“সাংবাদিকতা একটি দায়িত্বের জায়গা, হেয় করার নয়
বোয়ালখালী প্রেসক্লাবের স্বঘোষিত সভাপতি সিরাজুল ইসলামের পোস্ট বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ!
সম্প্রতি বোয়ালখালী প্রেসক্লাবের একাংশের তথাকথিত সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, যিনি নিজেকে “বড় সাংবাদিক” হিসেবে দাবি করেন, সামাজিক মাধ্যমে একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক কামাল উদ্দিনকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ও অবমাননাকর একটি পোস্ট দিয়েছেন। এ ধরনের পোস্ট একজন সাংবাদিকের কাছ থেকে যেমন অপ্রত্যাশিত, তেমনি সাংবাদিকতার ন্যূনতম নৈতিকতার সঙ্গেও তা সাংঘর্ষিক।
কামাল উদ্দিন শুধু একজন সাংবাদিক নন, তিনি বহু দশক ধরে দেশ ও সমাজ নিয়ে লেখালেখি করে পাঠকের আস্থা অর্জন করেছেন। তার মতো একজন গুণী সাংবাদিককে প্রকাশ্যে অবমাননা করার ধৃষ্টতা দেখানো একজন অযোগ্য, অশিক্ষিত এবং দায়িত্বহীন লেখকের কাজ। সিরাজুল ইসলামের পোস্টটি গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে তা স্পষ্ট হয়। ১. ভাষাগত ও গঠনগত দুর্বলতা: ক. অশালীন শব্দের ব্যবহার:
“স্বৈরাচারী খুনি হাসিনা”, “নিষিদ্ধ দল” ইত্যাদি শব্দ সাংবাদিকতার শালীন ভাষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এ ধরনের বিদ্বেষমূলক শব্দ ব্যবহার শুধু লেখকের পক্ষপাতদুষ্ট মানসিকতাই প্রকাশ করে না, পাঠকের মধ্যেও বিভ্রান্তি ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। খ. ভুল বানান ও কথ্যভাষা:
“বলসেন”, “উনারা”, “নিয়ে যেতে চাচ্ছেন” ইত্যাদি শব্দ প্রমিত বাংলা নয়। একজন দায়িত্বশীল সাংবাদিকের কাছে শুদ্ধ ও প্রাঞ্জল ভাষা প্রত্যাশিত।
গ. দুর্বল বাক্যগঠন ও অস্পষ্ট তথ্য:
“কবরস্থান দখল করে রেখেছিলো” – এমন অভিযোগ গুরুতর, অথচ এতে কোনো তথ্যসূত্র বা প্রমাণ নেই।
“ভুয়া কথিত সাংবাদিক” – কারও পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে যথাযথ প্রমাণ থাকা জরুরি।
২. সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী আচরণ: ক. একপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি: লেখাটিতে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে একতরফা বক্তব্য রয়েছে, যেখানে কোনো প্রতিবাদ বা প্রতিপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা হয়নি। এ ধরনের একচোখা উপস্থাপন সাংবাদিকতার পেশাদার নীতিমালার পরিপন্থী। খ. উসকানিমূলক ও রাজনৈতিক প্রচারমূলক ভাষা:
“আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম রুখে দিন” – এ ধরনের বাক্য সংবাদ নয়, বরং রাজনৈতিক আহ্বান। সাংবাদিকতা কখনো প্রচারমুখী বা রাজনৈতিক ঘোষণাপত্র হতে পারে না।
৩. তথ্যগত অসঙ্গতি: ক. প্রমাণহীন দাবি: পোস্টে উল্লেখিত বিভিন্ন অভিযোগ যেমন: তালা ভাঙা, কোনো প্রোগ্রামের ব্যানার না থাকা ইত্যাদি বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। খ. গোপনীয়তা লঙ্ঘন:
ব্যক্তিগত ফোন নম্বর প্রকাশের মাধ্যমে গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা হয়েছে, যা সংবাদিকতার নীতিমালার সরাসরি বিরোধিতা করে। কিছু দায়িত্বশী পরামর্শ:সাংবাদিকতা হতে হবে তথ্যনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও শালীন।ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, যুক্তিসঙ্গত সমালোচনা করুন।লেখায় শুদ্ধ ভাষা ব্যবহার করুন এবং রাজনৈতিক পক্ষপাত পরিহার করুন।প্রমাণ ছাড়া কাউকে ‘ভুয়া সাংবাদিক’ বলা আইনগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।অন্যের সম্মানহানি করার আগে নিজের পেশাগত অবস্থান বিবেচনা করুন। সাংবাদিক সিরাজুল ইসলামের পোস্টটি শুধুমাত্র একজন গুণী সাংবাদিককে হেয়প্রতিপন্ন করার ব্যর্থ চেষ্টা নয়, এটি সাংবাদিকতার পবিত্র পেশাটিকেও ছোট করে দেখায়। লেখার মান ও ভাষা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়, তিনি এখনও সাংবাদিকতার মৌলিক শিক্ষাটুকুও আত্মস্থ করতে পারেননি। যে সময়টাতে কামাল উদ্দিনরা দক্ষিণ চট্টগ্রামের রাজনীতি ও সমাজে বিদ্যমান দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন, সেই সময় সিরাজুল ইসলামরা ক্ষমতাসীনদের পক্ষে তোষামোদ করে সুবিধা নিতে ব্যস্ত ছিলেন। আজ যখন তারা হঠাৎ ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী’ সেজেছেন, তখনও তাদের ভাষা, ভঙ্গি ও উদ্দেশ্য থেকে আদর্শের চিহ্ন নেই – আছে কেবল আত্মস্বার্থ, বিদ্বেষ এবং অহংকার।
সিরাজের আসল পরিচয়ে কিছু কথা তুলে ধরার চেষ্টা করবো – ফ্যাসিবাদের দোসর কে ছিল – তার এলকার মানুষরা কি বলেন দেখুন — ১৬ বছরের দালালী এখন দলবদলের খেলা—’সাংবাদিক’ সিরাজুল ইসলামের মুখোশ উন্মোচন চাই
বোয়ালখালীতে সাংবাদিকতার নামে গরিবের জমি দখল, দলীয় তোষামোদ আর বিতর্কিত সংবর্ধনার রাজনীতি—সিরাজুল ইসলাম আজ জনরোষের কেন্দ্রবিন্দু মোঃ সিরাজুল ইসলাম। পিতা: মৃত আহমাদুল্লাহ উল্লা। বাড়ির নাম মোশরাফ আলীর বাড়ি। পেশাগতভাবে নিজেকে পরিচয় দেন একজন সাংবাদিক হিসেবে। কিন্তু বোয়ালখালীর জনসাধারণ জানে—তিনি কেবল সাংবাদিক নন, বরং গত ১৬ বছর ধরে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে দালালি, দুর্নীতি এবং জনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এক চতুর চরিত্র। ২০০৮ সালের পর থেকে সিরাজুল ইসলাম আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুগত হয়ে কাজ শুরু করেন। শুরুতে রেজাউল করিম বাবুল ও পরবর্তীতে শ্রমিক লীগ নেতা হাজী নাসির আলীর ছত্রছায়ায় তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন ‘বিশেষ সংবাদকর্মী’ হিসেবে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, সাংবাদিকতার পেশা নয়, তিনি বরাবরই দলীয় স্বার্থে কাজ করেছেন। বাবুলের আশীর্বাদে তাঁর হাতে চলে আসে গরিবের জমি, ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি বাবুলের অস্ত্রভান্ডারের খবর জানতেন—যার মধ্যে ছিল ভয়াবহ এ কে-৪৭ রাইফেলও। অথচ কোনোদিন এসব বিষয়ে লেখেননি, বরং ভীতিকর চেহারায় এলাকার মানুষকে দমন করেছেন। গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে দলীয় দালালি, সাধারণ মানুষের হয়রানি এবং সম্পত্তি দখলই হয়ে ওঠে তার মূল কাজ। এমনকি অভিযোগ আছে, তিনি বিচার বিভাগের লোকজনকে ম্যানেজ করে গরিবের জমির বিরুদ্ধে কাগজপত্রও জোগাড় করতেন। তবে চিত্র পাল্টেছে সাম্প্রতিক সময়ে। রাজনৈতিক হাওয়া বদলাতে না দেরি করেই সিরাজুল ইসলাম পাল্টে ফেলেছেন নিজের অবস্থান। এখন তিনি বিএনপি ঘনিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রাখছেন। উদ্দেশ্য একটাই—কোন দল ক্ষমতায় উঠবে, সেটি বুঝে আগেভাগেই সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা। এটিই তার দীর্ঘদিনের কৌশল, যা বোয়ালখালীর জনগণ আজ স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছে। সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হচ্ছে, চরণদ্বীপের বিতর্কিত যুবলীগ নেতা ইউসুফকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ‘সংবর্ধনা’ দেওয়ার নাটক। ইউসুফের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে নিয়ে পত্রিকায় প্রচার, ব্যানার, ফেস্টুন ছাপানো—সবই ছিল সিরাজের পরিকল্পনার অংশ। আর মোসলেম উদ্দিনের মৃত্যুর পর দলীয় তোষামোদে তিনি যা করেছেন, তা যেন এক ঘৃণ্য প্রতিযোগিতা। তাঁর মতো ‘সাংবাদিক’দের কাছে সত্য, নীতি বা ন্যায়বিচার অর্থহীন—প্রয়োজন শুধু টাকা, প্রভাব ও ক্ষমতা। আজ বোয়ালখালীর জনগণ বলছে—এমন ছদ্মবেশী লোকের মুখোশ উন্মোচন জরুরি। সাংবাদিকতা জাতির বিবেক, আর সেই পবিত্র পেশাকে যারা দালালির হাতিয়ার বানায়, তাদের আইনের আওতায় আনতেই হবে।
জনগণের জমি দখল, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক তোষামোদি, আর দলবদলের সুবিধাবাদী খেলায় মত্ত সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার।
বোয়ালখালীবাসীর পক্ষ থেকে দাবি—’সাংবাদিক’ সিরাজুল ইসলামের বিচার চাই, মুখোশ খুলে দিতে হবে তার সব অপকর্মের। সাংবাদিকতা যদি দায়িত্বের জায়গা হয়, তাহলে সেটি যেন গালিগালাজ, কুৎসা রটনা বা আত্মপ্রচারের হাতিয়ার না হয় – এটাই প্রত্যাশা।