চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানা এলাকায় জমি দখল, চাঁদাবাজি, হুমকি এবং হামলার অভিযোগ উঠেছে একটি প্রভাবশালী সন্ত্রাসী চক্রের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারী মো. নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তার বৈধ মালিকানাধীন জমিতে কাজ করার সময় অভিযুক্তরা জোরপূর্বক প্রবেশ করে চাঁদা দাবি করেছে এবং কাজ বন্ধ করতে হুমকি দিয়েছে।
মো. নুরুল ইসলাম তার জমিতে কাজ করার সময় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন বলে অভিযোগ করেছেন। তার জমির বাউন্ডারি নির্মাণকাজ চলাকালীন মো. শাহেদ ইকবাল বাবু (৫২)-এর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ঘটনাস্থলে গিয়ে চাঁদা দাবি করে। সন্ত্রাসীদের তালিকায় আরও যারা রয়েছেন তারা হলেন: ১. মো. জোবায়ের (৩৬), পিতা: নুরুল ইসলাম, ২. মো. বাদল (৫৫), পিতা: মরহুম নজির আহম্মদ, ৩. মো. ফরিদ (৬০), পিতা: মরহুম মনু মিয়া, ৪. মো. ইমন (২৮), পিতা: শামসুল আলম। নুরুল ইসলাম জানান, ২২ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে বালুচড়া এলাকায় তার ক্রয়কৃত জমিতে বাউন্ডারি নির্মাণের সময় সন্ত্রাসীরা মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে এবং কাজ বন্ধ করার হুমকি দেয়। সন্ত্রাসীরা সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে এবং তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণের চেষ্টা করে। নুরুল ইসলাম আরও জানান, এই ঘটনার পর তিনি পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। এর আগে ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর তিনি বায়েজিদ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং: ৮৫৮) করেছিলেন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় অভিযুক্তরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. জোবায়ের অভিযোগকে ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা বলে দাবি করেন। দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকার ব্যুরো প্রধানের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “নুরুল ইসলাম আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নই। নুরুল ইসলাম অহেতুক আমাকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে এসব অভিযোগ তুলেছেন।”
জোবায়ের আরও বলেন, “আমি কখনো সন্ত্রাসীদের নিয়ে ওই জমিতে যাইনি এবং সাইনবোর্ড সরানোর অভিযোগও ভিত্তিহীন। সাইনবোর্ড সরিয়েছে জমির মালিক দাবীদাররা, আমি নয়। প্রকৃতপক্ষে, ওই জমির মালিক আমি নই। তবে জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। পুলিশ কমিশনার উভয়পক্ষের কাগজপত্র যাচাই করে যে সিদ্ধান্ত দেবেন, আমি তা মেনে নেব।” জোবায়ের আরও দাবি করেন, “নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভূমি দখলসহ অন্যান্য অভিযোগ রয়েছে। তিনি আগে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অন্যের সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করেছেন। জমি দখলের জন্য রাতের আঁধারে বাউন্ডারি নির্মাণ করার ঘটনা সন্দেহজনক।”
বায়েজিদ থানার ওসি মোহাম্মদ আরিফ জানিয়েছেন, “অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। উভয়পক্ষের জমির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।” চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, “অপরাধী যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। আমরা সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির এই বিষয়ে সরাসরি তদারকি করছেন।” তিনি আরও বলেন, “চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সহ্য করা হবে না। জমি নিয়ে এই বিরোধের প্রকৃত সত্য উদঘাটনের জন্য আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বায়েজিদ এলাকায় একটি প্রভাবশালী চক্র দীর্ঘদিন ধরে জমি দখল ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। তারা রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে অপরাধ করে যাচ্ছে। তবে নুরুল ইসলাম ও তার মতো ভুক্তভোগীরা এগিয়ে এসে এসব ঘটনার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলায় সন্ত্রাসীদের কার্যকলাপে ভাটা পড়তে শুরু করেছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “জমি নিয়ে বিরোধের নামে সন্ত্রাসীরা এলাকায় ভীতি ছড়াচ্ছে। আমরা চাই, প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এবং অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করবে।” নুরুল ইসলাম বলেন, “এই জমি আমার মৌরশি ও খরিদসূত্রে মালিকানাধীন। আমি আমার বৈধ সম্পত্তিতে কাজ করবো, সেটি আমার অধিকার। কিন্তু জোবায়ের ও তার সহযোগীরা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে জমি দখলের চেষ্টা করছে।” তিনি আরও জানান, “আমার কাছে জমির সব বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। এগুলো প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি। পুলিশ সঠিক তদন্ত করলে সত্য প্রমাণিত হবে এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হবে।”
নুরুল ইসলাম স্থানীয়দের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আমি চাই শান্তিপূর্ণভাবে এই বিরোধের সমাধান হোক। প্রশাসন যাতে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।”
বায়েজিদ থানায় জমি নিয়ে বিরোধ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। পুলিশ কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এখন প্রশাসনের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে এই জমি বিরোধের সুষ্ঠু সমাধান হবে বলে আশা করছেন ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com