চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের মালি পাড়ায় গড়ে ওঠা ‘আল-ফালাহ ইন্টারন্যাশনাল (Home Plan Project)’ নামক একটি কথিত সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান তুর্কি সরকারের সহায়তার নামে বাড়ি নির্মাণ ও গভীর নলকূপ স্থাপনের আশ্বাস দিয়ে সর্বসাধারণের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকার বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শতাধিক পরিবার দিশেহারা হয়ে পথে বসেছে। প্রতারণার কৌশল ও নাটকীয় উত্থান পদুয়া মালি পাড়ার বাসিন্দা আব্দু শুক্কুর, তার ছেলে শহিদুল ইসলাম এবং তাদের সহযোগী নুরুল কবির ও আহমদ কবির ‘আল-ফালাহ ইন্টারন্যাশনাল’ নামক একটি প্রকল্প চালু করেন ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে। তারা প্রচার করতে থাকেন যে তুর্কি সরকার বাংলাদেশে অসহায়, গৃহহীন মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য কোটি কোটি টাকার অনুদান দিয়েছে, যার মাধ্যমে নামমাত্র খরচে বাড়ি ও গভীর নলকূপ স্থাপন করে দেওয়া হবে।
প্রথমদিকে কম খরচে কিছু বাস্তব কাজ দেখিয়ে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে তারা। স্থানীয়ভাবে ৮-১০টি বাড়ি এবং প্রায় ৩০০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করে এমন বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করে যে, এক পর্যায়ে আশপাশের থানা থেকেও মানুষ আসতে শুরু করে। প্রতারক চক্রটি বলেছিল, বাড়ির আকার অনুযায়ী ৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা, এবং নলকূপ স্থাপনের জন্য ৭০ হাজার টাকা দিতে হবে—তাও কিস্তিতে। ভুক্তভোগীদের করুণ আর্তি
ছদাহা এলাকার আমির আহমেদ জানান, তিনি আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে মোট ১৯ লাখ ৩১ হাজার টাকা প্রদান করেন। কিন্তু হঠাৎ করে জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ‘আল-ফালাহ ইন্টারন্যাশনাল’ প্রতিষ্ঠানটি রাতারাতি বন্ধ হয়ে যায়। মোবাইল ফোন নম্বরগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তখনই সবার বুঝে আসে যে তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।পদুয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, তুলাতলীসহ আশপাশের এলাকার ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন রেহেনা আক্তার, মোস্তাফিজুর রহমান, মহিউদ্দিন, আবদুল আজিজ, ছালমা বেগম, আলমগীরসহ শতাধিক ব্যক্তি। তারা প্রত্যেকেই একাধিকবার অর্থ প্রদান করেছেন, কিন্তু চুক্তির কোনো কাজ সম্পন্ন হয়নি। ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত শুধু সাধারণ মানুষই নয়, স্থানীয় নির্মাণ সামগ্রী ব্যবসায়ীরাও প্রতারিত হয়েছেন। সিকদার দিঘীর পাড়ের রড-সিমেন্ট বিক্রেতা জসিম উদ্দিন জানান, তাদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। পদুয়া বাজারের সাইফুল নামে আরেক ব্যবসায়ী জানান, তার পাওনা প্রায় ২২ লাখ টাকা। তুলাতলীর পাইপ ফিটিংস দোকানদার জানিয়েছেন, তিনিও সাড়ে ছয় লাখ টাকা পাওনা রয়েছেন। এসব টাকা আজও আদায় হয়নি।
মাদ্রাসার নাম ব্যবহার করে আস্থা অর্জন
বিশ্বাস অর্জনের একটি কৌশল হিসেবে প্রতারক চক্রটি ‘আবু বকর ছিদ্দিক (রাঃ) আদর্শ এবতেদায়ী মাদ্রাসা’র নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে। তারা এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে পরিচয় দিতেন, যাতে সাধারণ মানুষ মনে করে এটি কোনো পবিত্র ও বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান। এতে করে কেউ প্রশ্ন তোলে না এবং অনায়াসেই টাকা দিয়ে দেন। আইনি পদক্ষেপ ও প্রশাসনের নীরবতা এ পর্যন্ত জানা গেছে, প্রতারিত বহু ব্যক্তি থানায় সাধারণ ডায়েরি ও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিছু ব্যক্তি প্রতারণার মামলা করেছেন আদালতে। তবে এখনো প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো তদন্ত বা অভিযানের খবর পাওয়া যায়নি, যা ভুক্তভোগীদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।এলাকার জনমত এলাকার বিশিষ্টজনেরা বলছেন, “সরকারি অনুমোদন ছাড়াই, কোনো প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা না রেখেই এরা এত বড় প্রতারণা কিভাবে চালাতে পারল, তা প্রশাসনের দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারে না। প্রশাসনের নীরবতা এখানে দায় এড়াতে পারে না।”উপসংহার-এই ঘটনার পেছনে থাকা চক্রটি শুধু অর্থই আত্মসাৎ করেনি, বরং মানুষের বিশ্বাস, আশা, এবং জীবন গঠনের স্বপ্নকেও নির্মমভাবে ভেঙে দিয়েছে। প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি উঠেছে, দ্রুত প্রতারকদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে ভুক্তভোগীদের ন্যায্য পাওনা ফেরত নিশ্চিত করতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com