ঢাকা একুশে বইমেলার কফির আড্ডায় এক ঠান্ডা সন্ধ্যায় আবসার ভাইয়ের চোখে এক অদ্ভুত রকমের চাহনি। হাতে ছিল এক কাপ গরম কফি, আর তার দিকে তাকিয়ে ছিল সবাই। আড্ডার শব্দে কেমন যেন ডুবে গিয়ে, কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলেন তিনি। তারপর হঠাৎ নিজের অনুভূতির কথা বলতে শুরু করলেন। মনের ভেতরের দুঃখ, হতাশা, আর ভালোবাসার কথা একে একে খুলে বললেন। তাঁর কণ্ঠে ছিল এক ধরনের সুর, যেন গল্পের মতো শুনতে ইচ্ছা হয়। “জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছি, কিন্তু মনের মধ্যে একটা প্রেমময় অনুভূতি ছিল, যা কখনো হারাতে দিইনি। সে প্রেম কখনো পূর্ণতা পায়নি, কিন্তু তার গুণান্বিত শক্তি আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।” কথাগুলো যেন ঝড়ের মতো গড়িয়ে পড়ছিল, আর তাঁর মুখে এক ধরনের শান্তির আবির, যেন সেই হারানো প্রেম আজও তাঁর মাঝে জীবিত। বইমেলার এই হইচইয়ের মধ্যে, আবসার ভাই এক অন্য দুনিয়ায় চলে গিয়েছিলেন, যেখানে তাঁর মনের গভীরে জমে থাকা প্রেমময় কথাগুলো বয়ে যাচ্ছিল সময়ের স্রোতে।
প্রেম, আকাঙ্ক্ষা, আর যুবকের মন—এই তিনটি উপাদান যদি একে অপরের মধ্যে মিশে যায়, তবে একটি অদ্ভুত রহস্যের জন্ম হয়। সেই রহস্য, যা সময়ের গণ্ডি ছুঁয়ে চলে। একবার প্রেমের পিপাসা বুকে জাগলে, মন কখনও শান্ত থাকে না। তার বুকের ভিতর যে তরুণ চেতনাটা বহমান, সে ইচ্ছার পাহাড় যেন ভেঙে পড়ে চিরকালীন আবেগের মধ্যে। আর আমাদের আবসার ভাই, যিনি একসময়ের উজ্জ্বল তরুণ ছিলেন, তিনি যেন সেই একই তরুণত্বের প্রতিমূর্তি, যার মাঝে প্রেমের বাতাস যখন বইতে শুরু করে, তখন ভেতরে ভেতরে একটি আলাদা খুশির ঝরনা খেলে যায়।
৯ ফেব্রুয়ারির এক মর্মস্পর্শী মুহূর্তে, একুশে বইমেলায়, আবসার ভাই যখন নিজের হৃৎস্পন্দনগুলো প্রকাশ করলেন, তখন আমার মনেও এক অদ্ভুত অনুভূতি জেগে উঠেছিল। তিনি বললেন, “হে ঈশ্বর, আমাকে আবার তরুণ বানিয়ে দাও। সেই জীবনের মাঝে ফিরে যেতে চাই, যেখানে মনের মুক্তি ছিল, শারীরিক আনন্দ ছিল, আর প্রেম ছিল সর্বোচ্চ শিখরে।”
এই কথাগুলি আমার মনে গভীর এক শূন্যতা সৃষ্টি করেছিল। মনের অজানা গহীনে এক অনুভূতি দোলা দিয়ে গেল, যেন সময়কে যদি আমরা ফিরিয়ে আনতে পারতাম! কী অসীম প্রেমের আক্ষেপ তার হৃদয়ে বাস করছে, কে জানে! কিন্তু বাস্তবতার কাঁটায় আঁটা তার বয়স, যেন শর্তাধীনে ঘুরে দাঁড়িয়ে। মন যদি শীর্ষে উঠতে চায়, দেহ কেন তাকে বাধা দেয়? তাঁর চোখে, তার মননের মধ্যে এক অনাবিল প্রেম ভেসে চলেছে, এক নিঃসঙ্গ সঙ্গীর অনুসন্ধান, কিন্তু শরীরের বর্তমান অবস্থান তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু তার এই ক্ষীণ আশা, এই তরুণ মন, একে অপরের সাথে একভাবে মিশে যায়—যেভাবে কেউ যেন অপেক্ষা করে যুগযুগান্তরের জন্য। এবং তার এই উপলব্ধি যে, ঢাকা শহরে একে একে আগমন ঘটে তরুণীদের, এই বিশ্বাস তাকে আরও মুগ্ধ করে। নারীর সৌন্দর্যে যেন এক আশ্চর্য চুম্বকত্ব—প্রত্যেক পা, প্রত্যেক হাসি, প্রত্যেক অঙ্গভঙ্গি যেন প্রেমের এক নতুন কবিতা হয়ে তার মনের মধ্যে প্রবাহিত হয়। আবসার ভাই যখন তাঁর কথা বলতে বলতে এক গভীর দুঃখের মাঝে হারিয়ে গেলেন, তখন আমি নিরব হয়ে শুনছিলাম। মনে হলো, কেবল কথাই তো নয়, তিনি যেন সত্যিই হারিয়ে ফেলেছেন তার নিজেকে, সেই হারানো যুবককে, সেই আগের অমিত সম্ভাবনার মানুষটিকে। তবে তার আত্মবিশ্বাস, তার উজ্জ্বলতাও কিন্তু ছিল—একটি অদ্ভুত শক্তি, যা এখনও তার হৃদয়ের গভীরে পাল্পিত। তার ইচ্ছা ছিল, যদি একটি সুযোগ পেতেন, তবে সে ফিরিয়ে নিতে চাইতেন সেই হারানো তরুণদিনের হাসি, সেই অনন্ত যৌবনের আনন্দ। কিন্তু বাস্তবতা তো কঠোর। সময় ফিরে যায় না, বয়স যে একটা অমোঘ সত্তা, তা চিরকালীন সত্য।
আমি হাসতে হাসতে তাকে বললাম, “তোমার সেই হারানো যুবনকে ফিরিয়ে দিতে পারব না, তবে তোমার জন্য একটি সুন্দরী বউ খুঁজে দেব, যাকে তুমি সারাজীবন সঙ্গী হিসেবে চাও।" যদিও তাঁর কথা ছিল তেমন, তবুও আমি জানতাম, এই কথাগুলির মাঝে শুধু প্রেমের একটি সহজ অনুভূতি ছিল, যেখানে মনের গভীরে এক চিরন্তন ভালোবাসার যন্ত্রণাও ছিল।
এবং এই সময়, যখন আবসার ভাই তার মনের কথা বলছিলেন, আমি বুঝতে পারলাম—তরুণ মন কখনও বয়স্ক হতে পারে না। তার হৃদয়ের প্রতিটি ইচ্ছা, প্রতিটি আকাঙ্ক্ষা, সে কখনও এক মুহূর্তে হারাতে চায় না। তরুণদের মতো প্রেমের অনুভূতি চিরকালিক—যতই সময় চলে যাক, তার গতি কখনো থামে না।
এবং সেই মধুর হৃদয়ের গহীনে, এক তরুণের কল্পনাও অমলিন থাকে, সুরভিত হয়ে থাকে, তার ভালবাসার পিপাসা কখনও শেষ হয় না। সে চায়, সে অনুভব করতে চায়, সে হারাতে চায় না তার অমোঘ প্রেমের শক্তি। তাছাড়া, আমাদের আবসার ভাই যে প্রেমের জন্য মগ্ন, তার হৃদয়ে সেই একটি পুরানো অনুভূতির সঙ্গী—তার নিজস্ব তাজা, তরুণ অনুভূতিগুলির কাছে ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা।
আজও, ঢাকা শহরের রাস্তায়, সেই তরুণ মন খুঁজে বেড়ায়, এবং যদি কখনো আবসার ভাই সেই চাওয়া পূর্ণ করতে পারেন, তবে হয়তো তাকে আর কখনও "বয়স" শব্দটি মনে পড়বে না।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com