চট্টগ্রাম শহর—এটি শুধু ইট-পাথরের একটি নগরী নয়, বরং ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় লড়ে যাওয়া এক সাহসী জনপদ। এ শহরের প্রতিটি গলি, প্রতিটি ইট, প্রতিটি মানুষের গল্প যেন এক অবিরাম পরিবর্তনের স্রোতধারা। এই পরিবর্তনের গল্পের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) নতুন কমিশনার হাসিব আজিজের হাত ধরে।
আমরা যখন প্রশাসনের মধ্যে সততা, নিষ্ঠা ও আদর্শের সন্ধান করি, তখন অনেক সময় হতাশ হতে হয়। কিন্তু এমন মানুষও আছেন, যারা নিজের পেশাদারিত্ব, ন্যায়বোধ ও দায়িত্ববোধ দিয়ে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। হাসিব আজিজ তেমনই একজন। তাঁর মধ্যে পুলিশের ঔদ্ধত্য নয়, বরং জনতার প্রতি দায়বদ্ধতার এক স্বচ্ছ প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত হয়। আমি দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করছি, প্রশাসনের নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে, বহু পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। কিন্তু পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজের মতো অমায়িক, আন্তরিক ও প্রজ্ঞাবান পুলিশ কর্মকর্তা খুব কমই দেখেছি। আমার সঙ্গে তাঁর পরিচয় আজকের নয়। তিনি যখন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন, তখন থেকেই তাঁর সততা, দক্ষতা ও মানবিকতার পরিচয় পেয়েছি। তবে তাঁর সঙ্গে আমার সরাসরি যোগাযোগ সেসময় বেশি হয়নি। কিন্তু আজ যখন তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের শীর্ষ পদে, তখনও সেই একই আন্তরিকতা, ন্যায়নিষ্ঠা ও দায়িত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।
আমার সঙ্গে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎকালে তিনি অত্যন্ত উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। আমার সাংবাদিকতা ও লেখালেখির কথা শুনে তিনি বললেন—
"কামাল সাহেব, বিগত সময়ে আমাদের পুলিশ বাহিনী কী করেছে, কী ছিল, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। এখন থেকে পুলিশ হবে 'জনতার', ক্ষমতার নয়। জনতার পুলিশ হয়ে ওঠার এই যাত্রায় আমাদের সকলকে, বিশেষ করে আপনাদের মতো বিবেকবান লেখকদের সহযোগিতা দরকার।"
তাঁর এই বক্তব্য শুধু একটি প্রশাসনিক প্রতিশ্রুতি নয়, বরং এটি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা।
হাসিব আজিজ এমন এক পরিবারের সন্তান, যেখানে সততা ও ন্যায়পরায়ণতার এক দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। তাঁর পিতা আজিজুল হক একসময় চট্টগ্রামের ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার এবং পরবর্তী সময়ে দেশের পুলিশ প্রধান (আইজিপি) ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
এই ঐতিহ্য বহন করেও হাসিব আজিজ যথাযথ সময়ে যোগ্যতার স্বীকৃতি পাননি। ১৫তম বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও, তাঁর অধঃস্তন অনেকে অনেক আগেই ডিআইজি হয়েছেন। কিন্তু যোগ্যতার স্বীকৃতির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েও তিনি দায়িত্বের প্রতি অবিচল থেকেছেন।
আজ যখন তিনি চট্টগ্রামের পুলিশ প্রধান, তখন তাঁর নেতৃত্বে বদলাতে শুরু করেছে চট্টগ্রামের আইন-শৃঙ্খলার চিত্র।
পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই হাসিব আজিজ চট্টগ্রামে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অপরাধমূলক কার্যকলাপ নির্মূলে কঠোর ভূমিকা পালন করছেন। তাঁর উদ্যোগে সম্প্রতি কুখ্যাত সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যিনি দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন।
এ বিষয়ে তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন—
"সন্ত্রাসীরা হয় কারাগারে থাকবে, না হয় পুলিশের আওতার বাইরে থাকবে। কিন্তু তারা কোনোভাবেই জনগণের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারবে না।"
এই কঠোর অবস্থান চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন এক নিরাপত্তার অনুভূতি তৈরি করেছে।
পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে অতীতে নানা অভিযোগ এসেছে—ঘুষ, ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ইত্যাদি। কিন্তু হাসিব আজিজ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, অতীতের যেসব পুলিশ সদস্য দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন কিংবা বর্তমানে কেউ জড়াতে চাইছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমার সাংবাদিকতার প্রতি তাঁর সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন—
"আপনি অতীতে পুলিশের নানা অনিয়ম তুলে ধরেছেন, ভবিষ্যতেও যদি কোনো অসংগতি চোখে পড়ে, তাহলে সাহস করে লিখবেন। আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, পুলিশ বাহিনীকে জনতার পুলিশ হিসেবেই গড়ে তুলব।"
আমার লেখাগুলোর প্রতি তাঁর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি জাতীয় দৈনিক সকালের সময়, দৈনিক ভোরের আওয়াজ এবং ইংরেজি দৈনিক The Daily Banner-এ প্রকাশিত সংবাদগুলোকে সময়োপযোগী ও তথ্যনির্ভর বলে প্রশংসা করেন।
একজন পুলিশ কমিশনার যখন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সত্য প্রকাশের পক্ষে থাকেন, তখন তা সাংবাদিকতার জন্য এক বড় আশার বিষয়।
আমি তাঁর হাতে আমার গবেষণামূলক বই বাংলাদেশে নির্বাচন ও নির্বাচনি তথ্য-উপাত্ত এবং "অদম্য মনোয়ার হোসেন" বই
তুলে দেই। বইদুটি তিনি গভীর আগ্রহ নিয়ে গ্রহণ করেন এবং বলেন—
"বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার নানা জটিলতা বুঝতে এটি গুরুত্বপূর্ণ বই। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচনী ব্যবস্থার স্বচ্ছতা দরকার, আর সে বিষয়ে আপনার গবেষণা প্রশংসার দাবিদার।"
হাসিব আজিজ শুধু একজন প্রশাসক নন, বরং তিনি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি চান এমন এক পুলিশ বাহিনী, যা জনতার প্রকৃত বন্ধু হবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, এবং অপরাধীকে প্রশ্রয় দেবে না।
তিনি বলেছেন—
"জনতার পুলিশ গড়তে হলে জনগণেরও দায়িত্ব নিতে হবে। দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আমরা যেমন ব্যবস্থা নেব, তেমনি সমাজের অন্যায়-অপরাধের বিরুদ্ধেও আমরা লড়ব।"
এ এক নতুন আলোর পথচলা। চট্টগ্রামের মানুষ আজ নতুন এক প্রত্যাশায় বুক বাঁধছে—এই আশায় যে, পুলিশ হবে তাদের প্রকৃত রক্ষক, ন্যায়বিচারের প্রতীক।
আমার দেখা পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ যেন এক আলোর বাতিঘর—যাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রামের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নতুন এক দিগন্তের দিকে এগিয়ে চলেছে। প্রশাসনের চেয়ারে বসে কতজনই তো ক্ষমতার মোহে দিশেহারা হয়ে যান, কতজনই দায়িত্বের ভার বুঝতে পারেন না। কিন্তু হাসিব আজিজ ব্যতিক্রম। তাঁর চোখে আমি দেখেছি প্রত্যয়ের দীপ্তি, তাঁর কণ্ঠে শুনেছি দায়িত্ববোধের সুর।
তিনি শুধু পুলিশের প্রধান নন, বরং একজন অভিভাবক, যাঁর অভিমুখ সততার দিকে, যাঁর চিন্তায় ন্যায়ের প্রতিফলন। তিনি কঠোর হাতে অপরাধ দমন করছেন, আবার মমতার পরশ বুলিয়ে দিচ্ছেন সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তায়। এমন মানুষই তো সমাজের সত্যিকারের রক্ষক!
পুলিশের পোশাক শুধু ক্ষমতার প্রতীক নয়, এটি আস্থার প্রতীক হওয়া উচিত। হাসিব আজিজ সেই আস্থা ফিরিয়ে আনার পথে হাঁটছেন। আমি আশাবাদী, তাঁর এই যাত্রা শুধু পুলিশের নয়, পুরো চট্টগ্রামবাসীর কল্যাণের এক নবদিগন্ত রচনা করবে।
আকাশের তারা যেমন রাতের অন্ধকারে পথ দেখায়, তেমনি জনতার পুলিশ হওয়ার এই সংগ্রামে হাসিব আজিজ যেন নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল হয়ে থাকেন। তাঁর সততা, আদর্শ ও নিষ্ঠার আলো ছড়িয়ে পড়ুক, এই আশা নিয়ে আমি পুলিশের প্রতি আস্থা রাখতে চাই, কারণ আজ চট্টগ্রামের পুলিশ এক নতুন নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে—সততা, সাহস আর দায়িত্ববোধের নতুন মাইলফলক গড়তে। হাসিব আজিজের এই যাত্রা সফল হোক, এবং জনতার পুলিশ সত্যিকারের অর্থে জনগণের সেবক হয়ে উঠুক।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com