চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে ওঠেছে ভয়াবহ দুর্নীতি, রাজনৈতিক হয়রানি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিস্তৃত অভিযোগ। একাধিক ভুক্তভোগীর স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, সাধারণ নাগরিকদের মিথ্যা মামলায় জড়ানো, অর্থ আদায়ের জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগে জর্জরিত এই পুলিশ কর্মকর্তা। চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের পরিবার কল্যাণ সম্পাদক জাকির হোসেন মিশু, আইজিপি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর পৃথক দুটি আবেদন দাখিল করে ওসি আরিফুর রহমানসহ বায়েজিদ থানার আরও কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। অভিযোগে বলা হয়, বিগত ২৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে সন্ধ্যা ৫টা ৪৫ মিনিটে বায়েজিদ থানাধীন আমিন জুট মিলসের উত্তর গেইটে একটি ট্রাক থেকে মালামাল নেয়ার বিষয়ে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় (মামলা নম্বর- ৩৩(১০)২০২৪)। অথচ ঘটনার দিন ও সময়ে জাকির হোসেন চকবাজারের অফিসে উপস্থিত ছিলেন, যার প্রমাণস্বরূপ সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে। পরবর্তীতে মামলার বাদী নিজেই আদালতে গিয়ে জানান, তিনি জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেননি এবং তার জামিনে আপত্তি নেই। আদালত এই তথ্য গ্রহণ করে ২৭ অক্টোবর তারিখে তাকে জামিন দেন। এরপর জাকির হোসেন যখন থানায় গিয়ে ওসির কাছে এই মিথ্যা মামলার কারণ জানতে চান, তখন ওসি আরিফুর রহমান হুমকি দিয়ে বলেন, “তোমার নামে আরও একাধিক মামলা রেডি হচ্ছে, তুমি প্রস্তুত থাক।” একইসঙ্গে অভিযোগকারী জানান, ওসি আরিফুর রহমান দীর্ঘদিন ধরেই থানায় প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অবৈধভাবে আদায় করছেন। সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, মিথ্যা মামলায় জড়ানো এবং বিনা অপরাধে আটক রেখে মুক্তির জন্য টাকা নেয়া তার নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার নামে চট্টগ্রাম শহরে চারটি প্লট, গ্রামের বাড়িতে বিপুল সম্পদ, দুটি স্ত্রীর নামে কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স রয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে যে, বায়েজিদ থানাধীন চন্দ্রনগর এলাকায় গ্রিন বেলি “বি” ব্লকে ওসির নামে রয়েছে পাঁচ কাঁঠা জমি, যেখানে আধা পাকা বিশটি ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দেয়া হচ্ছে। এই সম্পত্তির বাজার মূল্য তিন কোটি টাকার অধিক। এছাড়া হাবিবুল্লাহ বাহার রোডের একটি ১৭ তলা ভবনে রয়েছে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, যার মালিকানা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
জাকির হোসেন মিশুর অভিযোগে আরও বলা হয়, এই ওসি বিগত সরকারে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন এবং রাজনৈতিক তদবির ও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বায়েজিদ থানায় পোস্টিং পান। অতীতে কোম্পানীগঞ্জ থানায় দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ হয়েছে, এবং সেখান থেকেও তাকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ধরনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, জাকির হোসেন মিশু ও স্থানীয় বাসিন্দারা জোরালোভাবে দাবি করছেন—ওসি আরিফুর রহমানের সম্পদের উৎস এবং তার কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে একটি স্বাধীন ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত পরিচালিত হোক এবং প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
ওসি আরিফুর রহমানের অনিয়ম সম্পর্কে এলাকাবাসীর কাছে জানতে চাইলে, অনেকেই দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকাকে জানান যে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে মিথ্যা মামলা, হয়রানি ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের শান্তি নষ্ট করছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, থানায় কোনো সাধারণ মানুষ ন্যায্য বিচার পায় না, বরং অভিযোগ তুলতে গেলে ভয়ভীতি ও দম্ভের মুখে পড়তে হয়। ওসির বিরুদ্ধে আগে থেকে নানা দুর্নীতির গুঞ্জন শোনা গেলেও সম্প্রতি এসব বিষয় প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। তারা দাবি করেন, বিষয়গুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত হলে ওসি আরিফের বিরুদ্ধে ভয়াবহ চিত্র উন্মোচিত হবে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকার পক্ষ থেকে বায়েজিদ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরিফুর রহমানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হয়, তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ওসি আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে এর আগেও অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট অভিযোগগুলো যদি সঠিকভাবে ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হয়, তবে এর অন্তরালে লুকিয়ে থাকা প্রকৃত রহস্য ও দায়ীদের চেহারা হয়তো উদঘাটিত হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com