#বিভিন্ন দফতরে চিঠি চালাতে সময় ক্ষেপণ হয় ৩ মাস #ঘোরপ্যাচ নয় সহজীকরণ পদ্ধতিতে চিকিৎসার বরাদ্দ চায় সুশীল সমাজ
সমাজসেবার প্রক্রিয়াগত ভুলের কারণে রংপুরে টাকার অভাবে প্রতি বছরে প্রাণ হারায় কয়েক শত মানুষ। সরকার যদিও হতদরিদ্র মানুষদের চিকিৎসার জন্য সমাজ সেবার মাধ্যমে ক্যান্সার, কিডনী, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড,জন্মগত হৃদরোগসহ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জীবন বাঁচাতে রোগি প্রতি ৫০ হাজার টাকা সরকার অনুদান প্রদান করলেও সমাজ সেবার প্রক্রিয়াগত ভুলের কারণে রোগিদের কবরে ঘাস গজানোর পরে আসে-সেই অনুদানের টাকা।
হতদরিদ্র রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ,বিভিন্ন দফতরে চিঠি চালা চালিতেই সময় ক্ষেপণ হয় ৩ মাস। এতে যথা সময়ে আর্থিক সহায়তার টাকা না পাওয়ায় রংপুর অঞ্চলে অর্থ অভাবে চিকিৎসাহীনতায় প্রতিবছরে মারা যায় কয়েক শত রোগী।এছাড়াও রংপুর জেলা সমাজ সেবা কর্তৃপক্ষ,এসব মৃত্যুবরণ কৃত অসহায় মানুষদের চিকিৎসা সেবার বরাদ্দকৃত অর্থ,অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হাতে তুলে না দিয়ে সেই অনুদানের টাকা কোথায় ব্যয় করেন তা' নিয়েও রয়েছে জনমনে নানান প্রশ্ন।প্রতিবেদক এর সাথে কথা হয়, রংপুর নগরীর বাবুপাড়া এলাকার বাসিন্দা মরহুম আব্দুল হামিদ এর ছেলে হানিফ মিয়া,কেরানি পাড়ার বাসিন্দা মরহুম জসিম উদ্দিনের ছেলে শফিকুল,হাজিরহাট এলাকার বাসিন্দা মরহুম জাহিদুল ইসলাম এর মেয়ে ফারজানা আক্তারসহ হয়রানির শিকার একাধিক পরিবারের সাথে। তাদের দাবি সমাজ সেবায় অনলাইনে আবেদন করার পর কর্তৃপক্ষ এসব আবেদিত ফরম ২মাস যাবত সংগ্রহ করার পর সেই ফাইল পাঠানো হয় সিভিল সার্জন অফিসে। এবং সিভিল সার্জন কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা পত্র ও আবেদন কারীর দেয়া কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করার জন্য পাঠান মেডিকেল অফিসারের কাছে, তার পর এসব আবেদন পত্র অভিজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা জুরি বোর্ডের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দেয় সমাজসেবা কার্যালয়ে। এরপর ওই ফাইল পাঠানো হয় জেলা প্রশাসক দফতরে। জেলা প্রশাসক চেক ইস্যু করার পর সমাজসেবা কর্তৃপক্ষ রোগিদের একাউন্টে টাকা পাঠায়। এই প্রক্রিয়া করতেই সময় অতিবাহিত হয় ৩ মাস। আর এই ৩ মাসের মধ্যে দেড় শতাধিক সেবা প্রত্যাশী অসহায় রোগীর মৃত্যু হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে প্রতিবছর দেশে প্রায় ৩ লাখ মানুষ এ সমস্ত রোগে মৃত্যুবরণ করে এবং ৫ লক্ষাধিক লোক ক্যান্সার, কিডনী, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হার্ট ও থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অর্থের অভাবে এসব ভয়ঙ্কর রোগে আক্রান্ত রোগীরা যাতে করে ধুঁকে ধুঁকে মারা না যায়, এবং তাদের পরিবার চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে না পড়ে। এজন্য সরকার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় মাধ্যমে সমাজসেবা অধিদফতর কর্তৃক হতদরিদ্র রোগিদের চিকিৎসার জন্য দ্রুত এককালীন ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদানের নির্দেশনা থাকলেও, কেন সমাজসেবা কর্মকর্তারা স্বল্প সময়ের মধ্যে অনুদানের টাকা দিতে পারছে না,সে বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে রংপুর জেলা সমাজসেবা উপপরিচালক অনিল চন্দ্র বর্মন সিভিল সার্জন কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেন। তবে এক বছরে কতজন আবেদনকারী ব্যক্তির মৃত দাবীর চেক হস্তান্তর করেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করতে বলেই এড়িয়ে যান।
তবে রংপুর শহর সমাজসেবা অধিদপ্তর এর কর্মকর্তা আরিফুর রহমান এর দেয়া তথ্যমতে শুধু শহর শাখায় গত অর্থ ২০২৪ এর জুন থেকে চলতি অর্থবছরে মোট আবেদন আসে ৪ শত ৯০ টি। তিনি আরো বলেন, ২৪ শে'র গণ অভ্যুত্থানের পর থেকে সরাসরি রোগি ও স্বজনদের একাউন্ট টাকা পাঠানো হয়। তবে সময় ক্ষেপণ এর বিষয়টি তিনি অকপটে স্বীকার করে। তবে মৃত ব্যক্তির টাকা নয় ছয় এর অভিযোগের বিষয়ে সমাজ সেবার অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দেয়া তথ্যমতে জানাগেছে,২৪ এর গণ অভ্যুত্থানের আগে মারা যাওয়া অনেক রোগিদের টাকার চেক ক্ষতিগ্রস্ত স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করতেন না। সেই টাকা ওই সময়ে কোন খাদে ব্যায় করেন সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারে নি কেউ। এদিকে সময় ক্ষেপণ এর বিষয়টি অস্বীকার করে রংপুর সিভিল সার্জন কর্মকর্তা ডাঃ শাহীন সুলতানা প্রতিবেদককে বলেন,সম্প্রতি কিছু দিন আগে জুরিবোর্ড এর ডাক্তারদের সাথে অনারিয়াম নিয়ে একটা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল,তা এখন ঠিক হয়েগেছে। প্রক্রিয়াগত সময় ক্ষেপণ হয় তাদের অধিদপ্তরে। উনারা একবারে ৭/৮ শত আবেদন পাঠায়। আমরা এগুলোকে অভিজ্ঞ চার সদস্য ডাক্তার দ্বারা জুরি বোর্ডের মাধ্যমে চার ধরনের ক্যাটাগরি তৈরি করি, এ -বি-সি-ও ডি ক্যাটাগরি, এসকল আবেদনের ক্ষেত্রেও অনেক ভুল আবেদন থাকে সেগুলো যাচাই-বাছাই করতেই একটু সময়ের ব্যাপার। তার পরও আমরা ৭ থেকে ৮ কার্যদিবসে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শেষ করে দেই,এবং দ্রুত প্রতিবেদন পাঠানো হয়। উনারা যদি এই ৭/৮ শত আবেদন ঝুলায় রাখার পদ্ধতি অবলম্বন না করে, যদি ২/৩ দিন পর পর যা' আবেদন আসে তাই যদি পাঠায় আমাদের জন্য আরো সহজ হয়।ঘোর প্যাচ নয় সহজীকরণ পদ্ধতিতে চিকিৎসার বরাদ্দ চায় সুশীল সমাজ, এসংক্রান্ত বিষয়ে রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুর এর সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান লুলু, সিনিয়র সাংবাদিক তৌহিদ বাবলা,সমাজ কল্যাণ বিদ্যা বিথী স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মফিজুর রহমান মিজু,সমাজ সেবক ও সংগঠক ইলিয়াস আহমেদসহ সচেতন মহলের ক্ষোভ,একজন হতদরিদ্র মুমুর্ষ রোগীর চিকিৎসার জন্য সরকার যে অর্থ বরাদ্দ দেয় তা যদি চিকিৎসার কাজে না লাগে তা আসলেই দুঃখ জনক। যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত ৭ থেকে ৮ কার্য দিবসের মধ্যেই রোগিদের অনুদানের টাকা যাতে পায় সেই প্রক্রিয়ার সংস্কার করা জরুরি।
এতে অবহেলিত হতদরিদ্র অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচবে বলে ধারণা তাদের।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com