1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০৭:৫১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
শেষ হলো দাওয়াতে ইসলামীর তিনদিনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ইজতেমা বালুকাবেলার আত্মঘোষণা: যেখানে সাংবাদিকতা হয়ে ওঠে প্রতিবাদের কবিতা চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের ঐক্য উৎসব পারকি সৈকতে গড়লো অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু মাওলানা রইস উদ্দিন হত্যার বিচার দাবিতে আনোয়ারায় বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ! “বাঁশখালীতে ৪ হাজার ইয়াবাসহ টেকনাফের মাদক কারবারি আটক: ব্যবহৃত মোটরসাইকেল জব্দ” হোমনায় মহান মে দিবস উপলক্ষে  বিএনপির বর্ণাঢ্য র‍্যালি  ড. মোহাম্মদ ইউনূস এর শুভ আগমনে বোয়ালখালীবাসীর পক্ষ থেকে হাজী মোহাম্মদ আলম ববির শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা পুলিশ পরিচয়ে ঘরে প্রবেশ করে পরিবারের ৮ জনকে বেঁধে ছয়টি দোকান ঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে মালামাল লুট করেছে দুর্বৃত্তরা রোদেলা দুপুরে পারকি সৈকতের বালুকাবেলায় কলম যোদ্ধারা,স্মৃতিময় এক মে দিবস! ড. মোহাম্মদ ইউনূসের দক্ষিণ চট্টগ্রাম সফর

চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিসের   বছরে অর্ধশত কোটি টাকা ঘুষ আদায়

মো. কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১৮০ বার পড়া হয়েছে

শেখ হাসিনার সরকার থাকুক বা না থাকুক, চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিসে ঘুষের রাজত্ব কিন্তু অক্ষুণ্ণ রয়েছে। চট্টগ্রামের দুই পাসপোর্ট অফিস, মুনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস এবং চান্দগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ঘুষ বাণিজ্যেরঘুষের ইতিহাস ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ঘুষ বাণিজ্য: শেখ হাসিনার সরকারের সময় আজান দিয়ে যারা ঘুষ বাণিজ্য করেছে, তারা এখনো সেই ঘুষের উৎসব বন্ধ করেনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘুষের বিরুদ্ধে আজীবন জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর আদর্শকে বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি শেখ হাসিনার আমলে একজন পিয়ন পর্যন্ত চারশত কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে, যা ঘুষ ও দুর্নীতির মহোৎসবের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এই ঘুষের মহোৎসবের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হলো পাসপোর্ট অধিদপ্তর। এই অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিস ঘুষের অন্যতম আখড়া হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিসের ঘুষের ইতিহাস অনেক পুরোনো, যা কোনো এক দিনে শুরু হয়নি। আজ যে এই পাসপোর্ট অফিস ঘুষের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, তার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ দিনের চর্চা এবং একটি পরিকল্পিত দুর্নীতির শেকড়। আমি আগেও এই পাসপোর্ট অফিসের ঘুষ এবং দুর্নীতির নানা দিক নিয়ে কিছু লেখালেখি করেছি।

পাসপোর্ট অফিসের কৌশলগত ঘুষ এবং দুর্নীতির বিস্তারিত আলোচনার আগে ঘুষের ইতিহাস এবং তার সামাজিক, রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে একটু কথা বলা প্রয়োজন। এভাবে শুরু করলে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট এবং কার্যকর হয়ে উঠবে। কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত।

প্রতিবছর এই দুই অফিস থেকে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ঘুষ আদায় করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এই প্রতিবেদনে আমরা বিস্তারিত তুলে ধরব কিভাবে এই ঘুষ বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে, মুনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের ঘুষের হিসাব ১. প্রতিদিন প্রায় ৮০০-৯০০টি ই-পাসপোর্টের ফাইল জমা হয়, যার মধ্যে প্রায় ৫৫০টি দালালের মাধ্যমে জমা হয়। ২. প্রতি ফাইলে ১৬০০ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়, ফলে প্রতিদিন ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮,৮০,০০০ টাকা। ৩. সপ্তাহে ৫ দিনে মোট ৪৪,০০,০০০ টাকা এবং মাসে ২২ দিনে ১ কোটি ৯৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ঘুষ আদায় হয়। ৪. বছরে এই ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৩ কোটি ২৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। চান্দগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ঘুষের হিসাব ১. এখানে প্রতিদিন ৫০০-৫৫০টি ই-পাসপোর্টের ফাইল জমা হয়, যার মধ্যে দালালের মাধ্যমে জমা হয়,৩০০-৩৫০টি।২. প্রতি ফাইলে ১৫০০ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়, ফলে প্রতিদিন ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪,৫০,০০০ টাকা। ৩. সপ্তাহে ৫ দিনে মোট ২২,৫০,০০০ টাকা এবং মাসে ২২ দিনে প্রায় ৯৯ লক্ষ টাকা ঘুষ আদায় হয়।

৪. বছরে এই ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১১ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা। ঘুষের লেনদেনের পদ্ধতি এবং দালালদের ভূমিকা পাসপোর্ট অফিসের ঘুষ লেনদেনের পদ্ধতি অত্যন্ত সুসংগঠিত। প্রতিটি পাসপোর্ট ফাইলে দালালদের একটি সাংকেতিক চিহ্ন থাকে, যা অফিসের কর্মকর্তারা সহজেই চিহ্নিত করতে পারেন। এই সাংকেতিক চিহ্ন ৭৭ নং কলামে দালালের ই-মেইল আকারে দেওয়া হয়। সাধারণ পাসপোর্ট আবেদনকারীরা যদি এই সাংকেতিক চিহ্ন না ব্যবহার করেন, তবে তাদেরকে নানা অজুহাতে হয়রানি করা হয়। দালালদের মাধ্যমে পরিচালিত ঘুষের পরিমাণ

দালালদের মাধ্যমে প্রতি বছর মোট ৩৫ কোটি ১১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার ঘুষ আদায় করা হয়। এর বাইরে অন্যান্য খাত থেকেও প্রায় ৫ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়া হয়। সব মিলিয়ে, চট্টগ্রামের এই দুটি পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রতি বছর প্রায় ৪০ কোটি টাকার ঘুষ আদায় করা হয়। বিশেষ সুবিধা এবং প্রতিকার বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য পাসপোর্ট জমা দেওয়ার আলাদা কাউন্টার থাকলেও, সাধারণ মানুষের জন্য এই ঘুষ বাণিজ্য দুর্বিষহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। যদি এই দুর্নীতি বন্ধ না হয়, তাহলে আমাদের সাধারণ মানুষের ঘাম ঝরানো টাকা এভাবেই বছরের পর বছর চলে যাবে।সমাপ্তি এই ঘুষের রাজত্ব বন্ধ করার জন্য প্রয়োজন একটি স্বচ্ছ তদন্ত এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ। সরকারের উচিত এই দুর্নীতি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা,তার জন্য কিছু প্রস্তাবনা-মন্তব্য ও পরামর্শ- চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিসের ঘুষ বাণিজ্য বন্ধে করণীয় চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিসের ঘুষ বাণিজ্য একটি দীর্ঘমেয়াদি ও গভীর সমস্যার ইঙ্গিত দেয়, যা দেশের সুশাসনের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। পাসপোর্ট একটি মৌলিক অধিকার, যা নাগরিকদের আন্তর্জাতিকভাবে চলাফেরার অধিকার নিশ্চিত করে। কিন্তু চট্টগ্রামের দুটি পাসপোর্ট অফিসে চলমান ঘুষের বাণিজ্য এই মৌলিক অধিকারকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। দুর্নীতির এই চক্র ভাঙতে হলে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে: সাধারণ মানুষের প্রতিরোধ গড়ে তোলা: জনসচেতনতা বৃদ্ধি: ঘুষের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার জন্য গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, এবং বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠনের উদ্যোগে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত। মানুষকে জানাতে হবে, ঘুষ প্রদান করে সমস্যার সাময়িক সমাধান হলেও, দীর্ঘমেয়াদে তা সমাজকে আরও দুর্নীতিপ্রবণ করে তুলছে। দালালদের বয়কট: ঘুষ বাণিজ্যের মূল চালিকাশক্তি হল দালাল চক্র। পাসপোর্ট আবেদনকারীদের এই দালালদের চিহ্নিত করে তাদের পরিষেবা বর্জন করতে হবে। সরকারি ভাবে যদি একটি “হটলাইন” বা “হেল্প ডেস্ক” চালু করা যায়, তবে দালালদের বঞ্চনা থেকে সাধারণ মানুষ রক্ষা পাবে। স্থানীয় আন্দোলন: নাগরিক সমাজ, ছাত্রসংগঠন, এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। পাসপোর্ট অফিসের সামনে নিয়মিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন করে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

প্রশাসনিক সংস্কার এবং কঠোর ব্যবস্থা,

দুর্নীতিবিরোধী বিশেষ কমিটি গঠন: একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি এবং ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করা উচিত। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।অভ্যন্তরীণ নজরদারি বৃদ্ধি: পাসপোর্ট অফিসে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে ঘুষের লেনদেন বন্ধ করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিটি লেনদেন, ফাইলের গতি, এবং কর্মকর্তাদের কার্যক্রমকে ডিজিটালি নজরদারি করা।

ঘুষ না নেওয়া কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করা: জনাব তাজ বিল্লাহ এর মতো যারা ঘুষের ভাগ নেন না, তাদের যেমন অনুপ্রাণিত করা, তেমনি তাদের কাজের স্বচ্ছতা ও সৎ কার্যপ্রণালীকেও প্রচার করা উচিত। এর ফলে সৎ অফিসারদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ: কঠোর শাস্তির বিধান: যারা ঘুষ লেনদেনে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। শাস্তির বিধান কঠোর করলে ভবিষ্যতে অন্যরা এরূপ কাজে লিপ্ত হতে সাহস করবে না। স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা: পাসপোর্ট অফিসের প্রতিটি প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও জনবান্ধব করে তুলতে হবে। অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদনের প্রক্রিয়া সহজ করে তোলার মাধ্যমে দালালের ভূমিকা কমিয়ে আনা সম্ভব। উপসংহার: ঘুষমুক্ত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার অঙ্গীকার

চট্টগ্রামের পাসপোর্ট অফিসের এই ঘুষের জাল কেবল একটি শহরের সমস্যা নয়, বরং পুরো দেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি। এই পরিস্থিতির উন্নতির জন্য দরকার সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আমাদের সকলের উচিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং একটি ন্যায়সঙ্গত, সুশাসিত সমাজ গঠন করা। ঘুষ একটি সামাজিক ব্যাধি, যা সমাজের মূল শিকড়কে নষ্ট করে দেয়। তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে এই ব্যাধির বিরুদ্ধে সোচ্চার হই এবং আমাদের সমাজকে ঘুষমুক্ত করার জন্য দৃঢ় অঙ্গীকার করি।

লেখকঃ সাংবাদিক গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক ও সভাপতি- জাতীয় সাংবাদিক মঞ্চ চট্টগ্রাম।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট