ক্ষমতার মোহে হারানো পথ- হাসান মাহমুদ, এক রাজকুমার, লোভের জালে আঁকা তার দ্বার। সত্যের মুখে ছুঁড়েছে ছায়া, ক্ষমতার মোহে হারিয়েছে মায়া।
ব্যাংকের খাতায় লেখা যে নাম, চাটুকার রাজ্যে উঠেছে দাম। জনতার শপথ ভেঙেছে বারবার, সুবিধার স্রোতে ভেসেছে অপার। বিদেশে জমেছে সোনার প্রাসাদ, দেশে সে রেখে গেছে বিষাদ। নিরীহ কণ্ঠ রুদ্ধ আজও, ন্যায়ের আশায় কাঁদে যে রাতও। সত্যের সূর্য উঠবে একদিন, অবৈধ মসনদ হবে ম্লান তখন। দেখবে মানুষ, ফিরবে ন্যায়,লোভের অগ্নি নিভে যাবে হায়!
হাসান মাহমুদ হলেন দুর্নীতি, চাটুকারিতা ও লুটপাটের প্রতিচ্ছবি
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে কিছু নাম চিরকাল কলঙ্কিত হয়ে থাকবে, আর তাদের একজন হলেন হাসান মাহমুদ। যিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত সৈনিক হিসেবে পরিচিত করলেও, প্রকৃতপক্ষে ছিলেন দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষক, তোষামোদকারী এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের এক নগ্ন প্রতিচিত্র।
তার বিরুদ্ধে রয়েছে অর্থ আত্মসাৎ, ব্যাংক লুটপাট, বিদেশে সম্পদ পাচারসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ। আদালতের নির্দেশে ৭৭টি ব্যাংক হিসাব জব্দ হওয়া তার সীমাহীন দুর্নীতির প্রমাণ বহন করে। তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনও জড়িত ছিল অবৈধ সম্পদ অর্জনে। সরকারি প্রকল্পের অর্থ লুটপাট করে তিনি বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন, অথচ জনগণের প্রতি তার কোনো দায়বদ্ধতা ছিল না। রাজনৈতিক চাটুকারিতার মাধ্যমে তিনি ক্ষমতার শীর্ষে উঠেছিলেন। শেখ হাসিনার আশীর্বাদ পেতে প্রতিনিয়ত বিরোধী দল ও সমালোচকদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ হোক কিংবা সাংবাদিক নির্যাতনের মামলা—হাসান মাহমুদ সবসময়ই ছিলেন ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কুশীলব। আজ যখন তার কুকীর্তির পর্দা উন্মোচিত হচ্ছে, তখন জনগণ জানতে চায়—কবে হবে তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার? দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তোলা এই ব্যক্তি কি আদৌ আইন-শৃঙ্খলার আওতায় আসবে, নাকি প্রভাবশালী রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে যাবে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে?
বাংলাদেশের রাজনীতিকে কলুষিত করা, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করা এবং রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটপাটের জন্য হাসান মাহমুদের মতো প্রতারকদের শাস্তি হওয়া উচিত। তার সমস্ত অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরানো হোক, আর তাকে পরিণত করা হোক দুর্নীতিবাজদের জন্য এক ভয়ংকর উদাহরণ। কারণ, যে রাজনীতি জনগণের সেবা না করে লুটপাটের প্রতিযোগিতায় নামে, সেই রাজনীতি কেবল ধ্বংসই ডেকে আনে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছু ব্যক্তির নাম ইতিহাসে চিরকাল কলঙ্কিত হয়ে থাকবে। তাদের একজন হাসান মাহমুদ, যিনি ক্ষমতার বলয়ের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতা, দুর্নীতি ও লুটপাটের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসা এই ব্যক্তি নিজেকে দলের ‘বিশ্বস্ত সৈনিক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, তবে মূলত তিনি ছিলেন এক দুর্নীতিবাজ চাটুকার, যার প্রধান কাজ ছিল সত্যকে বিকৃত করে দলীয় প্রভুদের খুশি করা। তার বিরুদ্ধে ৭৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের মতো ঘটনা প্রমাণ করে যে, তিনি কীভাবে রাষ্ট্রের সম্পদ লুটপাট করেছেন এবং বিদেশে পাচার করেছেন।
রাজনৈতিক চাটুকারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার হাসান মাহমুদ আওয়ামী লীগের একজন উচ্চ পর্যায়ের নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তবে তার পরিচয়ের মূল ভিত্তি ছিল তোষামোদ। শেখ হাসিনাকে খুশি রাখার জন্য তিনি প্রতিনিয়ত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অবিরাম মিথ্যাচার করতেন। তার বক্তৃতা ছিল ভিত্তিহীন, বিদ্বেষপূর্ণ এবং প্রোপাগান্ডায় ভরা। শেখ হাসিনা ও তার সরকারের প্রতিটি ভুলকে আড়াল করতে হাসান মাহমুদ ছিলেন অন্যতম হাতিয়ার।
তার কাজ ছিল, প্রতিদিন টেলিভিশনের পর্দায় ও সংবাদমাধ্যমে বিরোধী দল ও সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা। বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, এবং অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে তিনি ক্রমাগত অশালীন মন্তব্য করতেন, যা রাজনীতিকে আরও কলুষিত করেছিল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তার নিজের রাজনৈতিক জীবন দুর্নীতি ও অনিয়মে ভরা। অর্থ পাচার ও আর্থিক অনিয়ম সাম্প্রতিক সময়ে আদালত হাসান মাহমুদের ৭৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে, যা তার বিশাল দুর্নীতির প্রমাণ দেয়। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই অ্যাকাউন্ট জব্দ করলেও তাতে কী? কারণ দুর্নীতিবাজরা সাধারণত আগেভাগেই তাদের সম্পদ দেশের বাইরে পাচার করে ফেলে। জানা গেছে, হাসান মাহমুদও তেমনটাই করেছেন। বিদেশে তার বিপুল সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে, যা তিনি রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে অনৈতিকভাবে অর্জন করেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি সরকারি প্রকল্প থেকে শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। মেগা প্রকল্পের নামে তিনি এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা কৌশলে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। সরকারি কেনাকাটা ও উন্নয়ন প্রকল্পে তার পরিবার এবং আত্মীয়দের প্রতিষ্ঠান জড়িত ছিল, যেখানে বড় অঙ্কের ঘুষ ও কমিশন লেনদেন হয়েছে।
অবৈধ সম্পত্তি ও আত্মীয়স্বজনের সংশ্লিষ্টতা শুধু ব্যাংক হিসাবেই নয়, হাসান মাহমুদের অবৈধ সম্পত্তি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে। ঢাকার অভিজাত এলাকায় একাধিক বাড়ি, প্লট, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, এবং দেশের বাইরে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তিনি। তার আত্মীয়স্বজনের নামে ভুয়া কোম্পানি খোলা হয়েছে, যার মাধ্যমে সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। তার ভাই ও অন্যান্য আত্মীয়দের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তারা ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি, ক্যাসিনো ব্যবসা, এবং হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই পুরো চক্রটি ক্ষমতার ছত্রচ্ছায়ায় থেকে লুটপাট চালিয়েছে, যা আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে কলুষিত করেছে। আওয়ামী লীগের জন্য অভিশাপ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। কিন্তু হাসান মাহমুদের মতো দুর্নীতিবাজদের কারণে এই দলটি আজ জনগণের আস্থাহীনতায় ভুগছে। একসময় যে দল মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল, সেই দল এখন জনগণের চোখে দুর্নীতির প্রতীক হয়ে উঠেছে। হাসান মাহমুদের মতো নেতা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তিকে ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে দলকে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তৈরি করেছিলেন, তা এখন জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। হাসান মাহমুদ এবং তার মতো ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। তারা রাজনৈতিক লুটেরা ও সুযোগসন্ধানী, যারা নিজেদের স্বার্থে দলকে ব্যবহার করেছে। শাস্তি ও প্রতিকার এখন সময় এসেছে, হাসান মাহমুদ এবং তার সহযোগীদের বিচারের আওতায় আনার। শুধুমাত্র ব্যাংক হিসাব জব্দ করলেই হবে না; তাদের সম্পূর্ণ সম্পত্তি রাষ্ট্রের অধিগ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি, তার এবং তার আত্মীয়দের নামে থাকা সব অবৈধ সম্পত্তির তালিকা তৈরি করে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
বাংলাদেশের আইনের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে রাজনৈতিক দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। শুধুমাত্র বিরোধী দলের নেতাদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে নয়, বরং সরকারদলীয় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে প্রকৃত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। হাসান মাহমুদের উত্থান এবং দুর্নীতির মাধ্যমে তার সাম্রাজ্য গড়ে তোলার ইতিহাস আমাদের জন্য শিক্ষা হওয়া উচিত। রাজনৈতিক চাটুকারিতার মাধ্যমে ক্ষমতার স্বাদ পেলে কীভাবে একজন ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করতে পারে, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ তিনি।
ড. হাছান মাহমুদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য অভিযোগসমূহ নিম্নরূপ: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলা: ২০১৭ সালের ১৮ জুন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলার অভিযোগে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ড. হাছান মাহমুদসহ ৮৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে রাঙ্গুনিয়া থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগ: ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামের একটি আদালতে ড. হাছান মাহমুদ ও দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ১০০ জনের বিরুদ্ধে সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়।ডকইয়ার্ড অফিসে হামলা ও জাহাজ কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ: ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামের হিলভিউ হাউজিং সোসাইটি এফএমসি ডকইয়ার্ড অফিসে হামলা, জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর গ্রহণ এবং ৭৪ কোটি টাকা মূল্যের দুটি জাহাজ নির্মাণব্যয় পরিশোধ না করে কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে ড. হাছান মাহমুদ, তার স্ত্রী, ভাই ও ব্যক্তিগত সহকারীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। উপরোক্ত অভিযোগসমূহের বিষয়ে তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
তাকে শাস্তির আওতায় আনতে পারলে শুধু আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার হবে না, বরং বাংলাদেশে আইনের শাসনের প্রতি জনগণের বিশ্বাসও ফিরে আসবে। এখন সময় এসেছে, এই ধরনের প্রতারকদের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে চিরতরে মুছে ফেলার এবং তাদের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ রাষ্ট্রের কোষাগারে ফেরানোর।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার, তার স্ত্রী নুরান ফাতেমা, মেয়ে নাফিসা জুমাইনা মাহমুদ এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ৭৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই হিসাবগুলোতে মোট ২৪ কোটি ৬৫ লাখ ৪১ হাজার ৯৫৮ টাকা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, হাছান মাহমুদ তার স্ত্রীকে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে নামে-বেনামে শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়াও, হাছান মাহমুদ সপরিবারে বেলজিয়ামে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। তবে,
বোয়ালখালীর একটি নির্বাচনি এলাকা রাঙুনিয়াতে স্থানান্তর করার বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য রয়েছে।
লেখকঃ যুগ্ম সম্পাদক-দৈনিক ভোরের আওয়াজ ওThe Daily banner, গবেষক, এবং টেলিভিশন উপস্থাপক।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com