চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) বিশেষ অভিযানে অবশেষে গ্রেফতার হলো চট্টগ্রামের শীর্ষ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ ওরফে বুড়ির নাতি সাজ্জাদ (২৭)। দীর্ঘদিন ধরে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করা এই সন্ত্রাসীকে ধরতে বিশেষ পরিকল্পনা নেয় সিএমপি। কমিশনার হাসিব আজিজের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায়, উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে পুলিশের বিশেষ টিম ১৫ মার্চ রাত ৯টা ৩০ মিনিটে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। অপরাধ সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় কমান্ডার ছিল ছোট সাজ্জাদ-
নগরীর কুখ্যাত সন্ত্রাসী বড় সাজ্জাদের (বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত) অন্যতম সহযোগী ছিল ছোট সাজ্জাদ। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, খুন, অস্ত্র ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। মূলত বিল্ডিং নির্মাণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করত সে। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গুলি চালিয়ে ভয়ভীতি দেখাত।
তার নেতৃত্বে পরিচালিত চাঁদাবাজির বেশ কয়েকটি ভিডিও ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। চট্টগ্রামের সাধারণ ব্যবসায়ীরা তার ভয়ে ছিল আতঙ্কিত। পুলিশের খাতায় দীর্ঘদিন ধরে তার নাম শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় ছিল। পুলিশের ওপর হামলা ও পুরস্কার ঘোষণার পর গ্রেফতার-
গত বছরের ৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় এলাকায় পুলিশের অভিযানের সময় সাজ্জাদ তার দলবল নিয়ে পুলিশের ওপর গুলি চালায়। এতে দুই পুলিশ সদস্যসহ মোট চারজন আহত হন। ওই অভিযানের সময় সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
এরপর চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ ছোট সাজ্জাদকে ধরতে বিশেষ অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা দেন।
কিন্তু সাজ্জাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড থেমে থাকেনি। কিছুদিন আগে সে ফেসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসিকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়। এছাড়া, আলোচিত ডবল মার্ডার মামলার প্রধান আসামি হিসেবেও তার নাম রয়েছে।
১৫টি মামলার আসামি সাজ্জাদ-
চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় সাজ্জাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনে মোট ১৫টি মামলা রয়েছে। পুলিশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে তাকে ধরতে অভিযান পরিচালনা করছিল।
সিএমপি কমিশনারের হুঁশিয়ারি: গডফাদারদেরও আইনের আওতায় আনা হবে-
ছোট সাজ্জাদের গ্রেফতার নিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন,
"চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীদের কোনো ঠাঁই নেই। যারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে, তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। ছোট সাজ্জাদের গ্রেফতার প্রমাণ করে যে, অপরাধী যত শক্তিশালী হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত আইন তার নাগাল পাবেই।"
তিনি আরও জানান, সাজ্জাদের গডফাদারদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে, শিগগিরই তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
সিএমপি কমিশনার বলেন, "এই সাজ্জাদকে ব্যবহার করে যারা কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছে, তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। নগরীতে অপরাধীদের মদতদাতারা যতই ক্ষমতাধর হোক, আমরা কাউকে ছাড় দেব না। চট্টগ্রামকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মুক্ত করা হবে।"
পুলিশ কমিশনারের এই বক্তব্যে স্পষ্ট, শুধু সাজ্জাদ নয়— তার পেছনের গডফাদার এবং অর্থলগ্নিকারীরাও এবার পুলিশের নজরদারিতে। সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে পুলিশের এ অভিযান চট্টগ্রামে শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com