একটি কঠিন সত্য হলো—আজকের দিনে প্রকৃত সাংবাদিকদের হাতে আর সংবাদপত্র নেই। এখন সংবাদপত্রের মালিক এমন মানুষ, যারা নিজেরা সাংবাদিক নন, কিন্তু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মতো সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের স্বার্থরক্ষার হাতিয়ার হয়ে গেছে অনেক গণমাধ্যম, যেখানে সত্য বলা কঠিন, নিরপেক্ষতা বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব। পেশাদার সাংবাদিকরা মালিকদের ইশারায় পরিচালিত হয়ে একধরনের বন্দিদশায় সাংবাদিকতা করছেন। তবে এই অন্ধকারের মাঝেও কিছু ব্যতিক্রম আছে, কিছু আলোর দৃষ্টান্ত আছে। কবির সিদ্দিকীর নেতৃত্বে দৈনিক সাঙ্গু সেই ব্যতিক্রমী উদাহরণ, যেখানে প্রকৃত সাংবাদিকরাই সাংবাদিকতা করেন, সত্যের পক্ষে দাঁড়ান, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। সময়ের স্রোতে অনেক পত্রিকা এসেছে, অনেকেই হারিয়ে গেছে, কিন্তু যে ক’টি পত্রিকা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে আপোষহীন থেকে টিকে আছে, দৈনিক সাঙ্গু তাদের মধ্যে অন্যতম। আজ এই পথচলার ২৪তম বছর পূর্ণ করছে দৈনিক সাঙ্গু—একটি পত্রিকা, যা শুধু সংবাদ পরিবেশন করেনি, বরং চট্টগ্রাম ও দেশের জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছে।বিগত ১৯৯৯ সালে বান্দরবান থেকে নিবন্ধন নেওয়া এই পত্রিকাটি শুরু থেকেই চট্টগ্রামের মূলস্রোতধারার গণমাধ্যমে পরিণত হয়েছে। পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক কবির সিদ্দিকী, যিনি শুধু একজন সাংবাদিক নন, বরং একজন সংগ্রামী কলমযোদ্ধা। তার নেতৃত্বে একঝাঁক মেধাবী, নির্ভীক সাংবাদিক দৈনিক সাঙ্গুকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। পত্রিকাটি যখন পথচলা শুরু করে, তখন গণমাধ্যমের জগতে এত সুযোগ-সুবিধা ছিল না। কাগজের মূল্যবৃদ্ধি, বিজ্ঞাপনের অভাব, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক চাপের মতো বাধাগুলো মোকাবিলা করেই দৈনিক সাঙ্গু তার স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেছে। দেশের প্রভাবশালী ও বিত্তশালী মহলের অপকর্ম, দুর্নীতি, রাজনৈতিক অনিয়ম এবং সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে এই পত্রিকাটি কখনোই আপোষ করেনি। একটি সংবাদপত্রের শক্তি তার বস্তুনিষ্ঠতা, নির্ভীকতা ও সাহসিকতায়। দৈনিক সাঙ্গু ঠিক সেই জায়গাটিতেই দাঁড়িয়ে আছে। বিভিন্ন সময় চট্টগ্রামের উন্নয়ন, জনদুর্ভোগ, সামাজিক অবিচার ও রাষ্ট্রীয় অনিয়ম নিয়ে সাঙ্গুর প্রতিবেদনগুলো ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, অপরাধচক্র, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে এই পত্রিকার রিপোর্টগুলো প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
বিশেষ করে চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো যেমন কালুরঘাট সেতু, জলাবদ্ধতা, যানজট, পাহাড়ধস, ভূমিদস্যুতা, বন উজাড়, পরিবেশদূষণ, চট্টগ্রাম বন্দর ও কর্ণফুলী নদীর সংকট—এসব বিষয়ে দৈনিক সাঙ্গু সবসময় শক্ত অবস্থানে থেকেছে। এছাড়া সামাজিক ও মানবিক বিষয়ে পত্রিকাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। শিশু নির্যাতন, নারী অধিকার, নিপীড়িতদের পক্ষে দাঁড়ানো, গরিব-দুঃখীদের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠা—এ সবই দৈনিক সাঙ্গুর অপরিহার্য দিক।
বাংলাদেশের সংবাদপত্রশিল্প বর্তমানে কঠিন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে প্রযুক্তির বিকাশ, অন্যদিকে সংবাদপত্রের মালিকানা কর্পোরেটদের হাতে চলে যাওয়া, সরকার ও ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর প্রভাব—এসব কারণে স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী পত্রিকাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অথবা তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলছে। কিন্তু এই প্রতিকূলতার মধ্যেও দৈনিক সাঙ্গু তার নীতি থেকে বিচ্যুত হয়নি। এটি কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষার হাতিয়ার হয়নি, বরং সবসময় গণমানুষের পত্রিকা হিসেবে কাজ করেছে। আজ যখন সাংবাদিকতা নানা সংকটে নিমজ্জিত, তখন কবির সিদ্দিকীর মতো আপোষহীন সাংবাদিকদের হাত ধরে দৈনিক সাঙ্গুর মতো পত্রিকাগুলো টিকে থাকাটাই সবচেয়ে বড় অর্জন। আজকের দিনে যখন অনেক সংবাদপত্র শুধু টাকার লোভে নীতিহীনতার পথে হাঁটছে, তখন সাঙ্গু এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। সাঙ্গু নদীর মতোই প্রবাহমান এই পত্রিকাটি সময়ের কঠিন ঢেউ মোকাবিলা করেও টিকে আছে। আজকের বাস্তবতায় যখন সংবাদপত্রের মালিকানা ধনীদের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে, তখন কবির সিদ্দিকীর মতো সৎ ও আপোষহীন সাংবাদিকের হাতে পত্রিকার নেতৃত্ব থাকা বিরল দৃশ্য। তার এই অবিচল নেতৃত্বের কারণেই দৈনিক সাঙ্গু ২৪ বছর পার করে আজও পাঠকের আস্থার জায়গায় রয়েছে। একজন সাংবাদিক হিসেবে নয়, বরং একজন সমাজ সংগঠক ও উন্নয়নকর্মী হিসেবেও আমি মনে করি, দৈনিক সাঙ্গুর এই দীর্ঘ পথচলা আমাদের গণতন্ত্র, মুক্ত সাংবাদিকতা ও সমাজ উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অর্জন। সময় যতই প্রতিকূল হোক, দৈনিক সাঙ্গুর কলম যেন সবসময় সত্যের পক্ষে সচল থাকে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।পরিশেষে-
চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম, দৈনিক ভোরের আওয়াজ, ও The Daily Banner-এর পক্ষ থেকে দৈনিক সাঙ্গুর দুই যুগ পূর্তিতে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে আপোষহীন এই পত্রিকার অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। সাহসী সাংবাদিকতার প্রতীক সাঙ্গুর দীর্ঘায়ু কামনা করি।
দৈনিক সাঙ্গু চট্টগ্রামের গণমানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে কাজ করেছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, উন্নয়ন ও মানবাধিকার নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করেছে। সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেও পত্রিকাটি তার নীতি ও আদর্শ ধরে রেখেছে। আগামীর দিনগুলোতেও দৈনিক সাঙ্গু সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিকতার আলো ছড়িয়ে যাক। দৈনিক সাঙ্গুর উত্তরোত্তর সাফল্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি!
লেখকঃ যুগ্ম সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান দৈনিক ভোরের আওয়াজ ও the Daily banner এবং মহাসচিব - চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com