ইসলামী ব্যাংকিং খাতের প্রতি গ্রাহকের আস্থা ও বিশ্বাস পুনরায় ফিরে আসতে শুরু করেছে। বিগত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে দেশের আর্থিক খাত চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থপাচার ও নামে-বেনামে ঋণ গ্রহণের ফলে বিশেষ করে শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোসহ অন্তত ১৫টি ব্যাংক চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। পত্রিকার তথ্যমতে, শুধুমাত্র ইসলামী ব্যাংক থেকেই প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার গণআন্দোলনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নতুন গভর্নর দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ব্যাংক খাতে ব্যাপক সংস্কার শুরু হয়। আধিপত্য ও পরিবারতন্ত্র ভাঙতে ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ নিয়োগ দেওয়া হয়। যদিও কিছু ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় এখনো এস আলম গ্রুপের উপস্থিতি থাকলেও, পর্ষদ থেকে তাদের বিদায় করা হয়েছে। নতুন গভর্নর দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র তিন মাসের মধ্যেই ব্যাংক খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে। ঝিনাইদহে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের সাফল্য ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর ঝিনাইদহে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ইতোমধ্যে ব্যাংকটিতে ২,৩০০ গ্রাহকের হিসাব খোলা হয়েছে, যার মধ্যে ১,০০০ গ্রাহকের এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রিসিট) রয়েছে। গ্রাহকরা সঠিক সময়ে তাদের টাকা পেতে শুরু করেছেন, যা ব্যাংকের প্রতি আস্থা বাড়িয়েছে।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, তাদের ব্যাংকে হিসাব খোলাসহ চেকবই ও এটিএম কার্ড সম্পূর্ণ ফ্রি দেওয়া হয়, যা প্রথম এক বছর পর্যন্ত বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। এক বছর পর সরকারি নিয়ম অনুযায়ী হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ফি নেওয়া হয়। গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া আজ (মঙ্গলবার) গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ঝিনাইদহ শাখা বিশেষ মুদারাবা সঞ্চয়ের বিভিন্ন মেয়াদে ১৫০ গ্রাহকের ১ কোটি টাকার আমানত পরিশোধ করেছে। সঠিক সময়ে টাকা পেয়ে গ্রাহকরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। হরিশ চন্দ্র রায় নামে এক গ্রাহক বলেন, "আমি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের সাথে লেনদেন করে সন্তুষ্ট। তারা আমার আমানতের টাকা সংগ্রহের জন্য এক মাস আগে মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠিয়ে সময় জানিয়ে দেয়। তাদের ব্যবহারে আমি খুবই খুশি।"
গ্রাহক বিকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, "আমরা চাই, সব ব্যাংক যেন সঠিক সময়ে গ্রাহকের টাকা প্রদান করে। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এই আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। তাদের ব্যবহারে আমি সন্তুষ্ট।"ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ বলেন, "আমরা ব্যবসায়ীরা সবসময় ঝামেলাবিহীন লেনদেন চাই। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক সেই সুযোগ দিয়েছে।" অন্য এক ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, "গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তারা যথাসময়ে গ্রাহকের আমানত বুঝিয়ে দিচ্ছে, যা ব্যাংকের প্রতি আমাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় করেছে।"
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ঝিনাইদহ শাখার ব্যবস্থাপক মো. আমিনুর রহমান বলেন, "দেশের ব্যাংক খাতে একসময় অস্থিরতা বিরাজ করছিল। ছাত্র জনতার আন্দোলনের পর পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে এবং ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরে আসে। বর্তমান গভর্নর দায়িত্ব গ্রহণের পর ব্যাংকিং খাতকে সচল করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার ফলে গ্রাহকরা এখন সঠিক সময়ে তাদের টাকা পাচ্ছেন। আমরা আমাদের গ্রাহকদের আমানতের টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে পেরে আনন্দিত।" গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের এই উদ্যোগ ও কার্যক্রম ব্যাংক খাতে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো সফল হলে ভবিষ্যতে ব্যাংকিং সেবা আরও স্বচ্ছ ও গ্রাহকবান্ধব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com