বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা, যার কার্যক্রমের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত হয়। নির্বাচন কমিশনের অধীনস্থ প্রতিটি আঞ্চলিক ও জেলা কার্যালয় নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাতে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনসমূহ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়। তবে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর জনবল কাঠামো বিশ্লেষণ করলে এক গুরুতর সমস্যা দেখা যায়—অনুমোদিত পদের তুলনায় বর্তমান কর্মরত জনবল উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ফলে নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা
নিশ্চিত করা দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে।
জনবল ঘাটতির পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণ-
বর্তমানে চট্টগ্রাম অঞ্চলে নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন অনুমোদিত মোট ৩৫৭টি পদের মধ্যে ১৮৮টি পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন, অর্থাৎ ১৬৯টি পদ এখনো শূন্য। প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ জরুরি হলেও দীর্ঘদিন ধরে এসব পদ পূরণ করা সম্ভব হয়নি।১ম শ্রেণির জনবল ঘাটতি-
নির্বাচনী কার্যক্রমের কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ১ম শ্রেণির কর্মকর্তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখানে উল্লেখযোগ্য শূন্যতা রয়েছে—
সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন অফিসার: অনুমোদিত পদ ৫টি, কর্মরত মাত্র ১ জন।
অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসার: অনুমোদিত ৫টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২ জন। নির্বাচন অফিসার: ৭টি পদের মধ্যে ৫টি পূরণ করা হয়েছে, ২টি শূন্য। উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার: অনুমোদিত পদ ৫৬টি থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৬ জন, অর্থাৎ ৪০টি পদ শূন্য। উল্লেখিত এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদগুলোতে পর্যাপ্ত জনবল না থাকলে নির্বাচনী প্রস্তুতি, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচন সংক্রান্ত দাপ্তরিক কার্যক্রম ও মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটে।
২য় শ্রেণির জনবল ঘাটতি
২য় শ্রেণির কর্মকর্তারা মূলত উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরিচালনা করেন। কিন্তু এই স্তরেও জনবল সংকট বিদ্যমান—
সহকারী উপজেলা নির্বাচন অফিসার: অনুমোদিত পদ ৫৬টি থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ২৭ জন, ২৯টি পদ শূন্য। সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক: ৩টি পদের মধ্যে ১টি পূরণ হয়েছে, ২টি শূন্য। ৩য় শ্রেণির জনবল ঘাটতি- ৩য় শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রশাসনিক সহায়তা, ডাটা এন্ট্রি, হিসাব সংরক্ষণ এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত কাজের দায়িত্ব পালন করেন। তবে এই স্তরেও জনবলের বড় ঘাটতি রয়েছে—
উচ্চমান সহকারী: অনুমোদিত ৬টি পদের বিপরীতে ৩টি পদ শূন্য। ডাটা এন্ট্রি অপারেটর: অনুমোদিত ৫৬টি পদে কর্মরত ৫৬ জন, তবে অন্যান্য বিভাগে ঘাটতি থাকায় অতিরিক্ত কাজের চাপ তৈরি হচ্ছে। হিসাব সহকারী: অনুমোদিত ৫টি পদের মধ্যে ২টি শূন্য। স্টোর কিপার: অনুমোদিত ৫টি পদের মধ্যে ২টি শূন্য। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক: অনুমোদিত ৬৭টি পদের মধ্যে ৩৯টি পূরণ হয়েছে, ২৮টি শূন্য। ৪র্থ শ্রেণির জনবল ঘাটতি- নির্বাচনী দপ্তরের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু এখানেও জনবল সংকট বিদ্যমান— গাড়িচালক: ৩টি পদের মধ্যে ২টি পূরণ হয়েছে, ১টি শূন্য। অফিস সহায়ক: অনুমোদিত ৭১টি পদের মধ্যে ৫২টি পূরণ হয়েছে, ১৯টি শূন্য।
নিরাপত্তা প্রহরী: অনুমোদিত ৫টি পদের মধ্যে ২টি পূরণ হয়েছে, ৩টি শূন্য।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী: অনুমোদিত ৬টি পদের মধ্যে ৫টি পূরণ হয়েছে, ১টি শূন্য।
দপ্তরি: অনুমোদিত ১টি পদ থাকলেও সেটি শূন্য রয়েছে। জনবল সংকটের প্রভাব- এই বিপুল সংখ্যক শূন্য পদ নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে— ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নতুন ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে।
জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন পরিচালনায় প্রশাসনিক কার্যক্রম দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
নির্বাচনকালীন সময়ে বাড়তি কাজের চাপ বিদ্যমান জনবলের ওপর পড়ে, যা দক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মাঠপর্যায়ে পর্যাপ্ত কর্মকর্তার অভাবের কারণে ভোটারদের সেবা প্রদানে বিলম্ব হতে পারে। সম্ভাব্য সমাধান
দ্রুত শূন্য পদ পূরণের উদ্যোগ নেওয়া: নির্বাচন কমিশনের উচিত দ্রুত শূন্য পদগুলো পূরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা: দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল নিয়োগের মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করা যেতে পারে।
প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা: নির্বাচনী কাজে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা প্রয়োজন, যাতে তারা আধুনিক প্রযুক্তি ও নীতিমালার সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন।
ডিজিটাল ব্যবস্থা উন্নত করা: অনলাইন ও স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রশাসনিক কাজের গতি বাড়ানো সম্ভব, যা জনবল সংকট কিছুটা কাটিয়ে তুলতে পারে।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা, যার কার্যক্রম সরাসরি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুসংহত করতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু চট্টগ্রাম অঞ্চলে নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন দপ্তরগুলোর বর্তমান জনবল ঘাটতি প্রশাসনিক দক্ষতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই সংকট নিরসনে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতের জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে, যাতে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম আরও শক্তিশালী ও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হতে পারে।
বেলায়েত হোসেন -চট্টগ্রামে নির্বাচন কমিশনের জনবল সংকট নিরসনে জরুরি উদ্যোগের অনুরোধের দৃষ্টি আকর্ষণ-
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অফিসের কার্যক্রমকে গতিশীল করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি সাধারণ মানুষের দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে আন্তরিকভাবে কাজ করে চলেছেন। কিন্তু চরম জনবল সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, যা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী জরুরি ভিত্তিতে চট্টগ্রাম অঞ্চলে জনবল নিয়োগের বিষয়ে সরাসরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি আশাবাদী যে দ্রুত জনবল নিয়োগের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম আরও গতিশীল ও কার্যকর হবে।
এছাড়া, তিনি অফিসারদের জন্য যাতায়াতের উপযুক্ত ব্যবস্থা ও যানবাহনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। বর্তমানে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পায়ে হেঁটে মাঠপর্যায়ের কাজ করতে হয়, যা তাদের কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, “যদি কর্মকর্তাদের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করা যেত, তাহলে তাদের কাজের গতি বহুগুণে বৃদ্ধি পেত। কিন্তু পর্যাপ্ত গাড়ি না থাকায় প্রত্যাশিত গতিতে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।”
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাচন কার্যক্রমের সুষ্ঠু পরিচালনার স্বার্থে দ্রুত জনবল নিয়োগ ও যানবাহনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করা হচ্ছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com