“চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে” শিরোনামে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে নিউজ হওয়ায় পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের মির্জা রুহুল আমিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক রেজিব উদ্দিন (৫৮) অসুস্থ হয়ে রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আকস্মিক এমন ঘটনায় এলাকায় জনসাধারণের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়।
ঘটনার বিবরণীতে জানা যায়, গত ১১ তারিখ বৃহস্পতিবার স্কুলের প্রধান শিক্ষক মির্জা আজম মাসিক মিটিংয়ের জন্য স্কুলে উপস্থিত ছিলেন না। অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে উত্তম কুমার, আলফা বেগম, সাজনীন আক্তার, রেজিব উদ্দিন স্কুলে উপস্থিত ছিলেন।
সহকারি শিক্ষক উত্তম কুমারের সাথে কথা বলে জানা যায়, টিফিনের পরে আনুমানিক ২.৩০ আড়াইটার দিক এক শিক্ষার্থী আলফা ম্যাডামের কাছে এসে অভিযোগ করেন, ম্যাডাম এইদিক আসেন তো কিছু কথা ছিল, রেজিব স্যার আমাকে খারাপ কথা বলেছে, আবার কিছুক্ষন পর সে, এসে বলে আমার বাড়িতে বাবা মাকে বলার দরকার নাই! এই কথা বলে সে, ক্লাসে চলে যায়। ক্লাস শেষে আবার সে আলফা ম্যাডামের কাছে গিয়ে বলে- রেজিব স্যার আমার সম্পর্কে দাদা হবে, আমি ইয়ার্কি করে বললাম, এই কথা বলে সে চলে যায়।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মির্জা নুরুল আজম বলেন, ঘটনার দিন ১১ তারিখ বৃহস্পতিবার আমি স্কুলে উপস্থিত ছিলাম না, ১৩ তারিখ রবিবারে আমি স্কুলে আসলে ঘটনাটি জানতে পারি। সেদিন আমাদের সমন্বয় মিটিং ছিল। আমি অভিযোগকারি শিক্ষার্থীটিকে ডেকে জিজ্ঞেস করি, তোমার স্যার বা আপাকে কিছু বলেছো নাকি? কি বলেছো আমাকে বলো? শিক্ষার্থীটি বলে- স্যার আমি আলফা ম্যাডামকে বলেছি, উনাকে জিজ্ঞেস করেন। সহকারি শিক্ষিকা আলফাকে জিজ্ঞেস করলে- উনি বলেন, ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ করছিল রেজিব স্যার নাকি তাকে বেয়াদবি বেয়াদবি কথা বলেছে, আবার কিছুক্ষন পর এসে বলে, আমার বাবা মাকে বলার দরকার নাই, আবার কিছুক্ষন এসে পরে এসে বলে- স্যার আমার সম্পর্কে দাদা হবে, এমনি ইয়ার্কি করলাম!
সহকারি শিক্ষক রেজিব উদ্দিনকে ঘটনাটি কি! জিজ্ঞেস করলে? উনি বলেন- বৃহস্পতিবারে বাথরুম পরিষ্কার করার জন্য কয়েকজনকে আমি ২০ টাকা দিই, এখানে অন্যকিছু ব্যাপার নাই।
ঘটনাটি শুনার পর আমি কয়েকদিন অবজারভেশনে রাখলাম। সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবারেও শিক্ষার্থীটি স্বাভাবিকভাবে স্কুলে এসেছিল, আমি কোন অসংগতি দেখিনি। এর বাইরে আমার কোন জানা নেই এবং কিছু মিডিয়ায় ১৭ তারিখে যে নিউজ হয়েছে এই ব্যাপারে আমি অবগত নই।
ঘটনা সম্পর্কে ওই স্কুলের সহকারি শিক্ষিকা সাজনীন আক্তার বলেন এমন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা আমাদের স্কুলে ঘটেনি, স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতির হার ৯০ শতাংশের উপরে, অভিযুক্তকারি শিক্ষার্থীটিও স্কুলে স্বাভাবিকভাবে এসেছিল।
এলাকাবাসীর মধ্যে এই ঘটনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানা গেছে, কৃষ্ণনগর গ্রামের অভিভাবক মোঃ ফারুক হোসেন বলেন- রেজিব স্যার অনেক ভালো মানুষ তিনি প্রায়ই বাচ্চাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে লেখাপড়ার খোজ নেন।
আরেক অভিভাবক মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, বাচ্চাটি বিচার দিয়েছে মাস্টারনিকে, মাস্টারনি বিচার দিয়েছে হেডমাস্টারকে, বাচ্চাটা তো ওর বাবা মাকে বিচার দেইনি! তাহলে ওরা নিজেরা সমাধান না করে! ব্যাপারটা বাইরে আসলো কিভাবে? ঘটনা সত্য মিথ্যা যেটাই হোক- রেজিব স্যারের পরিবার থেকে কেউ মেয়ের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে ব্যাপারটা মিমাংসা করতে পারতো?
আরেক অভিভাবক আইয়ুব আলী বলেন- গত ১৪ তারিখ রবিবারে বোদা উপজেলার একজন সাংবাদিক, পরিচয় গোপন করে স্থানীয় ম্যাম্বার নিত্যকে কল করে বলেন- আপনার এলাকায় শিক্ষকের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী ধর্ষিত হয়েছে আপনি জানেন কিনা? ম্যাম্বার বলছে আমি কিছুই জানিনা? আবার একই মোবাইল নাম্বার থেকে ১৭ তারিখ বুধবারে আমার বড় ভাইকে কল করে, জিজ্ঞেস করে আপনার এলাকায় স্কুলে একটা ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে আপনি জানেন কিনা? তখন ওই সাংবাদিকের নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করা হলে তিনি পরিচয় দেননি!
এলাকার অনেকে আরও বলেন, এই রকম অভিযোগ আরো একবার শাহাজাহান আলী নামে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে হয়েছিল? মোবাইল নাম্বারটা কার! এই রহস্য উদঘাটন করলেই আসল সত্য বেড়িয়ে আসবে বলে, এলাকাবাসী অনেকে মনে করেন!
অভিযুক্তকারী শিক্ষার্থীর বাবা-মা বলছেন ভিন্ন কথা, ঘটনাটি শুনেছেন মঙ্গলবার রাতে। তাদের মেয়ের মুখে শুনেছেন, “আমি টয়লেট থেকে ফিরে হাত ধৌত করছিলাম, এরই মধ্যে রেজিব স্যার আমার হাত ধরে টেনে টয়লেটে নিয়ে যায়…তারপরে আর বলতে চাননি..”। ১৮ তারিখ বুধবারে থানা থেকে পুলিশ এসেছিল মেয়ের ছবি তুলে নিয়ে গেছে। আমরা থানায় কোন অভিযোগ করিনি। আমরা এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
অভিযুক্ত শিক্ষক রেজিব উদ্দিনকে মোবাইলে কল দিলে উনার স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম কলটি রিসিভ করেন, তিনি বলেন আমার স্বামী দীর্ঘদিন যাবৎ কিডনি, হার্টের সমস্যায় ভুগতেছেন। গত ১৮ তারিখ বুধবারে আমরা উনাকে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করি, পরে অবস্থার অবনতি দেখে রেফার্ড করে। বর্তমানে রংপুর কমিউনিটি ক্লিনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি।
এলাকায় এই ঘটনা নিয়ে এখন থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com