১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা ও কল্পনা ছিল। বিশেষ করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ও তাদের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে তখন অনেক জল্পনা-কল্পনা চলছিল। বঙ্গবন্ধুর প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আত্মসমর্পণ করল, তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানে বন্দি অবস্থায় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানের কারাগারে থাকায় বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতি সরাসরি জানতে পারছিলেন না। তবে যখন তিনি জানলেন যে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রায় পুরো বাংলাদেশেই অবস্থান করছে, তখন তাঁর মনে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর অন্যতম দুশ্চিন্তা ছিল, ভারতীয় বাহিনী যদি দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে থেকে যায় বা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে চায়, তাহলে দেশের সার্বভৌমত্ব সংকটের মুখে পড়তে পারে। তিনি চেয়েছিলেন, বাংলাদেশ সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দ্রুত আত্মপ্রকাশ করুক এবং বিদেশি সেনারা দ্রুত চলে যাক।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবস্থান ও প্রত্যাহার ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে, ভারতীয় বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতে এসেছে এবং যুদ্ধ শেষে তারা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাবে। বঙ্গবন্ধু মুক্তি পাওয়ার পর যখন বাংলাদেশে ফিরলেন (১০ জানুয়ারি ১৯৭২), তখন তিনি নিশ্চিত হলেন যে ভারতীয় বাহিনী শিগগিরই প্রত্যাহার করা হবে।
এরপর তাঁর নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হয়, এবং কূটনৈতিক আলোচনা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ১৯৭২ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই ভারতীয় সেনারা বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করে নেয়।
বঙ্গবন্ধুর শঙ্কা ছিল বাস্তবসম্মত, কারণ নতুন স্বাধীন হওয়া একটি
মিয়ানওয়ালী কারাগারের ইতিহাস ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
মিয়ানওয়ালী কারাগার ১৯০৪ সালে ২৯৩ জন বন্দী ধারণের জন্য নির্মিত হয়। ১৯১৩ সালে এটিকে জেলা কারাগার হিসেবে উন্নীত করা হয়। সেই সময়ে কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ছিল ২২৮ জন। ১৯১১ সালে কারাগারের হাসপাতালের মধ্যে মৃত্যুর হার ছিল ৬.৪৯%। কারাগারের বেশিরভাগ অংশে কাদামাটি দিয়ে প্লাস্টার করা কর্দমাক্ত ব্যারাক এবং সেল-ব্লক ছিল। ১৯১১ সালে ৩৬৪ জন, ১৯১২ সালে ৩৫৭ জন, এবং ১৯১৩ সালে ৫১৬ জন বন্দী কারাগারে ছিল। বন্দীরা কারাগারে বিভিন্ন কাজ করত, এবং তারা যে সব জিনিস তৈরি করত, তা বাজারে বিক্রি করা হতো। ১৯১১ সালে অর্জিত মুনাফা ছিল ১৮৬৩ টাকা, ১৯১২ সালে ১২২৯ টাকা, এবং ১৯১৩ সালে ১৩১৪ টাকা। ব্রিটিশ শাসনামলে, ১৯১১-১৯১৩ সালের মধ্যে কারাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পদবি ছিল 'জেল সুপারিনটেনডেন্ট', যিনি বর্তমানে সহকারী সুপারিন্টেনডেন্ট হিসেবে পরিচিত। তাঁর অধীনে একজন কারারক্ষী (ডেপুটি সুপারিন্টেনডেন্ট) এবং দুজন সহকারী কারারক্ষী কর্মরত থাকতেন। ১৯১১ সালে কারাগারে ৪০ জন ওয়ার্ডার কর্মরত ছিলেন।
ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা:
১৯২৯ সালের ৩১ অক্টোবর, ব্রিটিশ শাসনামলে মিয়ানওয়ালী কারাগারে ইলমুদ্দিন নামক এক বন্দীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তাঁর জীবনের শেষ রাতের স্মৃতিস্বরূপ, ১৯২৯ সালের ৩০-৩১ অক্টোবর যে কক্ষে তিনি বন্দী ছিলেন, সেই কক্ষটি এখনও অক্ষত রয়েছে। ১৯২৯ সালে ভগৎ সিং, বিখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী, মিয়ানওয়ালী কারাগারে ১১২ দিন স্থায়ী অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন, যা সেই সময়ের বিশ্বের দীর্ঘতম অনশন ধর্মঘটগুলির মধ্যে একটি ছিল।
১৯৬০ সালের মে মাসে, মিয়ানওয়ালী জেলা কারাগারকে কেন্দ্রীয় কারাগার হিসেবে উন্নীত করা হয় এবং ঝাঙ্গির খান হোতিয়ানাকে এর প্রথম সুপারিন্টেনডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। বর্তমানে, মিয়ানওয়ালী কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বিদ্যালয়, হাসপাতাল, মসজিদ এবং গ্রন্থাগারের মতো সুবিধা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বন্দিত্ব: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই গ্রেপ্তার করা হয় এবং পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময়, তাঁকে মিয়ানওয়ালী কেন্দ্রীয় কারাগারের এক নির্জন কক্ষে বন্দী করে রাখা হয়। সামরিক ট্রাইব্যুনাল তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয় এবং তার ফাঁসির জন্য একটি দড়ি প্রস্তুত করা হয়। ফাঁসি কার্যকর করতে ভারতীয় বন্দীদের দিয়ে তার জন্য একটি কবর খনন করা হয়েছিল। তবে, বঙ্গবন্ধুর ফাঁসি তিনবার স্থগিত করা হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শেষে, বাংলাদেশ ও ভারতীয় যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এটি ছিল মিয়ানওয়ালী কারাগারের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর বন্দিত্ব ও মুক্তি জাতির জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে ওঠে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভারতীয় সৈন্যদের নিয়ে উদ্বেগ এবং মুক্তির পরবর্তী সংগ্রাম ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান কারাগারে বন্দি ছিলেন। ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তান সরকার তাঁকে মুক্তি দেয় এবং তাঁকে পাকিস্তান থেকে মুক্তি দিয়ে লন্ডনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এ সময়ে এয়ার কমোডর শাহজাহান জামালী ছিলেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, যিনি এই গুরুত্বপূর্ণ মিশনের নেতৃত্ব দেন।
বঙ্গবন্ধুর মুক্তির প্রক্রিয়া:
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-কে গ্রেফতার করে। তাঁকে প্রথমে পাকিস্তানের একটি নিরাপত্তা কারাগারে বন্দি করা হয় এবং পরে তাঁকে মুলতান শহরের কাছে শিকাগো কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। যুদ্ধের পর, পাকিস্তান সরকার তাঁকে মুক্তি দেয় এবং ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে লাহোরের আল্লামা ইকবাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডন পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
বিমান বাহিনীর বিশেষ মিশন:
এয়ার কমোডর শাহজাহান জামালী পাকিস্তান বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে সরাসরি এই মিশনে যুক্ত ছিলেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিরাপত্তা এবং যাত্রার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল। বিমানটি লাহোর থেকে উড্ডয়ন করে লন্ডন অভিমুখে যাত্রা করেছিল। এই বিশেষ মিশনটি নিরাপদে সম্পন্ন করতে তিনি বিমান বাহিনীর কর্মীদের সাথে সমন্বয় করেন এবং নিশ্চিত করেন যে, যাত্রাপথে বঙ্গবন্ধুর কোনো অসুবিধা হবে না। বিমান যাত্রার সময়: যাত্রার সময়, বিমান যখন প্রায় দুই ঘণ্টা আকাশে উড়ছিল, তখন শাহজাহান জামালী বঙ্গবন্ধুর কাছে একটি জানামাজ এবং তসবী উপহার দেওয়ার অনুমতি চান। বঙ্গবন্ধু সানন্দে এ উপহার গ্রহণ করেন। এর পর জামালী পাকিস্তান সরকারের আত্মসমর্পণের এবং যুদ্ধের পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে জানান। তিনি বলেন, "পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে এবং পুরো বাংলাদেশ এখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর দখলে চলে গেছে।"
বঙ্গবন্ধুর উদ্বেগ: এই খবর শুনে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং কিছু সময় নিরব থাকেন। অবশেষে তিনি বলেন, "এখন কী উপায় জামালি? তোমাদের পাকিস্তানিরা সারেন্ডার করে চলে গেছে, আমার দেশ প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে, আমার বাঙালিরা রক্ত দিয়ে তোমাদেরকে পরাজিত করেছে। কিন্তু এখন আমি এই ভারতীয় সৈন্যদের কীভাবে বের করে আনব?" বঙ্গবন্ধুর কথা শুনে জামালি কিছু বলেননি, কারণ তিনি বুঝতে পারছিলেন যে বঙ্গবন্ধুর মধ্যে এক গভীর উদ্বেগ রয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিপরীতে ভারতীয় সেনাবাহিনী ছিল আরো একটি বড় সমস্যা, যা বঙ্গবন্ধুর জন্য এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
ভারতীয় সৈন্যদের উপস্থিতি এবং বঙ্গবন্ধুর ভয়: বঙ্গবন্ধু জানতেন যে ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে, কিন্তু স্বাধীনতার পর ভারতীয় সেনাদের বাংলাদেশে অবস্থান নিয়ে তাঁর মধ্যে সন্দেহ এবং ভয় ছিল। তিনি চিন্তিত ছিলেন যে, ভারতীয় সৈন্যরা বাংলাদেশ থেকে ফিরে যাবে না, এবং এর ফলে বাংলাদেশ সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন ওঠে। বঙ্গবন্ধু এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলেন, যেখানে তিনি ভারতীয় সৈন্যদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছিলেন না, যদিও তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল।
লন্ডনে পৌঁছানো এবং ইন্দিরা গান্ধীর কাছে অনুরোধ:
বঙ্গবন্ধু লন্ডনে পৌঁছানোর পর, তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী-এর সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁর কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুরোধ রাখেন। তিনি ইন্দিরা গান্ধীকে বলেন, "আপনার সৈন্যরা যদি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অবস্থান করে, তাহলে আমি স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখতে পারব না। আমি আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি—১৭ই মার্চ আমার জন্মদিনে আপনি আমার দেশে আসুন। তবে তার আগে, আপনার দেশের সৈন্যদেরকে আমার দেশ থেকে সরিয়ে নিন।"
ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুর এই অনুরোধ শোনার পর, তিনি সেটি যথাসময়ে মেনে নেন এবং যথাসময়ে ভারতীয় সেনারা বাংলাদেশ থেকে চলে যায়।
পাকিস্তান সরকারের প্রচেষ্টা:
পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার পর, পাকিস্তান জাতীয় ব্যাংক থেকে তাঁর জন্য প্রচুর পরিমাণ ডলার পাঠানো হয়েছিল। বিমানে উড্ডয়নের পর, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ভূট্টো মন্তব্য করেন, "ছিঁড়িয়া উড়গিয়া"—এটি বঙ্গবন্ধুর মুক্তি এবং দেশত্যাগের প্রতি তাঁর বিরোধিতা ছিল। ভারতীয় সৈন্যদের উপস্থিতি:
এতসব ঘটনার পর, বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখতে সক্ষম হন। তিনি জানতেন, ভারতের সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশের মুক্তি সম্ভব ছিল না, তবে স্বাধীনতার পর তাদের অবস্থান বাংলাদেশে ছিল এক বড় চ্যালেঞ্জ। বঙ্গবন্ধু ভারতীয় সেনাদের উপর আস্থা রাখতে পারছিলেন না, কারণ তারা যদি বাংলাদেশে থেকে যায়, তবে দেশের সার্বভৌমত্বের ক্ষতি হতে পারে। ইন্দিরা গান্ধী এবং ভারতের সৈন্য প্রত্যাহার:১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে, ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় সেনাদের ফেরত নিয়ে আসেন, এবং বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার অসীম সাহস এবং রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেন। ভারতীয় সেনাদের প্রত্যাহারের মাধ্যমে, তিনি নিশ্চিত করেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব কখনোই সংকটাপন্ন হবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই সংগ্রাম কেবল বাংলাদেশের মুক্তি নয়, বরং তার দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার এক ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া ছিল। ভারতীয় সৈন্যদের প্রত্যাহারের মাধ্যমে, তিনি নিশ্চিত করেছিলেন যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব কখনোই সংকটাপন্ন হবে না। এটি একটি অনন্য অধ্যায়, যা আজও বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
৭ মার্চ ১৯৭১ ছিল সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যখন বাঙালি জাতি এককাট্টা হয়ে তাকিয়ে ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দিকে। তিনি টান টান সংঘাতময় পরিস্থিতিতে জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন। তার ভাষণ ছিল এক অনন্য প্রণোদনা, যা পরবর্তীতে বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিল। এর মাধ্যমে শেখ মুজিব বাংলার জনগণের মধ্যে একটি গভীর অনুভূতি সৃষ্টি করেন, যেখানে তারা স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠেছিল। তাঁর আহ্বানে বাঙালি জাতি জানিয়ে দিয়েছিল যে, সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে তারা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়বে।
এটি ছিল শেখ মুজিবের দীর্ঘ সংগ্রামের ফল, যার মাধ্যমে তিনি জাতির ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন। তিনি নির্বাচনের মাধ্যমে গণরায় পেয়ে ছিলেন এবং তার নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ছিল মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। ২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তানি সেনারা আক্রমণ শুরু করলে শেখ মুজিব বন্দিত্ব গ্রহণ করেন, যাতে তিনি শত্রুর কাছ থেকে মুক্তির জন্য প্রস্তুতি নেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এই সময়টি ছিল ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব, যেখানে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের দৃঢ়তা ও সাহসিকতা জাতির জন্য ছিল অমূল্য। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনারা শেখ মুজিবকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়ি থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত ১টা ৩০ মিনিটে গ্রেপ্তার করে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানে নেওয়া হয়।
পাকিস্তানে নেওয়ার পর বিভিন্ন পত্রিকায় এ ছবি প্রকাশিত হয়) গ্রেপ্তার করে, এবং তাঁকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বঙ্গবন্ধুকে এক নির্জন কারাগারে বন্দী করা হয়, যেখানে তিনি শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের শিকার হন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বন্দিত্বের পর তাঁর প্রতি জনগণের ভালোবাসা আরও গভীর হয়ে ওঠে, এবং তিনি হয়ে ওঠেন এক জাতির প্রতীক। ১৯৭১ সালে তাঁর মুক্তির জন্য বাঙালি জাতি সারা বিশ্বে প্রতিবাদ জানায়, যা একসময় বাংলাদেশ স্বাধীনতার পথে অগ্রসর হতে সহায়তা করে।
এদিকে, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুকে আটক করে রাখা শুরু করে নানা গোপনীয়তার মধ্যে। তাকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। তবে, বিচার প্রক্রিয়া ছিল একটি প্রহসন, এবং বঙ্গবন্ধু তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর সাহসী প্রতিরোধের ফলে পাকিস্তানি শাসকরা তাকে শাস্তি দিতে পারেনি। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ঘটে ৮ই জানুয়ারি এবং ১০ শে জানুয়ারি ১৯৭২ তিনি দেশে ফিরে আসেন।
এই ঘটনায় বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম, নেতৃত্ব এবং তাঁর প্রতি জনগণের ভালোবাসা চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
— দৈনিক ভোরের আওয়াজ ও The Daily Banner-এর যুগ্ম সম্পাদক।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com