
বই রিভিউ/কবি মোহাম্মদ আলীম- আল- রাজী'র “কাব্যকথা”
কবি প্রতিনিয়ত ভাবনার আকাশে দোল খায়। প্রতিনিয়ত কবি লিখে যায় অজস্র কবিতা। কবি কখনো প্রেমিক, কখনো বিদ্রোহী, কখনো নৈসর্গিক ভাবনায় একের পর এক কবিতা প্রসব করেন। সামাজিক, দেশপ্রেমের সমসাময়িক কবির চিন্তা চেতনায় তার লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন। কবির সচারাচর অমোঘ সত্যবাণীই হয়ে ওঠে একটি শব্দ, একটি লাইন, একটি কবিতা, একটি কাব্য। প্রিয় বিদগ্ধ পাঠক, আজকের লেখার শিরোনাম দিয়েছি "কবি মোহাম্মদ আলীম- আল-রাজীর কাব্যকথা" কবির "ভালো থাকুক মেঘলা" কাব্যগ্রন্থ থেকে আজকের এ আলোচনা। কবির এটি একক কাব্যগ্রন্থ। এ কাব্যগ্রন্থে মোট কবিতা ৬১ টি। কবি মোহাম্মদ আলীম-আল- রাজীর এটি প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ। কবি মোহাম্মদ আলীম-আল- রাজী তার "ভালো থাকুক মেঘলা" কবিতায় ১ম স্তবকে তিনি বলেছেন-
" বকুল ফুলের মালা হাতে
দাঁড়ায় গেটের পাশে চুপটি,
কলেজ শেষে মেঘলা আসবে -
এ আশায় আকাশ থেমে থাকে নিঃশব্দে। "
কবি গভীর ভাবনায় আচ্ছন্ন। অপেক্ষামান বকুল ফুলের মালা হাতে। গেটের পাশে চুপটি করে দন্ডায়মান। কলেজ শেষে কখন মেঘলা আসবে সেই আশায় কবি রোমান্টিক জীবন্ত কিংবদন্তি। আকাশে কোনো বৃষ্টি নেই। আবহাওয়া কবির যেনো অনুকূলে নিঃশব্দে কবি অপেক্ষামান। কবির ভালো লাগা, ভালোবাসায় যেনো মেঘলায় সব। কবি মোহাম্মদ আলীম-আল- রাজী "তবু ভালো থাকুক মেঘলা " ২য় স্তবকে বলেছেন-
" চোখে ছিল স্বপ্নের ছায়া
হাত ধরে হাঁটার ব্যাকুলতা,
কিন্তু সময়ের বাঁকে বাঁকে
হারিয়ে গেল সব গল্পতা। "
কবির চোখে আকাশ সমান স্বপ্ন ছিল। মেঘলার সঙ্গে হাতে ধরে হাঁটার কী ব্যাকুলতা! কিন্তু সময়ের স্রোতে কবি নিঃশব্দ নিরব। কবির আশা ও স্বপ্নে কেন জানি অন্ধকারাচ্ছন্ন। কবির প্রেম ভালোবাসায় পবিত্রতা এখন শুধু সময়ের আক্ষেপ, শুধুই গল্প। ভালোবাসায় কবি ব্যথাকাতর,ছলনার শোকে অশ্রুসিক্ত। কবি মোহাম্মদ আলীম-আল- রাজী তার "অন্ধকারে যুবক" কবিতায় তিনি বলেছেন-
" সোনার ছেলে স্বপ্ন বয়ে
ভবিষ্যতের পানে চেয়ে,
হঠাৎ একদিন অন্ধকারা
নেশা দিলো ধরা। "
আজকের স্বপ্ন আগামী দিনের ভবিষ্যত। সোনার ছেলের স্বপ্ন আকাশচুম্বী। ভবিষ্যতে ছেলে বড় হয়ে পরিবার, সমাজ ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে, সমগ্র কল্যাণে অগ্রসর হবে। কিন্তু ছেলে যদি অন্ধকার জগতে পা বাড়ায় তাহলে তার ভবিষ্যত অনিশ্চিত। এখানে কবি "অন্ধকারা" বলতে বুঝিয়েছেন খারাপ নেশার প্রবণতা যা কখনো পরিবার, সমাজ,দেশের জন্যে হুমকিস্বরুপ। কবি মোহাম্মদ আলীম-আল-রাজী এ কবিতার ৫ম স্তবকে বলেছেন-
"পাড়া বলে, ও মস্ত নেশাখোর
মা তার কাঁদে -স্বপ্ন গোর,
বাবা বোঝে না, ভাই মুখ লুকায়
বোনটা লজ্জায় মাথা নোয়ায়। "
বর্তমানে মাদক ইয়াবায় অভয়ারণ্য দেশ। নেশাগ্রস্ত যুবক সমাজ। নেশার ভয়ংকর রূপ যেনো প্রতিনিয়ত উগড়ে দিচ্ছে। এর ভয়ংকর কালো থাবা গ্রাম, শহর নগরে। এ ভয়ানক ব্যাধি জীবন ও পরিবারকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তাই কবি পারিবারিক সামাজিক ও দেশের বাস্তবচিত্র তুলে ধরেছেন। পাড়ায় যারা মস্ত নেশাখোর, পরিবারে মা-বাবার স্বপ্ন ধূলিসাৎ। ছেলে মানুষের মতন বড় হবে। তার স্বপ্ন পূরণে পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবে তা না করে নেশায় ডুবে থাকে। জীবন নামের আশা ও স্বপ্নের কবর রচনা করছে ভয়ানক এ ইয়াবার নেশা। এমনকি সমাজে বসবাস বা সামাজিকভাবে পরিবারের সকলের মুখ দেখা লজ্জাজনক যা আত্মপক্ষ কখনোই সমর্থন করে না। কবি মোহাম্মদ আলীম-আল- রাজী তার "পুরুষ নির্যাতন" কবিতার ১ম ও ২য় স্তবকে তিনি বলেছেন-
"বউয়ের চোখে আগুন জ্বলে
স্বামী দেখে নিঃশ্বাস চোকে,
রোজ সন্ধ্যা ঘরে ফিরে
শুনে গালি বালতিরে।
চুলের মুঠি কানে চড়,
বাঁচতে গিয়েও পায়না জোর।
মায়ের সাথে কথা বললে,
ঘরের মাঝে ঝড়ই চলে। "
বর্তমান সমাজে নারীর পাশাপাশি পুরুষ নির্যাতন অহরহ। পারিবারিক অশান্তির আগুন সমাজের অনেক পরিবারই দেখা যায়। বউয়ের হাতে পুরুষ অর্থাৎ স্বামী নির্যাতন নতুন কিছু নয়। পরিবারের আহার জোগাতে পারিবারিক দায়বদ্ধতা নারী ও পুরুষের উভয়ই রয়েছে। তবে সমাজের চালচিত্রে পুরুষ পরিশ্রমেই অগ্রগামী। সারাদিন হাড় ভাঙা খাঁটুনি খাটে। পরিবারের ভরণপোষণে একজন পুরুষ,একজন স্বামী সবসময় চিন্তা ও হতাশার মধ্যে দিনাতিপাত করে। অভাবের সংসারে একজন একজন পুরুষ জীবন্ত লাশ! তারপরও বউয়ের আশা- আকাংখা পূরণে একজন পুরুষ ব্যর্থ হলে বউয়ের চোখে আগুন জ্বলে। স্বামীর নিঃশ্বাস যেনো নিজেই চোকে। হাড় ভাঙা খাঁটুনি খেটে যখন স্বামী সন্ধ্যার সময় বাড়ি ফিরে তখন বউয়ের বালতি ভর্তি গালি স্বামীকে প্রতিনিয়ত শুনতে হয়। এ ছাড়াও বউ শাশুড়ি যুদ্ধ তো আছেই। মা- ছেলের সঙ্গে আলাপচারিতা হলেই বউ ভাবে অন্যটা। হয়তো বউয়ের মনের কথা, স্বামী তার মাকে তলে তলে অর্থ জোগান দেয়। জীবনে বাঁচতে গিয়েও, চলতে গিয়েও একজন পুরুষ, একজন স্বামী বউয়ের হাতে নির্যাতিত। কখনো চুলের মুঠি ধরে লাথি ঘুষি কিল চালাচালি ঘরের মাঝে ঝড়ই চলে অহরহ। কবি সমাজের বাস্তবচিত্র তার "পুরুষ নির্যাতন" কবিতায় ফুটিয়ে তুলেছেন যা বাস্তব সমাজে চরম সত্য। কবি মোহাম্মদ আলীম-আল- রাজী তার " কালো টাকার সাদা মুখ" কবিতায় তিনি বলেছেন-
" কালো টাকা সাদা হয়
চুপে চুপে পথটা কয়।
নিয়ম ভেঙে নামে জয়,
সৎটি হারে, মিথ্যে রয়।
ব্যাংক খাতে রঙের ছায়া
চোখে ধোঁয়া, মুখে মায়া।
টাকা আসে নানা বায়া,
কোথায় নীতি? কে' বা চায়?"
বর্তমানে কালো টাকার ছড়াছড়ি। সামাজিক রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনত অপরাধ। চুপি চুপি ব্যাংকের আদলে কালো টাকা ছাপিয়ে নিয়মনীতি ভেঙে সত্যটি হেরে যায়। মিথ্যে দন্ডায়মান থাকে। তাই কবি উপরোক্ত কথা তুলে ধরেছেন যা বাস্তবচিত্র সত্য।
এ কবিতায় কবি আরও বলেছেন-
" ঘুষের থলি পকেট ভরে
চোরের খাতা জলে ধরে,
আইন শুনে ধৈর্য ধরে
তবু সত্য কি আর মরে?
দালাল ঘুরে ফাইল বয়,
অন্য আয়ও লুকিয়ে কয়-
নির্বাক থেকে হেসে কয়!
চালাক হলে সবই হয়!
তবু বলি থাকবে দিন,
যবে চলবে সঠিক চিন।
সাদা হতে হলে চিন
পথটি যেন হয় না বিন। "
প্রতিনিয়ত ঘুষ আর ঘুষ। প্রাতিষ্ঠানিক অফিস থেকে শুরু করে সর্বত্রই ঘুষ বাণিজ্য। অফিস সহকারী থেকে অফিসের বস। সাধারণ মানুষ কিংবা চাকুরীজীবি কোনো অফিসে কাজের উদ্দেশ্য গেলেই আগে ঘুষ। অফিসের পাশেও দালালচক্র বেড়ে চলেছে। একটা ফাইল সই করে নিলেও দারোয়ান টাকা চায়। টাকায় যেনো সোনার হরিণ মেলে। তাই কবি আহবান করেছেন সাদা হতে হলে চিন, আর সত্য পথটি যাতে বিলীন না হয়। কবি মোহাম্মদ আলীম-আল- রাজীর বইটি পাঠকপ্রিয় হোক এই প্রত্যাশায় কামনা করছি।
কাব্যগ্রন্থঃ ভালো থাকুক মেঘলা
লেখকঃ মোহাম্মদ আলীম-আল- রাজী
প্রচ্ছদঃ রাজ/ প্রকাশকঃ বাংলাদেশ প্রকাশনী /প্রথম প্রকাশঃ অমর একুশে বইমেলা ২০২৬ উপলক্ষে /বইটির মূল্যঃ ২৩০ টাকা
লেখকঃ মো. আব্দুল আলিম -কবি ও সাহিত্যিক
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com