চান্দগাঁও থানার একলার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইকবাল হোসেন জিকু, যিনি গত কয়েক বছরে স্থানীয় জনগণের মধ্যে এক অপ্রতিরোধ্য ভয় এবং অস্থিরতার সৃষ্টি করেছেন, আজও তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এই ব্যক্তি শুধু চান্দগাঁও নয়, বরং কালুরঘাট, কাপ্তাই, এবং মোহরা এলাকাতেও একসময় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছিলেন।
একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি এলাকায় একটি শক্তিশালী ক্যাডার বাহিনী তৈরি করেছেন, যারা তার নির্দেশে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা এবং সহিংসতা চালাচ্ছে। বিশেষ করে, ৫ই আগস্টে তার বাহিনী আবারও কালুরঘাট সেতু, মোহরা এলাকা, কাপ্তাই রাস্তার মাথা ও বহদ্দারহাট এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে, যা এলাকায় সাধারণ মানুষের জীবনে এক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে।
ইকবাল হোসেন জিকু ছিল এক সময়ের আওয়ামী লীগের এক শক্তিশালী নেতার অনুসারী। ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময়, সে প্রকাশ্যভাবে রাজপথে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং অস্ত্রের মহড়া দিয়ে তাদেরকে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। তার বাহিনী ছিল নৃশংস এবং প্রতিটি পদক্ষেপে তারা স্থানীয় জনগণের জীবন দুর্বিসহ করে তোলে। এমনকি কালুরঘাট সেতু সংস্কার কোম্পানির কাজেও তার বাহিনীর চাঁদাবাজির ছড়াছড়ি ছিল, যেখানে তিনি প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা 'গুন্ডা ভাতা' নিতেন।
এছাড়া, তার বাহিনীর সদস্যরা কালুরঘাট সেতু এবং ফেরি এলাকায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতো। তারা সেখানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে অত্যাচার চালাতো, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতো এবং কোথাও কোনো প্রতিবাদ উঠলে তা দমনের জন্য শারীরিক নির্যাতন করতো। জনগণের জন্য তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক অশুভ শক্তি, যাকে কেউ মুখ খুলে কিছু বলতে সাহস পেত না।
অভিযোগ রয়েছে যে, শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধেও শক্তিপ্রয়োগ করেছিল। সে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে ছাত্র জনতার আন্দোলন দমন করার জন্য প্রকাশ্যে অস্ত্র ঠেকিয়ে তাদের হুমকি দিতো। তার বাহিনী ওই সময় বিভিন্ন আন্দোলনকারীদের ভয় দেখিয়ে ও আঘাত করে আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল।
জিকু তার বাহিনীর মাধ্যমে এলাকার মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিল। সে শুধু অস্ত্র এবং ভয়ভীতি দেখানোর মাধ্যমে চাঁদাবাজি করত না, বরং তার বাহিনী বিভিন্ন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত টাকা আদায় করত। জিকুর বাহিনীর সদস্যরা সবসময়েই খোলাখুলি অস্ত্র নিয়ে চলাচল করত, যার ফলে এলাকার জনসাধারণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। তার বাহিনী পুরোপুরি উন্মত্ত হয়ে উঠেছিল, প্রতিটি এলাকায় তাদের নিয়ন্ত্রণ ছিল।
এখন, সরকার বিরোধী আন্দোলনের পরে গা ঢাকা দিলেও, জিকু তার বাহিনী নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় গোপন বৈঠক করছে এবং আবারও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য নানা পরিকল্পনা করছে। ৫ই আগস্টের পরেও সে বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে, যার মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাইছে।
এদিকে, কোতোয়ালি থানার পুলিশ গতকাল দুইজন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে, যারা জিকু বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত বলে জানা গেছে। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, যা কিনা জিকু বাহিনীর অস্ত্র হিসেবে পরিচিত। গ্রেফতার হওয়া সন্ত্রাসীরা নিশ্চিতভাবেই তার বাহিনীর সদস্য, এবং তাদের গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে এলাকাবাসীর ধারণা, জিকুর হাত রয়েছে এসব অস্ত্রের পিছনে। পুলিশের দাবি, উদ্ধারকৃত অস্ত্র একটি পাতানো ফাঁদ হতে পারে, তবে সাধারণ জনগণের কাছে এটি একটি স্পষ্ট সংকেত যে, জিকু ও তার বাহিনীর কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে। এখন, এলাকার জনগণ এবং সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে চাইছে, প্রশাসন যেন শীর্ষ সন্ত্রাসী এই ইকবাল হোসেন জিকুকে গ্রেফতার করে। তাদের ধারণা, যদি পুলিশ জিকুকে আটক করতে পারে, তাহলে শুধু তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের তথ্যই পাওয়া যাবে না, বরং তার বাহিনীর পুরো কর্মকাণ্ড এবং অস্ত্র চক্রের রহস্যও উদঘাটিত হবে।
এক্ষেত্রে পুলিশের কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা এবং তার বাহিনীর কুকর্মগুলো আইনের আওতায় আনা। জিকু যদি এখনও মুক্ত থাকে, তবে সে তার পূর্বের কার্যক্রমকে পুনরায় সংগঠিত করতে পারে এবং জনমনে আরও অশান্তি সৃষ্টি করবে। তাই পুলিশকে এখনই সক্রিয় হতে হবে, যাতে একে না থামানো গেলে এই সন্ত্রাসী আরো বড় আকারে সমাজে অশান্তি তৈরি করতে না পারে। প্রতিটি সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে, জনগণের নিরাপত্তার জন্য এখনই প্রয়োজন দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ। পুলিশ যদি এই অভিযানে সফল হয়, তাহলে চান্দগাঁও অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের ভীতি ও দুর্ভোগের অবসান হতে পারে এবং সমাজে শান্তি ফিরে আসতে পারে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com