চট্টগ্রাম, সোমবার: চট্টগ্রামের সংগীত জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র, আঞ্চলিক গানের কিংবদন্তি প্রয়াত শিল্পী সনজিত আচার্য্য-এর স্মরণে এক বিশেষ শোক সভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। চাটগাঁইয়া নওজোয়ানের আয়োজনে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চেরাগী পাহাড়স্থ বঙ্গবন্ধু ভবনের বৈঠকখানা কমিউনিটি হলে অনুষ্ঠিত এই মহতী সভায় সনজিত আচার্য্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সংগীত ও সংস্কৃতিপ্রেমীরা একত্রিত হন।
বর্ণাঢ্য আয়োজনে শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চাটগাঁইয়া নওজোয়ানের সভাপতি জামাল আহমেদ। প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক পংকজ বৈধ্য সূজন, প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের মহাসচিব মো. কামাল উদ্দিন। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রকৌশলী জাবেদ আবছার চৌধুরী, খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী কল্যাণী ঘোষ, ভাই মিলন আচার্য়,বোন গীতা আচার্য,মেয়ে মৌসমী আচার্যসহ মাহবুবুর রহমান সাগরের সঞ্চালনায়
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সৈয়দ এম এ রহিম, দোস্ত মোহাম্মদ, রকিবুল হাসান সোহেল (সাধারণ সম্পাদক), জসীম উদ্দিন, সংগীতশিল্পী ইলিয়াস ইলুসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। অতিথিবৃন্দ চট্টগ্রামের সকল প্রয়াত গুণীশিল্পীদের স্মরণে একটি মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। আবেগঘন মুহূর্ত অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করা হয় এবং প্রয়াত শিল্পীর স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। চট্টগ্রামের চলচ্চিত্র ও সংগীত অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা শিল্পীর স্মৃতিচারণ করেন। জনপ্রিয় চিত্রনায়ক প্রবীর মিত্র ও চিত্রনায়িকা অঞ্জনা রহমানও স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য দেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি
সনজিত আচার্য্যের পরিবারের সদস্যরাও এই শোক সভায় উপস্থিত ছিলেন। তার ভাই মিলন আচার্য্য, বোন গীতা আচার্য্য এবং তার কন্যা আবেগঘন বক্তব্যে প্রয়াত শিল্পীর স্মৃতি তুলে ধরেন। তারা জানান, সংগীতই ছিল সনজিত আচার্য্যের ধ্যান-জ্ঞান, এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সংগীতের সঙ্গেই ছিলেন।
সনজিত আচার্য্য: চট্টগ্রামের সংগীতের গর্ব বক্তারা বলেন, সনজিত আচার্য্য শুধু একজন শিল্পীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন চট্টগ্রামের সংগীতের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার গান চট্টগ্রামের মানুষের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে। আঞ্চলিক গানের ঐতিহ্যকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য রেখে গেছেন এক অমূল্য সম্পদ।তার নামে স্থাপনা নির্মাণের দাবি অনুষ্ঠানে বক্তারা সনজিত আচার্য্যের নামে একটি সড়ক বা একটি অডিটোরিয়াম করার দাবি জানান। চট্টগ্রামের মাননীয় মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, “একজন কিংবদন্তি শিল্পীর অবদান চিরস্মরণীয় করে রাখতে তার নামে একটি স্থাপনা করা উচিত, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার কীর্তি জানতে পারে।”
সংগীত পরিবেশনা ও সমাপ্তি
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সনজিত আচার্য্যের জনপ্রিয় কিছু গান পরিবেশন করা হয়, যা উপস্থিত সবাইকে আবেগাপ্লুত করে। সংগীতশিল্পীদের কণ্ঠে তার গান যেন নতুন করে প্রাণ পায়।
চাটগাঁইয়া নওজোয়ানের এই মহতী উদ্যোগ চট্টগ্রামের সংস্কৃতি-প্রেমী মানুষকে আরও ঐক্যবদ্ধ করেছে। এই আয়োজন প্রমাণ করে, সনজিত আচার্য্য শুধু একজন শিল্পী ছিলেন না, তিনি চট্টগ্রামের সংগীত জগতের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়, যার স্মৃতি চিরকাল অমলিন থাকবে।