আজ পঁচিশে বৈশাখ।
এই দিনটি শুধু একটি জন্মদিন নয়—
এই দিন এক দীপ্ত সূর্যোদয়, এক আলোর উৎসব,
এই দিন বাংলা জাতির হৃদয়ে জেগে ওঠা এক নবজাগরণ,
এই দিন বিশ্বমঞ্চে বাঙালি পরিচয়ের প্রথম দীপ্ত উচ্চারণ।
১৮৬১ সালের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর এক সম্ভ্রান্ত ঠাকুরবাড়িতে জন্মেছিলেন তিনি—
বিশ্বকবি, গুরুদেব, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সুরকার, দার্শনিক ও চিত্রশিল্পী।
তাঁর কলমে সৃষ্টি হয়েছিল এক আশ্চর্য বিশ্ব—
যেখানে বাঙালির ভাষা পেয়েছিল প্রাণ, সাহিত্যে এসেছিল স্বর,
আর সংস্কৃতিতে এসেছিল স্নিগ্ধতা, আলোকময়তা।
তাঁর লেখা "আমার সোনার বাংলা" হয়ে উঠল আমাদের জাতীয় সংগীত—
যেন কবির প্রেমমুগ্ধ হৃদয় ছুঁয়ে দেখেছে বাংলার প্রতিটি নদী, মাঠ, পাখির ডাক,
আর বাংলার মায়ের মুখ।
তিনি শুধু শিল্পী ছিলেন না, ছিলেন এক মহত্তম আত্মা,
যিনি প্রেমকে দেখেছিলেন মানবতার নির্যাস হিসেবে,
যিনি প্রকৃতিকে বলেছিলেন ঈশ্বরের পবিত্র উপাসনাস্থল।
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,
“মানুষের মাঝে আমি খুঁজে ফিরি সেই চিরন্তন সত্যকে।
যে সত্য কোথাও বাহিরে নয়—সে সত্য মানুষের চোখে, হাসিতে, যন্ত্রণায়।”
এই উপলব্ধি থেকে তিনি গড়েছিলেন শান্তিনিকেতন—
এক বিদ্যার ক্ষেত্র, এক সাহচর্যের অঙ্গন,
যেখানে বৃক্ষের ছায়ায় বসে শিক্ষার্থীরা শিখতো প্রকৃতি আর কাব্যকে একত্রে অনুভব করতে।
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সময়ের অনেক আগের মানুষ।
যখন দুনিয়া অন্ধকারে বিভ্রান্ত, তিনি তখন দেখাচ্ছিলেন আলো।
যখন জাতি শৃঙ্খলে বাঁধা, তিনি তখন বললেন—
“চেতনার মুক্তি চাই, আত্মার মুক্তি চাই, কেবল দেশমুক্তি নয়।”
আজকের এই দিনে, পঁচিশে বৈশাখে,
আমরা স্মরণ করি সেই কণ্ঠস্বরকে, যে বলেছিল—
“হে নূতন, দেখা দাও দ্বারে,
এই নব চৈত্রের পুরাতন ব্যথা হরণ করে।”
আমরা স্মরণ করি সেই কবিকে,
যিনি বিদায়ের মুহূর্তেও বলেছিলেন—
“যাবার দিনে এই কথাটি বলে যেন যাই—
যা দেখেছি, যা পেয়েছি তুলনা তার নাই।”
এই কবি আমাদের শিখিয়েছেন—
ভালোবাসা কেমন করে আত্মাকে শুদ্ধ করে,
প্রকৃতির সঙ্গে কেমন করে আত্মীয়তা গড়ে ওঠে,
দেশকে ভালোবাসা মানে কেবল পতাকা নয়—
দেশ মানে মাটি, নদী, কৃষক, গান, বাতাসের ঘ্রাণ, শিশুর মুখ।
আজ কবির জন্মদিনে,
এই পৃথিবী যখন আবার বিভক্তি, হিংসা, স্বার্থ আর দুঃখে ক্লান্ত,
তখন রবীন্দ্রনাথ যেন দূর আকাশ থেকে বলে ওঠেন—
“বিশ্বাস হারায়ো না মানবজাতির প্রতি।
মানুষের মাঝে এখনো আছে সেই আলোর রেখা,
যা সমুদ্রের ঢেউ পেরিয়ে হৃদয়ে পৌঁছায়।”
আমরা তাঁর সৃষ্টিতে খুঁজে পাই আশ্রয়।
তাঁর গানে জেগে ওঠে প্রেম, শোক, মুক্তি আর অন্তরের সংলাপ।
তাঁর প্রতিটি পঙক্তি যেন এক জীবন্ত নদী—
যা হৃদয়ের অন্তঃসলিলে বয়ে চলে আজও।
এই জন্মদিন শুধু কেক কেটে উদ্যাপন করার নয়,
এই জন্মদিন আমাদের আত্মাকে নতুন করে চিনে নেওয়ার দিন।
এই দিন কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি,
তাঁর চেতনার আলোয় নিজেদের আত্মাও শুদ্ধ করার দিন।
রবীন্দ্রনাথ তুমি আছো—
চোখের পাতায়, বাংলার বাতাসে, বিকেলের ছায়ায়, শিশিরের শব্দে।
তুমি আমাদের আত্মপরিচয়ের প্রতীক,
তুমি বাংলার হৃদয়ে অমর এক কবিতা।
আজ পঁচিশে বৈশাখে, তোমার প্রতি শত সহস্র প্রণাম কবিগুরু।
তুমি ছিলে, আছো, চিরকাল থাকবে—বাংলার প্রতিটি কণায় কণায়।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com