চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে আজকের বিকেল যেন হয়ে উঠেছিল জনতার প্রতিবাদের এক মহাসাগর। কালো পতাকার ঢেউ, শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত জনসমুদ্র, আর হৃদয়ের গভীর ক্ষোভ থেকে উঠে আসা একটাই সুর—“শহীদ রইস উদ্দিন কাদেরীর রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া হবে না।”
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার সাবেক ঢাকা দক্ষিণ সভাপতি, আলেমে দীন, সমাজ সচেতন খতিব রইস উদ্দিন কাদেরীর নির্মম হত্যাকাণ্ড শুধু একটি রাজনৈতিক হত্যাই নয়, বরং এটি হাজারো অনুসারীর হৃদয়ে ক্ষোভ, বেদনা ও প্রতিবাদের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। সেই আগুনেরই বহিঃপ্রকাশ ছিল আজকের ‘কালো পতাকা সমাবেশ’।
বিকাল ৩টায় শুরু হওয়া সমাবেশে হাজার হাজার সুন্নি জনতা যোগ দেন—নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, তরুণ, মাদ্রাসাছাত্র থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ হাতে কালো পতাকা নিয়ে দাঁড়ান প্রতিবাদের কাতারে। প্রেস ক্লাব এলাকা ধ্বনিত হয় “নারায়ে তাকবির - আল্লাহু আকবার” স্লোগানে। স্লোগানে উচ্চারিত হচ্ছিল প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের ভাষা।
বক্তব্যের ঝড়:
সমাবেশে একে একে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা। তারা বলেন, “আমরা যে রইস কাদেরীকে হারিয়েছি, তিনি কেবল একজন ব্যক্তি ছিলেন না—তিনি ছিলেন একটি আদর্শের নাম, একটি চলমান আন্দোলনের প্রতীক।”
তারা আরও বলেন, “আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ যে তিনি মামলার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আমরা আজো খুনিদের ধরা পড়তে দেখিনি। বরং যারা প্রতিবাদ করেছে, তাদেরকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে জানতে চাই—এটাই কি ন্যায়বিচার?”
সরকার ও প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি:
সমাবেশ থেকে বক্তারা সাফ জানিয়ে দেন, যদি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারকৃত নিরপরাধ নেতাকর্মীদের মুক্তি ও খুনিদের গ্রেফতার না করা হয়, তাহলে সারাদেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
তারা বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পক্ষপাতী। কিন্তু যদি আবার হেলমেটধারী বাহিনী দিয়ে আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা হয়, তাহলে সুন্নি জনতা আত্মরক্ষায় বাধ্য হবে। আমরা রাজপথে আছি, থাকবো, প্রয়োজনে রাজপথই হবে আমাদের প্রতিরোধের দূর্গ।”
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ:
নেতারা অভিযোগ করেন, ৫ মে’র অবরোধ কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ। অথচ অজ্ঞাত অস্ত্রধারীরা সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালায়। আর আশ্চর্যের বিষয় হলো, হামলাকারীরা থেকে যায় অধরায়, অথচ গ্রেফতার করা হয় নিরীহ কর্মীদের।
তারা বলেন, “আমরা চাই না সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হোক। কিন্তু যারা প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে ও পরে হামলা চালিয়েছে, তাদের রক্ষা করা মানে রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি জনগণের আস্থা ধ্বংস করা।”
গণমাধ্যম ও পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা:
সমাবেশ থেকে উপস্থিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়, যারা সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রেখেছেন। সাংবাদিকদের প্রতিও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়, যারা সত্য সংবাদ তুলে ধরে জনগণকে সঠিক তথ্য জানাতে ভূমিকা রাখছেন।
প্রার্থনা ও প্রত্যয়:
সমাবেশের শেষ পর্যায়ে শহীদ রইস উদ্দিন কাদেরীর আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। একই সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া সকল নিরপরাধ নেতাকর্মীদের মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানান অংশগ্রহণকারীরা। মোনাজাতে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই।
শেষ কথা:
এই কালো পতাকা শুধু এক দিনের প্রতীক নয়—এটি হয়ে উঠেছে এক চলমান প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি। শহীদ রইস উদ্দিন কাদেরীর হত্যার বিচার এবং নিরপরাধদের মুক্তির দাবি এখন আর কেবল চট্টগ্রামের নয়, এটি হয়ে উঠেছে দেশের সর্বস্তরের মানুষদের একটি সামষ্টিক চাওয়া।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com