“অবিলম্বে গ্যাস সংযোগ চাই: দশ বছরের অপেক্ষায় আড়াই লক্ষ গ্রাহকের আর্তনাদ—আগামীকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন”
বাংলাদেশের নাগরিক জীবনে গ্যাস আজ কেবল রান্নার জ্বালানি নয়, বরং অপরিহার্য একটি অধিকার। রান্নাঘরের চুলা থেকে শুরু করে শিল্প-কারখানার চাকা—সবকিছুই গ্যাস নির্ভর। অথচ দেশের লাখ লাখ মানুষ আজও এই মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কেউ পাচ্ছেন, কেউ পাচ্ছেন না—একই রাষ্ট্রে এমন বৈষম্য ভুক্তভোগীদের জীবনকে করে তুলেছে দুর্বিষহ।
“কেউ পাবে, কেউ পাবে না—তা হবে না, তা হবে না”—এই জোরালো স্লোগানকে সামনে রেখে গ্রাহক-গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ ঠিকাদার ঐক্য ফেডারেশন বাংলাদেশ আগামীকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রাজধানীসহ সারাদেশে একযোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে। সভাপতি আবুল হাসেম পাটোয়ারী ও সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম অলিউল্লা হক এর নেতৃত্বে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে ভুক্তভোগী গ্রাহক, বাড়ির মালিক, ঠিকাদার, শ্রমিক ও সর্বস্তরের সচেতন নাগরিক অংশ নেবেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে—আগামীকাল মানববন্ধনে তারা সরকারের নিকট সুস্পষ্ট দাবিগুলো উত্থাপন করবেন।
দশ বছরের অপেক্ষা—আড়াই লক্ষ পরিবারের দুঃখকথা-২০১৫ সাল থেকে পেট্রোবাংলার ছয়টি সাবসিডিয়ারি কোম্পানির আওতায় প্রায় ২,১৫,০০০ গ্রাহক আবাসিক গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করেন। নিয়ম অনুযায়ী ডিমান্ডনোট, পাইপ লাইন নির্মাণ, রাস্তা কাটার অনুমতি, ঠিকাদারি খরচসহ সকল অর্থ পরিশোধ করেও আজও তাদের ঘরে গ্যাসের আগুন জ্বলেনি। অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে কেটে গেছে দীর্ঘ এক দশক। অথচ সরকারের ২০১৪ সালের গেজেট অনুযায়ী, আবেদন গ্রহণ ও চুক্তি সম্পন্ন হলে সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহের মধ্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি।
সভাপতি আবুল হাসেম পাটোয়ারী স্পষ্ট ভাষায় বলেন—“এটি কেবল অবহেলা নয়, বরং জনগণের সাথে সরাসরি প্রতারণা। একই রাষ্ট্রে এক শ্রেণির মানুষ গ্যাস সুবিধা ভোগ করবে, আরেক শ্রেণি বছরের পর বছর অপেক্ষা করবে—এ অন্যায় আমরা আর মেনে নেব না।” আবাসন খাতে বিপর্যয়
নির্মিত ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া যাচ্ছে না। বিনিয়োগের বিপরীতে বাড়ির মালিকরা প্রত্যাশিত আয় পাচ্ছেন না। ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে অনেকে দেউলিয়া হচ্ছেন। চুলা বর্ধিতকরণ বন্ধ থাকায় বাড়ির অতিরিক্ত তলা ভাড়া দেওয়া যাচ্ছে না।
গ্যাস সংযোগ না থাকায় ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে অসংখ্য ভবন। এ অবস্থায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো ভয়াবহ আর্থিক ও মানসিক চাপে দিন কাটাচ্ছেন। হাজারো ঠিকাদারের কর্মহীনতা- ২০১৫ সালে হঠাৎ করে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে সারাদেশে প্রায় ২৩০০ ঠিকাদার এবং তাদের সাথে যুক্ত হাজারো শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম অলিউল্লা হক বলেন—“দেশ যখন উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে, তখন হাজার হাজার মানুষকে কর্মহীন করে রাখা অযৌক্তিক। কর্মসংস্থান সৃষ্টির বদলে এই খাতে বেকারত্ব তৈরি করা জাতীয় অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর।” বৈষম্যের প্রকৃষ্ট উদাহরণ মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন—পেট্রোবাংলার কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশ ও অবহেলার কারণেই এই দীর্ঘসূত্রিতা চলছে। একই রাষ্ট্রে কেউ সংযোগ পাচ্ছেন, আবার কেউ পাচ্ছেন না। অথচ গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ—এসব সুবিধা সংবিধান প্রদত্ত নাগরিক অধিকার।
আগামীকাল উত্থাপিত হবে যে দাবিগুলো- সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, আগামীকালের মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট তারা সুস্পষ্ট দাবি উত্থাপন করবেন—১. অপেক্ষমাণ প্রায় ২.১৫ লক্ষ গ্রাহকের গ্যাস সংযোগ অবিলম্বে প্রদান। ২. বিদ্যমান লাইনে চুলা বর্ধিতকরণ কাজ পুনরায় চালু। ৩. নতুন আবাসিক ও শিল্প-বাণিজ্যিক সংযোগ প্রদানের জটিলতা নিরসন। ৪. বৈষম্যহীন সার্বজনীন সংযোগ প্রদানে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা।
৫. অবহেলা ও দীর্ঘসূত্রিতার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান- সভাপতি আবুল হাসেম পাটোয়ারী ও সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম অলিউল্লা হক সাংবাদিক সমাজকে উদ্দেশ্য করে বলেন—
“আপনারাই জনগণের কণ্ঠস্বর। গণমাধ্যমের প্রচার ছাড়া এ বৈষম্যের অবসান সম্ভব নয়। আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো আপনারা সরকারের কাছে পৌঁছে দিন।”
উপসংহার—জনস্বার্থে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন- দশ বছর ধরে অমানবিক ভোগান্তি সহ্য করা আড়াই লক্ষ গ্রাহক আজ একটাই প্রত্যাশা করছেন—অবিলম্বে গ্যাস সংযোগ। এটি ব্যক্তিগত নয়, বরং জাতীয় স্বার্থের দাবি। সভাপতি আবুল হাসেম পাটোয়ারী ও সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম অলিউল্লা হক মানববন্ধনের সমাপনী বার্তায় বলেন— “আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। কিন্তু বৈষম্যের শিকার হয়ে আর চুপ থাকব না। গ্যাস সংযোগ আমাদের অধিকার—এ অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।” তারা সর্বস্তরের মানুষকে আগামীকালকের জনস্বার্থে পালিত মানববন্ধন কর্মসূচি সফল করার জন্য আন্তরিকভাবে আহ্বান জানিয়েছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com