ঘটনাটি কী? চট্টগ্রামের শেভরন হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শাহাদাৎ হোসেন এক রোগীর রিপোর্ট দেখতে অস্বীকৃতি জানান শুধু এই কারণে যে, সেটি হাসপাতালের নির্ধারিত ল্যাবে করা হয়নি। রোগীর পরিবার জানায়— চিকিৎসক তাদের কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দেন, যার জন্য শেভরনের ল্যাব ৪,৪৮৩ টাকা বিল করে। আর্থিকভাবে সাশ্রয়ের জন্য তারা ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ২,৫৩৭ টাকায় একই পরীক্ষা করান। রাত ৯টার দিকে রিপোর্ট দেখানোর জন্য গেলে চিকিৎসক ইবনে সিনার রিপোর্ট দেখতে অস্বীকৃতি জানান এবং রোগীসহ তাদের বের করে দেন। ২. ডাক্তারদের এই বাধ্যবাধকতা কেন? অনেক বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রোগীদের বাধ্য করে তাদের নির্ধারিত ল্যাবে পরীক্ষা করাতে, যাতে তারা ডাক্তারের মাধ্যমে কমিশন লাভ করতে পারে। এতে—রোগীরা বেশি খরচের শিকার হন।সাধারণ ও গরিব রোগীদের চিকিৎসা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। চিকিৎসা খাতটি সেবার পরিবর্তে বাণিজ্যিক ব্যবসায় পরিণত হচ্ছে। ৩. ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো কারা নিয়ন্ত্রণ করে ? বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট জেলা সিভিল সার্জন অফিস এসব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম তদারকি করে। কিন্তু কার্যকর তদারকির অভাবে— হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবসা পরিচালনা করছে। অসাধু ডাক্তাররা কমিশনের বিনিময়ে রোগীদের নির্দিষ্ট ল্যাবে পরীক্ষা করাতে বাধ্য করছেন।
৪. ভুক্তভোগীরা কোথায় অভিযোগ করবেন?
ক) ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (DNCRP) হটলাইন: ১৬১২১ওয়েবসাইট: www.dncrp.gov.bd
এখানে অভিযোগ করলে তদন্ত ও জরিমানা করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। খ) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিভিল সার্জন অফিস প্রতিটি জেলায় সিভিল সার্জন অফিস বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর কার্যক্রম দেখাশোনা করে। রোগীদের উচিত লিখিত অভিযোগ দায়ের করা।গ) বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (BMDC) ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য BMDC-তে অভিযোগ করা যেতে পারে। ওয়েবসাইট: www.bmdc.org.bd ঘ) থানায় সাধারণ ডায়েরি (GD) প্রতারণা, হুমকি বা দুর্ব্যবহারের অভিযোগ থাকলে থানায় সাধারণ ডায়েরি (GD) করা উচিত। ৫. সরকার কী করতে পারে? বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। রোগীদের স্বাধীনভাবে পরীক্ষা করানোর অধিকার নিশ্চিত করা।
অসাধু চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। প্রতিটি জেলায় সিভিল সার্জন অফিসের কার্যকারিতা বাড়ানো। ৬. সাংবাদিকদের ভূমিকা সাংবাদিকদের উচিত— এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লেখালেখি করা। গণসচেতনতা সৃষ্টি করা, যাতে মানুষ এ ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। ৭. সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ নয়, বরং সরকারি সংস্থাগুলোতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানানো উচিত। সংগঠিত হয়ে অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।শেভরন হাসপাতালের এই ঘটনার মতো অনেক রোগী প্রতিদিন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পাওয়াই কঠিন হয়ে যাবে। শেভরন হাসপাতালের অনিয়ম: সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার নামে প্রতারণা! প্রতিবেদন- দৈনিক ভোরের আওয়াজ ও The Daily Banner এর পক্ষ থেকে
একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে অভিযোগটি পাওয়ার পর আমি, দৈনিক ভোরের আওয়াজ ও The Daily Banner পত্রিকার একজন দায়িত্বশীল সাংবাদিক হিসেবে, বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় আমলে নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছি। দেখা যাচ্ছে, এটি কোনো একক ঘটনা নয়—শেভরন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার দীর্ঘদিন ধরে গলাকাটা ব্যবসার মাধ্যমে রোগীদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। শেভরনের ব্যবসায়িক কৌশল: ডাক্তার ও ল্যাবের যোগসাজশ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে—
শুধু ডা. শাহাদাৎ হোসেন নন, শেভরনের আরও অনেক ডাক্তার রোগীদের নির্দিষ্ট ল্যাবে পরীক্ষা করাতে বাধ্য করেন।
রোগীদের কোনো স্বাধীনতা নেই, বাইরের ল্যাবের রিপোর্ট দেখানো যাবে না—এটি যেন অলিখিত নিয়ম। শেভরনের ল্যাবের পরীক্ষার খরচ ইবনে সিনার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ, অথচ দুটি প্রতিষ্ঠান একই এলাকায়, পাঁচলাইশ থানার অধীনে। কেন এত পার্থক্য?
একই পরীক্ষার জন্য শেভরনের ল্যাবে খরচ দ্বিগুণ কেন? অনুসন্ধানে উঠে এসেছে— ডাক্তারের কমিশন খরচ যোগ করা হয়, যা রোগীদের পকেট থেকে আদায় করা হয়। শেভরনের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোনো নির্দিষ্ট মূল্য তালিকা নেই, ফলে তারা নিজেদের ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করে। একটি নির্দিষ্ট সিন্ডিকেট রোগীদের জিম্মি করে রাখছে, যাতে তারা বাধ্য হয় বেশি টাকা খরচ করতে। সাধারণ রোগীরা কোথায় যাবে? শেভরনের অনেক ডাক্তার ইবনে সিনার রিপোর্ট গ্রহণ করেন না, অথচ তারা কখনো প্রমাণ করেন না যে রিপোর্ট ভুল। রিপোর্টের মান যাচাই করা চিকিৎসকের কাজ, রোগীকে চেম্বার থেকে বের করে দেওয়া নয়। চিকিৎসার পরিবর্তে এ ধরনের আচরণ নৈতিক ও মানবিকভাবে অগ্রহণযোগ্য। এটি শুধু একটি হাসপাতালের সমস্যা নয়, বরং পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্নীতির চিত্র। প্রশাসনের ভূমিকা কোথায়? আমরা দেখছি, শেভরন প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, অথচ কোনো সরকারি সংস্থা এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, বিশেষ করে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (DNCRP) জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত প্রতারণার অভিযোগ তদন্ত করা। রোগীদের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণা চলতে দেওয়া যায় না!
একটি রিপোর্টের খরচ যদি শেভরনে দ্বিগুণ হয়, তাহলে বুঝতে হবে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগীর কাছ থেকে কী পরিমাণ অর্থ লুট হচ্ছে। সাধারণ মানুষের চিকিৎসা যেন শুধুমাত্র মুনাফার ব্যবসা না হয়, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি।
ডাক্তাররা যদি নিরপেক্ষ ও সৎ হতেন, তাহলে অন্য ল্যাবের রিপোর্টও গ্রহণ করতেন বা ভুল প্রমাণ করতেন।
এই ঘটনাটি প্রমাণ করে, স্বাস্থ্যখাতে নৈতিকতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। ডাক্তার ও ল্যাব কর্তৃপক্ষের অসাধু সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলছে। শেভরনের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া দরকার এবং রোগীদের অভিযোগ আমলে নেওয়া উচিত।
আমি একজন সাংবাদিক হিসেবে প্রশাসনকে অনুরোধ জানাই, শেভরনের এই গলাকাটা ব্যবসার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং সাধারণ রোগীদের ন্যায্য অধিকার রক্ষা করা হোক।