 
     বাংলাদেশে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতা, শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের অনেকেই নিজেদের বাসা-বাড়িতে আয়া-বুয়া, চাকর-বাকর, পিয়ন, দারোয়ান, গার্ড, বডিগার্ড বা গানম্যান রাখেন। বিস্ময়ের বিষয় হলো-তাদের বস যত বেশি ক্ষমতাশালী, এই কর্মচারীরাও তত বেশি ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন। অনেক সময় দেখা যায়, এসব আয়া-বুয়া,গার্ড কিংবা পিয়নরাই হয়ে ওঠেন সমাজের ‘অঘোষিত প্রভাবশালী ব্যক্তি’। তাদের আচরণ, কথাবার্তা ও প্রভাব-প্রতিপত্তিতে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতা, শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের অনেকেই নিজেদের বাসা-বাড়িতে আয়া-বুয়া, চাকর-বাকর, পিয়ন, দারোয়ান, গার্ড, বডিগার্ড বা গানম্যান রাখেন। বিস্ময়ের বিষয় হলো-তাদের বস যত বেশি ক্ষমতাশালী, এই কর্মচারীরাও তত বেশি ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন। অনেক সময় দেখা যায়, এসব আয়া-বুয়া,গার্ড কিংবা পিয়নরাই হয়ে ওঠেন সমাজের ‘অঘোষিত প্রভাবশালী ব্যক্তি’। তাদের আচরণ, কথাবার্তা ও প্রভাব-প্রতিপত্তিতে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে।
বিশেষত রাজনৈতিক নেতাদের পিয়ন বা গানম্যানরাই অনেক সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেন, কারণ তারা সবসময় নেতার কাছাকাছি থাকেন। অপেক্ষাকৃত কম ক্ষমতাবান নেতারা বড় নেতার সঙ্গে দেখা করতে হলে অনেক সময় এই পিয়ন বা গানম্যানদের সহায়তা নিতে বাধ্য হন। ফলে বড় বড় নেতারাও এসব কর্মচারীদের সমীহ করে চলেন।
বাংলাদেশে এর এক জীবন্ত উদাহরণ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পিয়ন জাহাঙ্গীর, যিনি ‘পানি জাহাঙ্গীর’ নামে পরিচিত ছিলেন। তার দায়িত্ব ছিল সুধাসদনে আগতদের পানি পরিবেশন করানো। কিন্তু সেই জাহাঙ্গীরই একসময় হয়ে ওঠেন বিশাল সম্পদের মালিক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিজেই আক্ষেপ করে বলেছিলেন-আমার পিয়ন এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক, হেলিকপ্টার ছাড়া চলেন না!
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীরের সম্পদের পরিমাণ প্রকৃতপক্ষে হাজার কোটি টাকারও বেশি। একসময় যিনি শুধুমাত্র অতিথিদের পানি পরিবেশন করতেন, তিনিই পরবর্তীতে ক্ষমতার পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যবসায়ী, ঠিকাদার এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত হন।
এ শুধু জাহাঙ্গীরের গল্প নয়। দেশের প্রায় সব বড় রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের ঘরে-বাইরে অসংখ্য চাকর-বাকর, দারোয়ান, গার্ড, পিয়ন বা গানম্যান রয়েছে। তাদের অনেকেই নেতার ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেন, চাঁদাবাজি করেন, এমনকি নিরীহ মানুষের জায়গা-জমিও দখল করে নেন। প্রভাবশালী নেতারা প্রায়ই এসব অনিয়ম ও অত্যাচারের খবর রাখেন না, কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে নীরব থাকেন।
এসব চাকর-বাকর, দারোয়ান, গার্ড, পিয়ন বা গানম্যানরা সীমা ছাড়িয়ে রাষ্ট্রীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফোন করে ধমকের সুরে তদ্বির করেন। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত কর্মচারীদের তদ্বিরে সরকারি কর্মকর্তারা বিব্রত বোধ করলেও নানা কারণে তাঁরা মুখ বন্ধ রাখেন।
এমনকি এসব চাকর-বাকরদের প্রভাবে তাদের আত্মীয়স্বজনরাও খুঁটির জোরে এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলবাজি করে বেড়ায়। তাদের কোনো টেনশন নেই-একটি ফোনেই সবকিছু ‘মীমাংসা’ হয়ে যায়।
প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের উচিত নিজেদের ব্যক্তিগত কর্মচারীদের কর্মকাণ্ডের উপর কঠোর নজর রাখা। কারণ জনগণ রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, স্লোগান দিয়ে ও ভোট দিয়ে আপনাদের ক্ষমতায় আনে। কিন্তু আপনাদের নাম ভাঙিয়ে যদি চাকর-বাকররা জনগণের ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালায়-তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আজকের গল্পটি শুরু হয়েছিল সুধাসদনের জাহাঙ্গীরকে দিয়ে-সমাপ্তিও হয় তার নামেই। তবে এই গল্পের এখানেই শেষ নয়। আগামী দিনে হয়তো আরেকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার চাকর-বাকরের ক্ষমতার গল্পই হয়ে উঠবে নতুন আলোচনার বিষয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com