বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও শেখ হাসিনার শাসনকালের একটি ছোট বিশ্লেষণ- বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট গত কয়েক দশকে ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা শাসনামলে গণতন্ত্রের অবস্থা, ভোটাধিকার, মানবাধিকার, ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার কৌশল এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমন নীতি নিয়ে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিভিন্ন সময়ে সমালোচনা করেছে।
গণতন্ত্রের সংকট ও ভোটাধিকার হরণের অভিযোগ
বাংলাদেশের সংবিধানে জনগণের ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন:
বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়েছিল, যা সরকার প্রত্যাখ্যান করে। বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি, ফলে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। ভোটারদের অংশগ্রহণ ছিল খুবই কম, যা গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগজনক ছিল।
২০১৮ সালের নির্বাচন:
নির্বাচনকে "নজিরবিহীন কারচুপি" ও "প্রহসন" বলা হয়।
বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।
মিডিয়া ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পুলিশ প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে।
আগের রাতেই ভোটবাক্স ভরে রাখার অভিযোগ ওঠে।
২০২৪ সালের নির্বাচন:
প্রধান বিরোধী দল বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার করা হয়।
আন্দোলনে বিরোধী দলের বহু কর্মী নিহত ও আহত হন।
পুলিশের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ, বিরোধী নেতাদের গ্রেফতার করে মাঠ ফাঁকা করা হয়।
প্রশাসনের রাজনৈতিক ব্যবহার ও দমননীতি শেখ হাসিনার সরকার প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিরোধী দল দমন ও গণগ্রেফতার:
হাজার হাজার বিরোধী নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়।
গায়েবি মামলা: নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে রাজপথে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের নামেও মামলা দেওয়া হয়েছে। গুম: মানবাধিকার সংগঠনগুলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী বহু নেতা-কর্মী গুম হয়েছে। পুলিশের ভূমিকাঃ
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবৈধ গ্রেফতার, নির্যাতন এবং গুলি চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেক ক্ষেত্রে আদালতে বিচারাধীন ব্যক্তিদের জামিন দেওয়া হলেও পুলিশ তা মানেনি।
বিচারব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ:
বিরোধী দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করা হয়, কিন্তু সরকারি দলের নেতারা দায়মুক্তি পায়। উচ্চ আদালতের রায় ও বিচারকদের ওপর সরকারের প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন সময় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সংকট
শেখ হাসিনার শাসনামলে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ উঠেছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন:
সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, এবং সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে এই আইনের অপব্যবহার করা হয়েছে। বিরোধী মতামত প্রকাশ করলেই মামলা ও গ্রেফতার করা হয়েছে।
টেলিভিশন ও পত্রিকা নিয়ন্ত্রণ:
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে।
বিরোধী দলপন্থী চ্যানেল ও সংবাদপত্র বন্ধ করা হয়েছে।
অনেক সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও লুটপাট
শেখ হাসিনার দীর্ঘমেয়াদি শাসনে দেশে ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বেড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
পদ্মা সেতু দুর্নীতি: বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রকল্প থেকে সরে যায়।
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প: প্রকল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ব্যাংক খাতের লুটপাট: দেশের শীর্ষ ব্যাংকগুলোর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে আওয়ামী লীগপন্থী ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। জনগণের মৌলিক অধিকার সংকুচিত করা
শেখ হাসিনার শাসনামলে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন মৌলিক অধিকার সংকুচিত হয়েছে বলে সমালোচনা রয়েছে। সংগঠনের অধিকার: বিরোধী রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলোর কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভ দমন: শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও নাগরিক সমাজের আন্দোলন দমনে পুলিশ ও দলীয় ক্যাডার ব্যবহার করা হয়েছে। ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত করা হয়েছে। প্রহসনের নির্বাচন ও ক্ষমতা ধরে রাখার কৌশল আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন, বিরোধী দল দমন ও প্রশাসনের সহযোগিতায় একতরফা শাসন নিশ্চিত করেছে। নির্বাচনের আগে বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরকারের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করলেও, আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় থেকেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনামলে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকার, আইনের শাসন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দেশের জনগণ যদি প্রকৃত গণতন্ত্র চায়, তাহলে সংবিধানের সঠিক প্রয়োগ, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ কি সত্যিই গণতন্ত্রের পথে ফিরে যেতে পারবে, নাকি একদলীয় শাসন দীর্ঘস্থায়ী হবে? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে।
শেখ হাসিনার শাসন: রাজনৈতিক দলের জন্য শিক্ষণীয় একটি অধ্যায় শেখ হাসিনার শাসনকাল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি সংকটময় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে। গণতন্ত্রের ভিত্তি নষ্ট করা, বিরোধী দল দমন, নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি অবিচার, এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে ব্যবস্থা নেওয়া, এগুলো সবই তার শাসনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল। তার ক্ষমতা ধরে রাখার প্রয়াসে যে পদ্ধতি এবং কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে, তা ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি বড় শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে। শেখ হাসিনা যে ধরনের শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন, তার ফলে দেশে রাজনৈতিক সহনশীলতার অভাব এবং আইনের শাসনের প্রতি অবিচার দেখা দিয়েছে। তার শাসনে বিরোধী দলগুলোকে দমন করা, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা, এবং মানুষের মৌলিক স্বাধীনতার উপর আক্রমণ করা, এসব এক নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে। তার পদ্ধতি আজকের রাজনৈতিক অঙ্গনে একেবারেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
ইতিহাসের পাতায় শেখ হাসিনার অপকর্ম এবং তার শাসনের নানা দিকের সমালোচনা থাকবে। তবে, এই পুরো পরিস্থিতি থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত শিক্ষা নেওয়া, যেন ভবিষ্যতে এমন শাসন ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। শেখ হাসিনার শাসন এবং আন্দোলনের চাপের পরিণতি হিসেবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা, তার শাসনের একটি কঠিন পরিণতি হয়ে থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নিজেদের পলিসি, কার্যক্রম ও শাসন পদ্ধতিতে সততা, নৈতিকতা, এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিশ্চিত করা, যাতে আগামীতে একটিও ঘটনা যেন দেশ, জনগণ এবং গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর না হয়।
গণআন্দোলনের মুখে স্বৈরশাসকের পতন ও দেশত্যাগ: ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ- বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বৈরশাসকরা দীর্ঘদিন ধরে একদলীয় শাসন ও প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থেকেছেন। তবে গণআন্দোলনের চাপে শেষ পর্যন্ত তাদের বিদায় নিতে হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে দেশত্যাগ করতেও বাধ্য হয়েছেন। এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত বিশদভাবে আলোচনা করা হলো।১.ফের্দিনান্দ মার্কোস (ফিলিপাইন, ১৯৬৫-১৯৮৬) শাসনের ধরন: ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মার্কোস ১৯৬৫ সালে ক্ষমতায় আসেন এবং ক্রমে স্বৈরাচারী শাসনে পরিণত হন। ১৯৭২ সালে তিনি মার্শাল ল জারি করে বিরোধী দল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করেন। ১৯৮১ সালে তিনি নিজেকে পুনরায় প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন, যদিও সেটি ছিল প্রহসনের নির্বাচন।
গণআন্দোলন ও পতন:
১৯৮৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধী নেত্রী কোরাসন অ্যাকুইনো জয়ী হন, কিন্তু মার্কোস কারচুপি করে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। এরপর দেশজুড়ে ‘পিপল পাওয়ার রেভল্যুশন’ নামে গণআন্দোলন শুরু হয়। মার্কোসের নিজের সামরিক বাহিনীও তাকে সমর্থন দিতে অস্বীকার করে। চূড়ান্তভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬ সালে মার্কোস দেশত্যাগ করে হাওয়াই পালিয়ে যান, যেখানে ১৯৮৯ সালে তার মৃত্যু হয়।
২. জিন-ক্লদ দুভালিয়ে (হাইতি, ১৯৭১-১৯৮৬)
শাসনের ধরন: বেবি ডক’ নামে পরিচিত জিন-ক্লদ দুভালিয়ে ১৯৭১ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে তার পিতার মৃত্যুর পর হাইতির প্রেসিডেন্ট হন। তিনি রাষ্ট্রীয় পুলিশ ‘টনটন ম্যাকুট’ বাহিনী দিয়ে বিরোধীদের হত্যা ও নির্যাতন চালাতেন। গণআন্দোলন ও পতন: ১৯৮৬ সালে অর্থনৈতিক সংকট, দারিদ্র্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে ব্যাপক গণবিক্ষোভ শুরু হয়। আমেরিকা সরকার তার ওপর চাপ সৃষ্টি করে, ফলে তিনি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন এবং ফ্রান্সে পালিয়ে যান।
৩. জাইন আল-আবিদিন বেন আলি (তিউনিসিয়া, ১৯৮৭-২০১১)
শাসনের ধরন: বেন আলি ১৯৮৭ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন এবং ২০১১ সাল পর্যন্ত তিউনিসিয়া শাসন করেন। তার শাসনকাল জুড়ে দুর্নীতি, দমনপীড়ন ও বাকস্বাধীনতা হরণের অভিযোগ ছিল। গণআন্দোলন ও পতন:
২০১০ সালের ডিসেম্বরে এক ফল বিক্রেতা মোহাম্মদ বুয়াজিজি পুলিশের দুর্নীতির প্রতিবাদে আত্মদাহ করলে দেশজুড়ে তীব্র গণবিক্ষোভ শুরু হয়। এই বিক্ষোভ ‘আরব বসন্ত’ নামে পরিচিত হয় এবং ধীরে ধীরে অন্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। ১৪ জানুয়ারি ২০১১ সালে বেন আলি দেশত্যাগ করে সৌদি আরবে পালিয়ে যান।
৪. হোসনি মোবারক (মিসর, ১৯৮১-২০১১) শাসনের ধরন: হোসনি মোবারক ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত হত্যার পর মিসরের শাসনভার গ্রহণ করেন। ৩০ বছরের শাসনকালে তিনি দমনমূলক আইন জারি করেন, নির্বাচনে কারচুপি করেন এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে সামরিক বাহিনী ব্যবহার করেন। গণআন্দোলন ও পতন: ২০১১ সালে ‘আরব বসন্ত’ আন্দোলনের ঢেউ মিসরে আঘাত হানে। কায়রোর তাহরির স্কয়ারে কয়েক লাখ মানুষ অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে। আন্তর্জাতিক চাপ ও সেনাবাহিনীর সমর্থন হারিয়ে মোবারক ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১১ সালে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং পরে বিচারের সম্মুখীন হন। ৫. নিকোলাই চাউসেস্কু (রোমানিয়া, ১৯৬৫-১৯৮৯)
শাসনের ধরন: নিকোলাই চাউসেস্কু ১৯৬৫ সালে রোমানিয়ার ক্ষমতায় আসেন এবং সোভিয়েত শাসনের অধীনে একদলীয় কমিউনিস্ট সরকার চালান। তিনি ব্যক্তিপূজা, গোপন পুলিশ ও অর্থনৈতিক নিপীড়ন চালিয়ে বিরোধীদের দমন করেন।
গণআন্দোলন ও পতন:
১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রোইকা নীতি চালু হলে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে গণআন্দোলন শুরু হয়। রোমানিয়াতেও জনগণ বিক্ষোভ শুরু করে এবং সেনাবাহিনী তার বিরুদ্ধে চলে যায়। ২৫ ডিসেম্বর ১৯৮৯ সালে এক সামরিক ট্রাইব্যুনাল তাকে ও তার স্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় এবং একই দিন তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়। ৬. ইয়াহিয়া খান (পাকিস্তান, ১৯৬৯-১৯৭১)
শাসনের ধরন: ইয়াহিয়া খান ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসক হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। তিনি ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালান।
গণআন্দোলন ও পতন:
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভেতরে তার বিরুদ্ধে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ইয়াহিয়া খানকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হয়। পরে তাকে গৃহবন্দি করা হয় এবং ১৯৮০ সালে তিনি মারা যান।
উপরোক্ত উদাহরণগুলো দেখায় যে, যারা দীর্ঘ সময় ধরে স্বৈরশাসন কায়েম করে, প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকেন, তারা শেষ পর্যন্ত গণআন্দোলনের চাপে ক্ষমতা হারান। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন, কেউ কারাবরণ করেন, আবার কেউ নির্মম পরিণতির শিকার হন।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট:
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে যদি তুলনা করা হয়, তাহলে দেখা যায় যে, শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনকাল নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক রয়েছে। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ অনুযায়ী, নির্বাচন ও রাজনৈতিক দমননীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ভবিষ্যতে গণআন্দোলন বা আন্তর্জাতিক চাপ কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।
আপনার অনুরোধ অনুযায়ী আরো গবেষণামূলক বা নির্দিষ্ট কোনো দেশের বিশ্লেষণ প্রয়োজন হলে জানাতে পারেন।
শেখ হাসিনার শাসন ও বঙ্গবন্ধুর ভাবমূর্তি: একটি বিশ্লেষণ
শেখ হাসিনা দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ শাসন করছেন, যার মধ্যে একাধিক বিতর্কিত নির্বাচন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ, বিরোধী দল দমন, এবং বাকস্বাধীনতা সংকুচিত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। তার শাসনব্যবস্থা নিয়ে অনেকেই একে স্বৈরাচারী বা ফ্যাসিবাদী বলে থাকেন। স্বাভাবিকভাবেই, এমন একদলীয় শাসন অন্য কোনো দেশে কেউ কামনা করবে না, কারণ এটি গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী।
শেখ হাসিনার শাসনকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাবমূর্তিকে কতটুকু প্রভাবিত করেছে, সেটিও বিতর্কের বিষয়। বঙ্গবন্ধু ছিলেন গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতীক। কিন্তু তার কন্যার শাসনে সেই মূল্যবোধ কতটুকু টিকে আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যদি শেখ মুজিবের নামেই দমননীতি ও একদলীয় শাসন পরিচালিত হয়, তবে তিনি কি আদৌ গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে থাকবেন, নাকি একটি বিতর্কিত চরিত্র হয়ে উঠবেন?
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও শেখ হাসিনার শাসনের বাস্তবতা কি এক? এই প্রশ্নই আজ সময়ের দাবি।
— দৈনিক ভোরের আওয়াজ ও The Daily Banner-এর যুগ্ম সম্পাদক।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com