মরুর বালুকাবেলার সন্ধ্যায়: ওল সোয়িঙ্কার সঙ্গে এক স্মৃতিময় অধ্যায়-হুন্দায় হোটেলের লবিতে বসে আছি, বাইরে কোরিয়ার আকাশে সন্ধ্যার ছায়া ঘনায়মান। জানালার ওপাশে নিঃশব্দে ঢলে পড়ছে সূর্য, যেন কেউ নিঃশব্দে লিখে রাখছে দিনশেষের কবিতা। এই নীরবতার মাঝেই আমি অপেক্ষা করছিলাম—প্রতীক্ষা একজন মহান সাহিত্যিকের সান্নিধ্যে কিছু সময় কাটানোর। ওল সোয়িঙ্কা। সাহিত্যের এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর, যাঁর কলম কখনো শাসকের ভয়ে কাঁপেনি। সাহিত্যের এই নোবেলজয়ী যখন লবিতে এসে বসেন, তাঁর উপস্থিতি যেন সমস্ত পরিবেশকে আরও গভীর করে তোলে। আমি সেদিন শুধু তাঁর সাহিত্য নয়, তাঁর আত্মার গল্প শোনার ইচ্ছে নিয়ে এসেছিলাম।হোটেলের সেই লবি, নরম আলোর নিচে বসা দুই মানুষ—আমি আর সোয়িঙ্কা। তাঁর চোখে এক ধরণের ক্লান্তির ছাপ, তবু ভেতরে যেন এক নদীর ধারার মতো গভীরতা। আমি তখনও ভাবছিলাম, কেমন করে একজন মানুষ এত সংগ্রাম, এত নিপীড়নের মাঝেও এত সুন্দরভাবে শব্দ সাজিয়ে যান?
"বাংলাদেশ এবং বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আপনার ধারণা কতটুকু?"—এই প্রশ্নটাই ছিল আমার প্রথম সাহসী পদক্ষেপ। উত্তরের জন্য বেশি সময় লাগেনি। সোয়িঙ্কা হালকা হাসলেন। সেই হাসির আড়ালে ছিল অনেক কিছু—কিছু না জানা, কিছু জানার ইচ্ছে, আর কিছু সীমারেখা যা সাহিত্যের ভিন্নতা টেনে দেয়।এইসব মুহূর্তের টুকরো টুকরো স্মৃতিগুলো আজও আমার ডায়েরির পাতায় লেগে আছে। শব্দ দিয়ে এঁকে রাখা সেই মরুর স্মৃতি শেষ হবার নয়। সোয়িঙ্কার মুখে শোনা নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধের সেই করুণ অধ্যায়, তাঁর কারাবাসের সময়ের অভিজ্ঞতা—সব কিছুই যেন সাহিত্যের মর্মকথা হয়ে ধরা দেয়। লেখকের জীবনে যেমন রোদ থাকে, তেমনি থাকে মরুর ধুলোও। আর সেই মরুময় স্মৃতিগুলোই আমাদের লেখাকে আরও পরিণত করে। সোয়িঙ্কার কথা শুনে আমি সেদিন বুঝেছিলাম, সাহিত্যের শক্তি শুধু শব্দের মধ্যেই নয়, বরং তা লুকিয়ে থাকে লেখকের সংগ্রাম আর সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতায়।
সেই সন্ধ্যার পর থেকে সাহিত্যের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। আর বদলে গেছে আমার লেখার ধারাও—কিছুটা সাহসী, কিছুটা প্রতিবাদী। সোয়িঙ্কার কলমের আলো আমার হৃদয়ে জ্বলে আছে, ঠিক মরুর বালির মধ্যে এক চিরস্থায়ী সূর্যের মতো। ওলে সোয়িঙ্কার সঙ্গে সেই সাক্ষাৎকারের স্মৃতিচারণা--
ওল সোয়িঙ্কার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের দিনটি আজও আমার মনে জ্বলজ্বল করে। পশ্চিম আফ্রিকার সাহিত্যের এই দিকপাল, যিনি ১৯৮৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, সেই মানুষটির সামনে বসে বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে প্রশ্ন করা এক অনন্য অভিজ্ঞতা ছিল। আমার প্রশ্ন ছিল সোজাসাপ্টা—"বাংলাদেশ এবং বাংলা সাহিত্য নিয়ে আপনার কতটুকু ধারণা আছে?" সোয়িঙ্কা একটু থেমে আমার দিকে তাকালেন। তাঁর চোখে ছিল আগ্রহ, কিন্তু উত্তর দিতে গিয়েই হালকা হাসলেন। "বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানি, তবে বাংলা সাহিত্য... সেটি নিয়ে খুব বেশি পড়ার সুযোগ হয়নি," বললেন তিনি। "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম তো অবশ্যই জানি। তবে, সাহিত্যের অন্যান্য শাখায় এখনো ততটা গভীরে যাওয়া হয়নি।"
তাঁর এই স্বীকারোক্তি যেন আমাকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলল—বাংলা সাহিত্য কি তাহলে বিশ্ব দরবারে আজও পুরোপুরি তার স্থান করে নিতে পারেনি? আমি জানতে চাইলাম, বিশ্বমানের লেখক হতে হলে একজন সাহিত্যিকের কী করণীয়? ওল সোয়িঙ্কা নিঃশব্দে কিছুক্ষণ ভেবে বললেন— "নিজের শিকড়ের প্রতি বিশ্বস্ত থাকো। তোমার সংস্কৃতি, ইতিহাস, মানুষ—এগুলোকেই আগে জানো। তারপর লিখতে বসো। আর বিশ্বের সাহিত্যের দিকপালদের পড়ো, কিন্তু কখনো তাঁদের অনুকরণ কোরো না। নিজের কণ্ঠস্বর খুঁজে নাও।" তিনি যোগ করলেন, "তোমার লেখায় যদি তোমার মানুষের ব্যথা, হাসি, কান্না না থাকে, তবে সেই লেখা টিকে থাকবে না। সাহিত্যে ন্যায়ের জন্য লড়াই করতে হবে। কলম হতে হবে অস্ত্র।"
একটি করুণ স্মৃতির কথা জানতে চাইলে সোয়িঙ্কা হঠাৎ বিষণ্ন হয়ে গেলেন। "নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধ আমার জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার সময় ছিল। অনেক বন্ধু হারিয়েছি। সত্য বলার অপরাধে আমাকে কারাবরণ করতে হয়েছে। তখন বুঝেছিলাম, একজন লেখককে কেবল সাহিত্যিক হতে হলে চলে না, তাঁকে হতে হয় সমাজের বিবেক। কারাগারের একাকীত্ব আমাকে শিখিয়েছে সাহিত্যের প্রকৃত শক্তি কী।" এই কথাগুলো যেন আমার মনকে আলোড়িত করল। আমরা যারা লেখালেখি করি, আমাদের জন্য ওল সোয়িঙ্কার জীবন এক ধরণের পথপ্রদর্শক। বিশ্বমানের লেখক হওয়ার জন্য শুধু ভাষার নিপুণতা নয়, দরকার আত্মার গভীরতা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস। সাক্ষাৎকার শেষে যখন তাঁকে ধন্যবাদ জানালাম, সোয়িঙ্কা হেসে বললেন, "তোমরা লেখকরা আছো বলেই সমাজ বেঁচে থাকে। সাহিত্যের আলো যেন কখনো নেভে না।" বিশ্ব সাহিত্যের অঙ্গনে যখন কিছু নাম অমর হয়ে ওঠে, তখন সে নামগুলোই হয়ে ওঠে মানব ইতিহাসের চিরন্তন আলো। তাদের কলমের পথচলা শুধু সাহিত্যকেই নয়, বরং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, সমাজের অন্ধকার দিক, এবং মানুষের স্বাধীনতার সংগ্রামকে আরও প্রগাঢ় করে তোলে। এমনই একজন বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক, যিনি শুধুমাত্র সাহিত্যের জন্য নন, বরং সাহিত্যের শক্তি ও প্রতিবাদের জন্যও পরিচিত, তিনি হচ্ছেন নাইজেরিয়ার প্রথম নোবেলজয়ী লেখক ওল সোয়িঙ্কা। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা, তাঁর সান্নিধ্যে আসা, এবং তাঁর সাথে সাক্ষাৎকার ধারণ করার সুযোগ পাওয়া, আমার মতো একজন সাধারণ লেখকের জন্য এক নিঃসন্দেহে অসীম আনন্দ এবং গর্বের ব্যাপার। সাহিত্যে বিপ্লবী চিন্তা এবং নির্ভীক ভাষার জন্য যিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিত, তার সাথে সরাসরি কথা বলা যেন সাহিত্যের একটি গভীরতম অভিজ্ঞতার মধ্যে প্রবেশ করা। সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর কর্মকাণ্ডের প্রভাব শুধু আফ্রিকা নয়, বিশ্বমঞ্চে মানুষের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষার এক শক্তিশালী আহ্বান। সেই ওল সোয়িঙ্কার সঙ্গে আমার কথা বলার সময় যা কিছু শিখেছি, তা এক জীবনভর ধারণের মতো, যা আমার লেখনীকে আরও শক্তিশালী ও ধারালো করে তুলবে।
যখন আমি তাঁর কাছে পৌঁছাই, তখন কিছুক্ষণ চুপ করে তার চোখের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকি, যে মহামানবটি মানবতার জন্য এতো কিছু করেছে, তার সঙ্গে এক মুহূর্তের জন্যও সময় কাটানো কেমন এক অনুভূতির। তাঁর স্নিগ্ধতা, আন্তরিকতা এবং সে সময়ে তাঁর বলা কথাগুলো আমার মনে গভীর দাগ কেটে যায়। একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং সহানুভূতির কথা শুনে, আমি বুঝতে পারি, সাহিত্যের পথ প্রদর্শকরা শুধুমাত্র তাঁদের লেখার মাধ্যমে নয়, বরং নিজের জীবনযাত্রা দিয়েও পৃথিবীকে নতুন করে ভাবতে শিখান।
তিনি তাঁর সাহিত্যে যে স্বাধীনতা ও ন্যায়ের কথা বলেছেন, তা শুধু আফ্রিকার জন্য নয়, সারা বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য। তাঁর কথা, তাঁর জীবনদৃষ্টি, এবং তাঁর সাহিত্যের মূল্য একসাথে এসে আমাদের বুঝিয়ে দেয় যে সাহিত্যের শক্তি কখনো নির্ধারিত বা পরিসীমিত হয় না—এটি শুধু একটি কলমের মতই, যা দিয়ে পৃথিবীর অন্ধকার দিকগুলোকে আলোয় রাঙানো যায়। আমার এই অভিজ্ঞতা সত্যিই এক বিশেষ স্মৃতি হয়ে থাকবে, যা আমাকে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী ও নিবেদিত লেখক হতে প্রেরণা জোগাবে।
পেন কংগ্রেসে ওল সোয়িঙ্কার কিছু কথা উপস্থাপন করছি-
৭৮তম পেন ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস, বা বিশ্ব লেখক সম্মেলন, সম্প্রতি কোরিয়াতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে পেন সদস্য হিসেবে যোগদান করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাহিত্যিকদের সঙ্গে মেলবন্ধন ছিল এক অমূল্য অভিজ্ঞতা। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রভাব যিনি আমার ওপর রেখেছেন, তিনি হলেন সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী নাইজেরীয় লেখক ওল সোয়িঙ্কা।
ওল সোয়িঙ্কার সঙ্গে আমার সাক্ষাতের আগে তাঁর সম্পর্কে যা কিছু ধারণা ছিল, তা একটি সীমিত কাঠামো ছিল। কিন্তু সরাসরি তাঁর সঙ্গে কথা বলে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, তা সত্যিই অসাধারণ। যে সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি প্রতিবাদ করেছেন, যে কলমের মাধ্যমে তিনি ইতিহাসকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, তা এক ভিন্ন মাত্রায় প্রভাবিত করেছে আমাকে। তাঁর শারীরিক গড়নে, চেহারায় কিংবা বয়সে আমার সঙ্গে কিছুটা মিল থাকলেও, তাঁর ভাষাশৈলী, চিন্তাধারা ও ব্যক্তিত্বের গভীরতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
ওল সোয়িঙ্কার জন্ম ১৯৩৪ সালের ১৩ জুলাই, নাইজেরিয়ার এক "ইওরুবা" পরিবারে। তাঁর পিতা দক্ষিণ-পশ্চিম নাইজেরিয়ার বাসিন্দা ছিলেন এবং ছোটবেলা থেকেই তিনি পশ্চিমা শিক্ষার অধীনে পড়াশোনা করেন। তিনি শুরুতে ইবাদানস্থ কলেজে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন, পরে ইংল্যান্ডের লিস বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষকতার মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু হলেও তিনি মূলত নাট্যকার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। লন্ডনের রয়েল আর্ট থিয়েটারের জন্য তিনি নাট্যলিপি লিখতেন এবং তার কিছু নাটক সেখানে অভিনীতও হয়েছিল।
১৯৬০ সালে, নাইজেরিয়া যখন স্বাধীনতা লাভ করে, তখন তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং আফ্রিকার কৃষ্ণকায় জনগণের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন। তিনি অতি স্পষ্ট ভাষায় সেই আন্দোলনের সমালোচনা করেন, যেখানে তাকে ক্রমাগত বলতেও দেখা যায়। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়াফ্রার বিদ্রোহীদের সহায়তা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন এবং ২২ মাস ধরে কারারুদ্ধ থাকেন। ওল সোয়িঙ্কার সাহিত্যিক জীবনে অনেক উল্লেখযোগ্য রচনা রয়েছে, যার মধ্যে 'এ ডান্স অব ফরেস্টস' (১৯৬০), 'কঙ্গীস হারভেস্ট' (১৯৬৫), এবং আত্মজীবনীমূলক 'আক: দ্য ইয়ার্স অব চাইল্ডহুড' (১৯৮১) অন্যতম। তাঁর 'দ্য ম্যান ডাইস' (১৯৭২) একটি উপভোগ্য এবং গভীর রচনা, যা তার রাজনৈতিক ও সামাজিক দর্শনকে প্রকাশ করে। ১৯৮৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করে তিনি প্রথম কৃষ্ণকায় আফ্রিকান সাহিত্যিক হিসেবে এই পুরস্কার অর্জন করেন। এই নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক শুধু সাহিত্যে তাঁর অবদানের জন্যই পরিচিত নন, বরং তিনি একজন প্রতিবাদী লেখক হিসেবেও সমাদৃত। তাঁর লেখনী শুধু সমাজের অন্ধকার দিকগুলো তুলে ধরতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং তিনি একে সামনে এনে তাতে আলো ফেলেন। তিনি লেখক সমাজের স্বাধীনতা ও তাদের কলমের শক্তি রক্ষার ব্যাপারে গভীরভাবে সচেতন ছিলেন এবং আজও তা বহাল রাখছেন। তাঁর সঙ্গে আমার আলাপচারিতায় এক অদ্ভুত সৌম্যতা এবং আন্তরিকতা ছিল। তিনি অত্যন্ত সরলভাবে আমাদের বাংলাদেশ সম্পর্কে কথা বলেছেন এবং বাংলা সাহিত্যের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, বাংলা সাহিত্যের হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে, যা বিশ্ব সাহিত্যকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি বিশেষভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, "বাংলা সাহিত্যের সুমধুরতা পৃথিবীজুড়ে প্রশংসিত।" তিনি জানতেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ভাষা আন্দোলন, এবং আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের প্রতিটি দিক। ওল সোয়িঙ্কা আমাদের বাংলার সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মুক্তির সংগ্রামের প্রতি তাঁর সমর্থন প্রকাশ করতে বলেছেন, "যখনও প্রয়োজন পড়বে, আমি আপনার সঙ্গে আছি।" বাংলাদেশের লেখকদের জন্য তাঁর সহায়তা এক অনন্য অভ্যর্থনা ছিল। তিনি বলেন, "বিপ্লবী লেখকদের প্রয়োজনীয়তা কখনও শেষ হবে না। সুতরাং, আমি চাই যে আপনি সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে, সমাজে সত্য বলুন।" ৭৮তম পেন কংগ্রেসের আলোচনা পর্বে, বিশেষভাবে সাংবাদিক ও লেখকদের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। লেখকরা যাতে স্বেচ্ছায় এবং মুক্তভাবে লিখতে পারেন, সেজন্য সজাগ থাকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। যেমন, ওল সোয়িঙ্কা নিজের জীবনের একটি ভয়ানক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন, যখন তিনি প্রতিবাদী লেখা লিখে গ্রেপ্তার হন এবং ২২ মাস কারাগারে কাটাতে হয়। সেই সময় তার জন্য ছিল একটি ভয়াবহ সংগ্রাম, কিন্তু আজ তিনি তার কলমের শক্তি দিয়েই পৃথিবীজুড়ে একজন নায়ক হিসেবে পরিচিত।
এই সম্মেলনে সকল নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিকের সঙ্গে আমি একত্রে ছিলাম। তাদের মধ্যে কোন অহংকার ছিল না, বরং সবাই তাদের অভিজ্ঞতা, জীবনদৃষ্টি, এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা শেয়ার করেছেন। সবাই একে অপরের সঙ্গে আন্তরিকভাবে আলোচনা করেছেন এবং সবার উদ্দেশ্য ছিল একটি শান্তিপূর্ণ ও মুক্ত সমাজ গঠন করা। এই সম্মেলনটি ছিল এমন এক জায়গা, যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আগত সাহিত্যিকরা তাঁদের লেখনী এবং সংগ্রামের গল্প ভাগ করেছেন।
সম্মেলনটির একটি প্রধান বার্তা ছিল লেখকদের স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা কেবল শব্দের ক্ষেত্রে নয়, বরং প্রতিটি লেখকের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সত্য এবং ন্যায়ের জন্য কথা বলা, যাতে তাদের কলমের মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন আসে। ওল সোয়িঙ্কার মতো সাহসী লেখকরা সেই আদর্শের প্রতীক, যাদের সাহিত্যের মধ্য দিয়ে আমরা শিখতে পারি, সমাজের দমনপীড়ন এবং অবিচারের বিরুদ্ধে কলম হাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। এই পেন কংগ্রেস থেকে যা আমি শিখেছি, তা হলো—লেখকদের পক্ষে একতা, সহযোগিতা এবং সমর্থন অপরিহার্য। সাহিত্যের কলমে যেসব প্রতিবাদী ভাবনা প্রবাহিত হয়, তা যেন কখনো দমিত না হয়, তা নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com