লক্ষ্মীপুরের জেলার সদর, রামগতি, রায়পুর, রামগঞ্জ ১৫৫টি ভাটায় ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৮৭টি ভাটার ছাড়পত্র নেই। এরমধ্যে নতুন করে প্রায় ১০টি বাংলা ভাটা চালু করা হয়েছে
ফসলি জমিতে নতুন করে আরও ১০টি ইটভাটা চালু হয়েছে। ভাটাগুলোর একটি পড়েছে সদর উপজেলার তেয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের আঁধারমানিক এলাকায়। এ ছাড়া ইউনিয়নের চরপাগলা গ্রামে তিনটি এবং চরবসু, কমলনগর দুইটি রামগতিতে ৪টিসহ মোট ১০টি ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে।
গেল বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিবিএমওএ) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়। এতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ইটভাটাজনিত বায়ুদূষণ রোধে দেশে আর কোনো নতুন ইটভাটার ছাড়পত্র দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করেন।
ওই এলাকার দশটি ফসলি জমিতে ইটভাটা হওয়াতে কৃষির আবাদ কমে গেছে। গাছে ফল ধরলে নষ্ট হয়ে যায়।
উপদেষ্টার এমন ঘোষণার পরও লক্ষ্মীপুরে নতুন করে ১০টি ইটভাটা চালু হয়েছে। এ নিয়ে লক্ষ্মীপুরে ১৫৫টি ভাটায় ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। যার মধ্যে ৮৭টি ভাটার পরিবেশগত প্রশাসনিক ছাড়পত্র নেই বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ভাটাগুলোর অধিকাংশই সদর, কমলনগর ও রামগতির চরচরাঞ্চলে, আবাদি জমি, আবাসিক এলাকা, কৃষিজমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রেলপথ ও গ্রামীণ সড়কসংশ্লিষ্ট এলাকায় গড়ে উঠেছে।
অথচ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩–এর ৮ ধারায় বলা হয়েছে, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যক এলাকা, পৌর এলাকা, সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষিজমি, নিষিদ্ধ এলাকার সীমারেখা থেকে ন্যূনতম এক কিলোমিটার ও সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা থেকে দুই কিলোমিটার, পাহাড় বা টিলার পাদদেশ থেকে আধা কিলোমিটার, রেলপথ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ রয়েছে। নিয়ম-কানুন নিষিদ্ধ বলার পরেও কিভাবে নতুন করে অবৈধ ইটভাটা ও নতুন বৈধ ইটভাটার অনুমতি দেওয়া হয়।
অনুমতি ছাড়া কীভাবে নতুন ভাটা স্থাপন করা হয়েছে জানতে ব্রিকসের মালিক সমিতির সভাপতিকে মুঠোফোনে কল করলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। এসএমবি ব্রিকসের মালিক ফরিদ হোসেন জানান, ১০টি ইটভাটা স্থাপনের বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছে। ইটভাটা স্থাপন কাজ শুরুর পাশাপাশি রিটগুলো করা হয়। তবে এ বিষয়ে শুনানি হয়েছে কি না, তা জানাতে পারেননি।
এদিকে ভাটাগুলোতে ইট তৈরির জন্য সদর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে,ফসলি জমি কেটে মাটি আনা হচ্ছে। মাটি পরিবহনের কারণে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। এ ছাড়া ইটভাটা নির্মাণের ফলে কৃষিজমি কমে খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি হচ্ছে। ভাটার ধোঁয়ায় জমির ফসল ও সবজি বিনষ্ট হচ্ছে। গাছে ফল এলেও তা ঝরে পড়ে যায়। চরকাদিরা গ্রামের ব্যবসায়ী আলম হোসেন বলেন, ওই এলাকায় তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা হওয়াতে কৃষির আবাদ কমে গেছে। গাছে ফল ধরলে নষ্ট হয়ে যায়।
অপর দিকে ভাটাগুলোতে এরই মধ্যে বিদ্যুতের সংযোগও দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা পুরোনো ভাটার কিছু কাগজ দেখিয়ে নতুন ভাটায় বিদ্যুৎ-সংযোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ জন্য নতুনভাবে পাঁচটি খুঁটিও স্থাপন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের লক্ষ্মীপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক হারুনুর রশিদ পাঠান জানান, অবৈধ ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া নতুন ভাটায় বিদ্যুৎ-সংযোগের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানাতে পারবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎের জেনারেল ম্যানেজার মো.শফিউল আলম বলেন আমি লক্ষ্মীপুরের নতুন এসেছি, আমি এখনো অবৈধ ইট ভাটার বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয় কিছু জানিনা। যদি এমন অবৈধ ইটভাটা বিদ্যুৎচন্দ্র থাকে আমরা জরুরি ভাবে ব্যবস্থা নিব।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com