আমার ১০০০ টকশো, ৩৫ বছরের সাংবাদিকতা,কলমে আগুন, কথায় বিদ্যুৎ: আমি এক হাজার টকশোর যোদ্ধা” — মো.কামাল উদ্দিনঃ
চট্টগ্রামের আকাশ যখন ঘুম ভাঙাত, সেই আলোয় আমার চোখ জাগত না কেবল, জেগে উঠত আমার কলম। আমি লিখতাম ইতিহাস, আমি লিখতাম মানুষ, আমি লিখতাম সমাজের অব্যক্ত কথাগুলো। আমি জানতাম, একদিন এই কলম আমাকে নিয়ে যাবে শিরোনামে নয়, সত্যের সীমানায়।শুরু সেই কাগজ-কলমের ভুবনে: ১৯৮৮ সালের কথা-সাংবাদিকতা বা উপস্থাপনার কোনো স্বপ্ন নিয়ে নয়, আমি লেখালেখির প্রতি এক অদ্ভুত ভালোবাসা নিয়ে এই পথের যাত্রী হয়েছিলাম। ১৯৮৮ সালে, মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি ম্যাগাজিনে লেখা দিয়ে শুরু। চট্টগ্রামের রূপম চক্রবর্তীর মতো সাহসী সম্পাদকরা আমার লেখা ছেপে দিয়েছিলেন—যা ছিল আমার প্রথম অনুপ্রেরণা। তাও আবার “দিনের পর দিন” ম্যাগাজিনে- আমি নিয়মিত লিখতাম – ঢাকার সাহিত্য ম্যাগাজিনে লেখা ছাপা হতে শুরু করলে বুঝলাম, আমার শব্দরা শুধু চট্টগ্রাম নয়, ছড়িয়ে পড়ছে গোটা বাংলায়। সেই ছোট্ট ঘর, একটি ভাঙা টেবিল, হাতে দু-একটি বই, আর হৃদয়ে ছিল অগ্নিস্ফুলিঙ্গ— “সত্য লিখব, যত কষ্টই হোক।” সাংবাদিকতা: এক ঝড়ো পথের যাত্রা-প্রথম অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লিখি চট্টগ্রামের এক অপরাধচক্রের ওপর। তথ্য সংগ্রহে আমাকে মুখোমুখি হতে হয়েছিল হুমকি, ভীতি ও রাজনৈতিক চাপে। ‘সংবাদচর্চা’, ‘রূপনগর’, ‘দৈনিক খবর’—প্রতিটি পত্রিকাই আমার কলমকে পরিসর দিয়েছে, দায়িত্ব দিয়েছে। ১৯৯৪ সালে প্রকাশ করি চট্টগ্রামের প্রথম ফোর-কালার ম্যাগাজিন “চট্টলচিত্র”, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক জামাল উদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে। প্রথম প্রকাশ উৎসবের দিন মনে আছে আজও—মোঘল বিরিয়ানির ঘ্রাণে ভেসেছিল আমাদের স্বপ্ন। আমি টেলিভিশন উপস্থাপনার মানুষ কীভাবে হলাম? ২০১৭ সালে বাংলা টিভি থেকে একটি ফোন আসে—“চট্টগ্রাম সংলাপ” উপস্থাপনা করবেন কি?
প্রথম দিন ক্যামেরার সামনে কাঁপছিলাম। কিন্তু উপস্থাপক হয়ে উঠে দাঁড়ালাম বাংলার মঞ্চে। ‘চট্টগ্রাম সংলাপ’, ‘কিছু কথা কিছু গান’, ‘সচিত্র চট্টগ্রাম’, ‘কালো সাদা সংলাপ’, ‘ভাষার কথা’, ‘নির্বাচনের খেলা’, ‘গল্পে গল্পে ইতিহাস’, আরও অনেক অনুষ্ঠান—একটার পর একটা করেই গেলাম। প্রথমে ভাবতাম, কয়টা টকশোই বা করবো? কিন্তু এক সময় পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি— বাংলা টিভিতে আমি ১০০, ২০০ নয়— ১০০০-এর বেশি টকশো উপস্থাপনা করেছি। এটিন বাংলাতে অসংখ্য করেছি-
প্রতিটি টকশোর আগে গভীর গবেষণা,
প্রতিটি প্রশ্নের পেছনে সততা,
প্রতিটি মঞ্চে ছিলো জনগণের পক্ষ হয়ে সত্য বলা। বিশ্বদর্শনের অভিজ্ঞতা: ২৮টি দেশ, ৭ নোবেলজয়ী লেখক, এক রাজকন্যা পেন ইন্টারন্যাশনালের সদস্য হিসেবে ২৮টি দেশ ভ্রমণ করেছি। যেখানে সাক্ষাৎ পেয়েছি: সৌদি আরবের বিদ্রোহী রাজকন্যা সুরাইয়া – ২০০৪, কাতারদ ক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি পাক গিউন-হে – ২০১৩ বিশ্বখ্যাত অনুসন্ধানী সাংবাদিক ফ্রঁক ল্যান্স – ২০০১, আলজেরিয়া
নোবেলজয়ী ৭ লেখক ও সাংবাদিক
বিশ্ব লেখক সম্মেলন, কোরিয়া – ২০১৩ এই সব সাক্ষাৎকার আমার কলমের ভাষা সমৃদ্ধ করেছে, মননকে প্রসারিত করেছে। বইয়ের পৃষ্ঠায় আমার প্রাণ ২০০৮ সালে ‘বাঁকা কথা’ দিয়ে শুরু। আজ পর্যন্ত ৩০টির বেশি বই প্রকাশ করেছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: ‘সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের কথা’, যা বাংলাদেশে সাংবাদিকতার সংকীর্ণতা ভাঙার এক সাহসী প্রস্তাব। হিংসুকদের মুখে সত্যের থুথু-কিছু তথাকথিত “সাংবাদিক” আছেন, যাঁরা নিজেদের অপারগতা ঢাকতে গিয়ে কুৎসা রটান।
যাঁরা ১০টি লাইনের লেখাও গুছিয়ে লিখতে পারেন না, অথচ ফেসবুকে কীবোর্ড-সাহস দেখান। তাদের মুখে আমি সত্যের থুথু ছুড়ে বলি— “এসো, কলম ধরো, টকশো করো, তারপর সমালোচনা করো!” এক কোটি টাকার সাহসিকতার চ্যালেঞ্জ-আমি বলছি সাহস করে—যদি কেউ আমাকে টকশো উপস্থাপন, লেখালেখি বা সাংবাদিকতার যেকোনো বিভাগে হারাতে পারে,তবে ১ কোটি টাকা পুরস্কার দিবো। শর্ত খুব সহজ—প্রতিযোগিতা হবে নিরপেক্ষ মঞ্চে আপনার দক্ষতা দেখান যদি হারেন, টাকাটি ফেরত পাবেন না
তবে সাহস থাকলে এসো।
কথার খেলা নয়, কলমের যুদ্ধ চাই।
তরুণদের প্রতি আমার ভালোবাসা ও আহ্বান সাংবাদিকতা শিখতে চাও? এসো। আমি তোমাকে শিখাবো—কীভাবে অনুসন্ধান করতে হয়
কীভাবে প্রশ্ন তৈরি করতে হয়
কীভাবে শ্রদ্ধা নিয়ে কথা বলতে হয়
তোমাকে দরকার শুধু একবিন্দু আত্মসম্মানবোধ, আরেকবিন্দু সত্যের জন্য দায়বদ্ধতা। শেষ কথা নয়, এটি ইতিহাসের পাতায় একটি সাক্ষর-
আমি এক হাজার টকশো করে থামিনি,
থামবো না যতদিন মানুষ আমাকে সত্য বলার দায়িত্বে রাখে। আমি আত্মপ্রচার করি না, আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে কলম চালাই। যারা হিংসা করে, ঘৃণা ছড়ায়, কুৎসা রটে—তাদের আমি ইতিহাসের ধুলায় মিশে যাওয়া মুখোশধারী মনে করি। “একজন সত্যিকারের সাংবাদিক তার কলম দিয়ে দেয় সমাজকে দিকনির্দেশ, আর মিথ্যাবাদীরা চিৎকার করে আত্মঘাতী হয়।” এই লেখা উৎসর্গ করছি সেই তরুণদের, যারা একদিন সাহস নিয়ে সত্যের পক্ষে দাঁড়াবে, এবং হিংসুকদের সামনে কলম তোলার সাহস দেখাবে। যে শহরে আমি বেড়ে উঠেছি, যে মাটির প্রতিটি ধুলিকণায় আমার কণ্ঠস্বর ছড়িয়ে আছে—সে শহরের আকাশে কেউ আজ যদি ধোঁয়ার পর্দা টানতে চায়, তবে মনে রাখতে হবে, আমি এখনো কলম হাতে দাঁড়িয়ে আছি। আমি ভয় পাই না সমালোচকদের। আমি কাঁপি না ষড়যন্ত্রকারীদের গর্জনে। আমি লিখে এসেছি, এখনো লিখি—কেবল নিজের জন্য নয়, সমাজের জন্য, ভবিষ্যতের জন্য। সত্যের বিপক্ষে যারা দাঁড়ায়, তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে যায়-যারা আমার লেখালেখি, সাংবাদিকতা, কিংবা টেলিভিশন উপস্থাপনার গৌরবগাথাকে অন্ধ হিংসা আর অশিক্ষিত ব্যঙ্গ দিয়ে মূল্যায়ন করে, আমি তাদের জন্য করুণা অনুভব করি। তাদের জন্য নয় ঘৃণা, নয় প্রতিহিংসা—বরং শুধুই অবজ্ঞা। তবে হ্যাঁ, যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিতর্ক তৈরি করে, হীনমন্যতা থেকে কুৎসা রটে, আমার সাফল্যের পেছনে কাঁটা বিছাতে চায়—তাদের মুখে আমি সত্যের থুথু ছুড়ে দিই। হ্যাঁ, আমি থুথু নিক্ষেপ করি সেই মুখে, যে মুখ সত্যকে বিকৃত করে নিজেকে বুদ্ধিজীবী সাজাতে চায়। আপনাদের শেখার দরকার—আমি শেখাতে রাজি, আমি অহংকারী নই। আমি একজন কর্মঠ মানুষ, যিনি প্রতিটি সফলতা অর্জন করেছেন কঠোর সাধনায়, দিনরাত পরিশ্রম করে। তাই, যারা আমার কথা না বুঝে গালগল্প করে, আমি তাদের বলি—এসো, আমার কাছে শেখো।
সাংবাদিকতা কীভাবে করতে হয়, লেখা কীভাবে গড়ে উঠে, একটি অনুষ্ঠান কীভাবে উপস্থাপন করতে হয়—এসো, আমি তোমাকে শিখাবো। তবে শর্ত একটাই—তোমার হিংসা আর দম্ভ রেখে এসো দরজার বাইরে। চট্টগ্রামের বাতাসে লেখা আমার আত্মজীবনী- চট্টগ্রাম শুধু আমার শহর নয়, আমার আত্মা। এই শহরের প্রতিটি পথ, প্রতিটি প্রতিবন্ধকতা আমাকে গড়ে তুলেছে। একদিনে একনাগাড়ে একহাজারের অধিক টকশো উপস্থাপনা করার পরেও আমি ক্লান্ত হই না—কারণ আমি জানি, আমার দায়িত্ব সত্যকে তুলে ধরা। আমি চাই, যারা সমালোচনা করে তারা অন্তত একবার সেই পরিশ্রমের পাশে দাঁড়াক। তোমরা যারা কেবল ‘সমালোচনা’র মুখোশ পরে অন্যকে ছোট করতে চাও, তারা শুনে রাখো—
সৃষ্টিশীলতা শেখার নামই সাহসিকতা, অন্যের ঈর্ষায় জ্বলে ওঠা হলো কাপুরুষতা।একটি খোলামেলা সাহসিক চ্যালেঞ্জ-আমি আজও বলছি—তোমরা যারা নিজেদের সাংবাদিক বলো অথচ কিছু লেখার যোগ্যতা বা উপলব্ধি না রেখে শুধু ফেসবুক গরম করো, এসো লেখালেখির এক খোলা চ্যালেঞ্জে।এক দিনে একনাগাড়ে ২০,০০০ শব্দ লিখে দেখাতে পারো?একটি নিরপেক্ষ বিচারকের সামনে টেলিভিশনে ৪০ মিনিটের একটানা ১০টি টকশো উপস্থাপনা করতে পারো?
পারলে এসো। আমি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব বা যেকোনো স্থানে ১ কোটি টাকার প্রতিযোগিতার চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি।
তোমরা যদি আমাকে হারাতে পারো, পুরস্কার নিয়ে চলে যাবে।
না পারলে, মুখ লুকিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে—যেমন করে ভণ্ডরা ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায়। তরুণ প্রজন্মের জন্য আমার বার্তা-সাংবাদিকতা ভণ্ডামি নয়, এটি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সাধনা।
সত্য প্রকাশের সাহস, গভীর জ্ঞানের চর্চা এবং নিরপেক্ষতার অনুশীলন না থাকলে এ পথে এসো না। কলম যেন হয় তোমার আত্মার আয়না। ক্যামেরা যেন তুলে ধরে জীবনের আলো। আর মঞ্চ যেন হয় ন্যায়ের উন্মোচনস্থল। শেষে নয়, শুরুতে আছি-আমি এখনো শিখছি, এখনো পথ হাঁটছি, কারণ জানি, শেষ শব্দটি এখনো লেখা হয়নি। তবে একটি কথা শেষবারের মতো বলি— তোমার হিংসা দিয়ে আমার সাফল্য মাপতে যেও না। কারণ, “যার ভিতরে আগুন জ্বলে, তাকে বাইরে থেকে ছাই ছিটিয়ে থামানো যায় না।” “সাংবাদিকতা শেখার ইচ্ছা থাকলে আসো, হিংসা থাকলে দূরে থাকো। সমালোচনার নামে যারা কলুষ ছড়ায়, তাদের কলম নয়, তাদের হাতেই বিষ মাখা। আমি কলম যোদ্ধা—সত্যের পক্ষে, ইতিহাসের জন্য, আগামী দিনের আশায়।” লেখাটি আমি উৎসর্গ করলাম নতুন প্রজন্মের সাহসী লেখকদের, যারা অন্যের সফলতায় হিংসা না করে নিজেদের শক্তি দিয়ে পথ গড়ে নেয়।
লেখকঃ সাংবাদিক গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক- যুগ্ম সম্পাদক – দৈনিক ভোরের আওয়াজ ও The Daily banner- জাতীয় পত্রিকা।
চলবে—-