দুর্নীতি ও ঘুষের ইতিহাস সভ্যতার সমবয়সী বলা যায়। এই অভিশাপ আজ আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকে গ্রাস করেছে। একটি দেশকে ধ্বংস করার জন্য দুর্নীতি ও ঘুষই যথেষ্ট। সরকারি চাকরির প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়ার অন্যতম কারণ হলো দ্রুত ধনী হওয়ার স্বপ্ন। প্রকৃত বেতন যেমনই হোক না কেন, ‘উপরি আয়ের’ প্রলোভনেই অনেকে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ফলে ঘুষ ও দুর্নীতি এক ধরনের নেশায় পরিণত হয়েছে, যা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে।
আজ দুর্নীতিবাজরা শুধু প্রভাবশালী হয়ে ওঠেনি, তারা দেশের উন্নয়ন অর্থ গিলে খাচ্ছে। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ছোট-বড় সরকারি কর্মকর্তা—সবাই এই দুষ্টচক্রে জড়িয়ে পড়েছেন। এমনকি সমাজ ও জাতির বিবেকবান মানুষ—যাদের লেখনীর মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ করার কথা ছিল, সেই কলম সৈনিকদেরও অনেকে দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। লেখক হিসেবেই স্বীকার করছি, এ বাস্তবতা আমাদের লজ্জিত করে। একসময় থানা প্রশাসনকে ঘুষের আখড়া বলা হতো। কিন্তু আজ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দপ্তর, কাস্টমস, পাসপোর্ট অফিস, ভূমি অফিস, কারাগার, আদালত, সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পৌরসভা, নির্বাচন অফিস, বন্দর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, গণপূর্ত, সড়ক বিভাগসহ প্রায় সব প্রতিষ্ঠান প্রকাশ্যে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। যে যত বেশি দুর্নীতি করছে, সমাজে তার কদর তত বেশি—এ এক ভয়ংকর বাস্তবতা। দুর্নীতির কারণে বৈষম্য ও অরাজকতা দিন দিন বাড়ছে। যারা সৎ থাকতে চায়, তারা প্রতিনিয়ত দুর্নীতিবাজদের হাতে অপমানিত হচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের দাপটে টিকে থাকা আজ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে দুর্নীতি বিরোধী জনআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে সমাজচ্যুত করতে হবে। তাদের সঙ্গে আত্মীয়তা বন্ধ করতে হবে। সমাজে দুর্নীতিবাজদের ‘ঘৃণ্য মানুষ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এলাকাভিত্তিক ব্যানার, পোস্টারসহ প্রচারণা চালানো জরুরি। যেহেতু দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যত ব্যর্থ, তাই আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি জনসচেতনতা ও সামাজিক প্রতিরোধই হতে পারে প্রধান অস্ত্র।
সব সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। ঘুষের টাকায় আয়োজিত ভোজসভা বা যেকোনো আয়োজন বর্জন করতে হবে। এমনকি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও দুর্নীতির টাকা দান হিসেবে গ্রহণ না করার সাহস দেখাতে হবে। আজ দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জোয়ার বইছে। এর সফলতা ধরে রাখতে হলে দুর্নীতি ও ঘুষবিরোধী আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের মতোই বৃহৎ আকারে গড়ে তুলতে হবে। দুর্নীতির মতো মহাব্যাধি বন্ধ করতে পারলেই দেশে উন্নয়ন ও শান্তি ফিরে আসবে। শেষে একটি অপ্রিয় সত্য—দুর্নীতিকে টিকিয়ে রাখছে কিছু ধান্দাবাজ ও চাটুকার সাংবাদিক। চট্টগ্রামে এমন বহু সাংবাদিক রয়েছেন, যারা ক্লাব ও ইউনিয়নের পদকে পুঁজি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তাদের সাংবাদিকতা মূলত মেয়র, সরকারি দপ্তর ও ভূমি অফিস বিশেষ করে ভূমি অধিগ্রহণ শাখার দালালি, চাঁদাবাজি ও তোষামোদেই সীমাবদ্ধ। তাদের অপকর্মের শত শত প্রমাণ আছে। সাধারণ মানুষ তাদের ঘৃণা করে, থুথু নিক্ষেপ করে। এরা আমাদের চট্টগ্রামের কলঙ্কিত সাংবাদিক, যাদের অবৈধ টাকার কাছে প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়ন আজ জিম্মি।
তাদের কথা বলতে গেলে শুধু বলতে হয়—
“ছিঃ ছিঃ ছিঃ, এই লজ্জা রাখি কোথায়?”
লেখক: সাংবাদিক, গবেষক, টেলিভিশন উপস্থাপক ও মহাসচিব—চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com