চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে এমন অনেক সন্ধ্যা এসেছে, আবার মিলিয়ে গেছে অচিরেই। কিন্তু ২০২৫ সালের ১৬ই মে, শুক্রবার সন্ধ্যা ছিল একেবারে ব্যতিক্রম—স্মরণীয়, হৃদয়গ্রাহী এবং সুরভিত।
আমরা, চাটগাঁইয়া নওজোয়ানের প্রতিনিধিদলসহ, ‘অন্তরা হাওয়াইয়ান গিটার শিল্পী গোষ্ঠী’র আয়োজনে থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামের মিলনায়তনে উপস্থিত হয়ে প্রত্যক্ষ করলাম এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠান যখন শুরু হয়, মিলনায়তনের ভেতর তখন সুশৃঙ্খল অথচ হৃদয় উত্তাল এক আবহ। আসন পূর্ণ দর্শকে, অতিথিদের সম্ভাষণে, ফুলেল শুভেচ্ছায় এবং সুরের প্রতীক্ষায় সাজানো সেই পরিমণ্ডল যেন এক সুরভিত উপবন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল আলোচনা পর্ব, যেখানে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা থাকলেও কিন্তু আসেননি তিনি।
বিশেষ বক্তা জনাব রিয়াজ ওয়াহেদ সংগীত ও সাহিত্যের সম্পর্ক নিয়ে যেভাবে গভীর আলোচনা করলেন, তাতে শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শুনেছেন। সভাপতি ডা. বাবুল কান্তি সেনগুপ্ত যে আন্তরিকতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে অনুষ্ঠানে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তা ছিল দেখার মতো। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে আসল যাদু তৈরি হয় সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট থেকে, যখন হাওয়াইয়ান গিটারের সুরে ভেসে উঠল পুরো মিলনায়তন। সুর যেন থইথই এক নদী, আর আমরা শ্রোতারা সেই নদীর জলে অবগাহন করছি। গিটার বাজানোর ভঙ্গিমা, বাদকের নিবেদন, প্রতিটি তারে প্রাণের ছোঁয়া—সব মিলিয়ে সে এক মোহনীয় অভিজ্ঞতা।
আর এই সুরের ঢেউয়ে ভেসে এলো নৃত্য। যে নৃত্যশিল্পীরা মঞ্চে উঠলেন, তাঁদের প্রতিটি অভিব্যক্তি, প্রতিটি গতিময়তা যেন মিশে গেল গিটারের সুরে। কখনো আবেগে, কখনো অভিপ্রায়ে, কখনো নিঃশব্দ চোখের ভাষায়—তাঁদের নৃত্য যেন জীবন্ত কবিতা হয়ে ফুটে উঠল।
আমরা যারা চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে সুর ও সাহিত্যের মেলবন্ধনের স্বপ্ন দেখি, তাঁদের জন্য এই আয়োজন ছিল এক স্বপ্নপূরণ।
আমাদের প্রতিনিধি দল সহ অন্যান্য অতিথিরা আয়োজকদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছি, কিন্তু সে ছিল শুধু একটি প্রতীক—আসলে আমরা আমাদের হৃদয় দিয়ে তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি।
‘অন্তরা’ শুধু একটি সংগীত সংগঠন নয়—এটি এক সুর-চর্চার মহীরুহ। গত ৪১ বছর ধরে তারা যে ধৈর্য, নিষ্ঠা ও ভালোবাসা নিয়ে হাওয়াইয়ান গিটারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে, তা এক বিশাল দায়িত্ব।
এই দীর্ঘ পথচলার মাইলফলকে দাঁড়িয়ে আমরা যারা উপস্থিত ছিলাম, আমরা বুঝতে পারি—এমন আয়োজন শুধু উৎসব নয়, এটি চট্টগ্রামের সংস্কৃতি, সাহিত্য ও সঙ্গীতের এক নবজন্ম।
এই আয়োজনকে সফল করে তুলেছেন যাঁরা, তাঁদের নাম উচ্চারণ না করলেই নয়—সভাপতি ডা. বাবুল কান্তি সেনগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার বৈদ্য এবং বর্ষপূর্তি উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ইলিয়াস ইলুর নেতৃত্বেই ‘অন্তরা’র এই আনন্দানুষ্ঠান এক মহোৎসবে পরিণত হয়েছে। শেষ কথা একটাই—এই সন্ধ্যা শুধু স্মরণীয় নয়, এটি ছিল হৃদয়ে গেঁথে থাকার মতো এক মূহূর্ত। ‘অন্তরা’র এই ৪১তম বর্ষপূর্তির আয়োজন একটাই প্রমাণ করে—চট্টগ্রামের শিল্পচর্চা এখনো জীবন্ত, তাজা এবং সুরে-বন্দি ভালোবাসায় ভরপুর।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com