একজন নির্লোভ চিকিৎসকের গল্প, যেখানে পেশা নয়—প্রতিশ্রুতি হয়ে ওঠে জীবনের অনুপ্রেরণা--
শুরুতে তাঁকে দেখলে মনে হয়—অত্যন্ত সাধারণ একজন মানুষ। মুখভরা শান্ত চাহনি, শব্দে বিনয় আর চোখে এক স্থির দীপ্তি। তবে তাঁর পরিচয়ের আসল বিস্তার খুঁজে পাওয়া যায় মানুষের মুখে মুখে—যারা বলেন, “এই ডাক্তার সাহেব মানুষকে ভালোবাসেন, তাঁর চিকিৎসা যেন নিজের সন্তানের জন্য হয় এমন আন্তরিক।” তিনি চিকিৎসক, গবেষক, সার্জন, আবার সেই মানুষটিও—যিনি নিরবে-নিভৃতে শেকড়ের টানে ছুটে যান গ্রামের বাড়িতে, যেখানে তিনি হয়ে ওঠেন এক আশার প্রতীক।
এই মানুষটির নাম ডা. হাশমত আলী মিয়া—একজন নিঃস্বার্থ, সংবেদনশীল ও দায়িত্ববান চিকিৎসক, যাঁর চিকিৎসা কেবল রোগ সারায় না, হৃদয়ের ভাঙনও সেলাই করে। পেশার চেয়েও বড় যে পথ—সেবার পথ-চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তাঁর শিক্ষা ও যোগ্যতার পরিচয় বিস্তৃত—এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), এমএস (ইউরোলজি), বিএমইউ (বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়), এফসিপিএস (সার্জারি)—এই দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আজ তিনি হয়ে উঠেছেন কিডনি ও ইউরোলজিক্যাল চিকিৎসার একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ সার্জন। আধুনিক যন্ত্রপাতির নিখুঁত ব্যবহারে পারদর্শী তিনি। লেজার, PCNL, URS, ল্যাপারোস্কপি—যুগোপযোগী প্রযুক্তির মাধ্যেমে অগণিত রোগীকে তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন সুস্থ জীবনের আশ্বাস। কিন্তু চিকিৎসক হবার সাফল্যে আত্মতুষ্ট হননি তিনি। বরং প্রতি সাফল্যের পেছনে খুঁজেছেন মানুষের মুখের হাসি। হাসপাতালের ওটিতে কাজ শেষ করে যখন রাতে ক্লান্ত শরীরে ফিরেন, তখনও তাঁকে দমাতে পারে না কোনো ক্লান্তি—কারণ তাঁর হৃদয়ে বাজে এক অদৃশ্য বাঁশি: “মানুষের জন্য কিছু কর।”
মায়ের শেখানো পথেই যে আলোকবর্তিকা- ফরিদপুর জেলার এক পল্লীগ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ডা. হাশমতের জীবনে প্রথম অনুপ্রেরণা ছিলেন তাঁর মা। একদিন ছোটবেলার কথা মনে করে তিনি বলেছিলেন—
“আমার মা বলতেন, ‘মানুষের শরীর ভালো করা সহজ, মন ভালো করা কঠিন। দুইটাই যদি পারিস, তবেই তুই ডাক্তার।’ আমি আজও সেই কথার মান রাখতে চাই।”
তাই আজও যখন তিনি গ্রামের বাড়িতে যান, তখন কোনো বিলম্ব করেন না—ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করে গরিব-অসহায় মানুষদের চিকিৎসা দেন, নিজের ওষুধ, নিজের সময়, নিজের যত্ন দিয়ে। সেখানে কোনো পারিশ্রমিক নেই, নেই কোনো শর্ত। শুধু আছে মমতা, করুণা আর দায়িত্ব।
পারিবারিক শিক্ষা-সংস্কৃতির ধারক-ডা. হাশমত কেবল একজন চিকিৎসকই নন, বরং একজন শিক্ষক ও সমাজগঠকও। তাঁর পরিবার পরিচালনা করছে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেগুলো গ্রামের ছেলেমেয়েদের জন্য জ্ঞানের দ্বার উন্মুক্ত করছে প্রতিদিন। তাঁর নিজস্ব তত্ত্বাবধানে এগুলো চলছে—তিনি নিয়মিত খোঁজ নেন, শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন চলছে, ছাত্ররা কীভাবে এগোচ্ছে।
তাঁর ছোট ভাই জাহিদ আলী বলেন, “আমার ভাই শুধু আমাদের পরিবারের গর্ব না, গ্রামের আলো। রোগীকে তিনি কখনো ‘রোগী’ বলেন না, বলেন ‘মানুষ’। এই ভালোবাসাই তো আলাদা করে দিয়েছে তাঁকে।” সেবার ঠিকানা, যেখানে চিকিৎসা হয় ভালোবাসায়-
চট্টগ্রামের মেহেদীবাগে অবস্থিত ম্যাক্স হসপিটাল -সেখানে যাঁরা আসেন, তাঁরা ফেরেন শুধু প্রেসক্রিপশন হাতে নয়, বরং একরাশ প্রশান্তি নিয়ে। এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত-একবার এক বৃদ্ধা মহিলা চেম্বারে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন—“ডাক্তার বাবারে, তুমি আল্লাহর মানুষ। আমার ছেলের মতো দেখে তুমি আমার ক্যান্সার ধইরা ফেলছো।” সেই কণ্ঠস্বরে ছিল বিশ্বাসের কান্না, ধন্যবাদ নয়—আশ্রয় খোঁজার আনন্দ। ডা. হাশমত আলী মিয়া আমাদের সময়ের এমন এক আলোকিত মানুষ, যাঁর প্রতিটি দিন কাটে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, চিকিৎসা মানে শুধু প্রযুক্তির উৎকর্ষতা নয়—এটি হৃদয়ের গভীরতা, মানবিকতার প্রতিচ্ছবি। শেষে বলি, এই বাংলার প্রতিটি অঞ্চলে যদি এমন একজন করে হাশমত আলী মিয়ার মতো মানুষ থাকেন—তাহলে আর কোনো মা তাঁর সন্তানের চিকিৎসা না পেয়ে কাঁদবেন না, আর কোনো বৃদ্ধ চোখে জল নিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় বসে থাকবেন না। কারণ এমন ডাক্তাররা আছেন বলেই, মানুষ এখনো চিকিৎসাবিজ্ঞানে নয়, চিকিৎসকের হৃদয়ে আস্থা রাখে। সেই আদি জমিদার পরিবারের উত্তরসূরি ডা. হাশমত আলী মিয়া এক গর্বিত ইতিহাসের ধারক। যে পরিবার একসময় বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতির শেকড় গাঁথা করেছিল জমিদারি ঐতিহ্যে, সেই পরিবার আজও নিজেদের আত্মমর্যাদা ধরে রেখেছে শিক্ষা, সভ্যতা ও মানবিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। তাদের ভাই-বোনেরা প্রত্যেকেই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত, জ্ঞানের আলোকে আলোকিত। কিন্তু এই পরিবার কেবল নিজেদের সমৃদ্ধিতে আবদ্ধ থাকেনি—বরং সমাজের জন্য হয়ে উঠেছে এক আলোকবর্তিকা। ডা. হাশমতের দাদা ছিলেন একজন দূরদর্শী মানুষ, যিনি নিজের জমি-সম্পদ মানুষের কল্যাণে উৎসর্গ করে গড়ে তুলেছিলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসা, অসহায়দের আশ্রয়কেন্দ্রসহ বহু সমাজ উন্নয়নমূলক প্রকল্প। তিনি বিশ্বাস করতেন—ধন সম্পদের চেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে জ্ঞান ও মানবিকতা। সেই বিশ্বাসই পাথেয় করে তাঁর সন্তান, অর্থাৎ ডা. হাশমতের বাবা, এগিয়ে নিয়েছেন সেই পথচলা। শিক্ষা ও সমাজসেবাকে জীবনের ব্রত বানিয়ে তিনিও নিজের সময়ে অসংখ্য মানুষের জীবনে রেখেছেন পরিবর্তনের ছাপ। এখন সেই শিকড়ের মায়া, দায়িত্ববোধ ও মানবিক উত্তরাধিকারের ভার তুলে নিয়েছেন ডা. হাশমত আলী মিয়া। চিকিৎসা পেশার মধ্য দিয়েই তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর পূর্বপুরুষদের স্বপ্ন পূরণের প্রয়াস। পেশাগত সাফল্যের বাইরেও তিনি সমাজে আলোকছড়ানো মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বাবার মতো, দাদার মতো তিনিও বিশ্বাস করেন—মানুষের পাশে দাঁড়ানোই সবচেয়ে বড় ইবাদত। এই ধারাবাহিকতায় তিনি হয়ে উঠেছেন কেবল একজন চিকিৎসক নন, একজন সমাজসেবক, একজন আদর্শবান সন্তান, একজন শ্রদ্ধেয় উত্তরসূরি। তাঁর এই নিরলস কর্মযজ্ঞে ভবিষ্যৎ আরও আলোকিত হবে—এই কামনাই করি।
তাঁর জীবন হোক দীর্ঘ, তাঁর পথ হোক সমৃদ্ধ, আর সেবার এই অগ্নিশিখা জ্বলুক যুগ থেকে যুগান্তরে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com