বাংলাদেশ এক সংকটের মুখোমুখি—একদিকে মানবিক চেতনা, অন্যদিকে সীমান্ত নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন। মিয়ানমারের সংঘাত ও রাখাইন রাজ্যের জ্বলন্ত পরিস্থিতিতে আবার উঠে এসেছে একটি আলোচিত শব্দ—“মানবিক করিডোর”। মানবিক করিডোর বলতে বোঝানো হয়: যুদ্ধ বা সহিংসতা আক্রান্ত এলাকা থেকে সাধারণ নাগরিক, আহত, অসুস্থ, নারী ও শিশুদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য একটি অস্থায়ী নিরাপদ পথ বা এলাকা নির্ধারণ। এর মাধ্যমে খাদ্য, চিকিৎসা, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়। এটি নির্দিষ্ট সময় ও শর্তসাপেক্ষে আন্তর্জাতিক রীতিনীতির আলোকে পরিচালিত হয়। তবে প্রশ্ন হলো—আমরা কেন মানবিক করিডোর দেব? এবং যদি দিই, তাহলে তার ফল কী হতে পারে আমাদের দেশের জন্য? বাংলাদেশ ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকটের সময় মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। আমরা আশ্রয় দিয়েছিলাম লাখো নিরীহ রোহিঙ্গাকে। কিন্তু সেই আশ্রয়ই আজ পরিণত হয়েছে এক স্থায়ী বোঝায়। কক্সবাজার ও নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকা আজ দুর্বিষহ। আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি রয়ে গেছে ফাইলের পাতায়, বাস্তবতায় প্রতারণা ছাড়া কিছুই মেলেনি।
এখন নতুন করে যদি আমরা মানবিক করিডোর দেই—চীন-মিয়ানমার উত্তেজনার মুখে কিংবা রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা নিরীহ জনগোষ্ঠীকে অস্থায়ীভাবে ঢুকতে দিই—তাহলে তা আরেকটি মানবিক সংকট তৈরি করতে পারে। কারণ করিডোরের মুখ খুললে কেবল অসহায় মানুষ নয়, সঙ্গে ঢুকে পড়তে পারে অস্ত্র, মাদক, জঙ্গিবাদ, চোরাচালান এবং বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার গোফজারা।তাহলে কি মানবিক করিডোর একেবারে দেওয়া উচিত নয়? এ প্রশ্নের উত্তর এককথায় দেওয়া যায় না। মানবিক চেতনা আমাদের জাতিসত্তার ভিত্তি। ১৯৭১ সালে আমরা নিজেরাই আশ্রয় নিয়েছিলাম ভারতে। তাই মানবিক সাহায্য ফিরিয়ে দেওয়া কঠিন, এমনকি লজ্জাজনকও হতে পারে। কিন্তু আমরা তখন ছিলাম একটি গণহত্যার শিকার জাতি, আর এখন আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন রাষ্ট্র। আমাদের দায়িত্ব এখন কেবল চোখের জল মুছে দেওয়া নয়, সেই সঙ্গে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎও রক্ষা করা।
মানবিক করিডোরের পক্ষে যুক্তি:
১. নিরীহ, আহত মানুষদের জীবন রক্ষার সুযোগ। ২. আন্তর্জাতিকভাবে ‘মানবতাবাদী রাষ্ট্র’ হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা।
৩. জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় পরিচালিত হলে মানবিক মূল্যবোধের বিজয় ঘটানো।
প্রতিকূলতা ও ঝুঁকি: ১. নতুন করে রোহিঙ্গা সংকটের মতো দীর্ঘমেয়াদি চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
২. সীমান্ত নিরাপত্তা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। ৩. জঙ্গি সংগঠন, অস্ত্র চোরাচালান, মানবপাচার বেড়ে যেতে পারে। ৪. আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে অস্থায়ী করিডোর স্থায়ী আশ্রয়ে রূপ নিতে পারে। বাংলাদেশ কি আবার সেই পথেই হাঁটবে? আবার কি চোখের জল মোছাতে গিয়ে সমুদ্রসম বোঝা বহন করবে? মানবিক করিডোর যদি দিতেই হয়, তবে সেটি হতে হবে—আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে,সময়সীমা নির্ধারণ করে,ফিরিয়ে নেওয়ার নিশ্চয়তা আদায় করে,এবং সর্বোপরি, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
আমরা মানুষ, আমাদের বিবেক আছে—তাই আমাদের হৃদয় কাঁদে। কিন্তু আমরা একটি রাষ্ট্রও, যার সীমানা আছে, যার নিরাপত্তা আছে, যার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আছে।
তাই মানবিক করিডোর প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হলে শুধু আবেগ নয়, চাই কূটনৈতিক প্রজ্ঞা, রাষ্ট্রীয় কৌশল ও সাহসিকতা। এবারের সিদ্ধান্ত হবে—আমরা কেবল মানবিক থাকব, না কি চিরদিন অসহায়ও হয়ে থাকব?
মানবিক করিডোরের বৈশ্বিক প্রয়োগ,বসনিয়া যুদ্ধ (১৯৯৩):
সিরিয়া গৃহযুদ্ধ: ইউক্রেন যুদ্ধ (২০২২):
গাজা সংকট (২০২৩-২০২৫):
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মানবিক করিডোর
মানবিক করিডোরের চ্যালেঞ্জ
মানবিক করিডোর স্থাপনের সময় কিছু চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে: নিরাপত্তা ঝুঁকি: রাজনৈতিক অপব্যবহার: আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন:
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com