সদ্য ইতিহাস পড়লে বোঝা যায়, প্রেম এক অমর অনুভূতির নাম। সেই প্রেমের নিদর্শন স্বরূপ দাঁড়িয়ে আছে ভারতের আগ্রায় নির্মিত তাজমহল—সাদা মার্বেলের কান্না, ভালোবাসার গাঁথা। কিন্তু হে পাঠক, সময় বদলেছে, প্রেমের সংজ্ঞাও পাল্টেছে, এখন প্রেম হয় ক্ষমতার বৃত্তে, সুরের মঞ্চে, আর শেষ হয় জেলের শিকের ভেতর। আজ তাই ইতিহাসের পাতায় নয়, বাংলাদেশের গাঁথায় জন্ম নিয়েছে নতুন এক জুটি—সম্রাট শাহজাহান খান এবং তাঁর গীতকন্যা মমতাজ।
হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন—এরা সেই সংসদ-তারকা, যিনি সংসদের ভেতর গান গেয়ে শেখ হাসিনার নামে বানী ছড়িয়েছেন; আর তিনি সেই পরিবহন খাতের মোড়ল, যিনি ট্রাক-বাস-লঞ্চের গলা চেপে ধরতেন, আরেক গলা দিয়ে হাসতে হাসতে বলতেন—“মেদার জন্য মাদারীপুরে সবাই চাকরি পাইছে!”
এখন সেই মমতাজ আর শাহজাহান হাত ধরে, কিংবা অন্তত পাশের সেলে বসে, কারা-মহলে দিন কাটাচ্ছেন। দণ্ডপ্রাপ্ত না হলেও তাঁরা "সময়ের রোমিও-জুলিয়েট"—তবে তাঁদের প্রেমের পটভূমি মোমবাতির আলো নয়, বরং কয়েদিদের ঘুমন্ত নিঃশ্বাস, আর গারদের ধাতব শব্দ।
মমতাজ একসময় যেভাবে সংসদ কাঁপিয়ে গাইতেন, “নিশি রাতে যাইও না বন্ধু, দরজাটা খুলা রাখো…”—আজও সেই দরজাটা খোলা, তবে সেটা কারাগারের লোহার দরজা। কণ্ঠে সুর আছে, তবু সে সুর আর মুক্ত নয়। হয়তো তিনি জেলের দেয়ালে চুপিসারে গুনগুন করেন, আর অন্য প্রান্তে শাহজাহান খান টেবিল চাপড়ে তাল দেন—"অসাধারণ, অসাধারণ!"
আর শাহজাহান খান? তাঁকে নিয়ে তো কল্পনার রাজত্ব গড়া যায়! তিনি একসময় নিজেকে ভাবতেন ‘ট্রাফিক সম্রাট’, ‘লাইসেন্স-লর্ড’। আজ সেই সিংহাসন মুছে গিয়ে পেছনে বসেছেন লোহার টুলে, যেখানে কোনো হর্ন নেই, শুধু সময়ের ধ্বনি। অথচ, হায়, এই মানুষটিই একসময় চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়োগপত্র বিলিয়ে বলেছিলেন, "তিনশ’ কালাসি, তিনশ’ মাদারীপুর!"
প্রশ্ন উঠেছিল—“জনতা কোথায়?”
উত্তর ছিল—“জনতা মানেই তো মেদার লোক!”
এই দুই চরিত্র, দুই জীবন, এক এখনত জেলখানায় বন্দি। কিন্তু মন তো স্বাধীন! তাই গারদের ভেতরও তাঁরা কল্পনায় গড়ে তুলেছেন এক নবতাজমহল—তাঁদের কারা-মহল! প্রেমের নয়নাভিরাম উপাখ্যান! যেখানে কফির বদলে গরম জল, বিছানার বদলে কম্বলের খসখসে স্পর্শ, আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক নেই—আছে শুধু ডিউটি অফিসারের সিটি।
তবুও মমতাজ হাসেন, শাহজাহান হাততালি দেন—যেন তাঁরা আজও সংসদে, মঞ্চে, সম্রাটের আসনে। হয়তো তাঁরা দু’জনে ভাবেন—“তাজমহল বানাতে তো মমতাজকে মরতে হয়েছিল, আর আমরাও তো জীবনের একটা অধ্যায়ে ‘মরে’ আছি! তো, এই কারাগারই তো আমাদের ভালোবাসার স্মারক।”
হে পাঠক, প্রেমের এমন ব্যাখ্যা আপনি কবে দেখেছেন? এ এক অভিনব যুগলবন্দি—একজন গানের তারকা, অন্যজন গলার তারকা। একজন গাইতেন হৃদয়ের সুরে, আরেকজন হাসতেন এমনভাবে, যেন ট্রাফিক সংকটে গলাও খুলে যায়! আর আজ তাঁদের সম্মিলিত ‘সংগীত-মন্ত্রিত্ব’ কারাগারে।
বাংলাদেশের রাজনীতির এই মজাদার অধ্যায়ে আমরা পেয়ে গেছি এক ‘গীত-গলাবাজ প্রেমের দলিল’, যার নাম—কারা-মহল। ইতিহাস একদিন লিখবে, “প্রেম বন্দি ছিল না, বরং প্রেম বন্দিদের ভেতরেই খুঁজে পেয়েছিল মুক্তি।”
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com