চট্টগ্রামের চেরাগি পাহাড় এলাকায় ইসকনের উদ্যোগে একটি প্রতিবাদী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ ফজলুল কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস দল সেখানে সতর্ক অবস্থান নেয়। জানা গেছে, পুলিশের পক্ষ থেকে এ ধরনের জনসমাবেশের জন্য সাধারণত পূর্বানুমতি প্রয়োজন হলেও এ ক্ষেত্রে তা সত্ত্বেও কোনো বাঁধা প্রদান করা হয়নি।
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ স্বয়ং সমাবেশে পুলিশি দায়িত্ব পালনের তদারকি করেন এবং নির্দেশ দেন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ পরিচালিত হয়। পুলিশের এমন সহমর্মী ভূমিকা সচেতন মহলে প্রসংশিত হয়েছে। দীর্ঘদিন পর পুলিশের এমন উদার এবং জনগণ-বান্ধব আচরণ নতুন একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। স্থানীয় লোকজন এবং বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুলিশের এই সহনশীল ভূমিকা অন্যান্য জনসমাবেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সাহায্য করবে এবং জনসাধারণের মাঝে পুলিশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি আরও সুদৃঢ় করবে। ইসকনের সনাতনী সমাবেশে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা
গত ২৫শে অক্টোবর শুক্রবার চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে ইসকন আয়োজিত সনাতনী সমাবেশকে কেন্দ্র করে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, নিউ মার্কেট মোড়ে বিজয় ভাস্কর্যের উপর বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার স্থানে ইসকনের পতাকা উত্তোলন করা হয়, যা জাতীয় পতাকার অবমাননার শামিল।
ফিরোজ খান নামে এক ব্যক্তি কোতোয়ালি থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নম্বর ০২, তারিখ ৩১/১০/২০২৪। মামলায় ১৯ জনের সুনির্দিষ্ট নাম ও ঠিকানা উল্লেখসহ আরও ১৫-২০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগে দণ্ডবিধির ১২৪-ক, ১৫৩-ক, ১০৯ ও ৩৪ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহ, জাতিগত ও ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) সৈয়দ ওমর জানান, এই অভিযোগের বিষয়টি দেশের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা এবং শান্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা দেশের আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করতে পারে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে এবং সরকারও ঘটনাটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। পুলিশ প্রশাসন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে তিনি আরও জানান।
তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতার একমাত্র নিদর্শন জাতীয় পতাকা, সেই পতাকাকে সামনে রেখে আমাদের জাতীয় অনুপ্রেরণা, এই দেশ একটি অসাম্প্রদায়ীক রাষ্ট্র, এখনে সকল ধর্মের মানুষের বসবাস, আমরা সংঘাত বিশ্বাস করিনা, কিন্ত আমাদের জাতীয় পতাকা কে অসম্মান করে গত ২৫ শে অক্টোবর শুক্রবার লালদিঘির ময়দানে হিন্দু সাম্প্রদায়ের ধর্মিয় সংগঠন “ইসকন” কতৃক আয়োজিত জনসভা অনুষ্ঠিত হয়, সেই জনসভায় সারাদেশ থেকে প্রতিবাদি মুখর সনাতনী হিন্দুগণ যোগদান করেছিলেন, তাতে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ সাহেব এর নেতৃত্ব সকল পুলিশ প্রশাসন নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেছেন, বিশেষ করে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ ফজলুল কাদের চৌধুরীর আন্তরিক ভাবে সক্রিয় সহযোগিতায় করার মাধ্যমে তাদের জনসভা সম্পুর্ণ করেছেন, কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো তাদের জনসভার আগত একটি অতিউৎসাহী গ্রুপ ধর্মিয় ও রাষ্ট্রিয় সংঘাত সৃষ্টি করার কুমানসে চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট চত্বরে বিজয় নিদর্শনের উপর আগে থেকে উড়ানো থাকা আমাদের জাতীয় পতাকার উপরে তাদের দলিয় বা ধর্মিয় সংগঠনের (ইসকন) পতাকা উত্তোলন করে আমাদের জাতীয় পতাকার প্রতি অসম্মান করেছেন, তাতে আমাদের প্রশ্ন হলো এইটা কিসের ইংগিত? একটি স্বাধীন দেশের জাতীয় পতাকার উপর এইভাবে ইসকন পতাকা উত্তোলন করে আমাদের মধ্যে পরিকল্পিত ভাবে সাম্প্রদায়িক মনোভাবের পরিচয় দিয়ে ধর্মিয় সংঘাত সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন। এই বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টিতে আসার উচিত রয়েছে। এই পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে কোতোয়ালি থানার পুলিশকে বর্তমান সরকার তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রিয় মানুষের কাছে বিতর্কিত বিমূর্ত পুলিশ হিসেবে উপস্থাপন করার বড় ধরনের ষড়যন্ত্র বলে মনে করি, আমার বিশ্বাস এই সিদ্ধান্ত তাদের কোন সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নয়, তা সম্ভবত একশ্রণীর সংঘাত সৃষ্টিকারিরা পরিকল্পিত ভাবে সাম্প্রদায়িক মনোভাবের পরিচয় দিয়ে এই অনৈতিক কাজ করেছন। এই ঘটনায় ৫ ই আগস্টে সরকার পতনের আন্দোলনের ছাত জনতার রক্তের সাথে বেঈমানী বা আন্দোলনের সুফলকে ধুলিসাদ করার পরিকল্পনা বলে অনেকে মনে করেন, এই ধরনের অপরাধকে নিরুৎসাহিত করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। বুধবার রাতে কোতোয়ালি থানায় বসে আমি একটি নিবন্ধ রচনা করি, যার বিষয়বস্তু ছিল জাতীয় পতাকার ওপর হিন্দু ধর্মীয় ইসকন সংগঠনের পতাকা উত্তোলন নিয়ে। নিবন্ধটি লেখার পরপরই থানায় এ নিয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়, যার নম্বর ০২, তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০২৪। মামলাটিতে ১৯ জন সুনির্দিষ্ট আসামি এবং অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ১৫-২০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ ফজলুল কাদের চৌধুরী এই বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, “মামলা দায়ের হলেও তদন্ত না করে এবং প্রকৃত সত্য উদঘাটন না হওয়া পর্যন্ত কাউকে অন্যায়ভাবে হয়রানি করা হবে না।” জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক চেরাগি পাহাড় মোড়ে সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে এক প্রতিবাদী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষ মামলাটি দ্রুত প্রত্যাহার, জাতীয় পতাকা অবমাননা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানান। বক্তারা অভিযোগ করেন, জাতীয় প্রতীক নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কারণে মামলার বিষয়টি জাতীয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। তাই এই বিষয়ে সরকার ও প্রশাসনকে সংবেদনশীল ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান। সমাবেশে শুরুতে শান্তিপূর্ণ ভাবে বক্তব্য প্রদান চললেও কিছু প্রতিবাদকারী হঠাৎ উত্তেজনা সৃষ্টি করলে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পুলিশ উপস্থিত থেকে দৃঢ় ভূমিকা পালন করে, যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় এবং সমাবেশটি নিয়ন্ত্রিতভাবে চলতে থাকে। পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “আমরা জনগণের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারকে শ্রদ্ধা করি, তবে আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।”
চেরাগি পাহাড় মোড় ও আশপাশের এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, র্যাব, আনসার ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তারা সমাবেশস্থলসহ পুরো এলাকা তদারকি করেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনগণকে জানানো হয় যে, প্রতিবাদ করার অধিকার থাকলেও সেই অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে সকলকে শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেন, “দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের অগ্রাধিকার। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সামাজিক শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করলে আমরা তা কঠোর হস্তে দমন করবো।” সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরও বলা হয় যে, দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা করতে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। প্রশাসন সকল সম্প্রদায়ের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে কাজ করছে এবং কোনও ধরনের বৈষম্য বা উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। সরকারের একজন প্রতিনিধি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে সংবিধান সম্মানিত করেছে এবং প্রতিটি সম্প্রদায়ের অধিকার সংরক্ষণে সরকার বদ্ধপরিকর।”
অন্যদিকে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে আজ পহেলা নভেম্বর শনিবার বিকাল ৩টার সময় চেরাগি পাহাড় চত্বরে সনাতনী হিন্দুগণের প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তবে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের প্রতিবাদে ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।