“চট্টগ্রামবাসীর স্বপ্ন পূরণের পথে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ: কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তরের পলক উন্মোচন করলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস””
চট্টগ্রাম, ১৪ মে:এক সময় যে সেতু ছিল কেবলই প্রতিশ্রুতির প্রতীক, আজ তা পরিণত হলো আশাবাদের বাস্তবতায়। কর্ণফুলী নদীর বুকে শতাব্দীর দাবি—চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের স্বপ্নের কালুরঘাট সড়ক ও রেল সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত মানবতার আলোকবর্তিকা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ মঙ্গলবার বেলা ১২ টায় চট্টগ্রামের সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে এক আনুষ্ঠানিক আয়োজনে এই পলক উন্মোচনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হলো বহুপ্রতীক্ষিত এই সেতুর, যা যুগের পর যুগ ধরে চট্টগ্রামবাসীর এক অন্তহীন আন্দোলনের ফল।
সময়ের ঘাটতি, তবুও হৃদয়ের সম্পৃক্ততা যদিও প্রধান উপদেষ্টা সরাসরি কালুরঘাট গিয়ে সেতু স্থাপন স্থলে উপস্থিত হতে পারেননি, তথাপি তার সরকারি কর্মসূচিতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকে অন্তর্ভুক্ত করাটাই প্রমাণ করে—এই প্রকল্প এখন কেবল স্লোগানে নয়, রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকারে। চট্টগ্রামের বোয়ালখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ প্রত্যাশা করেছিল—মাননীয় উপদেষ্টা নিজে কালুরঘাটে গিয়ে সেতুর ভিত্তি স্থাপন করবেন। কিন্তু সময়ের সীমাবদ্ধতায় তা না হলেও, এই পলক উন্মোচন হৃদয়ের গহীন থেকে উদ্ভূত শ্রদ্ধা ও দায়বদ্ধতার প্রতিচ্ছবি হয়ে রইল।
দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস
চট্টগ্রামের উন্নয়ন আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই সেতুর দাবি। বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া—এলাকার লাখো মানুষ এই সেতু না থাকায় বছরের পর বছর ভোগান্তিতে পড়ে এসেছে। বিশেষ করে পুরোনো কালুরঘাট সেতুটি আজকাল যেন ক্লান্ত বৃদ্ধের মতো হঠাৎ হঠাৎ নড়েচড়ে ওঠে, যানবাহনের ওপর চাপ নিতে অক্ষম।
চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বছরের পর বছর ধরে এ বিষয়ে আন্দোলন চালিয়ে গেছে। রাস্তায় মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, ব্যানার-প্ল্যাকার্ড, জাতীয়ভাবে বিবৃতি—সব কিছু মিলে চট্টগ্রামের এই দাবি একসময় কেন্দ্রীয় রাজনীতির কানে পৌঁছায়।
নাগরিক ফোরামের শুভেচ্ছা ও প্রত্যাশা
মাননীয় উপদেষ্টার আগমন উপলক্ষে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়। ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন বলেন—
“আজকের দিনটি আমাদের জন্য একটি গৌরবময় মুহূর্ত। বহু বছরের দাবি আজ বাস্তবতা পেয়েছে। আমরা চাই, শুধু ভিত্তিপ্রস্তর নয়—এই প্রকল্প যেন অগ্রগতির পথ ধরে এগিয়ে চলে। ২০২৮ সালের মধ্যেই আমরা যেন নতুন সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারি, সেই প্রত্যাশা রইল।”
শুধু নাম নয়, দৃশ্যমান অগ্রগতি চাই
চট্টগ্রামবাসীর ইতিহাসে অনেক সময়ই দেখা গেছে, প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর তা বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকে। এ কারণে সাধারণ মানুষের একটাই আকুতি—এই ভিত্তি যেন কেবল নামসর্বস্ব না হয়, বরং সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু ও সমাপ্ত হয়।
চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নের জন্য এই সেতুর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এটি শুধু একটি যাতায়াতের সেতু নয়—এটি চট্টগ্রামের সঙ্গে দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের সংযোগ, পণ্য পরিবহনের গতি এবং বন্দরনগরীর আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির নিয়ামক।
আজকের এই দিন চট্টগ্রামবাসীর হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই ভিত্তিপ্রস্তর যেন প্রতিশ্রুতির সীমানা অতিক্রম করে বাস্তব উন্নয়নের দৃঢ় পথে হাঁটে—এটাই এখন সকলের প্রত্যাশা। আর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই প্রতীকী নেতৃত্ব চট্টগ্রামের মানুষকে নতুন করে প্রেরণা ও ভরসা দিয়েছে।