1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০১:২৮ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
“বাঁশখালীতে ৪ হাজার ইয়াবাসহ টেকনাফের মাদক কারবারি আটক: ব্যবহৃত মোটরসাইকেল জব্দ” হোমনায় মহান মে দিবস উপলক্ষে  বিএনপির বর্ণাঢ্য র‍্যালি  ড. মোহাম্মদ ইউনূস এর শুভ আগমনে বোয়ালখালীবাসীর পক্ষ থেকে হাজী মোহাম্মদ আলম ববির শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা পুলিশ পরিচয়ে ঘরে প্রবেশ করে পরিবারের ৮ জনকে বেঁধে ছয়টি দোকান ঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে মালামাল লুট করেছে দুর্বৃত্তরা রোদেলা দুপুরে পারকি সৈকতের বালুকাবেলায় কলম যোদ্ধারা,স্মৃতিময় এক মে দিবস! ড. মোহাম্মদ ইউনূসের দক্ষিণ চট্টগ্রাম সফর সিএমপি কমিশনার ও পাঁচ ওসি পেলেন আইজিপি ব্যাজ সাহস, দক্ষতা ও মানবিক পুলিশিংয়ের স্বীকৃতি আইজি পি ব্যাজ পেলেন ওসি আফতাব উদ্দিন চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের সূচনালগ্নের সাহসী পুরুষ ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন! দৃষ্টি আকর্ষণ

চিরসবুজ বাটালী হীলের মহীরুহ: কর্মবীর দেলওয়ারের গল্প

মো. কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১১১ বার পড়া হয়েছে

একটি শুভ্র সকাল। চিরসবুজ বাটালী হীলের উঁচুতে শতায়ু অঙ্গণের প্রভাতের মেলাটি যেন প্রকৃতির সাথে এক আনন্দময় মিলন। আমি আমার ক্যামেরার চোখে বন্দী করেছি সেই অনন্য ব্যক্তিত্বকে, যার নাম দেলওয়ার। তাঁর প্রাণোচ্ছ্বল হাসি, নিঃস্বার্থ আত্মবিশ্বাস, আর জীবনবোধ যেন বাটালী হীলের প্রকৃতির সাথে মিশে আছে। তিনি যেন শতবার্ষিক গাছের ছায়ায় আড়াল নেওয়া নিরহংকারী মহীরুহ, যার উপস্থিতিতে পরিবেশে শান্তি আর মহিমা ভেসে আসে। জীবনের এই পরিণত বয়সেও তাঁর উচ্ছ্বাস বা নিষ্ঠা ম্লান হয়নি; বরং সময়ের পরিপক্বতায় আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে যেন তিনি বুকে টেনে নিয়ে প্রকৃতির আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন চারপাশে।
দেলওয়ার ভাইকে যখন দেখি, সবুজ ঘাসের ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে চলছেন, তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ যেন কোনো এক গভীর অনুভবে আছন্ন। সে এক দৃশ্য, যেখানে প্রকৃতি আর মানবিকতা এক মোহনায় মিলেছে। প্রকৃতি যেমন অনন্ত, তিনিও তেমনি চিরসবুজ, চিরন্তন। তিনি প্রকৃতি আর জীবনের প্রতি গভীর ভালোবাসায় সিক্ত, যে ভালোবাসা কখনো মলিন হয় না। শত বছরের পুরোনো গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা এই মানুষটির সাথে কথা বলতে গেলে যেন অনুভব হয়, প্রকৃতি তাঁকে স্পর্শ করেছে, জীবনের কোলাহল থেকে দূরে এক স্থির শান্তি তাঁকে ঘিরে রেখেছে। আগামীকাল, ২ নভেম্বর, তাঁর জন্মদিন, একটি দিন যেটি তাঁর কর্মজীবনের অবসানকেও চিহ্নিত করবে। এই কর্মপাগল মানুষটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে জীবনের সোনালী সময় অতিবাহিত করে অবসরে যাচ্ছেন। দেলওয়ার ভাই যথেষ্ট প্রতিভাবান এবং নিঃস্বার্থ; লোভ বা অহংকার তাঁকে কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি সত্য কথা বলার সাহসী এবং আত্মপ্রতিবাদী—একজন রূপকথার নায়ক যেন। সাংবাদিকদের সাথে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে তাঁর ইচ্ছা বরাবরই প্রবল ছিল, কারণ ন্যায়ের পক্ষে কলম ধরার অভীপ্সা তিনি হৃদয়ে ধারণ করতেন। আমিও তাঁকে খুবই পছন্দ করি, তাঁর সাহসী মনোভাব আমাকে মুগ্ধ করে। দেলওয়ার ভাইয়ের এই গল্প যেন এক মহাকাব্য। তাঁর প্রতিটি অর্জন, প্রতিটি সংকল্প, এবং প্রতিটি অবিচল অভিব্যক্তি আমাদের অনুপ্রাণিত করে, আমাদের শিখিয়ে যায় কীভাবে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে উদযাপন করা যায়, কীভাবে নিজের নিষ্ঠা ও সততা ধরে রেখে সমাজে অবদান রাখা যায়। সন্ধ্যের শেষ আলো যখন জলদি গ্রামের উপর নেমে আসে, সেই মুহূর্তে গ্রামের একটি পুরনো কুঁড়েঘরের ভেতর এক নিভৃতচারী মানুষ বসে থাকেন, চোখে তার গভীর চিন্তার ছাপ। বাঁশখালী পৌরসভা ৫ নং ওয়ার্ড, সিকদার পাড়া, জলদি গ্রামের সেই সাধারণ মানুষটি কোনো জাঁকজমকপূর্ণ জীবনের স্বপ্ন দেখেননি; বরং মাটির গন্ধ মাখা শেকড়ের ওপর দাঁড়িয়ে একজীবন বুনেছেন ন্যায় আর সততায়। প্রতিকূলতাকে সঙ্গী করে, নীতিকে অবিচল অস্ত্র করে, তিনি লড়াই করেছেন জীবনের প্রতিটি মোড়ে। তার জীবনটা যেন পাহাড়ে ওঠার গল্প। সাফল্য তার কাছে বড়ো কিছু ছিল না, বরং তিনি যেখানেই গেছেন, সেখানেই সততার আলোকবর্তিকা জ্বালানোর চেষ্টা করেছেন। ছোটবেলা থেকেই নিজস্ব নীতিতে স্থির থাকা মানুষটির জন্য সবকিছু সহজ ছিল না। তিনি বড়ো হয়েছিলেন সততা, ন্যায় আর দৃঢ়তা নিয়ে; আর এই গুণগুলোই তাকে সবসময় সঠিক পথে চলতে সহায়তা করেছে। কিন্তু জীবনের এই কঠিন পথে, মানুষের অন্তঃসারশূন্য স্বার্থ আর অসৎ উদ্দেশ্য তাকে বাধা দিতে চেয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চাকরি জীবন শুরু করেছিলেন তিনি এক অমূল্য প্রত্যয়ের সাথে—সত্যের পথে চলবেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। কিন্তু খুব শীঘ্রই তিনি বুঝতে পারলেন, এই প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ঢুকে পড়েছে দুর্নীতির কালো ছায়া। চারপাশে যখন স্বজনপ্রীতি আর অনৈতিকতার ছড়াছড়ি, তিনি একাই দাঁড়ালেন সৎ পথ ধরে। বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সময়, যখন অন্যরা নিজেদের স্বার্থ দেখেছে, তিনি সেই পথ অবলম্বন করতে পারেননি। একের পর এক কাজে বাধা পেয়েছেন, তার সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, কিন্তু ন্যায়ের জন্য তার আপোসহীন কণ্ঠ কখনোই নত হয়নি। তার প্রতিবাদে ভীত হয়ে ওঠে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। তার সততার আলোকবর্তিকা যেন তাদের চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দেয়। অনেকেই তার এই কণ্ঠকে থামাতে চায়। দিন দিন তিনি হয়ে ওঠেন অবহেলার পাত্র। মিটিংগুলোতে তাকে উপেক্ষা করা হয়, তার পরামর্শগুলো নীরবে বাতিল করা হয়, আর সময়ের পর সময় তাকে এমনকি পদোন্নতির ব্যাপারেও পিছিয়ে রাখা হয়।
বলা যায়, পুরো কর্মজীবনে তিনি অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর বাতি জ্বালানোর চেষ্টা করে গেছেন, কিন্তু সমাজ তার কাজের মর্ম বুঝতে পারেনি। তার এই সততা, ন্যায়ের প্রতি ভালোবাসা, এবং আপোসহীন সংগ্রাম, একের পর এক তাকে দূরে সরিয়ে দেয় ক্ষমতার আসর থেকে। মাঝে মাঝে তার মনেও প্রশ্ন জাগে—সত্য আর ন্যায়ের জন্য এতটা লড়াই করেও কি কোনো লাভ হবে? তবে সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি আবার নিজেই সান্ত্বনা পান; হয়তো একদিন তার কাজের মর্ম কেউ বুঝবে, হয়তো তার এই সততার মূল্য কেউ দেবে। গভীর রাতে যখন তিনি নিজের ঘরে বসে থাকেন, তখন একাকী সেই মানুষটির চোখে একধরনের বিস্মৃতি আর শান্তির আলো জ্বলে ওঠে। তার মনে হয়, হয়তো এই জীবনটা তার নিজের সার্থকতা খোঁজার জন্য নয়, হয়তো এই জীবনটা মানুষকে একবার হলেও দেখানোর জন্য, যে সততা কিভাবে অবিচল থাকতে পারে। তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত যেন সেই আলোকে জ্বালানোর গল্প। অবহেলা আর কষ্টের মাঝেও তিনি একটি সাদা খাতা আর কলম নিয়ে বসে পড়েন; তার লেখা শব্দগুলো যেন সেই অব্যক্ত কষ্ট আর ন্যায়প্রেমের প্রতিধ্বনি হয়ে ওঠে।
একদিন হয়তো তার গল্প হারিয়ে যাবে, কেউ হয়তো তাকে মনে রাখবে না, কিন্তু সেই গল্পে সততার যে আভাস থাকবে, তা যেন চিরকাল থেকে যাবে পৃথিবীর বুকে। আর এই অবহেলিত মানুষের একজীবনের লড়াই, মাটির ঘ্রাণ মাখা সেই ছোট্ট গ্রাম থেকে উঠে আসা মানুষটির আত্মার শক্তি, সততা, ন্যায়ের প্রতি অবিচলতা, এই পৃথিবীর বুকে অনন্তকাল ধরে প্রেরণার মতো জ্বলবে—যেমন একটি কেরোসিনের আলো পাহাড়ের গভীর রাতে জ্বলতে থাকে, নিভে যায় আবারও জ্বলে ওঠে।
লেখকঃ চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান ও যুগ্ন সম্পাদক, দৈনিক ভোরের আওয়াজ ও The Daily banner এবং গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট