চট্টগ্রাম, ২৪ ফেব্রুয়ারি: ২০২৪ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এলাকায় ছাত্র জনতার বৃহত্তর বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়, যা পরে চট্টগ্রাম শহরের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে তোলপাড় করে দেয়। এই আন্দোলন ছিল শোষণ, বৈষম্য এবং দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে এক ঐতিহাসিক প্রতিবাদ, যা ছাত্র সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে নেমেছিল। তবে, এই আন্দোলনের মাঝেই কিছু অন্ধকার দিকের উন্মোচন ঘটেছে, যেখানে একজন ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে বার বার—জিকু, যিনি চান্দগাঁওয়ের নামী এক ক্যাডার নেতা হিসেবে পরিচিত।
গতকাল, দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, চট্টগ্রামের চান্দগাঁও মহোরা
এলাকার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন জিকু, যিনি স্থানীয়ভাবে “জিকু” নামে পরিচিত, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময় একাধিক গুরুতর অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। এই প্রতিবেদনটির ভিত্তিতে, জানানো হয় যে, জিকু বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন এবং আন্দোলনকারীদের উপর দমন-পীড়ন চালানোর জন্য বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ সরবরাহ করেছিলেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলন ২০২৪ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও এলাকায় শুরু হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আগত ছাত্ররা সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য, বিশেষ করে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন এবং প্রশাসনিক অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে আসে। তারা দাবী করেছিল, প্রশাসনিক ও সামাজিক বৈষম্য নির্মূল করতে হবে এবং সাধারণ মানুষের অধিকার সুরক্ষিত করতে হবে। আন্দোলনটি ছিল শান্তিপূর্ণ, তবে কিছু মুহূর্তে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে। আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল সমাজের শোষিত মানুষের অধিকারের রক্ষা এবং ছাত্রদের শোষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা। কিন্তু এই আন্দোলনের মধ্যে কিছু শক্তিশালী ব্যক্তির অন্তর্ভুক্তি, বিশেষ করে জিকুর মতো ব্যক্তির নাম উঠে আসে, যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইকবাল হোসেন জিকু, যিনি চান্দগাঁও এলাকায় এক সময়ের প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে উগ্রপন্থী কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। এমনকি, জানা যায় যে, তিনি স্থানীয় মহোরার পলাতক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মামুন এবং চান্দগাঁও ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইসরাইলের ক্যাডার বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ করতেন, যার ফলে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধি পায়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তার দেওয়া অস্ত্রের গুলিতে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় ছাত্র জনতার আন্দোলনের অন্যতম নেতা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র হুদয় তরু নিহত হন। এই ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ এবং প্রতিবাদের সৃষ্টি হয়, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, স despite এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার পরও, জিকুকে কোনো ভাবে মামলার আসামি করতে পারলেন না।
প্রতিবেদন অনুসারে, জিকু মামলার দায় এড়ানোর অন্যতম কারণ ছিল তার প্রভাবশালী অবস্থান এবং পুলিশের সাথে তার সম্পর্ক। তখন চান্দগাঁও থানায় দায়িত্বে থাকা পুলিশ বাহিনী, যারা আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিল, তারা জিকুর কাছ থেকে মাসোহারা গ্রহণ করতেন এবং তার নিয়ন্ত্রণাধীন কালুরঘাট ফেরি এবং বালুর মহাল পরিচালনা করতেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই পুলিশ বাহিনী জিকুর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, কারণ তাদের মধ্যে একধরনের সমঝোতা ছিল।
এছাড়া, তখনকার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের অধীনে পুলিশ বাহিনী কাজ করছিল, এবং তার একাধিক সহযোগীও ছিল। এর ফলে, এই পুলিশরা জিকুকে মামলায় আসামি করার পরিবর্তে তাকে সাহায্য করেছিল।
চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এলাকায় আন্দোলনের সময়, জিকু ও তার বাহিনীর কর্মকাণ্ড ছিল অত্যন্ত সহিংস। তার সরবরাহ করা অস্ত্রের মাধ্যমে একাধিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, এবং চান্দগাঁও এলাকায় তাণ্ডব চালানো হয়। তবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এই সহিংসতার তদন্ত করতে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এই ঘটনায়, ছাত্ররা ও স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। হুদয় তরুর হত্যাকাণ্ড এবং অন্যান্য সহিংসতা, যা আন্দোলনের এক পরিণত রূপে দেখা যাচ্ছিল, তা চট্টগ্রামের রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি আরো জটিল করে তোলা। বর্তমানে, জিকু পলাতক অবস্থায় রয়েছে, তবে তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে তার প্রত্যাশা অনুযায়ীই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসী বিশ্বাস করেন, সে গোপনে তার বাহিনীকে সুসংগঠিত করার পরিকল্পনা করছে, এবং তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো যদি সত্যি হয়, তবে ভবিষ্যতে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।
এদিকে, স্থানীয়রা মনে করছেন যে, যদি জিকু ও তার বাহিনীর কর্মীদের আটক করা যায়, তবে জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্র জনতার উপর ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হবে। বিশেষভাবে, হুদয় তরু হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রের মালিক হিসেবে জিকুর সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হতে পারে। জিকুর কর্মকাণ্ড এবং তার বাহিনীর কার্যক্রমের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বিরাট ক্ষোভ রয়েছে। তারা মনে করেন, এই ধরনের সহিংসতা চট্টগ্রামের শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া, আন্দোলনের সময় ছাত্রদের উপর যে অত্যাচার হয়েছে, তাতে সাধারণ জনগণের মধ্যেও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “জিকুর মতো মানুষের হাতে যদি শহরের ভবিষ্যত চলে যায়, তবে আমরা কি আশা করতে পারি? আমাদের সন্তানদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ দিতে হবে, না হলে আমাদের একমাত্র আশা হলো, এই দমন-নির্যাতন বন্ধ করা।” চট্টগ্রামে ছাত্র জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন এবং জিকুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর প্রেক্ষিতে, স্থানীয় জনগণ এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রতি আরো সচেতন এবং একজোট হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। তারা আশা করছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং রাজনৈতিক নেতারা এই পরিস্থিতি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন এবং শোষণ-দমন-বৈষম্য বন্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এদিকে, ছাত্ররা এবং সাধারণ জনগণ এখন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, এবং তারা শোষণের বিরুদ্ধে আরো সোচ্চার। তাদের দাবি, চট্টগ্রামের সব এলাকার শান্তি, নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচারের প্রতি সম্মান প্রদান করতে হবে। চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এলাকার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে। তবে, এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ব্যক্তিরা, যেমন জিকু, এবং তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো নতুন মাত্রা যোগ করেছে এই আন্দোলনের বাস্তবতাকে। এখন, শুধুমাত্র আন্দোলনকারীদের নয়, বরং সমগ্র সমাজের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ধরনের অপরাধী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং ভবিষ্যতে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ সমাজ প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা।
চলবে---
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com