পাট-১
বাংলাদেশ শব্দের উৎপত্তি এবং সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির ইতিহাস--কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রথম "বাংলাদেশ" শব্দটি ব্যবহৃত করেন তাঁর "বাংলাদেশ" নামক কবিতায়। এই কবিতাটি তিনি রচনা করেন ১৯২৬ সালে।
কবিতাটি মূলত নজরুলের ভাবনায় বাংলাদেশের এক ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা তুলে ধরে। তিনি বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডকে একটি স্বাধীন, শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে কল্পনা করেছেন। এই কবিতা লেখার মাধ্যমে নজরুল পূর্ব বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা এবং দেশপ্রেমের অনুভূতি প্রকাশ করেন।
ননজরুলের এই কবিতা শুধুমাত্র একটি ভূখণ্ডের পরিচয় নয়, বরং এটি তখনকার রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের একটি প্রগাঢ় চিত্র, যা এক ধরনের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুরভিত ছিল। কবিতার মধ্যে তিনি প্রাচীন বাংলা সভ্যতার ঐতিহ্য এবং বাংলার সংগ্রামী জনগণের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন।
কবিতাটির কিছু প্রসিদ্ধ লাইন:
"বাংলাদেশ, তোমার যত হরণ যত অত্যাচার
তুমি রইবে চিরদিন, চিরদিন অমর, তোমার জয়ী চিত্তে
তবেই তো আমি স্বাধীন, আমি অমর হবো" এই কবিতার মাধ্যমে নজরুল বাংলাদেশের এক ঐতিহ্য ও সংগ্রামের রূপ তুলে ধরেছিলেন এবং এটি বাংলার জনগণের জাতীয় আত্মগরিমার প্রতীক হয়ে ওঠে।বাংলাদেশ শব্দটির ইতিহাস এবং এর সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির পেছনের প্রেক্ষাপটটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং জাতীয় পরিচয়ের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। এই শব্দের অন্তর্ভুক্তি এবং সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।বাংলাদেশ শব্দের উৎপত্তি: "বাংলাদেশ" শব্দটি দুটি অংশ নিয়ে গঠিত: "বাংলা": বাংলার সংস্কৃতি, ভাষা ও ভূগোলের সাথে সম্পর্কিত।
"দেশ": দেশ বা রাষ্ট্র, অর্থাৎ এক ভূখণ্ড বা জাতি। এটি প্রথমে "বাংলা দেশ" বা "বাংলাদেশ" হিসেবে ব্যবহার হতে থাকে বিভিন্ন সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যে। তবে, "বাংলাদেশ" শব্দটির সর্বোচ্চ তাৎপর্য অর্জন হয় ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশের বিভাজনকালে এবং পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়।
১৯৪৭: ভারত বিভাগের পর পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে বাংলাদেশের অংশ প্রবল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলে, যার মধ্যে "বাংলাদেশ" শব্দটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে।১৯৭১: বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে "বাংলাদেশ" শব্দটি এক নতুন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে, যেখানে এটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতীক হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ শব্দের সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি:
বাংলাদেশ নামটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রথম ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং তৎকালীন সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
স্বাধীনতার ঘোষণা:
১৯৭১. সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে "বাংলাদেশ" নামের রাষ্ট্রের সূচনা হয়। এই ঘোষণার পর পরই, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পায়। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে "বাংলাদেশ" নামটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, যা পরবর্তী সংবিধানে সরকারি নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ সংবিধান: ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়, যেখানে "গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ" নামটি রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক নাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই সংবিধান দেশের জনগণের শাসন, মৌলিক অধিকার ও রাষ্ট্রের গঠনমূলক প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এই সংবিধান প্রণয়ন করেন এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কার্যক্রম শুরু হয়।
বাংলাদেশ সংবিধান: বৈধতা ও প্রশ্নসমূহ
বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর শুরু হয়, তবে এটি কার্যকর হয় ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের সংবিধান সম্পর্কে বৈধতা এবং এর প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে:
১. সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়া:
সংবিধান প্রণয়ন কমিটি: স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে একটি সংসদীয় প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়, যারা সংবিধান তৈরি করেন। এতে অংশগ্রহণকারী প্রধান নেতৃত্ব ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।এই কমিটির মাধ্যমে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়, যা তখনকার রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং জনগণের অধিকারের প্রেক্ষিতে তৈরি হয়। তবে, সংবিধানটি অস্থায়ী সরকার বা স্বাধীনতা সংগ্রামের পরবর্তী সময়ে তৈরি হয়েছিল, যার কারণে কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, বিশেষ করে সেই সময়ে যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল না।
২. বৈধতার প্রশ্ন:
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব:
স্বাধীনতার পর কিছু সময়ের জন্য দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসন এবং তার পরবর্তী বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিবর্তন সংবিধানের প্রকৃত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ সৃষ্টি করে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সেনা শাসন এবং পরবর্তীতে নবীন রাজনৈতিক পরিবর্তন বাংলাদেশ সংবিধানের বিভিন্ন ধারায় সংশোধনী আনে।
সামরিক শাসনের পর সংবিধানের পুনঃবিকাশ:
১৯৯১ সালে নতুন নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন হওয়ার পর, বাংলাদেশ সংবিধানে বেশ কিছু সংশোধনী করা হয়, কিন্তু এই সংশোধনীগুলি মূল সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ও জনগণের অধিকার রক্ষা করার জন্য করা হয়।
১৯৯১ সালের সংশোধন: দেশে পুনরায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর জাতীয় সংসদে বেশ কিছু সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান পুনর্গঠিত হয়।
৩. বৈধতার সুস্পষ্টতা:
বর্তমানে, বাংলাদেশের সংবিধান জাতীয় সংসদে প্রণীত এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থনে কার্যকর রয়েছে। বাংলাদেশের আইনজ্ঞরা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরাও একে একটি বৈধ ও গণতান্ত্রিক সংবিধান হিসেবে বিবেচনা করেন। বাংলাদেশ শব্দটি প্রাথমিকভাবে স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটে জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা ও পরবর্তীতে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। বাংলাদেশের সংবিধানটির বৈধতা, বিশেষ করে প্রণয়নের সময়কার রাজনৈতিক
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com