চট্টগ্রামের আকাশে আজ ছিল এক অন্যরকম সকাল। রোদের কিরণ যেন একটু বেশি উজ্জ্বল, বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিলো ইতিহাসের গন্ধ। কারণ, আজ ২৪ ডিসেম্বর। ৭২ বছর আগে এই দিনে বাংলাদেশ নামের স্বপ্নটি মাটিতে শেকড় গাঁথতে শুরু করেছিল এক দৈনিকের পাতায়। নাম তার দৈনিক ইত্তেফাক—বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গী, মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিসাক্ষী। সকালে চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্র জুবিলী রোডের জীবন বীমা ভবনে অবস্থিত দৈনিক ইত্তেফাকের চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিস যেন রূপ নিয়েছিল এক মিলনমেলায়। সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, ডাক্তার শাহাদাত হোসেন কেক কাটার মাধ্যমে শুরু করেন এই ঐতিহাসিক উদযাপন। লাল গোলাপের শুভেচ্ছায় সিক্ত হলো ইত্তেফাকের ৭২ বছরের পথচলা।
ইত্তেফাক: শুধু একটি পত্রিকা নয়, এক বিপ্লবের নাম ১৯৫২ থেকে ১৯৭১—এই সময়কাল বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বাধীনতার বীজ বোনার সময়। পাকিস্তানি শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, জনগণের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিল যে পত্রিকাটি, সেটিই দৈনিক ইত্তেফাক। মরহুম তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া এই পত্রিকার মাধ্যমে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে গণতন্ত্রের আলো দেখিয়েছিলেন।
ইত্তেফাক শুধু সংবাদ পরিবেশন করেনি, এটি ছিল সংগ্রামের হাতিয়ার। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলনে পত্রিকাটি ছিল এক নির্ভীক যোদ্ধা। এমনকি ১৯৭১ সালের রক্তাক্ত দিনগুলোতেও ইত্তেফাকের পাতায় ছাপা হয়েছিল স্বাধীনতার সুর। চট্টগ্রামে জন্মদিনের উৎসব: ঐক্যের বার্তা দৈনিক ইত্তেফাকের জন্মদিনে চট্টগ্রামে একত্রিত হয়েছিলাম আমরা অনেকেই—সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা, পেশাজীবী, এবং চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ। চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের পক্ষ থেকে আমি নিজেও উপস্থিত ছিলাম লাল গোলাপ হাতে। সাংবাদিক হিসেবে, কলমের সৈনিক হিসেবে ইত্তেফাকের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ যেন আমাকে সেখানে টেনে নিয়ে গিয়েছিল।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা এবং দৈনিক কর্ণফুলী পত্রিকার কর্ণধার শাহজাহান চৌধুরী, সাবেক বিএনপি নেতা আকরাম ভাইসহ আরও অনেক সাংবাদিক ও পেশাজীবী। এই বৈচিত্র্যময় সমাবেশ প্রমাণ করছিল—ইত্তেফাক কোনো দল বা গোষ্ঠীর নয়, এটি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের। সালাউদ্দিন রেজার নেতৃত্ব: নির্ভীক সাংবাদিকতার প্রতীক ইত্তেফাকের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সালাউদ্দিন রেজা ভাই, যিনি দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন, আজকের অনুষ্ঠানের প্রাণপুরুষ। নির্ভীক মনোভাব নিয়ে সাংবাদিকতা করেন রেজা ভাই। তাঁর নেতৃত্বে ইত্তেফাক চট্টগ্রামে এক অনন্য মর্যাদা ধরে রেখেছে।
আজকের আয়োজনেও রেজা ভাইয়ের আতিথেয়তার ছাপ স্পষ্ট ছিল। ফুলকলির নাস্তা, ভাঙলীদের খই-মুড়ি, চনাবুট—সব কিছুতেই ছিল এক আন্তরিক ছোঁয়া। এমন আয়োজন শুধু পেশাগত নয়, এটি ছিল পারিবারিক আবহের মতো, যেখানে সবাই একসঙ্গে উদযাপন করছিল একটি পত্রিকার জন্মদিন। ইত্তেফাকের ভূমিকা: অতীত থেকে ভবিষ্যতের পথে
ইত্তেফাকের নাম উচ্চারণ করলে শুধু অতীতের গল্পই উঠে আসে না, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের দিকেও দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। আজকের পত্রিকাগুলো যেখানে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, সেখানে ইত্তেফাক এখনো গণমানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে আছে।
চট্টগ্রামের চলমান সমস্যা—জলাবদ্ধতা, ভূমি দখল, পরিবহন সংকট—এসব বিষয়ে ইত্তেফাক আরও বেশি সরব হোক, এই আশা রাখি। চট্টগ্রামের নাগরিকদের প্রতিদিনের দুর্ভোগ, তাদের স্বপ্ন, তাদের সংগ্রাম যেন ইত্তেফাকের পাতায় আরও বেশি জায়গা পায়। প্রেসক্লাবের অনৈক্য ও সাংবাদিকদের ঐক্য প্রয়োজন
উৎসবের এই আনন্দঘন পরিবেশের মাঝেও একটি বিষয় মনে না পড়ে পারে না—চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবকে ঘিরে বিভাজন। সাংবাদিকদের এই ঘর যদি আরেকটু ঐক্যবদ্ধ হতো, তবে এমন আয়োজন আরও বেশি প্রাণবন্ত হতো। প্রেসক্লাব শুধু কোনো রাজনৈতিক ব্যানার নয়, এটি প্রকৃত সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠান। আমি বিশ্বাস করি, দলমত নির্বিশেষে, বিভেদ ভুলে প্রকৃত সাংবাদিকদের সদস্যপদ নিশ্চিত করতে পারলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব আরও শক্তিশালী হবে। সেই শক্তি আমাদের কলমকে আরও ধারালো করবে, যা সমাজ পরিবর্তনের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠবে। ইত্তেফাকের শতবর্ষের প্রত্যাশা
ইত্তেফাকের ৭২ বছরের এই পথচলা একটি ইতিহাস, যা আমরা আগামী শতাব্দী পর্যন্ত এগিয়ে নিতে চাই। আমি চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম, দৈনিক ভোরের আওয়াজ, এবং The Daily Banner এর পক্ষ থেকে ইত্তেফাকের শতবর্ষ উদযাপনের আগাম শুভেচ্ছা জানাই।
ইত্তেফাক শুধু পত্রিকা নয়, এটি বাংলাদেশের আত্মপরিচয়ের অংশ। এর অগ্রযাত্রা যেন কখনো থেমে না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে আমাদের সবাইকে।
ইত্তেফাকের জন্মদিন মানে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের জয়গান। এই উদযাপন চট্টগ্রামের, এই উদযাপন বাংলাদেশের।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com