"সাতকানিয়ায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি জামায়াত কর্মী নেজাম - আবু ছালেক: প্রধান আসামি মানিক ও তার চার ভাইসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা"
মো. কামাল উদ্দিনঃ
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হলেন জামায়াত ইসলামী কর্মী আবু ছালেক (৩৮)। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উঠে এসেছে নজরুল ইসলাম মানিক ও তার দুই ভাই নুরুল ইসলাম বাবুল ও সালাউদ্দিনের নাম। স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই তিন ভাই দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মাধ্যমে বিরোধীদের দমন করার অভিযোগের মুখে থাকলেও প্রশাসনের নীরবতার কারণে বারবার আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে গেছেন।হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা: পরিকল্পিত আক্রমণের ভয়াল রাত-স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী, গত ৩ মার্চ রাত ১০টার দিকে ছনখোলা পশ্চিম পাড়ায় আবু ছালেক স্থানীয় একটি দোকান থেকে বের হওয়ার সময় একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত তাকে ঘিরে ধরে। নেতৃত্বে ছিলেন নজরুল ইসলাম মানিক, নুরুল ইসলাম বাবুল ও সালাউদ্দিন। তাদের সঙ্গে ছিল আরও ৪৪ জন। প্রথমে মানিক ছালেকের পথ আটকায় এবং তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিদ্বেষমূলক কথা বলতে শুরু করে। ছালেক প্রতিবাদ করলে বাবুল ও সালাউদ্দিন লাঠি দিয়ে তাকে আঘাত করে। একপর্যায়ে ছালেক দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে পিছন থেকে ধারালো চাপাতি দিয়ে তার পায়ে আঘাত করা হয়, যাতে সে আর দৌড়াতে না পারে। এরপর মানিক নিজেই তার মাথায় একটি লোহার রড দিয়ে আঘাত করে। আহত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আরও কয়েকজন তাকে লাথি ও ঘুষি মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
প্রাণ বাঁচানোর আকুতি, কিন্তু কেউ এগিয়ে এলো না-
আবু ছালেক জীবন বাঁচানোর জন্য চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। কারণ পুরো এলাকা ছিল আতঙ্কে আচ্ছন্ন। এই তিন ভাই ও তাদের দলবল দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় দাপটের সঙ্গে চলাফেরা করত, কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পেত না।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, "ছালেক ভাই সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিলেন, কিন্তু মানিকের বাহিনীর হাতে অস্ত্র ছিল। আমরা কেউ সাহস করে এগিয়ে যেতে পারিনি। একপর্যায়ে তারা নিশ্চিত হয় যে ছালেক আর বেঁচে নেই, তখন তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়।" পরিবারের কান্না, আইনের প্রতি আকুতি-নিহতের স্ত্রী সুরমি আক্তার বলেন, "আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মানিক ও তার ভাইয়েরা আমাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক।"হত্যাকাণ্ডের পর মামলার অগ্রগতি: ৪৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ-
ঘটনার পরপরই সাতকানিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয় (মামলা নং-০৮, তারিখ: ০৯/০৩/২০২৫)। প্রধান অভিযুক্ত মানিক, বাবুল ও সালাউদ্দিনের পাশাপাশি আরও ৪৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
হত্যা মামলার আসামিদের তালিকা: ১. নজরুল ইসলাম মানিক (প্রধান আসামি) ২. নুরুল ইসলাম বাবুল
৩. সালাউদ্দিন,৪. মোহাম্মদ জসিম,
৫. আব্দুল হালিম,৬. ইকবাল হোসেন,
৭. শাহজাহান কবির,৮. সাইফুল ইসলাম,
৯. কায়সার মাহমুদ,১০. কামাল উদ্দিন,
১১. সেলিম উদ্দিন, ১২. রফিকুল ইসলাম,
১৩. হারুনুর রশিদ, ১৪. মাসুদ করিম,
১৫. রাশেদুল ইসলাম,১৬. আনোয়ার হোসেন, ১৭. শফিকুল ইসলাম
১৮. নাসির উদ্দিন, ১৯. ফারুক আহমদ
২০. আবুল কাশেম,২১. জাবেদ হোসেন
২২. শহীদুল ইসলাম,২৩. মহিউদ্দিন সোহেল,২৪. আব্দুর রহিম
২৫. নূর হোসেন, ২৬. খালেদ মাহমুদ,
২৭. আজিজুল হক, ২৮. জসিম উদ্দিন বাবু,২৯. মোবারক হোসেন
৩০. রিয়াদুল ইসলাম, ৩১. সালমান হোসেন
৩২. রবিউল আলম, ৩৩. আব্দুল মালেক
৩৪. সাহেদুল ইসলাম, ৩৫. তৌহিদুল ইসলাম, ৩৬. ফরহাদ হোসেন,
৩৭. আরিফুল ইসলাম, ৩৮. নাঈম হাসান,
৩৯. রায়হান করিম, ৪০. মফিজুল ইসলাম,
৪১. জহিরুল ইসলাম, ৪২. হাসান মাহমুদ,
৪৩. শামসুল হক, ৪৪. রফিক আহমদ
৪৫. জামাল উদ্দিন, ৪৬. আলমগীর হোসেন, ৪৭. মিজানুর রহমান,
মানিক ও তার ভাইদের রাজনৈতিক পরিচয়: ক্ষমতার অপব্যবহার-
নজরুল ইসলাম মানিক, নুরুল ইসলাম বাবুল ও সালাউদ্দিন স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের দমন করে আসছেন। জামায়াত, বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে নানা রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন, হামলা এবং মামলা দিয়ে হয়রানি করা ছিল তাদের নিয়মিত কৌশল।
স্থানীয়রা জানান, মানিকের নেতৃত্বে সাতকানিয়ায় একাধিক সহিংস ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু প্রশাসন সবসময় নীরব থেকেছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে আগের দুটি হত্যার অভিযোগ থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তিনি বারবার বেঁচে গেছেন।
নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্ক: এলাকাবাসীর ক্ষোভ-
হত্যাকাণ্ডের পর থেকে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক পরিবার এখন মানিক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে ভয় পাচ্ছে। একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, "আমরা যদি কথা বলি, তাহলে আমাদেরও একই পরিণতি হবে। মানিক ও তার ভাইরা যেকোনো মুহূর্তে প্রতিশোধ নিতে পারে।"
প্রশাসনের ভূমিকা: ন্যায়বিচার হবে নাকি রাজনৈতিক চাপ?
সাতকানিয়া থানার ওসি জানিয়েছেন, "অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত গ্রেপ্তার করতে। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না।"
তবে এলাকাবাসীর আশঙ্কা, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে হয়তো মামলার গতি শ্লথ হয়ে যেতে পারে।
নিরপেক্ষ তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি
নিহতের পরিবার, মানবাধিকার সংগঠন ও সাধারণ জনগণ একটাই দাবি তুলেছেন— মানিক ও তার ভাইদের গ্রেপ্তার করতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
এই হত্যাকাণ্ড শুধুমাত্র আবু ছালেকের মৃত্যু নয়; এটি বর্তমান রাজনৈতিক সহিংসতার নগ্ন চিত্র। প্রশাসন যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ না করে, তাহলে ভবিষ্যতে আরও অনেক ছালেক এভাবে প্রাণ হারাবে। এখন দেখার বিষয়, সত্যের পক্ষে প্রশাসন দাঁড়াবে, নাকি রাজনৈতিক চাপে মাথা নত করবে?
সাতকানিয়ায় দুই জামায়াত কর্মীকে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যার নামে- সংবাদটিঃ
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন দুই জামায়াত কর্মী—নেজাম উদ্দিন (৪৫) ও আবু ছালেক (৪৪)। সোমবার (১১ মার্চ) রাত ১০টার দিকে এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের অনুসারীরা তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে ডেকে নেয়। এরপর মসজিদের মাইকে ‘ডাকাত’ বলে ঘোষণা দিয়ে সাধারণ মানুষকে জড়ো করা হয়। একপর্যায়ে উপস্থিত লোকজনের সামনে নেজাম ও ছালেককে বেধড়ক মারধর করা হয় এবং গুলি চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। নিহত নেজাম উদ্দিন আগে থেকেই আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাজনৈতিক মামলার আসামি হয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হন এবং দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। সম্প্রতি দেশে ফিরে সামাজিক কার্যক্রমে জড়িত হন, যা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ক্ষুব্ধ করে। অন্যদিকে, আবু ছালেক 'জুলাই আন্দোলনের' একজন সম্মুখযোদ্ধা ছিলেন এবং বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়ে গ্রাম ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করছিলেন। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা মানিক দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত-বিএনপি কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে আসছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর সম্প্রতি তিনি এলাকায় ফিরে আসেন। নিহতদের পরিবার ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, মানিকের পরিকল্পনাতেই এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। এদিকে, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল ও কয়েকটি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে। সাতকানিয়া থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা কামাল উদ্দিন ও সেক্রেটারি মুহাম্মদ তারেক হোসাইন এক বিবৃতিতে এ হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিত বলে অভিহিত করেছেন। তারা নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকায়- যা ছিলঃ সাতকানিয়ায় গণপিটুনিতে নিহত নেজাম ও সালেক—অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিল" সাতকানিয়ার গণপিটুনিতে নিহত নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ সালেক দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ। ব্যবসায়ীদের অস্ত্র প্রদর্শন, চাঁদাবাজি, ক্ষমতা বিস্তারের নামে ভয়ভীতি দেখানোসহ একাধিক অপরাধে লিপ্ত ছিল তারা।শুধু তাই নয়, ঘটনাস্থলে নিহত নেজাম পুলিশের কাছ থেকে লুট করা একটি পিস্তল দিয়ে গুলি ছুঁড়েছিল, যা পরবর্তীতে উদ্ধার করা হয়। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হিসেবে নিহত নেজাম ও সালেক-গত ৫ আগস্ট চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানা থেকে একটি পিস্তল লুট হয়। পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, সাতকানিয়ার ঘটনাস্থল থেকে যে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে, সেটিই সেই লুট হওয়া অস্ত্র। এর অর্থ, নিহত নেজাম ও সালেক শুধু সাধারণ অপরাধীই নয়, তারা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হিসেবেও পরিচিত ছিল। ঘটনার দিন নেজাম তার লুট করা অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়, যা কয়েকজনকে আহত করে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিয়মিত ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করত এই দুইজন। তারা সাতকানিয়ায় একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পরিচালনা করত এবং স্থানীয় জনগণকে তটস্থ করে রাখত। পুলিশের কাছে থাকা তথ্য অনুসারে, চার থেকে পাঁচ দিন আগেও তারা এক ইউপি সদস্যের স্ত্রীকে প্রকাশ্যে থাপ্পড় মেরেছিল, যা স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল।
চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন-পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, নেজাম ও সালেক প্রায়ই সিএনজিচালিত অটোরিকশা বহর নিয়ে বিভিন্ন বাজার ও ব্যবসায়ী এলাকায় গিয়ে অস্ত্র প্রদর্শন করত এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করত। ঘটনার দিনও তারা সাতটি অটোরিকশা নিয়ে সেখানে গিয়েছিল, যা স্পষ্টভাবে পরিকল্পিত সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ইঙ্গিত দেয়।
স্থানীয়রা জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের ওপর সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। চাঁদার টাকা না দিলে হামলা চালানো হতো এবং এলাকাবাসীকে জিম্মি করে রাখা হতো।গণপিটুনির কারণ—জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ- স্থানীয় জনগণের সহ্যসীমা পার হয়ে গেলে ঘটনার রাতে মসজিদের মাইকে ডাকাত এসেছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়, এবং জনতা জড়ো হয়ে তাদের ধরে ফেলে। গণপিটুনির একপর্যায়ে ঘটনাস্থলেই নেজাম ও সালেক নিহত হয়।
পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন:
"এটা স্রেফ একটি গণপিটুনির ঘটনা নয়, বরং দীর্ঘদিনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনরোষের বিস্ফোরণ। স্থানীয় জনগণ তাদের অপরাধে অতিষ্ঠ ছিল।"
তিনি আরও বলেন:
"আমরা প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনে কাজ করছি। কোনো অবস্থাতেই ভাবার সুযোগ নেই যে প্রশাসন নির্বিকার হয়ে আছে।"রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ভিত্তিহীন-
কিছু মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে যে, নিহতরা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী ছিল, কিন্তু পুলিশের তদন্তে এই অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
জেলা পুলিশ সুপার বলেন:
"আমরা তদন্ত করে দেখেছি, ঘটনাস্থলে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল না। এটি নিছক চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে ঘটে যাওয়া এক প্রতিক্রিয়া।"
এদিকে, জামায়াতে ইসলামীর সাতকানিয়া উপজেলার সেক্রেটারি জায়েদ হোছেন দাবি করেছেন, নিহতরা জামায়াতের কর্মী ছিলেন এবং পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তবে সাতকানিয়া জামায়াতের আমির মাওলানা কামাল উদ্দিন স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, নিহত নেজাম ও সালেক জামায়াতের তালিকাভুক্ত সদস্য নন। সাতকানিয়ার এই ঘটনা কোনো সাধারণ গণপিটুনি নয়, বরং সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জনতার প্রতিরোধ। নিহত নেজাম ও সালেক দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিল, এবং তারা অস্ত্র প্রদর্শন, গুলি চালানো, চাঁদাবাজি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হয়রানির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল।
পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন যে, পুলিশ বিচার বিভাগীয় তদন্ত পরিচালনা করছে এবং প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনে বদ্ধপরিকর। সাতকানিয়ার জনগণ এখন সন্ত্রাসের ছায়া থেকে মুক্তি পাবে বলে প্রশাসন আশাবাদী। সাতকানিয়ায় নিহত নেজাম উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে তার গড়ে তোলা সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে পুরো এলাকাকে জিম্মি করে রেখেছিল। তার নেতৃত্বে সংঘটিত অপকর্মের তালিকায় চাঁদাবাজি, ভূমি দখল, অপহরণসহ নানা অপরাধ রয়েছে। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছিল দুবাই প্রবাসী মহিউদ্দিন, ওসমান ও রিয়াদ, যারা নিয়মিত নেজামের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সহায়তা করত। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এই বাহিনী প্রবাসী আফসারকে অপহরণ, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও জোরপূর্বক তার জায়গা দখল করার চেষ্টা করেছিল। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে, প্রাণের ভয়ে আফসার রাতের আঁধারে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এই ঘটনার পর নেজাম বাহিনীর বিরুদ্ধে ডিআইজি আহাসান হাবিব পলাশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় এবং তার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। এ বিষয়ে দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকায় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে নেজামের নেতৃত্বে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
নেজাম উদ্দিনের অপরাধ জগতের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস ছিল ছনখোলা থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন ও বাণিজ্য। এতে তার নিজের বাহিনীর মধ্যেই মতবিরোধ দেখা দেয়, যা একাধিকবার সংঘর্ষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্থানীয় সূত্র বলছে, নেজামের সন্ত্রাসী বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীকে জিম্মি করে রেখেছিল, নিয়মিত চাঁদা আদায় করত এবং যারা তার অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করত, তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে দমন করত। এই চক্রের অপকর্মের পূর্ণাঙ্গ চিত্র সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে থাকা সত্ত্বেও নেজামের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক এতদিন কীভাবে সক্রিয় ছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ বলছে, নেজাম শুধু স্থানীয়ভাবে নয়, তার বিদেশি সহযোগীদের মাধ্যমে শক্তিশালী একটি চাঁদাবাজ চক্র পরিচালনা করত। তদন্তে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। প্রশাসন এখন এই চক্রের পেছনের শক্তিগুলোর খোঁজে মাঠে নেমেছে, যাতে নেজামের মৃত্যু পরবর্তী সময়ে তার সহযোগীরা আর কোনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত হতে না পারে।
চলবে----
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com