে, স্থানীয় জনগণের মধ্যে আরও বেশি ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, কারণ তারা আশা করেছিল প্রশাসন দ্রুত তাদের সমস্যার সমাধান করবে।
এলাকার সাধারণ মানুষের আবেদন:
সাতকানিয়া-লোহাগড়ার সাধারণ মানুষ এখন সরকারের প্রতি বিশেষভাবে আবেদন জানিয়েছেন। তারা চান, অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক, যাতে তারা নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারে। এলাকা উন্নয়ন এবং আইনশৃঙ্খলার সুরক্ষার জন্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনের প্রতি তাদের চাওয়া, যেন জনগণের নিরাপত্তা এবং স্বস্তি ফিরিয়ে দেয়া হয়।
এলাকাবাসী বিশ্বাস করেন, যদি এখনই প্রশাসন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তবে এই অঞ্চলে অপরাধ কমে আসবে এবং তাদের জীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।