আমাদের দেশে কিছু কিছু সাংবাদিক আছেন, যারা সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে কলম চালান। তবে বিশেষ করে যখন পুলিশ কিংবা পুলিশি কার্যক্রমের ভালো দিক তুলে ধরা হয়, তখন তাদের মধ্যে কিছু সাংবাদিকের মধ্যে যেন এক অদ্ভুত ধরনের চুলকানি শুরু হয়। অথচ এইসব সাংবাদিকদের অনেকেই, যাদের কাজের ক্ষেত্রে কোনো দৃঢ়তা বা নিয়ম নেই, তারা পুলিশ থেকে মাসোহারা নেন। পুলিশের সামরিকৃত অর্থের উপর নির্ভরশীল তাদের জীবনযাত্রা, এবং মাসিক মাসোহারা না পেলে তারা কোনোরকমে বেঁচে থাকতে পারতেন না। তাদের পেশাগত জীবন একপ্রকার পুলিশের টাকার উপরই নির্ভরশীল। আর যেহেতু পুলিশি দোষ ছাড়া তাদের জীবিকা চলে না, সেহেতু পুলিশকে সমালোচনা না করলে তাদের কিভাবে জীবন চলবে? এটা এখন একেবারে ওপেন সিক্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে, আমরা যারা পুলিশের ভালো এবং খারাপ কাজ নিয়ে সমানভাবে লেখার চেষ্টা করি, তাদের ক্ষেত্রে যদি কখনো আমরা পুলিশের ভালো কাজের প্রসংশা করি, তখন ওইসব সাংবাদিকদের গায়ে চুলকানি শুরু হয়ে যায়। তাদের প্রশ্ন থাকে, "যদি পুলিশ ভালো কাজ করে, তা প্রকাশ করাতেই সমস্যা কোথায়?" কিন্তু যখন পুলিশ বা তার কাজ নিয়ে সমালোচনা করা হয়, তখন তারা নীরব হয়ে যান। পুলিশ যদি ভালো কাজ করে, তাহলে সেটি তুলে ধরতে বাধা কোথায়? কেন সেগুলো নিয়ে কোনো আলোচনাই চলে না?
বিশ্বাস করুন, পুলিশ সমাজের একটি অপরিহার্য অংশ। পুলিশ ছাড়া আমাদের সমাজ এবং দেশ কখনোই সুস্থভাবে চলতে পারে না। পুলিশও রক্তমাংসের মানুষ, তাদের মাঝে যেমন আইনগত কঠোরতা রয়েছে, তেমনি মানবিক দিকও রয়েছে। তখন প্রশ্ন, শুধু পুলিশের কঠোরতা দেখবো, নাকি তাদের মানবিকতা এবং ভালো কাজগুলোও তুলে ধরব?
আমাদের দেশে সাংবাদিকতা এমন একটি দায়িত্ব, যা শুধু নিজের বিবেক ও মূল্যবোধের উপর নির্ভর করে। একটি সাংবাদিক, যিনি সত্য প্রকাশের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন, তার নিজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তা সুস্পষ্ট থাকা উচিত। যদি নিজের মধ্যে সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি না থাকে, তবে কিভাবে অন্যদের সুন্দরতা বা ভালো কাজ দেখা সম্ভব? তাই, একজন সাংবাদিকের উচিত হবে অন্যের কাজের সমালোচনা না করে, তার ভালো কাজের প্রসংশা করা এবং সঠিক তথ্য তুলে ধরা।
আমাদের দেশে যখন পুলিশের ভালো কাজের প্রসংশা করা হয়, তখন তার কোনো দোষ কোথায়? কেন সেটি প্রকাশ করা যাবে না? সাংবাদিকদের, যাদের লেখায় সমাজের প্রতিচ্ছবি থাকে, তাদের উচিত হবে জনগণের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ভালো কাজের প্রশংসা করতে। পুলিশের খারাপ দিক তুলে ধরাটাও তার দায়িত্ব, তবে পুলিশি ভালো দিকও সবার সামনে নিয়ে আসা উচিত।
আমার ক্ষেত্রে, যদি কেউ আমার লেখা বা মন্তব্যের সমালোচনা করেন, বিশেষ করে যদি তা মানহানির উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে আমি আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবো। আমি বিশ্বাস করি, আমি যা লিখি, তা আমার নিজের মতামত এবং আমি তা প্রকাশের পূর্ণ অধিকার রাখি। যদি কেউ আমার লেখা পছন্দ না করে, কিংবা আমার লেখার সমালোচনা করে, তবে তারা খোলামেলা ভাবে সেটা ব্যক্ত করতে পারেন, তবে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের মাধ্যমে অন্যদের নীচু করা উচিত নয়।
যারা আমার লেখা পছন্দ না করেন, তারা কখনও আমার ফেসবুক বা পত্রিকা থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন, কারণ আমার লেখার প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হলে, আমি তাদের কোনো স্থান দিই না। আমি আমার মতামত প্রকাশ করতে পছন্দ করি, এবং যাদের ভালো লাগবে, তারা সেটা সহমত হয়ে পড়বেন। কিন্তু, যারা খারাপ মন্তব্য করবেন, তারা সঠিকভাবে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করতে পারেন, তবে কোনওভাবেই কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা ঠিক নয়। শেষে, আমি শুধু বলতে চাই, এ ধরনের লেখা লিখতে হয় বলে আমি দুঃখিত। তবে, এটি আমার ব্যক্তিগত মতামত, এবং আমি বিশ্বাস করি, সাংবাদিকতার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো সত্য প্রকাশ এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা। পুলিশের ভালো এবং খারাপ দিক, উভয় দিক প্রকাশ করাটাই একটি সাংবাদিকের দায়িত্ব। তাই, সকল সাংবাদিকদের উচিত হবে, নিজের লেখার বিষয়বস্তু সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়া এবং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তথ্য তুলে ধরা।পুলিশ, দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের দায়িত্ব এবং কাজের মধ্য দিয়ে সমাজে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, অপরাধ দমন, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এবং সাধারণ মানুষের প্রতি সহানুভূতির পরিচয় দেওয়া সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করা হয়। তারপরেও, পুলিশকে স্বীকৃতি দিতে আমাদের মাঝে কিছু অস্পষ্টতা এবং সংকোচ বিদ্যমান।
প্রথমত, পুলিশ আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের নিরাপত্তা এবং শান্তির জন্য কাজ করে। তারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ, যেমন হত্যাকাণ্ড, চুরি, ধর্ষণ, মাদক বিক্রি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রভৃতি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পুলিশ সদস্যরা প্রতিনিয়ত নিজেদের জীবন বিপন্ন করে মানুষকে সুরক্ষা প্রদান করেন এবং তাদের জীবন রক্ষা করেন। অপরাধীদের গ্রেফতার ও শাস্তির আওতায় এনে সমাজের শান্তি প্রতিষ্ঠায় পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অপরাধী চক্র এবং বিভিন্ন ধরনের আইনবিরোধী কার্যকলাপকে নির্মূল করতে পুলিশ সচেষ্ট থাকে।
দ্বিতীয়ত, পুলিশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকদের প্রতিরোধমূলক সেবা প্রদান। তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে, ভোগান্তি কমাতে এবং যেকোনো ধরনের আতঙ্ক ও অরাজকতা রোধে কাজ করে থাকে। নিয়মিত পেট্রোলিং এবং জনসংযোগে পুলিশের ভূমিকা প্রশংসনীয়। তাদের উপস্থিতি সমাজে নিরাপত্তা ও আস্থা সৃষ্টি করে এবং নাগরিকদের আশ্বস্ত করে। তাছাড়া, দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পুলিশ তৎপরতার সঙ্গে উদ্ধারকাজে অংশ নেয়।
এছাড়া, পুলিশ আইনগত সহায়তার মাধ্যমে মামলা তদন্ত এবং জড়িত অপরাধীদের দণ্ডনীয়তার জন্য কাজ করে থাকে। তারা নির্দিষ্ট মামলা অনুসন্ধান করে যথাযথ তদন্ত কার্যক্রম চালায় এবং অভিযুক্তদের আদালতের কাছে উপস্থাপন করে। তাদের সততা এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে বিচারপ্রক্রিয়া কার্যকর হয়।
তবে, পুলিশ যদি নিজেদের কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করে, তবে সেটি সমাজে ভালো কাজ হিসেবে বিবেচিত হতে হবে। আমরা যদি পুলিশের ভালো কাজের স্বীকৃতি না দিই, তবে তাদের মানসিকভাবে হতাশ ও অবহেলা অনুভব হতে পারে, যা তাদের কর্মস্পৃহা কমাতে পারে। তাদেরকে সম্মান এবং প্রশংসা দেওয়ার মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানো সম্ভব, যা পুলিশের পরবর্তী কার্যক্রমে আরও ভালো ফল নিয়ে আসবে। দুর্ভাগ্যবশত, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের ওপর সমালোচনা বেশি হয়, এবং ভালো কাজের গুরুত্ব কম বোঝানো হয়।
অবশ্যই পুলিশের কর্মকাণ্ডকে মূল্যায়ন করা উচিত, কারণ তারা সাধারণ মানুষের জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করে, দেশ ও সমাজের উন্নতির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে। তবে, তাদের প্রতি সমালোচনার পাশাপাশি তাদের ভালো কাজের প্রশংসাও জরুরি। তাতে পুলিশ তাদের দায়িত্ব আরো আন্তরিকভাবে পালন করতে উৎসাহিত হবে এবং সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে।
এবং সবশেষে, পুলিশ সদস্যরা, যাদের মধ্যে রয়েছে দেশপ্রেম এবং দায়িত্বশীলতা, তাদের কাজের মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ গঠন সম্ভব। সেই জন্য আমাদের উচিত, পুলিশের ভালো কাজকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাদের সঠিকভাবে সমর্থন করা। পুলিশের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের কাজের প্রতি প্রশংসা প্রদর্শন করলেই একটি শান্তিপূর্ণ এবং উন্নত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com